১৮ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে পাঞ্জাবের ইসলামাবাদে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
খাজা তারিক ও ফোজিয়া তারিক দম্পতির সন্তান। শিশু অবস্থায় পরিবারের সাথে নিউ সাউথ ওয়েলসে অভিবাসিত হন। ওয়েস্টফিল্ডস হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ‘উজি’ ডাকনামে ভূষিত উসমান খাজা ১.৭৫ মিটার উচ্চতার অধিকারী। প্রশিক্ষিত বিমানচালক তিনি। নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিমানচালনবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এরফলে, বিমান চালনার অনুমতি পাবার পূর্বেই বৈমানিক হিসেবে অনুমতি পান। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশীপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ক্লাব ক্রিকেটে র্যান্ডউইক পিটারশাম ক্রিকেট ক্লাবে খেলেন।
২০০৭-০৮ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুইন্সল্যান্ড এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ার, গ্ল্যামারগন ও ল্যাঙ্কাশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, সিডনি থান্ডার, ব্রিসবেন হিট, রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টস, ভ্যালি ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট ক্লাব ও ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের পক্ষে খেলেছেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত নিউ সাউথ ওয়েলস বনাম ভিক্টোরিয়ার মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট জীবনের সূত্রপাত ঘটান। ২০১২-১৩ মৌসুমের শুরুতে নিউ সাউথ ওয়েলস ত্যাগ করে কুইন্সল্যান্ডে চলে আসেন।
বিগ ব্যাশ লীগের পঞ্চম আসরে দুইটি অপরাজিত শতরানের ইনিংস খেলেন। সিডনি থান্ডারের শিরোপা বিজয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন।
২২ জুন, ২০১০ তারিখে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া থেকে তাঁকে ইংল্যান্ডে সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলার জন্যে অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্যরূপে মনোনীত করে।
২০১১ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০১০-১১ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে ১৭-সদস্যের অস্ট্রেলিয়া দলে অন্তর্ভুক্ত হন। ঐ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যান্ড্রু স্ট্রসের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। তৃতীয় টেস্ট চলাকালে রিকি পন্টিং আঙ্গুলে চোট পান। ফলশ্রুতিতে, রিকি পন্টিংয়ের সম্ভাব্য আরোগ্য লাভ করতে না পারলে তাঁকে সহায়ক খেলোয়াড় হিসেবে রাখা হয়। এরপর, ৩ জানুয়ারি, ২০১১ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে সফররত ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে খেলেন। মাইকেল বিয়ারের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। টেস্টে ৪১৯তম ব্যাগি গ্রীন ক্যাপ লাভের অধিকারী হন। এরফলে, পাকিস্তানে জন্মগ্রহণকারী প্রথম মুসলিম ও পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে টেস্ট খেলার গৌরব অর্জন করেন। এছাড়াও, ৮০ বছরের মধ্যে বিদেশে জন্মগ্রহণকারী সপ্তম ক্রিকেটার হন। খেলায় তিনি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ৩৭ ও ২১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, অ্যালাস্টেয়ার কুকের অসাধারণ ব্যাটিং দাপটে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৮৩ রানে পরাভূত হলে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
২০১৫-১৬ মৌসুমে স্টিভেন স্মিথের নেতৃত্বাধীন অজি দলের অন্যতম সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ১১৯ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১৪০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, চারটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। অ্যাডাম ভোজেসের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৫২ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০১৮ সালে দুবাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ শতক হাঁকিয়ে অস্ট্রেলিয়া দলকে রক্ষা করেন। ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে দুইটি ধ্রুপদীশৈলীর ওডিআই শতরান করেন। এরফলে, ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকল্পে অস্ট্রেলিয়া দলে তাঁর স্থান নিশ্চিত করেন।
২০১৮-১৯ মৌসুমে টিম পেইনের নেতৃত্বে অজি দলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করেন। ৭ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখে দুবাইয়ে অপর সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। ৮৫ ও ১৪১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসামান্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২২-২৩ মৌসুমে নিজ দেশে ডিন এলগারের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ৪ জানুয়ারি, ২০২৩ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৩৩ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৪০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৭৪ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১৯৫* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২৩-২৪ মৌসুমে প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ৮ মার্চ, ২০২৪ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ১৬ ও ১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, অ্যালেক্স কেরি’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
২০২৪-২৫ মৌসুমে নিজ দেশে রোহিত শর্মা’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ১৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২১ ও ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ট্রাভিস হেডের অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে অগ্রসর হতে থাকে।
একই মৌসুমে স্টিভেন স্মিথের নেতৃত্বাধীন অজি দলের অন্যতম সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৯৫ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৩৫২ বল মোকাবেলায় ২৩২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এটি তাঁর প্রথম দ্বি-শতক ছিল। এ পর্যায়ে ৪৫.৪৮ গড়ে ৫৮৬৭ রান তুলেন। তাঁর অসাধারণ দ্বি-শতরানের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ২৪২ রানে জয় পেলে সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২৫-২৬ মৌসুমে নিজ দেশে বেন স্টোকসের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২১ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মিচেল স্টার্কের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০১১ সালে স্টেট বর্ষসেরা পুরস্কার লাভ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। র্যাচেল ম্যাকলিলান নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।
