|

একনাথ সোলকার

১৮ মার্চ, ১৯৪৮ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে মিডিয়াম কিংবা স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।

‘এক্কি’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। বোম্বের ক্রিকেটের ভিত্তি গড়ার ক্ষেত্রে তিনি কল্পনাতীত ভূমিকা রেখেছিলেন। কার্যকর বামহাতি ব্যাটসম্যান হলেও বামহাতে মিডিয়াম-পেস বোলিংয়ের পাশাপাশি স্পিনার হিসেবেও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। এছাড়াও, বিশ্বমানসম্পন্ন ফিল্ডার হিসেবে উইকেটের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করতেন। বোম্বেভিত্তিক হিন্দু জিমখানার মাঠ কর্মকর্তার সন্তান ছিলেন। পাঁচ ভাই-বোনকে নিয়ে এক কক্ষবিশিষ্ট কুঁড়ে ঘরে বসবাস করতেন। পরবর্তীতে, নিজেকে সর্বকালের অন্যতম সেরা ফিল্ডারে পরিণত করেছেন। হার্ড নক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯৬৫-৬৬ মৌসুম থেকে ১৯৮০-৮১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বোম্বে ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

বোম্বে দলের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন ও তিনটি বিভাগেই সেরা ছিলেন। সৌরাষ্ট্রের বিপক্ষে রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় অভিষেক ঘটে তাঁর। ৪৩ রানের অপরাজিত ইনিংসসহ বল হাতে নিয়ে ৬/৩৮ লাভ করেন। এরপর আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে বর্ষসেরা ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন। এ সময়ে ৩১.৩৫ গড়ে ৪৩৯ রান, ২৩.০৪ গড়ে ৪২ উইকেট ও ২০ ক্যাচ নিয়েছিলেন।

খেলোয়াড়ী জীবনে বোম্বের অপরাজিত থাকার রেকর্ড কর্ণাটকের কাছে ভেঙ্গে গেলেও চার মৌসুম বাদে পুণরাবৃত্তি ঘটে। এরপর দিল্লি দল রঞ্জী ট্রফির শিরোপা উপর্যুপরী লাভ করলে ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা দলটির সেরা সময় অতিবাহিত হয়েছে বলে মূল্যায়িত করতে থাকে। এক পর্যায়ে বোম্বে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে এসে বর্তায়। পূর্বতন শিরোপাধারী দলকে পরাজিত করে দলের শিরোপা জয়ে ভূমিকা রাখেন। সম্মুখে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন। ৪৩.৫০ গড়ে রান ও ৩৬.৬০ গড়ে উইকেট নেয়ার সাথে ৭ ক্যাচ মুঠোয় পুড়েন।

১৯৬৯ থেকে ১৯৭৭ সময়কালে ভারতের পক্ষে সব মিলিয়ে ২৭ টেস্ট ও সাতটিমাত্র ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৬৯-৭০ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রাহাম ডাউলিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৫ অক্টোবর, ১৯৬৯ তারিখে হায়দ্রাবাদের ডেকানে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অশোক জ্ঞানদোত্রা’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ০ ও ১৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। বৃষ্টিবিঘ্নিত ঐ খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে ড্রয়ে পরিণত হয়।

১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে নিজ দেশে টনি গ্রেগের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১ জানুয়ারি, ১৯৭৭ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ২ ও ৩ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও একটি ক্যাচসহ ০/১৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ইংল্যান্ড দল ১০ উইকেটে জয় পেয়ে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

টেস্টে ১০৬৮ রান সংগ্রহের পাশাপাশি ১৮ উইকেট দখল করে প্রতিভাবান ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করা বেশ কঠিন বিষয় হলেও সূক্ষ্ম দৃষ্টিকোণে বিচার করলে দেখা যাবে যে, অনেকবারই ভারত দলের সঙ্কটকালীন ব্যাট হাতে বিরাট ভূমিকা রেখেছেন কিংবা বল হাতে নিয়ে দলকে পুণরায় খেলায় ফিরিয়ে এনেছেন।

এছাড়াও, ব্যাটের কাছাকাছি এলাকায় থেকে হেলমেটবিহীন অবস্থায় ৫৩ ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন। টেস্ট প্রতি তাঁর ক্যাচ তালুবন্দীকরণে হার ১ : ১.৯৬। উইকেট-রক্ষকবিহীন ২০ বা ততোধিক ফিল্ডারের ক্ষেত্রে এ হার সেরা। বিষেন বেদীসুনীল গাভাস্কারের পাশাপাশি প্রতিপক্ষীয় তারকা খেলোয়াড় টনি গ্রেগের কাছ থেকে প্রশংসিত হয়েছেন এবং জিওফ বয়কটের সাথে তাঁর উত্যক্ততা কল্পলোককে হার মানিয়েছে।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৮৯টি খেলা থেকে ২৯.২৭ গড়ে ৬৮৫১ রান সংগ্রহ করেছেন, ৩০.০০ গড়ে ২৭৬ উইকেট দখল করেছেন ও ১৯০ ক্যাচ মুঠোয় পুড়েছেন। এরপর অবসর গ্রহণ করেন।

২৬ জুন, ২০০৫ তারিখে মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে হৃদযন্ত্রক্রীয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৫৭ বছর ১০০ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন।

Similar Posts

  • |

    ফিলিপ হিউজ

    ৩০ নভেম্বর, ১৯৮৮ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের ম্যাক্সভিল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতে পারতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি (১.৭০ মিটার) উচ্চতার অধিকারী ছিলেন। গ্রেগ হিউজ ও ভার্জিন হিউজ দম্পতির সন্তান…

  • |

    যুবরাজ সিং

    ১২ ডিসেম্বর, ১৯৮১ তারিখে চণ্ডীগড়ে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ৬ ফুট (১.৮৩ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। শবনম ও সাবেক ভারতীয় বোলার যোগরাজ সিং দম্পতির সন্তান। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম থেকে ২০১৮-১৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর…

  • | | |

    ইয়ান চ্যাপেল

    ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৩ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার আনলি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ফার্স্ট স্লিপ অঞ্চলে অবস্থান করে ফিল্ডিং করতেন। পাশাপাশি, মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘চ্যাপেলি’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ভীতিহীন অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি…

  • |

    নোয়েল হারফোর্ড

    ৩০ আগস্ট, ১৯৩০ তারিখে সাউথল্যান্ডের উইন্টন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ১৯৫০-এর দশকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৫৩-৫৪ মৌসুম থেকে ১৯৬৬-৬৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টস ও অকল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তন্মধ্যে, ১৯৫৩-৫৪ মৌসুম থেকে ১৯৫৮-৫৯…

  • | |

    সৈয়দ আবিদ আলী

    ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৪১ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিংয়ে দক্ষ ছিলেন। পাশাপাশি অসাধারণ ফিল্ডিং করতেন ও নিচেরসারিতে ব্যস্ততার সাথে উইকেটের প্রান্ত বদলে অগ্রসর হতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পিঠ সোজা রেখে, খাড়া গোঁফ নিয়ে সুনিয়ন্ত্রিত…

  • | | |

    ডন ব্র্যাডম্যান

    ২৭ আগস্ট, ১৯০৮ তারিখে জন্মগ্রহণকারী নিউ সাউথ ওয়েলসের ছোট্ট, অপরিচিত শহর কুটামুন্ড্রা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, লেখক ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে দক্ষ ছিলেন। পাশাপাশি মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। কুটামুন্ড্রায় জন্মগ্রহণ করলেও শৈশবকাল বাউরেলে অতিবাহিত করেন। বাউরেল ইন্টারমিডিয়েট হাই…