| |

কিথ মিলার

২৮ নভেম্বর, ১৯১৯ তারিখে ভিক্টোরিয়ার সানশাইন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেট তারকা ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে মাঝারিসারিতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ে সবিশেষ পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

‘নাজেট’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ১.৮৫ মিটার ও ৮০ কেজি ওজনের অধিকারী ছিলেন। ১৫ বছর বয়সে তাঁর উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি (১.৬২ মিটার) ও ওজন ছিল ৪৪ কেজি। ১৯৩৭-৩৮ মৌসুম থেকে ১৯৫৯ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলস ও ভিক্টোরিয়া এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৪৬ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ৫৫ টেস্টে অংশ নিয়েছেন। ১৯৪৫-৪৬ মৌসুমে বিল ব্রাউনের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের ইতিহাসে এটিই অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী খেলা ছিল। ২৯ মার্চ, ১৯৪৬ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। কলিন ম্যাককুল, ডন টলন, আর্নি টোশ্যাক, ইয়ান জনসন ও রে লিন্ডওয়ালের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ডব্লিউএ হ্যাডলিকে বিদেয় করে নিজস্ব প্রথম বলে উইকেটের সন্ধান পান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ৩০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। চার দিন নিয়ে গড়া ঐ টেস্টটি দুই দিনে শেষ হয়ে যায়। স্বাগতিক দল ৪২ ও ৫৪ রানে গুটিয়ে গেলে প্রতিপক্ষের কাছে ইনিংস ও ১০৩ রানে পরাভূত হয়।

১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে ব্রিসবেন টেস্টে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ৭/৬০ লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৪৭ রান তুলেন।

১৯৪৯-৫০ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে লিন্ডসে হ্যাসেটের নেতৃত্বাধীন অজি দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৪৯ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ২১ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/৪০ ও ০/২৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ইনিংস ও ৮৫ রানে জয়লাভ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫০ তারিখে জোহানেসবার্গের এলিস পার্কে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৮৪ ও ৩৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে পিএল উইনস্লো’র প্রথম উইকেট লাভ করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। বল হাতে নিয়ে তিনি ৩/৭৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও সফরকারীরা ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে ইয়ান জনসনের নেতৃত্বাধীন অজি দলের অন্যতম সদস্যরূপে পাকিস্তান সফরে যান। ১১ অক্টোবর, ১৯৫৬ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্ট খেলেন। খেলায় তিনি ২১ ও ১১ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৪০ ও ০/১৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ফজল মাহমুদের খেলায় সফরকারীরা ৯ উইকেটে পরাজয়বরণ করেছিল। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

১৯৫৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। টেস্টগুলোয় ৩৬.৯৭ গড়ে সাত শতক সহযোগে ২৯৫৮ রান ও ২২.৯৭ গড়ে ১৭০ উইকেট দখল করেছিলেন। শতকগুলোর তিনটি ইংল্যান্ড ও চারটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করেছিলেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৪৮.৯০ গড়ে ১৪১৮৩ রান ও ২২.৩০ গড়ে ৪৯৭ উইকেট পেয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক জন গডার্ড একবার বলেছিলেন যে, ‘কিথ মিলারকে দাও, আমরা বিশ্বকে পরাজিত করবো।’ রে লিন্ডওয়ালের সাথে একত্রে খেলেই অধিক সফলতা পেয়েছেন।

খুব সম্ভবতঃ অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা অল-রাউন্ডার ছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটিং ও বোলিং – উভয় বিভাগেই উদ্বোধনে নামতেন। তাঁর অমর কীর্তিকে ঘিরে রোল্যান্ড পেরি ‘কিথ মিলার: দ্য লাইফ অব এ গ্রেট অল-রাউন্ডার’ শীর্ষক আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলে দক্ষ ছিলেন। ব্রাইটন ও সেন্ট কিল্ডার পক্ষে খেলেছেন।

