|

সাব্বির রহমান

২২ নভেম্বর, ১৯৯১ তারিখে রাজশাহীতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ প্রকৃত মানসম্পন্ন মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী। পাশাপাশি, দূর্দান্ত ফিল্ডিং করেন। বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিচ্ছেন।

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ও ‘রুমন’ ডাকনামে পরিচিতি পান। পরিবারের শত বাঁধাকে পাশ কাটিয়ে ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শহীদ আফ্রিদি’র ৩৭ বলে শতক হাঁকানোর বিষয়টি তাঁকে বেশ উজ্জ্বীবিত করে। ২০০৮ সাল থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া-আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে বরিশাল বিভাগ ও রাজশাহী বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বরিশাল বার্নার্স, বেক্সিমকো ঢাকা, কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স, সিলেট সিক্সার্স ও পেশাওয়ার জালমি’র পক্ষে খেলেছেন।

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ভিত্তি আনয়ণে অন্যতম চালিকাশক্তিতে নিজেকে পরিণত করেছিলেন। বিশেষতঃ সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে দারুণ ভূমিকা রেখেছেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট ও লিস্ট-এ ক্রিকেটে রাজশাহী বিভাগের পক্ষে খেলছেন। ১৬ বছর বয়সে ১০ অক্টোবর, ২০০৮ তারিখে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত রাজশাহী বিভাগের সদস্যরূপে বরিশাল বিভাগের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। কিন্তু, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট ও একদিনের ক্রিকেটে রান খরায় ভুগতে থাকেন। ২০১৪-১৫ মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে ছয়-উইকেট লাভ করেছিলেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে মারকুটে ব্যাটিংয়ে অভ্যস্ত। তবে, সোজাভাবে ও অফ-সাইডে স্কয়ার অঞ্চলে খেলতেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

২০১০ সালে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন ও সংবাদ শিরোনামে চলে আসেন। বাংলাদেশের পক্ষে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছেন। ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ঐ প্রতিযোগিতায় দুইটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস হাঁকিয়েছিলেন। ১১৮ স্ট্রাইক রেটে ৫১.৭৫ গড়ে ২০৭ রান সংগ্রহসহ চার উইকেট দখল করেছিলেন।

নভেম্বর, ২০১০ সালের শেষদিকে চীনের গুয়াংজুতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসের ক্রিকেটে ১৩-সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। চূড়ান্ত খেলায় আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের বিপক্ষে ১৮ বলে অপরাজিত ৩৩ রান তুলে দলকে পাঁচ উইকেটে জয় এনে দেন। ঐ পর্যায়ে টি২০ খেলাটির শেষ পাঁচ ওভারে ৪৪ রানের দরকার ছিল ও তিনটি ছক্কা হাঁকান। এরফলে এশিয়ান গেমসের আসরে বাংলাদেশের প্রথম স্বর্ণপদক লাভ নিশ্চিত হয়। টি২০ ক্রিকেটে পরবর্তী দুই বছর যথেষ্ট ভালোমানের খেলা উপহার দিতে থাকেন।

২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০১৪ সালে জাতীয় দলে ঠাঁই পান। তবে, শুরুটা তেমন ভালো হয়নি। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে সফররত শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের বিপক্ষে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টি২০আইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জগতে প্রবেশ করেন। নিম্নমূখী রানের খেলায় ২৬ রান তুলে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। এরপর, নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকেন।

একই সফরের ২১ নভেম্বর, ২০১৪ তারিখে একদিনের আন্তর্জাতিকে প্রথম খেলেন। সফরকারী দলের সলোমন মিরের সাথে একযোগে অভিষেক ঘটে। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় নাসির হোসেনের স্থলাভিষিক্ত হন। নিজস্ব ২৩তম জন্মদিনে আক্রমণধর্মী ব্যাটিং নৈপুণ্য প্রদর্শন করে মাত্র ২৫ বলে ৪৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলের ৮৭ রানের বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। এরফলে পাঁচ-ওডিআই নিয়ে গড়া সিরিজে বাংলাদেশ দল ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। এ ইনিংসে তিনটি বাউন্ডারী ও তিনটি ছক্কার মার ছিল।

