| |

ওয়েস হল

১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৭ তারিখে বার্বাডোসের গ্লেব ল্যান্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।

৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। প্রকৃত মানসম্পন্ন অসাধারণ বোলার হিসেবে অপরিসীম শক্তিমত্তা, একাগ্রতা ও দক্ষতার সুনিপুণ বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। এমনকি নিস্তেজ পিচেও দারুণভাবে নিজেকে মেলে ধরতে অগ্রসর হতেন। বেশ দূরত্ব নিয়ে বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে বার্বাডোস ও ত্রিনিদাদ এবং অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে কুইন্সল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৫৫-৫৬ মৌসুম থেকে ১৯৭০-৭১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন।

১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সব মিলিয়ে ৪৮ টেস্টে অংশ নেন। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে জেরি আলেকজান্ডারের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে ভারত গমন করেন। ২৮ নভেম্বর, ১৯৫৮ তারিখে মাদ্রাজের বিএসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। বাসিল বুচারের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৩/৩৫ ও ১/৭২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১২* রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৫৯-৬০ মৌসুমে নিজ দেশে পিটার মে’র নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬০ তারিখে কিংস্টনের সাবিনা পার্কে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৭/৬৯ ও ১/৯৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে শূন্য রানে অপরাজিত ছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

শুধুমাত্র অস্ট্রেলীয়দের কাছেই পরিচিতি পাননি; বরঞ্চ সমগ্র বিশ্বে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের কাছে নিজেকে অমর করে রেখেছেন। ১৯৬১ সালে ব্রিসবেনে ঐতিহাসিক টাই টেস্টের শেষ ওভার বোলিং করেছিলেন। জয়ের জন্যে প্রতিপক্ষের ছয় রান ও তিন উইকেট হাতে থাকা অবস্থায় খেলেন। এক উইকেট পান, একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ হাতছাড়া করেন ও দুইটি রান-আউট হয়। ঐ টেস্টে তিনি ২০৩ রান খরচায় নয় উইকেট দখল করেছিলেন।

১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে গ্যারি সোবার্সের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১/৩৪ ও ০/৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ১ রান সংগ্রহের পাশাপাশি একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা ৫ উইকেটে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

নিজের সময়কালে অন্যতম জনপ্রিয় ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। কিংবদন্তীতুল্য ভীতিদায়ক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলার ছিলেন। এক দশকেরও অধিক সময় বিশ্বব্যাপী ব্যাটসম্যানদের উপর খবরদারী চালান ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরোহণ করেন। পরবর্তীকালে রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়েন। উইজডেন ক্রীড়া ও সম্প্রদায়ে অসামান্য ভূমিকার পাশাপাশি সামাজিক অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে রাণীর জন্মদিনের সম্মাননা হিসেবে নাইট উপাধিতে ভূষিত হন।

অবসর গ্রহণের পর প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। বার্বাডোসে সিনেট সদস্য ছিলেন। বার্বাডোস সরকারের পর্যটন ও ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। পর্যটনে অসামান্য ভূমিকা পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ ক্যারিবিয়ান ট্যুরিজম অর্গেনাইজেশনের পক্ষ থেকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন। ২০০১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের ব্যবস্থাপক ও দল নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও, ২০০১ থেকে ২০০৩ সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অব ল’জ প্রদান করে। তাঁর সম্মানার্থে স্যার চার্লি গ্রিফিথের সাথে কেনসিংটন ওভালের একটি ছাউনি দ্য হল এন্ড গ্রিফিথ স্ট্যান্ড নামে নামকরণ করা হয়। ১১ জুন, ২০১৫ তারিখে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে তাঁর অন্তর্ভুক্তির কথা ঘোষণা করা হয়।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে ব্রিজটাউনে বসবাস করছেন।

Similar Posts

  • |

    ল্যান্স কেয়ার্নস

    ১০ অক্টোবর, ১৯৪৯ তারিখে মার্লবোরার পিকটনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনে এগিয়ে আসতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম মারকুটে ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পেয়েছেন। সুইং বোলারদের বিপক্ষে খেলতে অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। বড় ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও পর্যাপ্ত সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন।…

  • | |

    বিনু মানকড়

    ১২ এপ্রিল, ১৯১৭ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের জামনগর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডার ছিলেন। নিজের স্বর্ণালী সময়ে যে-কোন বিশ্ব একাদশে ঠাঁই পাবার অধিকারী ছিলেন। পেশাদারী পর্যায়ে…

  • | | |

    ড্যানিয়েল ভেট্টোরি

    ২৭ জানুয়ারি, ১৯৭৯ তারিখে অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি (১.৯১ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনেই খেলাকালীন চশমা পরিধান করে খেলতেন। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম…

  • | | | |

    বিলি মারডক

    ১৮ অক্টোবর, ১৮৫৪ তারিখে ভিক্টোরিয়ার স্যান্ডহার্স্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষণ কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া – উভয় দলের পক্ষেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, অস্ট্রেলিয়া দলের দ্বিতীয় অধিনায়ক ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর কর্পোরাল গিলবার্ট উইলিয়াম লয়েড মারডক ও এডিথ সুজান হক দম্পতির সন্তান ছিলেন। বলারাটভিত্তিক ড. ব্রোমলিজ স্কুলের…

  • | |

    ক্রিস ওল্ড

    ২২ ডিসেম্বর, ১৯৪৮ তারিখে ইয়র্কশায়ারের মিডলসবোরা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি বামহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। দ্রুত গতিসম্পন্ন ও নিখুঁতমানের সিমার ছিলেন। কিছুটা দেরীতে আউট-সুইঙ্গারে পারদর্শী ছিলেন। বব উইলিস ও ইয়ান বোথামের পর ইংল্যান্ডের তৃতীয় পেসার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তবে, খেলোয়াড়ী জীবনের…

  • |

    টম ক্যান্ডল

    ২৪ আগস্ট, ১৮৫১ তারিখে ইংল্যান্ডের বেডফোর্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স থেকে শুরু করে বামহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। পাশাপাশি বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। ১৮৭০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে আসা সেরা অস্ট্রেলীয় বোলার ছিলেন। উইকেটের উভয় দিক দিয়েই নিখুঁত নিশানা বরাবর…