২৭ জুন, ১৯৮৩ তারিখে ছোট্ট শহর ফালাবোরা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিং করতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৯ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। পিতা খনিতে কাজ করতেন। ক্ষুদে সংস্করণের ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার সফলতম বোলার হিসেবে নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন। ফাস্ট বোলারদের তালিকায় সন্দেহাতীতভাবেই ডেল স্টেইনকে সর্বাগ্রে স্থান দেয়া যায়। বিশ্বের অন্যতম দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলার হিসেবে তাঁর পরিচয় রয়েছে। গতির সাথে সুইংয়ের অপূর্ব যোগসূত্র স্থাপনে তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল। তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন পুরোপুরি মসৃণ ছিল না।

ক্রিকেটের প্রতি সুগভীর অনুরাগে জড়িয়ে পড়েন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ক্রমাগত সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে থাকেন। ক্রমাগত ঘণ্টাপ্রতি ১৪৫ কিলোমিটারের অধিক গতিবেগে বোলিং করতে পারতেন। বলে উভয় দিক দিয়েই সুইং আনয়ণে সক্ষমতা দেখিয়েছেন। ২০০৩ থেকে ২০১৯ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে কেপ কোবরাজ ও টাইটান্স এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্স, গ্ল্যামারগন, হ্যাম্পশায়ার ও ওয়ারউইকশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, আফ্রিকা একাদশ, কেপটাউন ব্লিটজ, ডেকান চার্জার্স, গুজরাত লায়ন্স, ইসলামাবাদ ইউনাইটেড, জ্যামাইকা তাল্লাহজ, ক্যান্ডি তুস্কার্স, মেলবোর্ন স্টার্স, নর্থ ইস্টার্ন ট্রান্সভাল, প্রোটিয়াস, নেলসন ম্যান্ডেলা বে স্টার্স, প্রোটিয়াস, কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর, সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের পক্ষে খেলেছেন। ১৭ অক্টোবর, ২০০৩ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে নর্দার্নস বনাম ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। ঘরোয়া ক্রিকেটে সাফল্যের কারণে দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন।

২০০৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ৯৩ টেস্ট, ১২৫টি ওডিআই ও ৪৭টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ২০০৪-০৫ মৌসুমে নিজ দেশে মাইকেল ভনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ১৭ ডিসেম্বর, ২০০৪ তারিখে পোর্ট এলিজাবেথের জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। এবি ডি ভিলিয়ার্সের সাথে একযোগে তাঁর টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ইন-সুইঙ্গারে মার্কাস ট্রেসকোথিককে বিদেয় করে নিজের প্রথম টেস্ট উইকেটের সন্ধান পান। খেলায় তিনি ২/১১৭ ও ১/২৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৮ ও ২ রান সংগ্রহ করেন। অ্যান্ড্রু স্ট্রসের অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে পরাভূত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুটা অবশ্য তেমন সুবিধের হয়নি। প্রথম ছয় খেলা থেকে ৫২ গড়ে মাত্র আট উইকেট দখল করেছিলেন। এরপর দল থেকে বাদ পড়েন। তবে, খুব দ্রুত এর সমুচিত জবাব দেন। এরপর থেকে নিজের স্থান বহাল রাখেন।

২০০৫-০৬ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৫ এপ্রিল, ২০০৬ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে বিবি ম্যাককালামকে বিদেয় করে টেস্টে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ২/২৬। এ পর্যায়ে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। বল হাতে ২/৮৫ ও ৫/৪৭ পান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১৩ ও ৭* রান সংগ্রহ করেছিলেন। মাখায়া এনটিনি’র অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ১২৮ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ২৭ এপ্রিল, ২০০৬ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন ১৩ রানের সমকক্ষ হন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/১১৪ ও ১/২৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৮ নভেম্বর, ২০০৭ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৫/৪৭। খেলায় তিনি ৫/৩৪ ও ৫/৫৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩৫৮ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই সফরের ১৬ নভেম্বর, ২০০৭ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। এছাড়াও, ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে আইই ও’ব্রায়ানের উইকেট লাভ করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৫/৩৪। খেলায় তিনি ৪/৪২ ও ৬/৪৯ লাভ করেন। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ পূর্বতন ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে ঐ খেলায় স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৫৯ রানের ব্যবধানে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে ডোয়াইন ব্র্যাভো’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ১০ জানুয়ারি, ২০০৮ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১/১৮ ও ৬/৭২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাটিং করার সুযোগ না পেলেও একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। তবে, অ্যাশওয়েল প্রিন্সের অসাধারণ শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১০০ রানে জয় পেলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। এ সিরিজে ৫৯ রান সংগ্রহসহ ২০ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

