Skip to content

ওয়াকার ইউনুস

1 min read

১৬ নভেম্বর, ১৯৭১ তারিখে পাঞ্জাবের বিহারী এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রায়শঃই তাঁকে ‘সুইংয়ের সুলতান’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তরুণ বয়সে অন্যতম সেরা দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলার ছিলেন। তিনি তাঁর সময়কালের অন্যতম মৃত্যুদূত সমতুল্য পাকিস্তানী ফাস্ট বোলার। প্রকৃত মানসম্পন্ন পেস নিয়ে ডানহাতি ফাস্ট বোলারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনের দূর্দান্ত সূত্রপাত ঘটান। ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা পেসার। বোলিংয়ের শেষদিকে ইন-সুইংয়ের পাশাপাশি পেস বোলিং করে সফলতা পেয়েছেন। তাঁর ডেলিভারিগুলো অনেকাংশেই ইয়র্কারের অনুরূপ ছিল ও শেষ মুহূর্তে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সুইং করতো। ফলশ্রুতিতে, ব্যাটসম্যানের তা মোকাবেলা ও অনুধাবনের বিষয়টি বেশ কঠিন হয়ে পড়তো।

১৯৯০-এর দশকে দলীয় সঙ্গী ওয়াসিম আকরামের সাথে সর্বাপেক্ষা কার্যকর ফাস্ট বোলিং জুটি গড়ে অভূতপূর্ব সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ঘণ্টাপ্রতি ১৫৩ কিলোমিটার গতিবেগের সাথে মারাত্মক ইয়র্কারের সংমিশ্রণ ঘটান। ব্যাটসম্যানের পরিবর্তে স্ট্যাম্প বরাবর এ কৌশল গ্রহণে পরবর্তী প্রজন্মের বিশেষতঃ শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা’র ন্যায় বোলারদেরকে উদ্বুদ্ধ করে। ইন-সুইঙ্গার থেকে আউট-সুইঙ্গারের বৈচিত্র্যতা আনয়ণে সফলতম উইকেট লাভকারী বোলারে পরিণত হন। ১৯৮০-এর দশকে পিচে ফাস্ট ও শর্ট বোলিংয়ের প্রচলনকে ফাস্ট ও ফুলের দিকে নিয়ে ফাস্ট বোলিংয়ের শিল্পকলাকে আরও বিস্তৃত পরিসরে মেলে ধরেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে চুক্তিবদ্ধ কর্মী পিতার সান্নিধ্যে শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তনের পর কিশোর অবস্থায় ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। নিজ দেশে কয়েকটি ক্লাবের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেন। তবে, ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে সারে দলের পক্ষে ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে অংশ নেয়ার পরই সকলের দৃষ্টিতে পড়েন।

৬ ফুট (১.৮৩ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুম থেকে ২০০৩-০৪ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে করাচী, লাহোর, মুলতান, পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাংক, রাওয়ালপিন্ডি, রেডকো পাকিস্তান লিমিটেড ও ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেড এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে গ্ল্যামারগন ও সারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সুপার উইলস কাপের খেলায় দিল্লি একাদশের বিপক্ষে স্বীয় ব্যাংক দলের পক্ষে বোলিংকালে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত খেলাটি ইমরান খান দেখেন। ছন্দোবদ্ধ দৌঁড়, বোলিং ভঙ্গীমা ও পরবর্তীতে নিজেকে সামলে নেয়ার বিষয়টি তাঁকে মুগ্ধ করে ও দ্রুত তাঁকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নেয়ার আনুষ্ঠানিকতায় ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।

বেশ কয়েকটি ক্লাবের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯০-এর দশকে অধিকাংশ ইংরেজ ক্লাবের নজর আকর্ষণে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৯১ সালে নিজ কাঁধে বোলিং আক্রমণ পরিচালনার দায়িত্ব নেন। ৫৮২ ওভার বোলিং করে ১১৩ উইকেটের সন্ধান পান। এছাড়াও, ১৯৯৭ সালে গ্ল্যামারগনের প্রতিনিধিত্ব করে দলের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। সুইং ও রিভার্স-সুইংয়ে ভীতিদায়ক পেস আনয়ণে বোলিংয়ে অগ্রসর হতেন। অনেক সময়ই তাঁর বোলিং মোকাবেলা করা ব্যাটসম্যানদের দুরূহের পাত্রে পরিণত হয়। পা বরাবর ইয়র্কারে বেশ কয়েকজন কাউন্টি ক্রিকেটারের আঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

