১৮ এপ্রিল, ১৯১৪ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
প্রতিযোগীধর্মী বোলার ছিলেন। ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটে লেগ-স্পিনার হিসেবে তারকা খ্যাতি লাভ করেন। বিখ্যাত ক্রিকেটার সিকে নায়ড়ু’র বর্ণাঢ্যময় খ্যাতির পিছনে থেকে নিজেকে স্ব-মহিমায় ফুঁটিয়ে তুলতে তৎপরতা দেখিয়েছেন। কিংবদন্তীতুল্য ক্রিকেটার সিকে নায়ড়ু’র চেয়ে প্রায় ১৯ বছরের ছোট ছিলেন। স্বীয় ভ্রাতার ৬ ফুট ২ ইঞ্চির তুলনায় বেশ খানিকটা খাঁটো গড়নের ছিলেন। তাঁর দৈহিক উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। সিকে নায়ড়ু ভারতের পক্ষে ছক্কা হাঁকাতে পটু থাকলেও নিজেকে তিনি কঠোর পরিশ্রমী লেগ-ব্রেক বোলার হিসেবে পরিচিতি ঘটান।
১৯৩১-৩২ মৌসুম থেকে ১৯৬০-৬১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে অন্ধ্র, বরোদা, বাংলা, সেন্ট্রাল ইন্ডিয়া, সেন্ট্রাল প্রভিন্সেস ও বেরার, হিন্দু, হোলকার, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
২৯ বছরের অধিক সময় ধরে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। সব মিলিয়ে ১৭৪টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ২৬.৫৪ গড়ে ৬৪৭ উইকেট দখল করেছেন। এছাড়াও, ২৩.৯০ গড়ে ৫৭৮৬ রান তুলেছেন। রঞ্জী ট্রফিতে ৫৬ খেলায় অংশ নিয়ে ৩০.২৯ গড়ে ২৫৭৫ রান ও ২৩.৪৯ গড়ে ২৯৫ উইকেট পেয়েছেন। তন্মধ্যে, ২৯৫ উইকেট লাভ রঞ্জী ট্রফির রেকর্ড হিসেবে বিবেচিত হয় ও ১৯৭০ সাল বমন কুমার রেকর্ডটি নিজের করে নেন। এছাড়াও, পেন্টাগুলার ট্রফিতেও দৃষ্টিনন্দন ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। ১৬.৬৭ গড়ে ১০৩ উইকেট দখল করেছিলেন তিনি।
অনবদ্য বোলিং ভঙ্গীমা প্রদর্শন করতেন। বল হাত থেকে অবমুক্তকালীন শরীরকে বেশ বাঁকিয়ে ফেলতেন। প্রায়শঃই মাথা কোমর বরাবর রাখতেন। পুরো শরীরের ওজনকে বলে ফেলতেন। ফলশ্রুতিতে বলে পেস ও বাউন্স আনয়ণ করতে পারতেন। পাশাপাশি বেশ বাঁক খাওয়ানোয় সক্ষমতা দেখাতেন। ধারাবাহিকতার স্বাক্ষর রাখতে না পারলেও বলে গতির সঞ্চারের ফলে ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্তের কবলে পড়তে হতো। এছাড়াও, গুগলি ও টপ-স্পিন করতেন। রান খরচ হলো কি হলো না তা নিয়ে চিন্তা করতেন না। সর্বদাই নিজেকে পরীক্ষার মধ্যে রাখতেন ও ব্যাটসম্যানের ভুলের দিকে নজর রাখতেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল যে, তিনি বোলিং করতে বেশ ভালোবাসতেন। পিচ উপযোগী কিংবা অনুপযোগী, রান কতো হলো না হলো, প্রথম দিন না-কি শেষ দিন, প্রথম অধিবেশন না-কি শেষ অধিবেশন, আবহাওয়া ভালো না-কি মন্দ – এগুলো তাঁর জন্যে কোন বিবেচ্য বিষয় ছিল না।
বলে আচ্ছা করে মারকুটে ব্যাটিংয়ের দিকে অগ্রসর হতেন। তাঁর এ মারমুখী আচরণে ব্যাট থেকে বড় ধরনের রান আসতো। এছাড়াও, ব্যতিক্রমধর্মী ফিল্ডার ছিলেন। মাঠের যে-কোন অবস্থানে থেকে ফিল্ডিং করতেন। সার্ভিসেস একাদশের সদস্যরূপে ইন্ডিয়ান একাদশের বিপক্ষে খেলাকালীন ডগলাস জার্ডিন, শুঁটে ব্যানার্জী’র বলে আঘাত করে গালি অঞ্চলে প্রেরণ করলে তিনি ডানহাতে বল থামিয়ে স্ট্যাম্পে আঘাত করে তাঁকে প্যাভিলিয়নে ফেরৎ পাঠান।
১৯৩৪ থেকে ১৯৫২ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ১১ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৩৩-৩৪ মৌসুমে নিজ দেশে ডগলাস জার্ডিনের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ৫ জানুয়ারি, ১৯৩৪ তারিখে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে দিলাবর হোসেন, মোরাপ্পাতাম গোপালন ও মুশতাক আলী’র সাথে তাঁর একযোগে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও সফরকারীরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ০/২৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ৩৬ ও ১৫ রান সংগ্রহের পাশাপাশি একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। স্মর্তব্য যে, ঐ টেস্টে সহোদর সিকে নায়ড়ু দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন।
১২ জানুয়ারি, ১৯৫২ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ২১ ও ০ রান সংগ্রহসহ ০/১৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয় পায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
জীবনের শেষদিকে এসে রেনুকূটভিত্তিক হিন্ডালকোয় চাকুরী করেন। দীর্ঘদিন শ্বাসপ্রশ্বাস ও হৃদযন্ত্রের সমস্যার কবলে পড়েন। অতঃপর, ২২ নভেম্বর, ২০০২ তারিখে ইন্দোরে ৮৮ বছর ২১৮ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।
