২৫ নভেম্বর, ১৯৮০ তারিখে কেপ প্রভিন্সের পোর্ট এলিজাবেথে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
ট্যাক্সি চালকের সন্তান ছিলেন। শুরুতে নর্দার্ন আফ্রিকান ক্রিকেট দলে খেলেন। এরপর, দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের পক্ষে খেলার সুযোগ পান। ২০০০-০১ মৌসুম থেকে ২০১৬ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে হাইভেল্ড লায়ন্স, নর্থ ওয়েস্ট, নর্দার্নস ও টাইটান্স এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্স, গ্ল্যামারগন, ল্যাঙ্কাশায়ার ও সমারসেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। পেশাদারী পর্যায়ে ক্রিকেট খেলার নয় বছর পর টেস্ট খেলার সুযোগ পান।
২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ৩৬ টেস্ট, ২১টি ওডিআই ও দুইটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৬ তারিখে ইস্ট লন্ডনে অনুষ্ঠিত সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। ২০০৯-১০ মৌসুমে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে ভারত গমন করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ব্যক্তিগতভাবে বেশ সফল ছিলেন ও শতক হাঁকিয়ে অভিষেক পর্বকে স্মরণীয় করে রাখেন। ঐ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১০০ রান তুলেন। এরফলে, অ্যান্ড্রু হাডসন ও জ্যাক ক্যালিসের পর তৃতীয় দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে অভিষেক টেস্টে শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। পরবর্তীতে অবশ্য দুই বছর পর ফাফ ডু প্লিসি তাঁদের সাথে এ তালিকায় নিজেকে যুক্ত করেন। খেলায় তিনি ১০০ ও ২১ রান সংগ্রহসহ একটি রান-আউটের সাথে নিজেকে জড়ান। তবে, হাশিম আমলা’র জোড়া শতক সত্ত্বেও সফরকারীরা ইনিংস ও ৫৭ রানে পরাজয়বরণ করলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।
২০১০ সালের পোর্ট অব স্পেন টেস্টে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সুলেইমান বেনকে এলবিডব্লিউতে বিদেয় করে একমাত্র আন্তর্জাতিক উইকেটের সন্ধান পান। অভিষেকে সাড়া জাগানোর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও ভারতে বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। ফলশ্রুতিতে, দল থেকে বাদ পড়েন। তাসত্ত্বেও, ২০১১ মৌসুমকে ঘিরে গ্ল্যামারগন কর্তৃপক্ষ তাঁর সাথে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। বিস্ময়করভাবে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হয়েছিলেন।
২০১১-১২ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৭ মার্চ, ২০১২ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১১ ও ২৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। দলীয় অধিনায়কের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর বদান্যতায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ২৩ মার্চ, ২০১২ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১০৯ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ১৫৬ ও ৩৯ রান সংগ্রহ করেন। এ পর্যায়ে টেস্টে ইতিহাসের আটজন খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে পাঁচদিনই ব্যাট করার কৃতিত্বের অধিকারী হন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলেও সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।
২০১২-১৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবারের টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ৯ নভেম্বর, ২০১২ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৬৪ ও ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/২০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের অসাধারণ দ্বি-শতক সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই মৌসুমে নিজ দেশে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২ জানুয়ারি, ২০১৩ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১০৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ভার্নন ফিল্যান্ডারের বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২৭ রানে জয়লাভ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ১১ জানুয়ারি, ২০১৩ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৭ রানে পৌঁছানোকালে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ২১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ডেল স্টেইনের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ১৯৩ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর হাশিম আমলা’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ের গমন করেন। ৯ আগস্ট, ২০১৪ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৩২ ও ১৭ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। অভিষেক ঘটা ডেন পাইতের বোলিং সাফল্যে সফরকারীরা ৯ উইকেটে জয় পায়।
২০১৪-১৫ মৌসুমে নিজ দেশে দিনেশ রামদিনের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২ জানুয়ারি, ২০১৫ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। সর্বশেষ ইনিংসে সুলেইমান বেনের বলে শূন্য রানে বিদেয় নেন। অবশ্য, প্রথম ইনিংসে ৪২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, এবি ডি ভিলিয়ার্সের অসাধারণ শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পায়। ঐ সিরিজে দলীয় অধিনায়ক হাশিম আমলা’র দূর্দান্ত ব্যাটিংশৈলীতে তাঁর দল ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করেছিল। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর শেষ টেস্টে পরিণত হয়। ৬ জানুয়ারি, ২০১৫ তারিখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।
অভিষেক টেস্টে শতক হাঁকানোর পর তেমন উল্লেখযোগ্য ইনিংস খেলেননি। এরফলে, অসাধারণ দলে অবস্থান করেও কেবলমাত্র সাধারণ খেলা উপহারের মাধ্যমেই খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টানেন। অসাধারণ খেলোয়াড় না হলেও দলে টিকে থাকার অবস্থায় ছিলেন। সর্বদাই দল নির্বাচকমণ্ডলীর সুনজরে ছিলেন। ইংল্যান্ডে কোলপ্যাক চুক্তির আওতায় ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে চুক্তিবদ্ধ হন।
২০১৫-১৬ মৌসুমে ঘরোয়া টি২০ প্রতিযোগিতার খেলায় গড়াপেটার কারণে ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬ তারিখে সিএসএ দুই বছরের জন্যে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। তবে তিনি পাতানো খেলায় অংশগ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। সামান্থা পিটারসন নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির জেসন নামীয় পুত্র সন্তান রয়েছেন। স্বল্প কয়েকজন ক্রিকেটারের অন্যতম হিসেবে নিজস্ব ওয়েবসাইট পরিচালনায় অগ্রসর হয়েছেন। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ২০১৩ সালে আলভিরো পিটারসন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।