১৯৫৪ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ক্রিকেটে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৫৬ সালে নববর্ষের সম্মাননা হিসেবে এমবিই উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৮৬ সালে স্পোর্ট অস্ট্রেলিয়া হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৯৬ সালে প্রবর্তিত অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত দশজনের অন্যতম ছিলেন। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়া দিবসের সম্মাননায় অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া পদবী লাভ করেন। জানুয়ারি, ২০১০ সালে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

২০ বছর ইংল্যান্ডভিত্তিক ডেইলি এক্সপ্রেসে বিশেষ ক্রিকেট লেখক হিসেবে প্রতিবেদন লিখতেন। এরপর, রবার্ট স্যাংস্টার এন্টারপ্রাইজের ভার্নন্স পুলসের সাথে যুক্ত ছিলেন। কিছুদিন দূর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। অতঃপর, ১১ অক্টোবর, ২০০৪ তারিখে ভিক্টোরিয়ার মর্নিংটন পেনিনসুলা এলাকায় ৮৪ বছর ৩১৮ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। তাঁর শবানুষ্ঠানে রিচি বেনো ও ইয়ান চ্যাপেল শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। এমসিজিতে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়। মাইকেল কর্করে লর্ডসের প্যাভিলিয়নে তাঁর প্রতিকৃতি প্রদর্শন করেন। ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে তাঁর ব্যবহৃত ব্যাগি গ্রীন ক্যাপ ২৮ জুন, ২০০৬ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত নিলামে Aus$৩৫,০০০ অস্ট্রেলীয় ডলার অর্থাৎ $২৬,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে বিক্রয় করা হয়।

Similar Posts

  • |

    সায়মন কেরিগান

    ১০ মে, ১৯৮৯ তারিখে ল্যাঙ্কাশায়ারের প্রেস্টন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলছেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামেন। ২০১০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী তিনি। ইংল্যান্ডের পরবর্তী স্পিনার হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ল্যাঙ্কাশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, ইংল্যান্ড…

  • |

    জিয়াউর রহমান

    ২ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে খুলনা বিভাগের বেদবুনিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ মারকুটে অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। কার্যকর পেস বোলার থেকে পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানে পরিণত হন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে পাঁচ বছর অংশ নেয়ার পর হাঁটুর আঘাতের কারণে এ পরিবর্তন ঘটে।…

  • |

    প্রবীর সেন

    ৩১ মে, ১৯২৬ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কুমিল্লায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী পঙ্কজ রায়ের জন্মের ঠিক দুই বছর পূর্বে তাঁর জন্ম। প্রথম উইকেট-রক্ষক হিসেবে ভারতের পক্ষে নিয়মিতভাবে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। ভারতের প্রথম সেরা উইকেট-রক্ষকের মর্যাদা পান।…

  • | |

    নিরোদ চৌধুরী

    ১৪ মে, ১৯২৩ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বিহারের জামশেদপুরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। শৈশবকাল থেকেই সর্বক্রীড়ায় তাঁর প্রতিশ্রুতিশীলতা লক্ষ্য করা যায়। ক্রিকেট, ফুটবল ও উচ্চ লম্ফে বেশ দক্ষ ছিলেন। মোহনবাগানের পক্ষে ফুটবল খেলায়…

  • | |

    ডব্লিউজি গ্রেস

    ১৮ জুলাই, ১৮৪৮ তারিখে ব্রিস্টলের ডাউনএন্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত শৌখিন ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়াও, ইংল্যান্ডের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। সন্দেহাতীতভাবেই সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারদের প্রতীকি খেলোয়াড়ের পরিচিতি লাভ করেছেন। পরিচিতিমূলক দাঁড়ি রাখার পাশাপাশি অসম্ভব ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে ঊনবিংশ ও বিংশ শতকের সূচনালগ্নে অন্যতম…

  • |

    চামারা দুনুসিংহে

    ১৯ অক্টোবর, ১৯৭০ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকরী ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। ১৯৯০-এর দশকে শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯০-৯১ মৌসুম থেকে ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে অ্যান্টোনিয়ান্স স্পোর্টস ক্লাব, নন্দেস্ক্রিপ্টস ক্রিকেট ক্লাব ও সারাসেন্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৯৫…