১৯৮৯ থেকে ২০০৩ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ৮৭ টেস্ট ও ২৬২টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে নিজ দেশে ভারতের মুখোমুখি হন। ১৫ নভেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে করাচীর ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে তাঁর স্বপ্নীল অভিষেক হয়। শহীদ সাঈদসহ বিখ্যাত ক্রিকেটার শচীন তেন্ডুলকরের সাথে একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন করেন। তাৎক্ষণিক প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট হন। প্রথম ইনিংসে সঞ্জয় মাঞ্জরেকার, মনোজ প্রভাকর, শচীন তেন্ডুলকর ও কপিল দেবের উইকেট পান। ঐ ইনিংসে তাঁর বোলিং পরিসংখ্যান ছিল ৪/৮০। তবে, কপিল দেবের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ে পর্যবসিত হয়। এভাবেই তাঁর প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটে। পরবর্তীতে নিজেকে অন্যতম ভীতিদায়ক ফাস্ট বোলারে পরিণত করতে পেরেছিলেন।

অবশ্য, টেস্ট অভিষেকের এক মাস পূর্বে ফয়সালাবাদে ওডিআই অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১৪ অক্টোবর, ১৯৮৯ তারিখে শারজায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। মাত্র চার ওভার বোলিং করলেও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি। তবে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঐ খেলায় বেশ মিতব্যয়ী বোলিং করেছিলেন।

১৯৯০-৯১ মৌসুমে নিজ দেশে মার্টিন ক্রো’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে দূর্দান্ত খেলেন। ১০ অক্টোবর, ১৯৯০ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৪/৮০। বল হাতে নিয়ে ৪/৪০ ও ৩/৩৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, দলের একমাত্র ইনিংসে তাঁকে ব্যাট হাতে মাঠে নামতে হয়নি। শোয়েব মোহাম্মদের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৪৩ রানে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ১৮ অক্টোবর, ১৯৯০ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়া নৈপুণ্যের ছাঁপ রাখেন ও কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে জিই ব্র্যাডবার্নকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৪/৪০। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। খেলায় তিনি ৩/২০ ও ৭/৮৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান।  এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৯ উইকেটে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

এরপর, ২৬ অক্টোবর, ১৯৯০ তারিখে ফয়সালাবাদে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৭/৭৬ ও ৫/৫৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৬৫ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ৩-০ ব্যবধানে বিজয়ী হয়। তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। এছাড়াও, ২৯ উইকেট লাভ করে শোয়েব মোহাম্মদ ও মার্টিন ক্রো’র সাথে তিনি যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯১-৯২ মৌসুমে নিজ দেশে অরবিন্দ ডি সিলভা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১২ ডিসেম্বর, ১৯৯১ তারিখে শিয়ালকোটে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৫/৮৪ ও ২/৪৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, সেলিম মালিকের ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই সফরের ২ জানুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে ফয়সালাবাদে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৪/৮৭ ও ৫/৬৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ওয়াসিম আকরামের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩ উইকেটে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।

১৯৯২ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন। ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা ফাস্ট বোলারদের তালিকায় তাঁর উত্থান পর্বটি ছিল বেশ বিস্ময়সূচক। নিজ দেশে ১৯৯০-৯১ মৌসুমে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৯ উইকেট দখল করেন। ১৯৯২ সালে ইংল্যান্ড সফরে ২২ উইকেট ও ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ১৯ উইকেট পেয়েছিলেন। মাত্র ১০ টেস্টে ৫০, ২০ টেস্টে ১০০, ২৭ টেস্টে ১৫০ ও খেলোয়াড়ী জীবনে ৮৭ টেস্ট থেকে ৩৭৩ উইকেট ২৩.৫৬ গড়ে পেয়েছিলেন। ব্যাট হাতে তেমন সুবিধে করতে না পারলেও তিনি হয়তোবা আরও ভালো করতে পারতেন।

১৯৯২ সালে ইংল্যান্ড গমনার্থে জাভেদ মিয়াঁদাদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। পুরো সফরেই অপূর্ব ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শনে তৎপরতা দেখান। লর্ডসে ৫/৯১ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে দলের জয়ে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। প্রথমবারের মতো লর্ডসের দর্শকেরা তাঁর প্রতিভা সম্পর্কে অবগত হন। ওয়াসিম আকরাম ৬৯ রানে গ্রাহাম গুচকে বিদেয় করার পর পাকিস্তানী বোলিং আক্রমণে খেলার নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। গ্রায়েম হিককে বিদেয় করে নিজস্ব প্রথম উইকেট পান। এরপর, অ্যালান ল্যাম্ব, ইয়ান বোথাম, ক্রিস লুইস ও ফিল ডিফ্রিটাসকে বিদেয় করে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নিজের নামকে অন্তর্ভুক্ত করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে আরও দুই উইকেট পান। পাশাপাশি ওয়াসিম আকরাম চার উইকেট নিয়ে ক্রিকেটের স্বর্গভূমিতে পাকিস্তান দলকে দুই উইকেটের নাটকীয় জয় এনে দেন।

