| |

হনুমন্ত সিং

২৯ মার্চ, ১৯৩৯ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের রাজস্থানের বাঁসারা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও রেফারি ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।

ভারতের আরও একজন রাজপুত্র হিসেবে ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দিলীপ সিংয়ের ভ্রাতুষ্পুত্র ও ইন্দ্রজিৎসিংজী’র কাকাতো ভাই ছিলেন। ১৯৫৬-৫৭ মৌসুম থেকে ১৯৭৮-৭৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মধ্যভারত ও রাজস্থানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৬০-এর দশকে রাজস্থান দলের অন্যতম পরিচালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে স্বর্ণালী মুহূর্ত অতিবাহিত করেন। সম্মিলিত ইস্ট ও মধ্যাঞ্চলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে গ্যারি সোবার্সের নেতৃত্বাধীন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান একাদশের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর ইনিংস বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। ঐ মৌসুমে রঞ্জী ট্রফিতেও দারুণ খেলেন। রুসি মোদি’র সংগৃহীত ১০০৮ রানের পর ৮৬৯ রান তুলে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করেন।

১৯৬৪ থেকে ১৯৬৯ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ১৪ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। অংশগ্রহণকৃত টেস্টগুলো থেকে একটিমাত্র শতরানের সন্ধান পেয়েছিলেন। ১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে নিজ দেশে মাইক স্মিথের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৪ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১০৫ ও ২৩ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

টেস্ট অভিষেকে শতরানের ইনিংস খেললেও পরবর্তীতে আর এর পুণরাবৃত্তি ঘটাতে পারেননি। শ্রেয়তর খেলোয়াড়দের পাশ কাটিয়ে তাঁকে দলে রাখা হয়েছিল। ৩১.১৮ গড়ে ৬৮৬ রান তুলে স্বীয় নামের যথাযথ পরিচিতি ঘটাতে সক্ষম হননি।

শুরুতে যথেষ্ট সম্ভাবনাময় খেলা উপহার দিলেও বড় ধরনের রান তুলতে পারেননি। ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে বামহাতি ব্যাটসম্যান অম্বর রায়কে সংরক্ষিত অবস্থায় রেখে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বোম্বে টেস্টে তাঁকে খেলার সুযোগ দেয়া হয়। এ পর্যায়ে তিনি ছন্দহীনতায় ছিলেন। পূর্বাঞ্চলের দল নির্বাচক তাঁকে জানান যে, যদি দ্বিতীয় ইনিংসে হনুমন্ত সিং ব্যর্থতার পরিচয় দেন তাহলে তিনি পরের টেস্টে অংশ নিতে পারবেন। পরবর্তীকালে অম্বর রায় মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘আমি হনুমন্ত সম্পর্কে জানতাম ও তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবার বিষয়ে এ ধরনের প্রস্তাবকে ঘৃণা করি। আমি সর্বদাই তাঁর মঙ্গল চেয়েছি। তিনি ৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন।’

১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফরের পর ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ড সফরে গেলেও সাধারণমানের খেলা প্রদর্শন করেছিলেন। এরপর দল থেকে বাদ পড়েন। পরবর্তীতে আর একটি টেস্টে অংশ নিতে পেরেছিলেন। ১৯৬৯-৭০ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রাহাম ডাউলিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে বোম্বের ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। দেড় ঘণ্টায় মাত্র ১৩ রান তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। এছাড়াও, প্রথম ইনিংসে ১ রান তুলেছিলেন। স্বাগতিক দল ৬০ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্টে নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

এভাবেই তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি ঘটে। এ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন যে, ‘আমি আমার সেরা সময়ে ছিলাম না ও সেখানে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না।’ শুরুরদিকের প্রতিশ্রুতিশীলতা পরবর্তীতে আর ধরে রাখতে পারেননি। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ২৯ শতক সহযোগে ৪৪ গড়ে ১২৩৩৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে ৪১ গড়ে ৫৬ উইকেট দখল করেন।

অবসর গ্রহণের পর জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য হন। এছাড়াও, ভারত দলের ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালনসহ আইসিসি ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নয়টি টেস্ট, ৫৪টি ওডিআই ও চারটি লিস্ট-এ খেলা পরিচালনা করেছিলেন। প্রথমে হেপাটাইটিস-বি ও পরবর্তীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবার পর ২৯ নভেম্বর, ২০০৬ তারিখে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ৬৭ বছর ২৪৫ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। সাবেক ক্রিকেটার ও বন্ধুরা তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে।

Similar Posts

  • | | |

    উইলি ওয়াটসন, ১৯২০

    ৭ মার্চ, ১৯২০ তারিখে ইয়র্কশায়ারের বোল্টন-অন-ডিয়ার্ন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, ফুটবলার, প্রশাসক ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন তিনি। এছাড়াও, দক্ষ ফিল্ডার হিসেবেও তাঁর সুনাম ছিল। ১৯৫০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ‘বিল’ কিংবা ‘বিলি’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে লিচেস্টারশায়ার ও ইয়র্কশায়ার দলের…

  • |

    উইলি ওয়াটসন, ১৯৬৫

    ৩১ আগস্ট, ১৯৬৫ তারিখে অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। দলে তিনি মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। অন্যতম মিতব্যয়ী বোলার হিসেবে চিত্রিত হয়েছেন। স্ট্যাম্প বরাবর নিখুঁততার সাথে বোলিং করে ব্যাটসম্যানদের সমীহের পাত্রে পরিণত হয়েছেন। ১৯৯০-এর দশকে ‘ডিবলি ডবলি পেসার্স’ ডাকনামে আখ্যায়িত ক্রিস হ্যারিস ও…

  • |

    আতিফ রউফ

    ৩ মার্চ, ১৯৬৪ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। ১৯৯০-এর দশকে পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮০-৮১ মৌসুম থেকে ২০০১-০২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে পাকিস্তান এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ইসলামাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন…

  • | |

    ক্লেম হিল

    ১৮ মার্চ, ১৮৭৭ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হিন্ডমার্শ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাশাপাশি, মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিবারের ১৬ সন্তানের অন্যতম ছিলেন। পিতা এইচ. জে. হিল অ্যাডিলেড ওভালে প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। বিশ্বের অন্যতম সেরা…

  • | |

    ফ্রাঙ্ক পেন

    ৭ মার্চ, ১৮৫১ তারিখে লন্ডনের দ্য সিডার্স এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটিং কর্মে পারদর্শী ছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন তিনি। ১৮৮০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। নিজের সময়কালে কেন্টের অন্যতম খ্যাতনামা ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছেন। দলের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন।…

  • | | |

    আসিফ ইকবাল

    ৬ জুন, ১৯৪৩ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও রেফারি। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়েও পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্রিকেটপ্রেমী পরিবারের সন্তান। তাঁর কয়েকজন চাচা উচ্চ স্তরের ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ভারতীয় অধিনায়ক ও অফ-স্পিনার গুলাম আহমেদের ভ্রাতৃষ্পুত্র তিনি। যৌথ পরিবারে বড় হন।…