১৮ অক্টোবর, ১৯৬৮ তারিখে উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
গোরখপুরের সম্ভ্রান্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা ইটের ভাটার স্বত্ত্বাধিকারী ছিলেন। পারিবারিক ব্যবসা থেকে দূরে থেকে ক্রিকেটার হবার স্বপ্নে বিভোঁর ছিলেন। কৈশোরকালে ক্রিকেটে সাফল্য লাভের লক্ষ্যে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে চলে যান। ক্রিকেট মাঠের কাছাকাছি কক্ষ ভাড়া করেন ও প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। মধ্যপ্রদেশের ক্রিকেটার ও মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট সংস্থার সভাপতি সঞ্জয় জাগডালের ছত্রচ্ছায়ায় নিজেকে গড়ে তুলেন। তাঁকে তিনি মন্ত্রণাদাতা ও গুরু হিসেবে বিবেচনায় আনেন।
১৯৮৪-৮৫ মৌসুম থেকে ২০০৫-০৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলা ও মধ্যপ্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, এয়ার ইন্ডিয়ার সদস্যরূপে খেলেছেন। ডিসেম্বর, ১৯৮৪ সালে মধ্যপ্রদেশের সদস্যরূপে রাজস্থানের বিপক্ষে তাঁর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয়। এ পর্যায়ে তাঁর বয়স ছিল ১৬ বছর। স্মরণীয় খেলা উপহার দেন। খেলার একমাত্র ইনিংসে তিনি ৫/১০১ পান। ঐ মৌসুমে আর মাত্র তিনটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন ও আট উইকেট দখল করেন। তুলনামূলকভাবে পরের মৌসুমে আরও ভালো খেলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২৩ উইকেট পেয়েছিলেন। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান একাদশের বিপক্ষে ভারতের অনূর্ধ্ব-২৫ দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো বড় ধরনের সফলতা পান।
১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ১৭ টেস্ট ও ১৮টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে নিজ দেশে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৯ বছর বয়সে ১১ জানুয়ারি, ১৯৮৮ তারিখ থেকে শুরু হওয়া অত্যাশ্চর্য টেস্টে অংশ নেন। অজয় শর্মা ও বুরকেরি রমনের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অভিষেকে অসাধারণ রেকর্ড গড়ে নিজেকে স্মরণীয় করে রেখেছেন। মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে ভারতের ২৫৫ রানের বিজয়ে অনন্য ভূমিকা পালন করেন ও ১-১ ব্যবধানে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। ব্যাট হাতে ১ রান তুললেও খেলায় ১৩৬ রান খরচায় ১৬ উইকেট দখল করেছিলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৮/৬১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৮/৭৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়েছিলেন। একই সফরের ২২ জানুয়ারি, ১৯৮৮ তারিখে গোয়ালিয়রে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন।
প্রথম টেস্ট থেকে ১৬ উইকেট দখল করলেও পরবর্তী ১৬ টেস্ট থেকে মাত্র ৫০ উইকেট পেয়েছিলেন। ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে নিজ দেশে জন রাইটের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। নরেন্দ্র হিরবাণী ও আরশাদ আইয়ুব টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম জোড়া হিসেবে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে উভয়ে ২০ বা তদূর্ধ্ব উইকেট উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁরা এ দূর্লভ কৃতিত্বের অধিকারী হন। দু’জনে মিলে সর্বমোট ৪১ উইকেট পেয়েছিলেন। আইয়ুব ২১টি ও হিরওয়ানি ২০টি উইকেট পান। ঐ সিরিজে তাঁদের দল বিজয়ী হয়েছিল।
১২ নভেম্বর, ১৯৮৮ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ২/৬২ ও ৬/৫৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে শূন্য রানে অপরাজিত ছিলেন। ১৭২ রানে জয় পেলে স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে নিজ দেশে লি জার্মনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৮ নভেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে কটকে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলায় ব্যাটিং করার সুযোগ না পেলেও একমাত্র ইনিংসে ৬/৫৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। ঐ টেস্টে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে নিজ দেশে হান্সি ক্রোনিয়ের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২৭ নভেম্বর, ১৯৯৬ তারিখে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ০/৫১ ও ০/৪০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, গ্যারি কার্স্টেনের জোড়া শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ৩২৯ রানের ব্যবধানে জয়ী হয় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
শুরুতে বেশ প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রাখলেও পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব কমই সাড়া জাগিয়েছিলেন। দুই দশকের অধিক সময় রঞ্জী ট্রফিতে মধ্যপ্রদেশ দলের বোলিং আক্রমণে প্রধান চালিকাশক্তি ছিলেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর জাতীয় দল নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেন।
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ তারিখে ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমিতে স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। এমএন হিরবাণী নামীয় সন্তানের জনক।