৬ আগস্ট, ১৯৯২ তারিখে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কেনসিংটন ওভালে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে ১/৩৭ ও ৫/৫২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পেয়ে ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ওয়াসিম আকরামের অসাধারণ বোলিংশৈলীতে সফরকারীরা খেলায় ১০ উইকেটে জয় পেলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। এ সিরিজে ৫১ রান সংগ্রহসহ ২২ উইকেট দখল করে ওয়াসিম আকরাম ও গ্রাহাম গুচের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

১৯৯২-৯৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জাভেদ মিয়াঁদাদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২ জানুয়ারি, ১৯৯৩ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে সিজেড হ্যারিসের তৃতীয় উইকেট লাভ করে টেস্টে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৪/৫৯ ও ৫/২২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১৩ ও ৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। ওয়াসিম আকরামের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩৩ রানে পরাজিত হয়।

১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের মুখোমুখি হন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে পুরো সিরিজে বল হাতে দাপট দেখান। ৩৭ রান সংগ্রহসহ ২৭ উইকেট দখল করেছিলেন। ১ ডিসেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ব্যাট হাতে ১৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৭/৯১ ও ৬/৪৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসামান্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১৩১ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ৯ ডিসেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। এ টেস্টেও অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৫/৮৮ ও ৪/৫০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসামান্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৫২ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

এরপর, ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে লাহোরে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৫/১০০ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে একমাত্র ইনিংসে শূন্য রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ডেভিড ব্রেইনের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কারণে খেলাটি ড্র হয়। স্বাগতিক দল ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৪ সালে সেলিম মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সাথে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ২৬ আগস্ট, ১৯৯৪ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৬/৩৪ ও ৫/৮৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তন্মধ্যে, প্রথম ইনিংসে ওয়াসিম আকরামের সাথে অপরিবর্তিত অবস্থায় বোলিং করেছিলেন। এরফলে, পাকিস্তানের দ্বিতীয় জুটি হিসেবে পুরো ইনিংস বোলিং করার গৌরব অর্জন করেন। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ২০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৫২ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে। তন্মধ্যে, একটি টেস্ট পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছিল। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

‘টু ডব্লিউ’ নামে পরিচিত ওয়াকার ইউনুস ও ওয়াসিম আকরাম – নিজেদেরকে ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম মৃত্যুদূত হিসেবে উপস্থাপিত করেছিলেন। অভিষেকের পর থেকেই দলের নিয়মিত উদ্বোধনী বোলার হিসেবে দু’জনে জুটি গড়েন। অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়ে পুরনো বল থেকে শুরু করে নতুন বলে ক্রমাগত সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। বলকে সুইং করানোর পাশাপাশি চমৎকার পেসের মাধ্যমে তাঁরা প্রতিপক্ষের আতঙ্কে পরিণত হন। তাঁদের ভূমিকা অনেকাংশেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাইকেল হোল্ডিং ও ম্যালকম মার্শালের অনুরূপ ছিল। তাঁদের মধ্যকার বোলিং জুটির কল্যাণে তাঁকে ‘বুড়েওয়ালা এক্সপ্রেস’ পরিভাষায় আখ্যায়িত করা হয়েছিল। নিজের সেরা দিনগুলোয় অগ্নিকুণ্ডের ন্যায় বোলিং করতেন। ১৯৯৪ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এ ধরনের বোলিং করে হ্যাট্রিকের সন্ধান পেয়েছেন। অন্যান্য ফাস্ট বোলারের তুলনায় তাঁর বোলিংয়ের ধরন ভিন্নতর ছিল। শর্ট পিচ বোলিং না করে ব্যাটসম্যানের পা বরাবর ফুল লেন্থের বল ফেলতেন। এ ধরনের যোগ্যতা রাখার কারণে ‘দ্য টো ক্রাশার’ ডাকনামে পরিচিতি পান।

