১ মে, ১৯৫১ তারিখে বার্বাডোসের ব্ল্যাক বেস এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়াও, দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ইংল্যান্ডের রিডিংভিত্তিক সাটন সেকেন্ডারি স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। বিধ্বংসী উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের পরিচিতি পেয়েছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে বার্বাডোস এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, স্কটল্যান্ড দলের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৯২ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন।
১৯৭৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ১০৮ টেস্ট ও ১২৮টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে ভারত সফরে যান। ২২ নভেম্বর, ১৯৭৪ তারিখে ব্যাঙ্গালোরের এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অপর বিখ্যাত ব্যাটসম্যান স্যার ভিভ রিচার্ডসের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৯৩ ও ১০৭ রান তুলে দলকে জয় এনে দেন। ২৬৭ রানে জয়লাভ করে সফরকারীরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
সূচনা পর্বে দারুণ খেললেও পরবর্তীতে কয়েকট খেলায় দূর্বল ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের ফলে দল থেকে বাদ পড়েন। ১৯৭৬ সালে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। এ সফরেই দৃশ্যতঃ নিজেকে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেন। পাঁচ-খেলা নিয়ে গড়া টেস্ট সিরিজে তিন শতক সহযোগে ৫৯১ রান তুলেন ও দল ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।
৮ জুলাই, ১৯৭৬ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। জোড়া শতক হাঁকান। খেলায় সফরকারীরা ৪২৫ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। ব্যাট হাতে নিয়ে ১৩৪ ও ১০১* রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন।
বেশ কয়েকটি কার্যকর ইনিংস খেললেও বড় অঙ্কের রান তুলতে পারেননি। ইংল্যান্ড সফরের পর একটি ও ১৯৮৩ সালে ভারতের বিপক্ষে নিজ দেশে খেলার পূর্বে আরেকটি শতক হাঁকিয়েছিলেন।
১৯৭৯-৮০ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২ ও ৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছি। সফরকারীরা ১ উইকেটে নাটকীয়ভাবে পরাভূত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
এরপর, একই সফরের ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৯০ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৯১ ও ৯৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, কলিন ক্রফ্ট ও আম্পায়ার ফ্রেড গুডলের টেস্ট নামে পরিচিতি পাওয়া তিক্ততাপূর্ণ খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা পিছিয়ে পড়ে।
১৯৮৪ সালে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। সব মিলিয়ে এ সিরিজে ৫৭২ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। ৯ আগস্ট, ১৯৮৪ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ২২ ও ৩৪ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ডেসমন্ড হেইন্সের অসাধারণ শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ১৭২ রানে জয় পেলে ৫-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে নিজ দেশে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৯ মার্চ, ১৯৮৫ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১০০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১২ মার্চ, ১৯৮৭ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দল পরাজিত হলেও ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ রানে পৌঁছানোকালে ৫৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ২ ও ১৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, রিচার্ড হ্যাডলি ও ইয়ান চ্যাটফিল্ডের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।
১৯৯০-৯১ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৭ এপ্রিল, ১৯৯১ তারিখে সেন্ট জোন্সে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৬ ও ৪৩ রান সংগ্রহসহ প্রথম ইনিংসে ডেভিড বুনের ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। মার্ক টেলরের অনবদ্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় সফরকারীরা ১৫৭ রানে জয় পেলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
১৯৭৭ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ১৯৭৮ সালে ওয়াল্টার লরেন্স ট্রফি লাভ করেন। ডিসেম্বর, ২০১৯ সালে নাইট পদবী লাভ করেন। নিজের নামের সাথে ডেসমন্ড হেইন্সকে জড়িয়ে রেখেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে তাঁরা সফলতার সাথে টেস্ট জুটি গড়ে ৬৪৮২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০ বছর পর তাঁদের সাফল্যকে রাহুল দ্রাবিড়–শচীন তেন্ডুলকর জুটি ম্লান করে দেন। তাঁর সম্মানার্থে ডেসমন্ড হেইন্সের সাথে কেনসিংটন ওভালের একটি ছাউনি দ্য গ্রীনিজ এন্ড হেইন্স স্ট্যান্ড নামে নামকরণ করা হয়। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। এছাড়াও, অবসর গ্রহণের পর নৈশভোজন পরবর্তী বক্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। সিজি গ্রীনিজ নামীয় সন্তানের জনক।