২০০৮-০৯ মৌসুমে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ১৭ ডিসেম্বর, ২০০৮ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২/৮১ ও ২/৮১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এবি ডি ভিলিয়ার্সের অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে সফরকারীরা ৬ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ২৬ ডিসেম্বর, ২০০৮ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলেন। দশ উইকেট দখল করে অন্যতম স্বর্ণালী মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৫/৮৭ ও ৫/৬৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৭৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০০৯-১০ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যান্ড্রু স্ট্রসের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ১৪ জানুয়ারি, ২০১০ তারিখে জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে সফররত ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৫/৫১ ও ২/৬৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৭৪ রানে জয় পেলে সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। মরনে মরকেলের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০১০ সালে দলের সাথে ভারত গমন করেন। নাগপুর টেস্টে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ৭/৫১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়ে আধুনিক ক্রিকেটে ফাস্ট বোলিংয়ের অপূর্ব প্রদর্শন করেছিলেন।

১৭ আগস্ট, ২০০৫ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে আফ্রিকা একাদশের সদস্যরূপে এশিয়া একাদশের বিপক্ষে ওডিআইয়ে প্রথম খেলেন। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় স্মরণীয় খেলা উপহার দেন। ভারতের বিপক্ষে ৫/৫৫ নিয়ে খেলাটি নিজেদের করে নেন।

২০১১-১২ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৭ মার্চ, ২০১২ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৭৯ ও ০/২৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। দলীয় অধিনায়কের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর বদান্যতায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

২০১২-১৩ মৌসুমে নিজ দেশে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২ জানুয়ারি, ২০১৩ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ডিএজে ব্রেসওয়েলের প্রথম উইকেট লাভ করে টেস্টে ৩০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ২/১৮ ও ৩/৬৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে তাঁকে ব্যাট হাতে মাঠে নামতে হয়নি। ভার্নন ফিল্যান্ডারের বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২৭ রানে জয়লাভ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ১১ জানুয়ারি, ২০১৩ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫/১৭ ও ৩/৪৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ১৯৩ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

একই মৌসুমে নিজ দেশে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তারিখে জোহানেসবার্গে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৬/৮ ও ৫/৫২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২১১ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর হাশিম আমলা’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ের গমন করেন। ৯ আগস্ট, ২০১৪ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/৪৬ ও ৩/৩৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। অভিষেক ঘটা ডেন পাইতের বোলিং কল্যাণে সফরকারীরা ৯ উইকেটে জয় পায়।

শন পোলক, মাখায়া এনটিনি ও অ্যালান ডোনাল্ডের পর চতুর্থ দক্ষিণ আফ্রিকান বোলার হিসেবে তিনশত টেস্ট উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। তাঁদের তুলনায় খুব সহজেই দ্রুততার সাথে এ অর্জনে নিজেকে জড়ান। তিন শতাধিক উইকেট লাভকারী বোলারদের মধ্যে তিনি সেরা স্ট্রাইক-রেটের অধিকারী। ২০১৭ সালে চারশত উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ২০১৮ সালে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে উইকেট নিয়ে শন পোলকের ৪২১ উইকেট লাভের রেকর্ডের সমকক্ষ হন। টেস্টে ২২.৮০ গড়ে চার শতাধিক উইকেট পেয়েছেন।

তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে আঘাত নিত্যসঙ্গী ছিল ও শেষদিকে বেশ কাবু হয়ে পড়েন। কাঁধের আঘাতের কারণে অনেকটা সময় খেলার জগৎ থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হন। তাসত্ত্বেও বেশ কয়েকবার মাঠে ফিরে এসে দৃঢ়তার সাথে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হয়েছিলেন।

২০১৮-১৯ মৌসুমে নিজ দেশে ডিমুথ করুণারত্নে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সফরকারী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০/৩৯ ও ০/৩৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৩ ও ০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। কুশল মেন্ডিসের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। আগস্ট, ২০২১ সালে ক্রিকেট জগৎ থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।

২০০৮ থেকে ২০১৪ সময়কালে রেকর্ডসংখ্যক ২৬৩ সপ্তাহ আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের বোলারদের তালিকায় শীর্ষ স্থান দখল করেছিলেন। ২০০৮ সালে আইসিসি বর্ষসেরা টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবে মনোনীত হন। ২০০৮ থেকে ২০১৪ ও ২-১৬ সালে আইসিসি বর্ষসেরা টেস্ট দলে ঠাঁই পান। ২০১১ ও ২০১৪ সালে আইসিসি বর্ষসেরা ওডিআই দলে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১৩ সালে উইজডেন কর্তৃক শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটার ও ২০১৪ সালে উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন।

অবসর গ্রহণের পর থেকে কোচিং ও ধারাভাষ্যকর্মের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। অদ্যাবধি ক্রিকেট জগতে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন ও প্রায়শঃই খেলোয়াড়ী জীবনের দিনগুলোর স্মরণীয় ঘটনা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরে থাকেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ২০০৭ সাল থেকে তাঁরা ডেটিং করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকান অভিনেত্রী ও মডেল জিন কাইতজম্যান নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।

Similar Posts

  • | | |

    জাভেদ মিয়াঁদাদ

    ১২ জুন, ১৯৫৭ তারিখে সিন্ধু প্রদেশের করাচীতে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। সোজা-সাপ্টা, ক্রেতাদূরস্ত, বিচক্ষণ ও হাল ছেড়ে না দেয়ার মানসিকতা নিয়ে গড়ার ফলে খুব সহজেই স্বতন্ত্র…

  • | |

    স্টুয়ার্ট কার্লাইল

    ১০ মে, ১৯৭২ তারিখে সলসবারিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়কত্ব করেছেন। ১৯৯৩-৯৪ মৌসুম থেকে ২০০৫-০৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে ম্যাশোনাল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। অত্যন্ত দক্ষ ও কার্যকর ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ…

  • |

    সেলিম ইউসুফ

    ৭ ডিসেম্বর, ১৯৫৯ তারিখে সিন্ধু প্রদেশের করাচীতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। পাকিস্তানের পক্ষে টেস্ট ও ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৭৮-৭৯ মৌসুম থেকে ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে অ্যালাইড ব্যাংক, পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, পাকিস্তান কাস্টমস ও সিন্ধুর…

  • | | |

    জেজে ফেরিস

    ২১ মে, ১৮৬৭ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের সিডনিতে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। বামহাতে বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড – উভয় দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী জে. জে. ফেরিস শক্ত-মজবুত গড়নের কাঁধের কারণে বলে পেস আনয়ণ করতে…

  • |

    বিলি নিউহাম

    ১২ ডিসেম্বর, ১৮৬০ তারিখে শ্রপশায়ারের হলি ক্রস এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ফুটবলার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ১৮৮০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। আর্ডিংলিতে পড়াশুনো করেছেন। ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত ঐ কলেজে শিক্ষকতা করেন। সর্বক্রীড়ায় দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৮৮১ থেকে ১৯০৫ সময়কালে…

  • | | |

    জন আর্নল্ড

    ৩০ নভেম্বর, ১৯০৭ তারিখে অক্সফোর্ডের কাউলি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী পেশাদার ক্রিকেটার, আম্পায়ার ও রেফারি ছিলেন। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে স্লো বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৩০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯২৯ থেকে ১৯৫০ সময়কাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।…