|

এরিক ডাল্টন

২ ডিসেম্বর, ১৯০৬ তারিখে নাটালের ডারবানে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম কিংবা লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে নাটালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯২৪-২৫ মৌসুম থেকে ১৯৪৬-৪৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। মাত্র নয়টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতাপুষ্ট অবস্থায় ইংল্যান্ড সফরের লক্ষ্যে তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে ঠাঁই দেয়া হয়।

১৯২৯ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ১৫ টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯২৯ সালে নামি ডিনের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। ২২ বছর বয়সে ২৯ জুন, ১৯২৯ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলেন। কুইন্টিন ম্যাকমিলান ও স্যান্ডি বেলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৬ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

এ সফরে খুব কমই সফলতার সন্ধান পেয়েছিলেন। গ্রীষ্মের শেষদিকে তাঁর মাঝে বেশ উত্তরণ দেখা যায়। খুবই চমৎকারভাবে মাঝারিসারিতে আক্রমণাত্মক ভঙ্গীমায় ব্যাটিং করেছেন। আগস্টের শেষদিকে ক্যান্টারবারিতে কেন্টের বিপক্ষে ১৫৭ ও অপরাজিত ১১৬ রানের ইনিংস খেলেন। এরপর, হোভে সাসেক্সের বিপক্ষে ১০২ ও অপরাজিত ৪৪ রান সংগ্রহের পর ওয়েস্ট ব্রিজফোর্ডে স্যার জুলিয়ান কান একাদশের বিপক্ষে ৫৯ রান তুলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রত্যাবর্তন করে খুব দ্রুত প্রকৃত মানসম্পন্ন ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিতি ঘটাতে তৎপর হন। ১৯৩০-৩১ মৌসুমে নিজ দেশে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে পার্সি চ্যাপম্যানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩১ তারিখে ডারবানের কিংসমিডে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩১ ও ১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।

১৯৩১-৩২ মৌসুমে অস্ট্রালাশিয়া গমনার্থে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত হন। এ সফরে ব্যাট হাতে নিয়ে ৩২.৪১ গড়ে রান তুলেন। লঞ্চেস্টনে তাসমানিয়ার বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ১০০ রান সংগ্রহ করেন। অস্ট্রেলিয়ায় দুই টেস্ট ও নিউজিল্যান্ডে সমসংখ্যক টেস্টে অংশ নেন। তন্মধ্যে, ক্রাইস্টচার্চে সর্বোচ্চ ৮২ রান তুলেন।

ঐ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। জক ক্যামেরনের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। স্মর্তব্য যে, নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার এটিই প্রথম টেস্ট ছিল। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। ব্যক্তিগত পূর্বতন ৩১ রানের সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে তিনি ৮২ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলায় সফরকারীরা ইনিংস ও ১২ রানে জয়লাভ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৩৪-৩৫ মৌসুম শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম বিশ্বস্ত ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। নিউজিল্যান্ড সফর থেকে ফিরে আসার পর প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয় ৫৪.৭৬ গড়ে রান তুলেছিলেন। বোলিংয়েও এ সময়ে আশাতীত সাফল্য পান। ঐ মৌসুমে লেগ-ব্রেক বোলিং করে ১৯.০৮ গড়ে ২৫ উইকেট পেয়েছিলেন।

১৯৩৫ সালে আরও একবার ইংল্যান্ড গমন করেন। ঐ বছর হার্ভি ওয়েডের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। বব ওয়াটওয়ালি হ্যামন্ডের উইকেট লাভ করে লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিজয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন। এ সফর শেষে ৩৭.০৭ গড়ে ১৪৪৬ রানের সন্ধান পেয়েছিলেন।

একই সফরের ১৭ আগস্ট, ১৯৩৫ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৮২ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান। খেলায় তিনি ১১৭ ও ৫৭* রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৫০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। এটিই ইংল্যান্ডের মাটিতে দলের প্রথম জয় ছিল।

১৯৩৮-৩৯ মৌসুমে নিজ দেশে ওয়ালি হ্যামন্ডের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৩৮ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। প্রথম ইনিংসে ২২ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১০২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৪২ ও ২/২৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই সফরের ৩ মার্চ, ১৯৩৯ তারিখ থেকে শুরু হওয়া ও ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া ডারবানে অনুষ্ঠিত অসীম সময়ের টেস্টে সর্বশেষ খেলেছিলেন। সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে এইচ ভেরিটিকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ২/২৯। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৪/৫৯ ও ২/১০০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৫৭ ও ২১ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

৩ জুন, ১৯৮১ তারিখে নাটালের ওয়েস্টরিজ এলাকায় ৭৪ বছর ১৮৩ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • |

    হিউ টেফিল্ড

    ৩০ জানুয়ারি, ১৯২৯ তারিখে নাটালের ডারবানে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা পালন করতেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ক্রিকেটপ্রিয় পরিবারের সন্তান ছিলেন। ‘টোই’ ডাকনামে পরিচিত ছিলেন। বলকে তেমন বাঁক খাওয়াতেন না। পেসে ভিন্নতা আনয়ণে সচেষ্ট থাকতেন। জিম লেকার কিংবা ল্যান্স…

  • | |

    ড্যানি মরিসন

    ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ তারিখে অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। বিপজ্জ্বনক আউট-সুইঙ্গারের পাশাপাশি পেস বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম দ্রুততম গতিদানবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। দৃশ্যতঃ রিচার্ড হ্যাডলি’র উপযুক্ত উত্তরসূরী ছিলেন।১৯৮০-এর দশক থেকে শুরু করে ১৯৯০-এর…

  • | | | | | |

    ক্লাইভ লয়েড

    ৩১ আগস্ট, ১৯৪৪ তারিখে ব্রিটিশ গায়ানার কুইন্সটাউনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, রেফারি, কোচ, ধারাভাষ্যকার ও প্রশাসক। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি (১.৯৩ মিটার) গড়ন নিয়ে দীর্ঘকায় শারীরিক গঠনের অধিকারী, আনত কাঁধ, বৃহৎ গোঁফ ও…

  • |

    নেড গ্রিগরি

    ২৯ মে, ১৮৩৯ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের ওয়াভার্লিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ১৮৭০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। আক্রমণাত্মক ভঙ্গীমার অধিকারী ব্যাটসম্যান ছিলেন। ‘লায়ন-হার্টেড নেড’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের শুরুরদিকে বড় ধরনের ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ন্যাশনাল, ইস্ট সিডনি ও বাথহার্স্ট ক্রিকেট ক্লাবে খেলেছেন। ১৮৬২-৬৩…

  • | | | |

    বিষেন সিং বেদী

    ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৬ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের অমৃতসরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘স্পিনের সর্দার’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। দৃষ্টিনন্দন, শৈল্পিকসত্ত্বা নিয়ে বিশুদ্ধ ভঙ্গীমায় বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। বোলিং ভঙ্গীমার…

  • | |

    মিক মলোন

    ৯ অক্টোবর, ১৯৫০ তারিখে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার স্কারবোরা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। লিকলিকে গড়নের অধিকারী। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুম থেকে ১৯৮১-৮২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ও…