Skip to content

উইয়ান মুল্ডার

1 min read

১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৮ তারিখে গটেংয়ে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা প্রদর্শন করে চলছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

‘উইয়ান’ ডাকনামে পরিচিত। সেন্ট স্টিথিয়ান্সে অধ্যয়ন করেছেন। কলেজে অধ্যয়নকালে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। কিশোর অবস্থায় যুবদের ক্রিকেটে অংশ নেন। শক্ত-মজবুত গড়ন ও প্রশস্ত কাঁধের অধিকারী। খুব দ্রুততার সাথে তাঁর উত্থান ঘটে। ২০১৬ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ঐ প্রতিযোগিতায় দলের সর্বাধিক উইকেট সংগ্রহকারী ছিলেন। গ্লোবাল টি২০ লীগে স্টেলেনবশ মনার্কসের সাথে খেলার জন্যে চু্ক্তিবদ্ধ হলেও ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা প্রতিযোগিতাটি স্থগিত করে।

২০১৬-১৭ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে লায়ন্স এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্ট ও লিচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ৫ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত কেপ কোবরাস বনাম লায়ন্সের মধ্যকার খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। খেলায় তিনি সাত উইকেট দখল করেছিলেন।

এপ্রিল, ২০২১ সালে ইম্পেরিয়াল লায়ন্সের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। ১৭ নভেম্বর, ২০২১ তারিখে লিচেস্টারশায়ার কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালকে ঘিরে তাঁর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। ১৪ জুলাই, ২০২২ তারিখে ‘ফক্সেস’ নামে পরিচিতি লিচেস্টারশায়ারের রেকর্ডসংখ্যক রান সংগ্রহের দিনে কলিন অ্যাকারমানকে সাথে নিয়ে ৭০১/৪ তুলেন। পঞ্চম উইকেট জুটিতে তাঁরা ৪৭৭ রান তুলেন। উভয়েই অপরাজিত দ্বি-শতক হাঁকান। সাসেক্সের বিপক্ষে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।

২০১৭ সাল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশগ্রহণ করছেন। ১৮ বছর বয়সে ২২ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে ইস্ট লন্ডনে অনুষ্ঠিত সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। আঘাতপ্রাপ্ত ওয়েন পারনেলের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। এক অঙ্কের রান সংগ্রহসহ একটিমাত্র উইকেট পান। ওডিআই সিরিজে খেললেও পরবর্তীতে দলের বাইরে চলে যান। খুব কমই দলের প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ পেতেন।

তবে, ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ খেলে পুণরায় দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন। ২০শ জন্মদিন উদযাপনে কয়েকদিন পরই তাঁকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজ খেলতে দলে যুক্ত করা হয়। ২০১৯ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপ খেলতে কেন্টের সাথে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ক্লাবটির পক্ষে তিন খেলায় অংশগ্রহণের পরপরই দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে খেলার জন্যে পুণরায় আহুত হন।

২০১৭ সাল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০১৮-১৯ মৌসুমে নিজ দেশে ডিমুথ করুণারত্নে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৯ ও ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৬ ও ০/৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। কুশল মেন্ডিসের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

টি২০ বিশ্বকাপে দলের সদস্য ছিলেন।

২০২০-২১ মৌসুমে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে কুইন্টন ডি ককের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ তারিখে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩৩ ও ২০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৪০ ও ০/১৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। হাসান আলী’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৯৫ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

২০২১ সালে প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর ডিন এলগারের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ১০ জুন, ২০২১ তারিখে গ্রোস আইলেটে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ২৫ রান সংগ্রহসহ চারটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৯ ও ০/১৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, কুইন্টন ডি ককের অসাধারণ অপরাজিত শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৬৩ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

২০২১-২২ মৌসুমে নিজ দেশে মমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের মুখোমুখি হন। ৮ এপ্রিল, ২০২২ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৩৩ ও ৬ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/২৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, চতুর্থ ইনিংসে খেলার ৯.১ ওভার থাকাকালীন গ্লেটন স্ট্রুম্যান তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। কেশব মহারাজের অসাধারণ বোলিং সাফল্যে সফরকারীরা ৩৩২ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

২০২২-২৩ মৌসুমে নিজ দেশে ক্রেগ ব্রাদওয়েটের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ৮ মার্চ, ২০২৩ তারিখে জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৩৬ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ১২ ও ৪২ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ১/৪০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তেম্বা বাভুমা’র অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২৮৪ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

২০২৪-২৫ মৌসুমে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে এইডেন মার্করামের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের অন্যতম সদস্যরূপে বাংলাদেশ গমন করেন। ২১ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে মিরপুরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৪৭ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৫৪ রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/২২ ও ১/৪০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। কাইল ভেরিনের অসাধারণ শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ৭ উইকেটে জয়লাভ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ২৯ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। বেশ কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৫৪ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেন। এছাড়াও, ৪৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১০৫* রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে উভয় ইনিংসে ০/৫ করে বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, টনি ডি জর্জি’র অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২৭৩ রানে পরাজয়বরণ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

একই মৌসুমে নিজ দেশে ধনঞ্জয় ডি সিলভা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২৭ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টে দলের প্রথম ব্যক্তিগত ১ ও দলীয় ৮৫/৫ থাকাকালে আঘাতের কবলে পড়েন। তবে, দলের সংগ্রহ ১৬৫/৯ থাকাকালে পুণরায় মাঠে ফিরে আসেন। খেলায় তিনি ৯* ও ১৫ রান সংগ্রহ করেন। তবে, মার্কো জানসেনের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২৩৩ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

২০২৪-২৫ মৌসুমে নিজ দেশে শান মাসুদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৩ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৫ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৪৪ ও ০/৩৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। রায়ান রিকেলটনের দূর্দান্ত দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয়লাভের পাশাপাশি ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

২০২৫ সালে তেম্বা বাভুমা’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে সফরে যান। পুরো সিরিজের দূর্দান্ত খেলেন। ৬ জুলাই, ২০২৫ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। নিয়মিত অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে তিনি ব্যাট হাতে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। তাঁর অপরাজিত ৩৬৭ রানের কল্যাণে দলের একমাত্র ইনিংসে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২৩৬ রানে পরাজয়বরণ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। এছাড়াও, তিনি খেলায় তিনটি ক্যাচ তালুবন্দীসহ বল হাতে নিয়ে ২/২০ ও ১/২৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারসহ ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।