৮ অক্টোবর, ১৯৭৮ তারিখে মহারাষ্ট্রের শ্রীরামপুর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
প্রকৃত মানসম্পন্ন ভারতীয় ফাস্ট বোলার ছিলেন। পুরনো বলকে ঘুরাতে পারতেন ও ইয়র্কারের সমন্বয়ে বোলিং আক্রমণ কার্য পরিচালনা করতেন। ক্রিকেটের জন্যে প্রকৌশলী হতে পারেননি। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুম থেকে ২০১৩-১৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মুম্বই এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারে ও ওরচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, এশিয়া একাদশ, দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের পক্ষে খেলেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার মাত্র এক বছর পরই জাতীয় দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা লাভ করেন।
২০০০ থেকে ২০১৪ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৯২ টেস্ট, ২০০টি ওডিআই ও ১৭টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ২০০০ সালে আইসিসি নক-আউট ট্রফিতে অংশ নেন। ৩ অক্টোবর, ২০০০ তারিখে নাইরোবির জিমখানায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক কেনিয়ার বিপক্ষে অভিষেক ওডিআইয়ে ৩/৪৮ পান।
একই বছরে টেস্ট খেলেন। ২০০০-০১ মৌসুমে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে বাংলাদেশ গমন করেন। ১০ নভেম্বর, ২০০০ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। সাবা করিম ও শিবসুন্দর দাসের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। জবাগল শ্রীনাথ, আশীষ নেহরা’র ন্যায় বোলারদের সাথে চমৎকার জুটি গড়েন। তাঁর বলে মেহরাব হোসেন অপি’র ক্যাচ নিয়েছিলেন সাবা করিম। তবে, সুনীল জোশী’র দূর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্যে সফরকারীরা খেলায় ৯ উইকেটে জয় পেয়েছিল। খেলায় তিনি ২/৪৯ ও ১/২০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৭* রানে অপরাজিত ছিলেন।
২০০২-০৩ মৌসুমে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১২ ডিসেম্বর, ২০০২ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র উইকেট লাভ করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা সাফল্য ছিল ৪/৪১। এছাড়াও, টেস্টে প্রথমবারের মতো পাঁচ-উইকেটের সন্ধান পান। খেলায় তিনি ৫/৫৩ ও ০/১৩ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১৯ ও ৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, মার্ক রিচার্ডসনের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১০ উইকেটে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় ভারত দলকে নিয়ে যান। ম্যাথু হেইডেনের বিপক্ষে নিজেকে দাঁড় করাতে পারেননি। ৭ ওভারে তাঁকে ৬৭ রান খরচ করতে হয়েছিল।
২০০৬ সালে ওরচেস্টারশায়ারের বিদেশী খেলোয়াড় হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হন। ৭৮ উইকেট নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে নিজের উপস্থিতি তুলে ধরেন। সেখানেই তিনি তাঁর ডাক নাম ‘জিপ্পি জ্যাকি’ পান। এরপর পুণরায় জাতীয় দলে ফিরে আসেন ও দলের নিয়মিত খেলোয়াড়ে পরিণত হন।
২০০৭ সালে রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে বাংলাদেশ সফরে যান। ২৫ মে, ২০০৭ তারিখে মিরপুরে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৫/৩৪ ও ২/৫৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসামান্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে খেলায় সফরকারীরা ইনিংস ও ২৩৯ রানে জয় পায় ও দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটিতে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
‘জেলি বিনস’ ঘটনার পর ২০০৭ সালে নটিংহাম টেস্টে পাঁচ-উইকেট নিয়ে ভারত দলকে জয় এনে দেন।
২০০৮-০৯ মৌসুমে এমএস ধোনি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৮ মার্চ, ২০০৯ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে টিজি ম্যাকিন্টোশের প্রথম উইকেট লাভ করে টেস্টে ২০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২/৭০ ও ১/৭৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ৫১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, শচীন তেন্ডুলকরের অসামান্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় সফরকারীরা ১০ উইকেটে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
অধিনায়ক এমএস ধোনি’র প্রিয়পাত্র ছিলেন ও ভারত দলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। টেস্টে ভারতের ১ নম্বর অবস্থান কিংবা ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ী দলে তাঁর অবদান অপরিসীম ছিল। ২০১১ সালে ইংল্যান্ড সফরে আবারও তাঁকে আঘাতের কবলে পড়তে হয়। তাঁর অনুপস্থিতিতে ভারতের প্রধান বোলার না থাকায় বিদেশের মাটিতে প্রচুর রান খরচ হয়ে পড়ে। শারীরিক সুস্থতার জন্যে যুবরাজ সিংয়ের সাথে তাঁকেও ফ্রান্সে প্রেরণ করা হয়। পেস হারানোর পাশাপাশি তাঁর বোলিংয়ের মান ক্রমশঃ দূর্বলতর হয়ে পড়েন। এরপর কিছুটা সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করলে পুণরায় জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান।
২০১৩-১৪ মৌসুমে এমএস ধোনি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ০/৫৭ ও ৫/১৭০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ২২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ত্রি-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটিতে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
কপিল দেবের পর ৩১১টি টেস্ট উইকেট নিয়ে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট নিয়ে খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করেন। এরপর, ইন্ডিয়ান টি২০ লীগে যুক্ত ছিলেন। ব্যাঙ্গালোরের সাথে খেলা শুরুর পর ২০০৯ সালে দুই বছর মুম্বইয়ের পক্ষে খেলেন। এরপর, ২০১১ সালে পুণরায় প্রথম দলটিতে চলে যান। ২০১৪ সালে মুম্বইয়ের সাথে চুক্তিবদ্ধ হলেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাননি। ২০১৫ সালে দিল্লি দলে খেলেন ও বোলিং আক্রমণ পরিচালনার দায়িত্ব পান। ২০১৬ সালে দলটির অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু, আঘাতের কারণে সুচারূরূপে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।
কৌশলগত দক্ষতা ও মানসিক দৃঢ়তার কারণে তাঁকে অনেকের চেয়ে এগিয়ে রেখেছিল। ওডিআইয়ে হেনরি ওলোঙ্গা’র বল থেকে চারটি ছক্কা হাঁকান। গ্রায়েম স্মিথের বিপক্ষে বেশ কিছু সময় দারুণ সফলতা পান।
২০০২ সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার ও ২০০৮ সালে উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন।