১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ৮ ডিসেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ১২* ও ৩৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৬০ ও ১/৭৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ডিওন ন্যাশকে ২২ রানে বিদেয় করে নিজস্ব ২০০তম টেস্ট উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরফলে, সিভি গ্রিমেটের ৩৬ টেস্টে দুইশত উইকেটের মাইলফলকের পর ৩৮ টেস্টে ডিকে লিলি’র সাথে যৌথভাবে এ সাফল্যের সন্ধান পান। তবে, মুশতাক আহমেদের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করলে সফরকারীরা ১৬১ রানে জয় তুলে নেয়।

১৯৯৬ সালে ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৫ জুলাই, ১৯৯৬ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৪/৬৯ ও ৪/৮৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১৬৪ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। জোনাথন অ্যাগ্নিউ’র বিবেচনায় খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে রশীদ লতিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ৬ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে পিএস ডি ভিলিয়ার্সের ষষ্ঠ উইকেট লাভ করে ২৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। বল হাতে নিয়ে ৬/৭৮ ও ৪/৫৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ঘটনাবহুল এ টেস্টের তৃতীয় দিন ৩ রানে থাকাকালে মিড-অন অঞ্চলে দণ্ডায়মান অ্যালান ডোনাল্ড ও শন পোলকের বলে ফিরতি ক্যাচ ফস্কে গেলে জীবন ফিরে পান। খেলায় তিনি ৭ ও ৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। মার্ক বাউচারের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২৫৯ রানে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।

একই মৌসুমে রশীদ লতিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। পুরো সিরিজে অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ২১ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে হারারেতে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৪/৪৭ ও ২/৬০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। তবে, মোহাম্মদ ওয়াসিমের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৩ উইকেটে জয় পেয়ে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। এ সিরিজে ১৩ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে নিজ দেশে সনথ জয়সূর্য্যের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ১২ মার্চ, ২০০০ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১৬ ও ৩৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ২/৩৯ ও ২/৩২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। তবে, ইনজামাম-উল-হকের অসামান্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২২২ রানে জয় পেলেও শ্রীলঙ্কা দল ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। ৬৬ রান সংগ্রহসহ ১৩ উইকেট দখল করে মুত্তিয়া মুরালিধরনের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন বেশ ভালোভাবে কাটলেও খুঁতবিহীন ছিল না। ২০০০ সালের শুরুতে দলীয় সঙ্গী ও অধিনায়ক ওয়াসিম আকরামের সাথে মতবিরোধ ঘটলে পাকিস্তান দল থেকে বাদ পড়েন। দলে প্রত্যাবর্তনের পর কয়েক বছর অধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। মাত্র ২২ বছর ১৫ দিন বয়স নিয়ে পাকিস্তান দলের সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়কের জন্যে মনোনীত হয়েছিলেন। ১৭ টেস্ট ও ৬২টি ওডিআইয়ে দলকে নেতৃত্ব দেন।

২০০১ সালে ইংল্যান্ড সফরের পূর্বে অধিনায়কের দায়িত্ব পান। শুরুরদিকের ফলাফলে দলকে সম্মুখের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। ২০০০ সালে নিজ দেশে সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলকে প্রথমবারের মতো নেতৃত্ব দেন। একই বছরের জুলাই মাসে বলে আঁচড় দেয়ার অভিযোগে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন ও ম্যাচ ফি’র অর্ধেক জরিমানা ধার্য্য করা হয়। ২০০১ সালে ইংল্যান্ড গমনেও পাকিস্তান দলকে পরিচালনা করেছিলেন। অক্টোবর, ২০০২ সালে অধিনায়কের দায়িত্বে থাকাকালীন শারজায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাঁর দল ৫৯ ও ৫৩ রানে গুটিয়ে যায়। তাসত্ত্বেও, বিশ্বকাপ পর্যন্ত তাঁকে এ দায়িত্বে রাখা হয়। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায়ও তেমন ভালো খেলেননি। অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের বিপক্ষে বিমার ছুঁড়লে বোলিং পরিচালনা করা থেকে তাঁকে বিরত রাখা হয়।

২০০২-০৩ মৌসুমে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২ জানুয়ারি, ২০০৩ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১/১২১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ০ ও ৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, হার্শেল গিবসের অসামান্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলায় স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৪২ রানে জয় পেয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

নিচেরসারির কার্যকর ব্যাটসম্যান ছিলেন। টেস্টে তাঁর পরিসংখ্যান খুবই ভালোমানের ছিল। ক্ষীপ্রগতিসম্পন্ন বোলিং করে ইনিংসে ২২বার ও খেলায় দশ উইকেট পাঁচবার পেয়েছেন। সবমিলিয়ে টেস্টগুলো থেকে ৩৭৩ উইকেট ও ওডিআইগুলো থেকে ৪১৬ উইকেট দখলে নিজের শ্রেণীকে চিত্রিত করে গেছেন। এর মাধ্যমেই টের পাওয়া যায় যে, ক্রিকেটে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী কীরূপ ছিল। দুই শতাধিক টেস্ট উইকেট লাভকারীদের মধ্যে তাঁর স্ট্রাইক রেট ৪৩.৩০ নিয়ে লাভে সেরা বোলারে পরিণত হয়েছিলেন; পরবর্তীতে, ডেল স্টেইন তাঁর সাফল্যকে ম্লান করে দেন। এক দশকেরও অধিক সময় প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়ে ২২৮ খেলা থেকে ৯৫৬ উইকেট পেয়েছেন। পিঠের আঘাতের কারণে তাঁর স্বর্ণালী সময়কে দূরে সরিয়ে দেয়। তবে, দৃঢ় প্রত্যয়ী মনোভাব সর্বদাই তাঁকে পুণরুজ্জ্বীবিত করতো।

কিংবদন্তী বোলারের মর্যাদায় আসীন হলেও বিশ্বকাপে মোটেই সুবিধে করতে পারেননি। আঘাতের কারণে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেননি ও ঐ বছর পাকিস্তান দল শিরোপা জয় করেন। ১৯৯৬ সালের প্রতিযোগিতায় কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে শেষদিকের ওভারের একটিতে অজয় জাদেজা’র তোপে পড়ে ২২ রান খরচ করে ফেলেন। ১৯৯৯ সালের আসরে মাত্র এক খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে দলের শোচনীয় ফলাফল আসে। কেবলমাত্র নেদারল্যান্ডস ও নামিবিয়ার বিপক্ষে তাঁর দল জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল ও প্রথম পর্ব শেষেই দলকে বিদেয় নিতে হয়। ফলশ্রুতিতে, শোচনীয় ফলাফলের পর তাঁর অধিনায়কত্ব কেড়ে নেয়া হয়। খেলায় ছন্দ হারিয়ে ফেলেন। ভবিষ্যতে দলে ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকায় এপ্রিল, ২০০৪ সালে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।

অবসর পরবর্তীকালে মার্চ, ২০০৬ সালে পাকিস্তানের বোলিং কোচ হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। তবে, এক বছর পর ২০০৭ সালে এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন ও কিছু সময় ধারাভাষ্যকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েন। ডিসেম্বর, ২০০৯ সালে পুণরায় পাকিস্তানের বোলিং ও ফিল্ডিং কোচ হিসেবে মনোনীত হন। এ পর্যায়ে দলকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। এরপর, দলের ক্রমাগত নিম্নমূখী ফলাফলের কারণে ইন্তিখাব আলমকে বরখাস্ত করা হলে মার্চ, ২০১০ সালে প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেন। তবে, পাকিস্তানের দূর্বল ফলাফল ও কিছু ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় দলকে সেমি-ফাইনালে নিয়ে যাবার পর আগস্ট মাসে পদত্যাগ করেন। এ সময়ে মাঠের বাইরের ঘটনা হিসেবে ইংল্যান্ডের মাটিতে পাতানো খেলার কেলেঙ্কারী ঘটে ও নিরাপত্তার কারণে জুলকারনাইন হায়দারকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করতে হয়। মাঠে থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজ ড্র করে, নিউজিল্যান্ডে জয় পায় ও ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দল সেমি-ফাইনাল পর্যন্ত উপনীত করেছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার বোলিং কোচের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ঠাঁই পেয়েছিলেন। বিপিএলে স্বল্পকালীন কোচের দায়িত্বে ছিলেন। মার্চ, ২০১৩ সালে আইপিএলের বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বোলিং পরামর্শক হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। মে, ২০১৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে আবারও তাঁকে পাকিস্তান দলের প্রধান কোচ হিসেবে মনোনীত করা হয়।

ডিসেম্বর, ২০১৩ সালে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়াও, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড প্রণীত পাকিস্তান ক্রিকেট হল অব ফেমের উদ্বোধনী তালিকায় ইমরান খান, জাভেদ মিয়াঁদাদ, ওয়াসিম আকরাম, হানিফ মোহাম্মদ ও জহির আব্বাসের সাথে অন্তর্ভুক্ত হন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ড. ফারিয়াল ওয়াকার ইউনুস নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির আজান ওয়াকার নামীয় পুত্র এবং মরিয়াম ওয়াকার ও মারিয়া ওয়াকার নাম্নী কন্যা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।