১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪ তারিখে রাজধানী ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক ও রাজনীতিবিদ। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে মাঝারিসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। এছাড়াও ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছে।

খ্যাতনামা ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথমদিকের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঐ সময়ে বিকেএসপি থেকে বের হয়ে আসা শিক্ষার্থীদের খেলাধূলায় অংশগ্রহণে অনিশ্চিত থাকলেও পেশাদারী পর্যায়ের ক্রিকেটের সাথে যুক্ত হন ও ভবিষ্যতের অন্যতম সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে চিত্রিত করতে সচেষ্ট হন। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত বয়সভিত্তিক দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

‘দূর্জয়’ ডাকনামে পরিচিতি পান। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুম থেকে ২০০৩-০৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে ঢাকা বিভাগ ও ঢাকা মেট্রোপলিসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

বাংলাদেশের পিচের উপযোগী করে বলকে শূন্যে ভাসিয়ে অফ-স্পিন বোলিং করতেন। এছাড়াও, প্রথম ১৫ ওভারের খেলায় কিংবা ছয় নম্বর অবস্থানে নেমে বড় ধরনের রান সংগ্রহে মারকুটে ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। দূর্ভাগ্যবশতঃ টেস্ট কিংবা ওডিআইয়ের কোনটিতেই অর্ধ-শতরানের সন্ধান পাননি। মাঝারিসারিতে নেমে দলের প্রতিকূলতা মোকাবেলায় তৎপরতা দেখাতেন। তবে, ঐ সময়ের অনেকের ন্যায়ই খেলার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ছিল না ও তেমন সফলতার সন্ধান পাননি।

১৯৯৫ থেকে ২০০২ সময়কালে বাংলাদেশের পক্ষে আটটিমাত্র টেস্ট ও ২৯টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে শারজায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। ৮ এপ্রিল, ১৯৯৫ তারিখে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফির শিরোপা বিজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। এরফলে, দলে স্বীয় অবস্থান পাকাপোক্ত করে তুলেন।

২০০০-০১ মৌসুমে নিজ দেশে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ১০ নভেম্বর, ২০০০ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে অন্য সকলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে ৬/১৩২ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। এরফলে, বিলি মিডউইন্টার ও টম কেন্ডল (অস্ট্রেলিয়া), আলফ্রেড শ’ (ইংল্যান্ড), আলবার্ট রোজ-ইন্স (দক্ষিণ আফ্রিকা), মোহাম্মদ নিসার (ভারত) ও জন ট্রাইকোসের (জিম্বাবুয়ে) পর বিশ্বের সপ্তম বোলার হিসেবে স্ব-স্ব দেশের অভিষেক টেস্টে এ কীর্তিগাঁথা রচনা করেন। প্রতিপক্ষ ভারত দল স্বাগতিকদের থেকে মাত্র ২৯ রানে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া ভারতের বিপক্ষে ঐ খেলায় দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন।

এর এক মাস পূর্বে কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০০০ সালের আইসিসি নক-আউট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার পূর্বে আমিনুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশের সংগৃহীত ৪০০ রানের জবাবে ভারতের প্রথম ইনিংসে শচীন তেন্ডুলকরকে ফেরৎ পাঠানোসহ এ সাফল্য পেয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি তাঁর দূর্লভ কৃতিত্ব ছিল। পরবর্তীকালে অবশ্য অংশগ্রহণকৃত বাদ-বাকী টেস্টগুলোর কোন ইনিংসেই দুয়ের বেশী উইকেট পাননি।

এছাড়াও, অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যাট হাতে নিয়ে ১৫ ও ৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, সুনীল জোশী’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৯ উইকেটে জয় পায়।

২০০১ সালে অধিনায়কত্ব করা থেকে বিরত রাখার পর ২০০২ সালে দলের বাইরে অবস্থান করতে হয়। নিজ দেশে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ পরাজয়ের মাধ্যমে স্বল্পকালীন দলের নেতৃত্বভার থেকে বিরত থাকেন। পাশাপাশি হাঁটুর আঘাতের কারণেও খেলোয়াড়ী জীবন হুমকির কবলে পড়ে।

২০০২-০৩ মৌসুমে নিজ দেশে রিডলি জ্যাকবসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ৮ ডিসেম্বর, ২০০২ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১ ও ৫* রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে ১/১১৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। জার্মেইন লসনের অনবদ্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৩১০ রানে পরাভূত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

তিন মৌসুমে সব মিলিয়ে আট টেস্টে অংশ নিয়ে খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। তন্মধ্যে, সাত টেস্টে দলকে পরিচালনা করেন। ছয়টিতে তাঁর দল পরাজিত হয় ও একটিতে ড্র করে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে উপেক্ষিত হলেও আরও দুই মৌসুম ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ও মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্যরূপে নির্বাচিত হন। খেলোয়াড়দের সংস্থা বাংলাদেশের ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও, ডিসেম্বর, ২০০২ সালে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যরূপে মনোনীত হন। তবে, ২০০৮ সালে ঐ দায়িত্ব থেকে চলে আসেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ও পুত্র সন্তানের জনক।

Similar Posts

  • | |

    শচীন তেন্ডুলকর

    ২৪ এপ্রিল, ১৯৭৩ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ও পেশাদার ক্রিকেট তারকা। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক কিংবা লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিংয়ে অগ্রসর হতেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পেয়েছেন। একটি জাতির…

  • |

    ইন্ডিকা গালাগে

    ২২ নভেম্বর, ১৯৭৫ তারিখে পানাদুরায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিং করে দলে কিছু অবদান রাখেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। লিকলিকে দীর্ঘকায় গড়নের অধিকারী। বেশ লাফিয়ে বলে সিম আনয়ণে দক্ষতা প্রদর্শনসহ বাউন্স প্রদানে সক্ষম। ফিল্ডার হিসেবেও মাঠের যে-কোন স্থানে অবস্থান করেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় পানাদুরাভিত্তিক শ্রী সুমঙ্গলায়…

  • |

    মাইক ম্যাকাউলি

    ১৯ এপ্রিল, ১৯৩৯ তারিখে নাটালের ডারবানে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে মিডিয়াম কিংবা স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ভ্রমণপ্রিয় ক্রিকেটার হিসেবে সম্যক পরিচিতি পান। পাঁচটি রাজ্য দলের পক্ষে খেলেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে…

  • | |

    সাকলাইন মুশতাক

    ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৭৬ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হতেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। বিশ্বের সেরা স্পিনারদের অন্যতম ছিলেন। স্পিনের উপর তাঁর অসম্ভব নিয়ন্ত্রণ ছিল। দুসরার জন্যে সবিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। ব্যাটসম্যানের কাছে…

  • |

    আইজাক বাইস

    ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৫ তারিখে কেপ কলোনির সমারসেট ইস্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। বামহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯২০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯২১-২২ মৌসুম থেকে ১৯২৪-২৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর…

  • | |

    ক্রিস প্রিঙ্গল

    ২৬ জানুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৯০-এর দশকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দীর্ঘকায় গড়নের অধিকারী ও খোলা বক্ষে বোলিং কর্মে অগ্রসর হন। ডিসেম্বর, ১৯৮৭ সালে প্রথমবারের মতো প্রতিনিধিত্বমূলক খেলায় সকলের দৃষ্টি কাড়েন। অকল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২০ দলের…