১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। ২০০০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
১৯৯৬-৯৭ মৌসুম থেকে ২০১৯-২০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া পর্যায়ের ভারতীয় ক্রিকেটে মুম্বই, বিদর্ভ ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, আবাহনী লিমিটেড, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের পক্ষে খেলেছেন। ভারতীয় ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। মার্চ, ২০১৩ সাল পর্যন্ত রঞ্জী ট্রফিতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান সংগ্রাহকের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। এছাড়াও, ইরানী ট্রফিতে স্বীয় নামের পার্শ্বে সর্বোচ্চসংখ্যক প্রথম-শ্রেণীর শতক হাঁকান।
মুম্বইয়ে বিদ্যালয় পর্যায়ের ক্রিকেটে রানের ফুলঝুঁড়ি ছোটান। ১৫ বছর বয়সে ৪০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন তিন। এরপর ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে কিংবদন্তীতুল্য ও পরবর্তীকালে ধীকৃত ভারতীয় অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের সাথে তাঁকে তুলনা করা হতো। তাঁরা উভয়েই কব্জীর মোচরে রান তুলতেন ও ফিল্ডার হিসেবে লেগ-সাইডে অবস্থান করতে ভালোবাসতেন। কয়েক মৌসুম রঞ্জী ট্রফিতে দূর্দান্ত খেলে ভারতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টিগোচরে আসেন।
২০০০ থেকে ২০০৮ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৩১ টেস্ট ও দুইটিমাত্র ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে নিজ দেশে হান্সি ক্রোনিয়ে’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের বিপক্ষে খেলার জন্যে ভারত দলে অন্তর্ভুক্ত হন। ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০০ তারিখে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়েতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। মুরালি কার্তিকের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৪ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, শচীন তেন্ডুলকরের অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও সফরকারীরা ৪ উইকেটে জয় তুলে নেয় ও সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ২ মার্চ, ২০০০ তারিখে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৩ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ১৩ ও ২৩ রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। নিকি বোয়ে’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে খেলায় তাঁর দল ইনিংস ও ৭১ রানে পরাজয়বরণ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
এ সিরিজে নতুন বল নিয়ে অ্যালান ডোনাল্ডের ভীতিদায়ক বোলিংয়ের বিপক্ষে রুখে দাঁড়াতে পারেননি। চার ইনিংস থেকে মাত্র ৪৬ রান তোলার পর দল থেকে বাদ পড়েন।
ঘরোয়া ক্রিকেটে বিশাল রান তোলার সুবাদে দুই মৌসুম পর ২০০২ সালের শেষদিকে পরবর্তী সুযোগ আসে। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। দুই অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। এরফলে, ইংল্যান্ড গমনের জন্যে মনোনীত হন। তবে, দুই টেস্ট পরই পুণরায় বাদ পড়েন।
তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে দুইটি বিষয় নিয়মিতভাবে দেখা যায়। ২-৩ বছর পরপর দল থেকে আসা-যাবার পালায় থাকেন ও রঞ্জী ট্রফিতে ধারাবাহিকভাবে স্বর্ণালী শিখরে অবস্থান করেন। এবার তিন বছর বিরতি নিয়ে পুণরায় দলে ফিরে আসেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেলেও প্রথম একাদশে তাঁকে রাখা হয়নি। তাসত্ত্বেও, মার্চ, ২০০৬ সালে নাগপুরে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ৮১ ও ১০০ রানের ইনিংস খেলেন।
২০০৫-০৬ মৌসুমে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। একাধারে ১৯ টেস্ট খেলে ৫ শতক ও ৭টি অর্ধ-শতক হাঁকান। তন্মধ্যে, অ্যান্টিগুয়ার সেন্ট জোন্স টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ২১২ রানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস খেলে দলকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন। জুন, ২০০৬ সালে রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ গমন করেন। সিরিজের প্রথম টেস্টে এ সাফল্য পান। তাঁর অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীতে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
দিনেশ কার্তিকের সাথে উদ্বোধনী জুটি দারুণভাবে সফলতার সন্ধান পায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বিরাট ভূমিকা রাখেন। ২০০৬-০৭ মৌসুমে দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ২২ নভেম্বর, ২০০৬ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন। একই সফরের ২৯ নভেম্বর, ২০০৬ তারিখে পোর্ট এলিজাবেথে সর্বশেষ ওডিআই খেলেন। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলের প্রথম রাউন্ডে বিদেয়ের পর এ সাফল্য অর্জিত হয়। ২০০৭ সালে কলকাতা টেস্টে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজস্ব দ্বিতীয় দ্বি-শতক হাঁকান। দৃশ্যতঃ দলে স্থান পাকাপোক্ত করলেও আবারও বাদ পড়েন।
২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে শোয়েব মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৩০ নভেম্বর, ২০০৭ তারিখে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ২০২ ও ৫৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১১ এপ্রিল, ২০০৮ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৫ ও ১০ রান সংগ্রহের পাশাপাশি তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে তাঁর দল ৮ উইকেটে জয়লাভ করে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটিতে ১-১ ব্যবধানে শেষ করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