ক্ষুদ্র সংস্করণের খেলায় প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রাখায় দল নির্বাচকমণ্ডলী ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন। অপর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও নিচেরসারিতে ব্যাটিং করে ছয় ইনিংসে ৯৮ স্ট্রাইক রেটে ৩৬.৪০ গড়ে ১৮২ রান তুলেছিলেন ও তাঁর দল কোয়ার্টার ফাইনালে বিদেয় নেয়। বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার পর বাংলাদেশের ওডিআই দলের নিয়মিত সদস্যের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ বিজয়ে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন।

২০১৬-১৭ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যালাস্টেয়ার কুকের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২০ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কামরুল ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজের সাথে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর একযোগে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে দূর্দান্ত খেলেন। অপরাজিত ৬৪ রান তুলে দলকে প্রায় জয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে থাকেন। ঐ খেলায় বাংলাদেশ দল ২২ রানে পরাজিত হয়।

২০১৬ সালের এশিয়া কাপ প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫৪ বলে ৮০ রান তুলে বাংলাদেশকে জয় এনে দেন। প্রতিযোগিতা শেষে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার হিসেবে $১২,৫০০ ডলার লাভ করেন। ঐ প্রতিযোগিতার ৫ খেলায় অংশ নিয়ে ১৭৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর দল ভারতের বিপক্ষে চূড়ান্ত খেলায় পরাজিত হলে রানার্স-আপ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে বরিশাল বুলস ও রাজশাহী কিংসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তন্মধ্যে, রাজশাহীর পক্ষে ১২২ রানের ইনিংস খেলে প্রতিযোগিতার ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন।

২০১৭-১৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ তারিখে পচেফস্ট্রুমে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩০ ও ৪ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১৫ ও ০/২৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ডিন এলগারের অনবদ্য ব্যাটিং কৃতিত্বে সফরকারীরা ৩৩৩ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

একই মৌসুমে নিজ দেশে দিনেশ চণ্ডীমলের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্ট খেলেন। ব্যক্তিগতভাবে বেশ ব্যর্থতার পরিচয় দেন। ০ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ঐ টেস্টে সফরকারীরা ২২৫ রানে জয়লাভসহ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে জয় করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়েছিল।

Similar Posts

  • |

    রবীন্দ্র জাদেজা

    ৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৮ তারিখে সৌরাষ্ট্রের নবগ্রাম-খেড় এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। বামহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি (১.৭৩ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। অনিরুদ্ধসিং ও লতা জাদেজা দম্পতির সন্তান। খুব ছোটবেলা থেকেই তাঁর মাঝে বিশাল প্রতিভা…

  • | |

    কার্লি পেজ

    ৮ মে, ১৯০২ তারিখে ক্যান্টারবারির ক্রাইস্টচার্চের লিটলটন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে স্লো বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাশাপাশি, স্লিপ কিংবা গালি অঞ্চলে ফিল্ডিং করতেন। ১৯৩০-এর দশকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় অধিনায়কের মর্যাদা লাভ করেন। খেলাধূলায় বেশ ভালো ফলাফল করেন। ক্রিকেট ও…

  • |

    চার্লস মিলস

    ২৬ নভেম্বর, ১৮৬৭* তারিখে লন্ডনের পেকহাম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী পেশাদার ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। ১৮৯০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে কিম্বার্লী ও ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৮৮৮ থেকে ১৮৯৪-৯৫ মৌসুম…

  • |

    প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা

    ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ তারিখে কর্ণাটকের ব্যাঙ্গালোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে থাকেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিচ্ছেন। ২০১৫-১৬ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে কর্ণাটকের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এছাড়াও, বেলারি তুস্কার্স, ভারত ‘এ’, কলকাতা নাইট…

  • | |

    ডেনিস কম্পটন

    ২৩ মে, ১৯১৮ তারিখে মিডলসেক্সের হেনডন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে রিস্ট স্পিন বোলিং করতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। উইকেটের সর্বত্র বিস্তৃত স্ট্রোকপ্লের কারণে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। ১৯৩৬ থেকে ১৯৬৪ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর…

  • |

    মিচেল জনসন

    ২ নভেম্বর, ১৯৮১ তারিখে কুইন্সল্যান্ডের টাউন্সভিল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। কিংবদন্তীতুল্য ক্রিকেটার ডেনিস লিলি ১৭ বছর বয়সী মিচেল জনসনের প্রতিভা সম্পর্কে সম্যক অবগত হন ও তাঁকে সোজা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট একাডেমিতে যুক্ত করেন। এর…