|

ইমাম-উল-হক

২২ ডিসেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। বামহাতে ব্যাটিং করেন। ২০১০-এর দশকের শেষদিক থেকে পাকিস্তানের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিচ্ছেন।

চশমা পরিধান করেন। পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান না হলেও সচরাচর ড্রাইভের দিকেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। প্রচণ্ড চাপ সামলে নেয়ার ক্ষমতা রাখেন। প্রধান দল নির্বাচক ইনজামামাম-উল-হকের ভ্রাতৃষ্পুত্র হলেও শুরু থেকেই ব্যাপক চাপের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তবে, তরুণ পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান হিসেবে এ চাপকে সামলে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে অভিষেক সিরিজের যথেষ্ট ভালোমানের ক্রীড়াশৈলী উপস্থাপন করেছিলেন। মারকুটে ব্যাটিংয়ের কারণে বেশ পরিচিতি পান। এক পর্যায়ে পাকিস্তানের ওডিআই দলের শীর্ষসারির ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পান ও জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য হন।

ইনসরম-উল-হক ও ফারাহ ইনসরম দম্পতির সন্তান তিনি। ১.৭৫ মিটার উচ্চতার অধিকারী। ২০১২-১৩ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে বালুচিস্তান, হাবিব ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামাবাদ, খান রিসার্চ ল্যাবরেটরিজ, লাহোর লায়ন্স, লাহোর রিজিওন ব্লুজ, লাহোর শালিমার ও লাহোর হোয়াইটসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, পেশাওয়ার জালমির পক্ষে খেলেছেন।

২০১২-১৩ মৌসুমে লাহোর শালিমারের পক্ষে খেলেন। ৩১ জানুয়ারি, ২০১৩ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় প্রতিপক্ষ ছিল হায়দ্রাবাদ দল। ২০১৭-১৮ মৌসুমের ন্যাশনাল টি২০ কাপের চূড়ান্ত খেলায় লাহোর ব্লুজের শিরোপা বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। ২০১৯ সালে বিভিন্ন ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় বালুচিস্তান ও পেশাওয়ার জালমির পক্ষে খেলেছিলেন। ২০১২ সালে ১৭ বছর বয়সে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকল্পে পাকিস্তান দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন।

২০১৭ সাল থেকে পাকিস্তানের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ১৮ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। এরফলে, দ্বিতীয় পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান হিসেবে এ কীর্তিগাঁথায় অংশ নেন। এরপর, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দূর্দান্ত খেলেন ও তিনটি শতরানের ইনিংস খেলেন। এরফলে, ওডিআইয়ের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম নয় খেলায় অংশ নিয়ে চারটি শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন।

পরের বছরের গ্রীষ্মে ২০১৮ সালে সরফরাজ আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সাথে আয়ারল্যান্ড গমন করেন। ১১ মে, ২০১৮ তারিখে ডাবলিনের মালাহাইডে অনুষ্ঠিত আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ফাহিম আশরাফের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অভিষেক পর্বটি তেমন দৃষ্টিগোচরে না পড়লেও চতুর্থ ইনিংসে অপরাজিত ৭৪ রান তুলে দলের বিপর্যয় রোধে সাহসী ভূমিকা রাখে। তবে, কেভিন ও’ব্রায়ানের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন স্বত্ত্বেও সফরকারীরা ৫ উইকেটে জয় পায়।

এরপর, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। সমীহ জাগানো বাঁক খাওয়া বলের মুখোমুখি হন। তিন ইনিংসের সবকটিতেই স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে বিদেয় নেন; তন্মধ্যে, দুইবার এলবিডব্লিউতে হয়েছিলেন।

২০১৮ সালের শুরুরদিকে নিউজিল্যান্ডে দলের শোচনীয় ফলাফলের অংশীদার ছিলেন। দুই মাস পর ফখর জামানকে সাথে নিয়ে ওডিআইয়ের উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন। ৩০৪ রান তুলে দলের সংগ্রহকে ৩৯৯ রানে নিয়ে যান। এ পর্যায়ে এটিই পাকিস্তানের ওডিআইয়ে সর্বোচ্চ দলগত সংগ্রহে পরিণত হয়। এছাড়াও, এ জুটি দ্বি-পক্ষীয় সিরিজে ৭০৫ রান তুলে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে।

