২৮ জুন, ১৯৮৫ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। পাকিস্তানের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
‘ভিকি’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। দ্রুতগতিসম্পন্ন বামহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার। প্রায়শঃই ভালো-মন্দ নিয়ে খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ফুরফুরে মেজাজে থাকলে তিনি দুর্নিবার, অন্যদিকে, ধারাবাহিকতার অভাবে বেশ নিষ্প্রভ হয়ে পড়েন। তাঁর পেস বোলিং বেশ বিপজ্জ্বনক ছিল। তবে, প্রায়শঃই তিনি এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারতেন না। ইনিংসের শেষদিকের ওভারগুলোয় দূর্দান্ত সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে পুরনো বলে রিভার্স সুইং আনয়ণে যথেষ্ট তৎপরতা দেখিয়েছেন।
২০০১-০২ মৌসুম থেকে ২০১৮-১৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে মধ্য পাঞ্জাব, করাচী পোর্ট ট্রাস্ট, লাহোর, হায়দ্রাবাদ, লাহোর রবি, নর্থ ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স-বালুচিস্তান, পাঞ্জাব, ওয়াটার ও পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এবং পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষে খেলেছেন। ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ার, এসেক্স, সারে ও কেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বার্বাডোস ট্রাইডেন্টস, ব্রাম্পটন উল্ভস, কেপটাউন ব্লিৎজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, ঢাকা ডায়নামাইটস, ঢাকা প্লাটুন, হায়দ্রাবাদ হকস, হায়দ্রাবাদ রিজিওন, কান্দাহার নাইটস, ক্যান্ডি তুস্কার্স, করাচী কিংস, কাউলুন ক্যান্টনস, লাহোর ঈগলস, লাহোর লায়ন্স, লাহোর রিজিওন হোয়াইট, লাহোর শালিমার, নর্দার্ন ওয়ারিয়র্স, পেশাওয়ার জালমি, পাঞ্জাব বাদশাহ ও রংপুর রাইডার্সের পক্ষে খেলেছেন। নিচেরসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি মোটেই সুবিধে করতে পারেননি। তবে, পাকস্থলী বরাবর আসা বলগুলো মোকাবেলায় বেশ সফল ছিলেন।
২০০০ সালে ক্রিকেটের দিকে বেশ ঝুঁকে পড়েন। ২০০১-০২ মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর অভিষেক হয়। এছাড়াও, পাকিস্তান ‘এ’ ও পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্য ছিলেন। শোয়েব আখতার ও মোহাম্মদ আসিফের ন্যায় ফাস্ট বোলারদের পরিপূর্ণ খেলা উপস্থাপনে ব্যর্থ হওয়া ও উমর গুলের আঘাতে জর্জরিত থাকার ফলেই পাকিস্তান দলে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রত্যাশার তুলনায় বেশ আগেভাগেই জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা অনেকটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কিছু সুন্দর মুহূর্ত অতিবাহিত করেছিলেন।
২০০৮ সাল থেকে পাকিস্তানের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ তারিখে শেখুপুরায় অনুষ্ঠিত সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। একই বছরের ২০ এপ্রিল তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে টি২০আইয়ে প্রথম খেলেন। ২০০৮ সালের শুরুতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটার পর ক্রমাগত হিমশিম খেয়ে আসছেন।
২০১০ সালে সালমান বাটের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৮ আগস্ট, ২০১০ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। চমৎকার পেস বোলিং করে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের ভিত নড়বড়ে করেন। প্রথম ইনিংসে ৫/৬৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন। অ্যান্ড্রু স্ট্রস, জোনাথন ট্রট, কেভিন পিটারসন, ইয়ন মর্গ্যান ও স্টুয়ার্ট ব্রড তাঁর শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এরফলে, নবম পাকিস্তানী বোলার হিসেবে অভিষেক টেস্টে পাঁচ-উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ব্যাট হাতে নিয়েও মারমুখী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে মোহাম্মদ আমিরের পাঁচ-উইকেট লাভের কৃতিত্বের ফলে পাকিস্তান দল খেলায় ৪ উইকেটে জয় পায় ও সিরিজে ব্যবধান কমিয়ে ২-১ এ নিয়ে আসে।
কিন্তু, লর্ডসে পরের টেস্টে পাকিস্তান দলের পাতানো খেলায় জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে তাঁর প্রশংসনীয় ক্রীড়াশৈলী দ্রুত পর্দার অন্তরালে চলে যায়। এছাড়াও, ২০১১ সালে নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দূর্বলমানের ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করায় টেস্ট দল থেকে তাঁকে বাদ দেয়া হয়।
২০১০-১১ মৌসুমে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৭ জানুয়ারি, ২০১১ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৪৭ ও ৩/৩৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, আব্দুর রেহমানের অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
একদিনের খেলায় তিনি কিছুটা নিয়মিতভাবে খেলেছেন। ওডিআই বোলার হিসেবে উইকেট পেলেও বেশ রান খরচ করে ফেলতেন। বড় ধরনের খেলায় দারুণ খেলেছিলেন। ২০১১ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় পাকিস্তান দলের সদস্য ছিলেন। মোহালিতে অনুষ্ঠিত সেমি-ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ৫/৪৬ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন ও বিরাট জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। এ পর্যায়ে তিনি শোয়েব আখতারের চেয়ে এগিয়েছিলেন। বীরেন্দ্র শেহবাগ, বিরাট কোহলি, যুবরাজ সিং, এমএস ধোনি ও জহির খান তাঁর শিকারে পরিণত হন। তন্মধ্যে, ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট পুরস্কার বিজয়ী যুবরাজ সিংকে তাঁর নিজ শহর মোহালিতে দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন-সুইং ইয়র্কারে গোল্ডেন ডাকে বিদেয় করেছিলেন। এরফলে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের বাঁক ঘুরে যায়। পরবর্তীতে ওডিআইয়ে এটিই তাঁর সেরা বোলিং পরিসংখ্যানে পরিণত হয়। তাসত্ত্বেও পাকিস্তান দল খেলায় ২৯ রানে পরাজিত হয়েছিল।
এরপর থেকে পাকিস্তানের ওডিআই দলে মিশ্রমানের সফলতা পেতেন। তবে, ওভারপ্রতি তাঁর রান খরচের হার একই পর্যায়ের ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা গমনার্থে তাঁকে মনোনীত করা হয়েছিল। দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। হাশিম আমলা ও গ্রায়েম স্মিথের ন্যায় তারকার ক্রিকেটারদের উইকেট পান। কিন্তু, আঘাতের কবলে পড়ায় দলের বাইরে অবস্থান করতে হয়।
তিন বছর বিরত থাকার পর ২০১৪ সালে টেস্ট দলে ফিরে আসেন। আগস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। কিছু সময় বলের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ২০১৫ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় শেন ওয়াটসনের বিপক্ষে বোলিং করে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। কোয়ার্টার-ফাইনালে তাঁর বোলিং বেশ প্রশংসনীয় ছিল। প্রায় ৪০ মিনিট ক্রিজে রাজত্ব করেন। অ্যাডিলেড ওভালে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় বাউন্সারে বিপর্যস্ত করে ফেলেন। ডেভিড ওয়ার্নার ও মাইকেল ক্লার্কের উইকেট লাভের পর ১৬ রানে থাকা ওয়াটসনকে লক্ষ্য করে ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগে বোলিং করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাঁর বোলিং বেশ ভয়ঙ্কর পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল। ডিপ স্কয়ার লেগ অঞ্চলে রাহাত আলী তাঁর ক্যাচ হাতছাড়া করে ফেললে অপরাজিত ৬৪ রান তুলেন। এরফলে, পাকিস্তান দল পরাজিত হয় ও অস্ট্রেলিয়া সেমি-ফাইনালে পৌঁছে যায়।
পুরস্কার বিতরণী শেষে মাইকেল ক্লার্ক মন্তব্য করেন যে, ‘দীর্ঘদিন পর আমি অন্যতম সেরা খণ্ড বোলিংশৈলী দেখতে পাই।’ শেষে কেভিন পিটারসন তাঁর ভূমিকাকে সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলীয় মাঠে যে-কোন বিদেশী বোলারের সেরা ছিল। এছাড়াও, ব্রায়ান লারা টুইটারে উল্লেখ করেন যে, ‘আমি রিয়াজের সাথে স্বাক্ষাৎ করতে চাই।’
এরপর থেকে প্রায় সকল ধরনের খেলায় দলের মূল বোলারে পরিণত হয়েছিলেন। বিশ্বকাপ শেষে মিসবাহ-উল-হকের অধিনায়কত্ব থেকে অবসর গ্রহণের পর সম্ভাব্য উত্তরসূরী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। সকল খেলায় উইকেট পেয়েছেন। তবে, ওভারপ্রতি রান খরচের হার বেশ বেশী। নিয়মিতভাবে পাকিস্তানের পক্ষে না খেলাই এর প্রধান কারণ। ২০১৬ সালে নির্ধারিত ১০ ওভারে ১১০ রান খরচ করেছেন। এরফলে, ওডিআইয়ের ইতিহাসে এ পরিসংখ্যানটি সর্বকালের দ্বিতীয় বাজে বোলিংয়ে পরিণত করে।
২০১৬ সালের পাকিস্তান সুপার লীগ প্রতিযোগিতায় পেশাওয়ার জালমি কর্তৃপক্ষ $১৪০,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয়। ২০১৭ সালেও একই দলে অবস্থান করেন। এ আসরে তাঁর দল প্রতিযোগিতার শিরোপা জয় করে। ১৯ খেলায় অংশ নিয়ে ৩০ উইকেট শিকার করে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীতে পরিণত হন।
২০১৮-১৯ মৌসুমে সরফরাজ আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করেন। ৭ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখে দুবাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৩৯ ও ০/৪২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, উসমান খাজা’র অসামান্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের মূল দলে ছিলেন না। তবে, সতীর্থ ফাস্ট বোলারদের ব্যর্থ ও পূর্বেকার প্রতিযোগিতায় স্মরণীয় সাফল্যের কারণে তাঁকে দলে যুক্ত করা হয়েছিল।