২০১৯ সালের শুরুতে ওডিআইয়ে দ্বিতীয় দ্রুততম ১০০০ রান সংগ্রহের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এর জন্যে তিনি মাত্র ১৯ ইনিংস খেলেছিলেন। কিছুদিন পরই ২৪ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় পাকিস্তান দলের সদস্যরূপে অংশ নেন। লর্ডসে অনুষ্ঠিত গ্রুপ পর্বের খেলায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০০ রান তুলেন। এরফলে, সীমিত-ওভারের লর্ডস অনার্স বোর্ডে চাচা ইনজামাম-উল-হকের ন্যায় স্বীয় নামকে অন্তর্ভুক্ত করার গৌরব অর্জন করেন। ফলশ্রুতিতে, লর্ডসের ইতিহাসে চাচা-ভাতিজার অনার্স বোর্ডে অন্তর্ভুক্তির প্রথম ঘটনায় নিজেদেরকে জড়িয়ে রাখেন।

সেমি-ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জনে ৪০০ রান সংগ্রহের অসম্ভব লক্ষ্যে পৌঁছতে টস জয়ে ব্যাটিংয়ে নামলে পূর্ববর্তী বছরগুলোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দলের ভিত রচনায় অগ্রসর হন। ১০০ বল মোকাবেলায় আটটি চারের সহায়তায় এ ইনিংসটি খেলেছিলেন। এটিই তাঁর ওডিআইয়ে প্রথম অর্ধ-শতক ছিল ও বিশ্বকাপে সর্বকনিষ্ঠ পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন অঙ্কের কোটা স্পর্শ করেছিলেন। দূর্ভাগ্যজনকভাবে সাময়িক ধাক্কা সামলে ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে ব্যর্থ হলে সরফরাজ আহমেদের নেতৃত্বাধীন দলটি শীর্ষ চারে প্রবেশ করতে পারেনি। ২০১৯ সালে টি২০আইয়ে প্রথম খেলেন।

২০২১-২২ মৌসুমে নিজ দেশে প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ৪ মার্চ, ২০২২ তারিখে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। ১৫৭ ও ১১১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর জোড়া শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০২৩-২৪ মৌসুমে শান মাসুদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১০ ও ১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, প্রতিপক্ষীয় দলনেতা প্যাট কামিন্সের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৭৯ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

২০২৫-২৬ মৌসুমে নিজ দেশে এইডেন মার্করামের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২০ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৭ ও ৯ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে সায়মন হারমারের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। কেশব মহারাজের দূর্দান্ত অল-রাউন্ড কৃতিত্বে সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয় পেলে সিরিজটি ড্র করতে সমর্থ হয়।

Similar Posts

  • | | |

    ওয়াল্টার রবিন্স

    ৩ জুন, ১৯০৬ তারিখে স্টাফোর্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। যুদ্ধের পূর্বে স্টাফোর্ডশায়ারের পক্ষে অংশগ্রহণকারী পিতা ও পরবর্তীতে ল্যাঙ্কাশায়ারের সাবেক পেশাদার ক্রিকেটার আলবার্ট নাইটের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন।…

  • |

    ওয়াসিম জাফর

    ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। ২০০০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম থেকে ২০১৯-২০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া পর্যায়ের ভারতীয় ক্রিকেটে মুম্বই, বিদর্ভ ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, আবাহনী লিমিটেড, রয়্যাল…

  • | | |

    খালেদ মাহমুদ

    ২৬ জুলাই, ১৯৭১ তারিখে ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। সহজাত প্রতিভার অধিকারী না হয়েও দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। বোলিংয়ে মনোনিবেশ ঘটিয়ে আকস্মিকভাবে ব্যাটসম্যানদের কাছে বিস্ময়াকারে পরিচিতি ঘটাতেন। অধিনায়ক…

  • | |

    বুরকেরি রমন

    ২৩ মে, ১৯৬৫ তারিখে তামিলনাড়ুর মাদ্রাজে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮২-৮৩ মৌসুম থেকে ১৯৯৮-৯৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে তামিলনাড়ুর প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এক মৌসুমে…

  • | |

    কলিন কাউড্রে

    ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৩২ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের তামিলনাড়ুর উটি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিং করতে পারতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অন্যতম সেরা ধ্রুপদীশৈলীর অধিকারী ব্যাটসম্যান ও সর্বাপেক্ষা পূজনীয় ভদ্রলোক ছিলেন। টনব্রিজে অধ্যয়নের পর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো করেছেন।…

  • |

    কাইল জেমিসন

    ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৯৪ তারিখে অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। দলে তিনি মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে অভ্যস্ত তিনি। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিচ্ছেন। ‘কিলা’ ডাকনামে ভূষিত কাইল জেমিসন ৬ ফুট ৮ ইঞ্চির দীর্ঘ উচ্চতার অধিকারী। বেশ লম্বাটে গড়ন নিয়ে বোলিং কর্মে অগ্রসর হন ও পেস বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের…