Skip to content

৭ মার্চ, ১৯৫২ তারিখে অ্যান্টিগুয়ার সেন্ট জোন্সে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেট তারকা ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে স্লো কিংবা ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ক্রিকেটে নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন। সামনের পায়ের উপর ভর করে খেলতেন। নিজের সময়কালে সর্বাপেক্ষা বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এ সময়ে অনেকগুলো রেকর্ড গড়েন ও তাঁর ন্যায় খুব স্বল্পসংখ্যক ব্যাটসম্যানই বোলিং আক্রমণ তুনোধুনো করতে পারতেন।

১৯৬৯ সালে ১৬ বছর বয়সী অ্যান্টিগুয়ীয় বালক শূন্য রানে মাঠ ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানালে দাঙ্গা বেঁধে যায়। এরফলে, তাঁকে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে দুই বছরের জন্যে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয়েছিল। পরবর্তীকালে তিনি উইলো হাতে নিয়ে ক্রিকেটে সেরা খেলা প্রদর্শনে অগ্রসর হয়েছিলেন। আল্ফ গোভারের পরিচালনায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন।

১৯৭১ থেকে ১৯৯৩ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে কম্বাইন্ড আইল্যান্ডস ও লিওয়ার্ড আইল্যান্ডস, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে কুইন্সল্যান্ড এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে গ্ল্যামারগন ও সমারসেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৭২ সালে লিওয়ার্ড আইল্যান্ডসের পক্ষে ক্লাব ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। তবে, প্রতিযোগীধর্মী নিজস্ব প্রথম খেলায় অংশ নেন জ্যামাইকার বিপক্ষে। দ্বিতীয় ইনিংসে লিওয়ার্ড ও উইন্ডওয়ার্ড আইল্যান্ডসের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। সেন্ট জোন্স ক্রিকেট ক্লাব ও অ্যান্টিগুয়ান ক্রিকেট দলের পক্ষে ক্রমাগত সাফল্যের প্রেক্ষিতে সমারসেট ক্রিকেট ক্লাব কমিটির সদস্য লেন ক্রিডের নজরে পড়ে। তাঁকে ল্যান্সডাউন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলার সুযোগ দান করেন ও ব্যয় নির্বাহে তাঁকে মাঠকর্মী হিসেবে নিযুক্ত করেন।

১৯৭৩-৭৪ মৌসুমের গ্রীষ্মে ক্লাবের ব্যাটিং গড়ে শীর্ষে অবস্থান করেন। সমারসেটের কোচ টম কার্টরাইটের নজরে পড়েন। আর্থিক সুবিধা গ্রহণের খেলায়ও তিনি বিধ্বংসী ব্যাটিং অব্যাহত রাখেন। এরফলে, দুই বছরের জন্যে সমারসেট দলের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন ও ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ঠেকে।

ক্রিকেটের ইতিহাসে কোন খেলোয়াড়কে যদি প্রকৃতপক্ষে ভীতিহীন ব্যাটসম্যান হিসেবে গণ্য করা হয়, তাহলে সর্বাগ্রে তাঁর নাম ভেসে আসবে। এমনকি ফাস্ট বোলারদের আত্মবিশ্বাস ভেঙ্গে ফেলতে মাঠের সর্বত্র যখন-তখন বল ফেলতেন। আঘাতের ভয়ে ভীত না হয়ে তিনি তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের কোন খেলাতেই হেলমেট পরিধান করেননি। বোলারকে নজরে রেখে অনবরত চুইংগাম চিবুতেন। প্রায়শঃই তাঁকে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সাথে যুক্ত করা হয়ে থাকে। এছাড়াও, ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্যতম সেরা অধিনায়কদের কাতারে তাঁকে রাখা হয়ে থাকে। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল কোন সিরিজেই পরাজিত হয়নি। এছাড়াও, ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে তৎকালীন নিষিদ্ধ ঘোষিত দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিদ্রোহী দলের পক্ষে খেলার জন্যে চেকের খালি পাতা গ্রহণে অস্বীকৃতির জন্যে সংবাদ শিরোনামে চলে আসেন।

১৯৭৪ থেকে ১৯৯১ সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ১২১ টেস্ট ও ১৮৭টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। টেস্টগুলো থেকে ৫০.২৩ গড়ে ৮৫৪০ রান তুলেছেন। তন্মধ্যে, তিনটি দ্বি-শতরানের ইনিংস রয়েছে তাঁর। এছাড়াও, ৩২ উইকেট লাভ করেন ও ১২২ ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময়ে তাঁর দল কোন সিরিজে পরাজয়বরণ করেনি।

১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে ভারত সফরে যান। ২২ নভেম্বর, ১৯৭৪ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অপর বিখ্যাত ব্যাটসম্যান গর্ডন গ্রীনিজের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। তবে, তেমন সুবিধে করতে পারেননি। খেলায় তিনি ৪ ও ৩ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে ভাগবত চন্দ্রশেখরের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। ২৬৭ রানে জয়লাভ করে সফরকারীরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

কিন্তু, নিজস্ব দ্বিতীয় টেস্টে ১৯২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে নিজের প্রতিভার কথা জানান দেন। দুই বছর পর ১৯৭৬ সালে এগারো টেস্টে অংশ নিয়ে সাত শতক সহযোগে ৯০ গড়ে ১৭১০ রান তুলেন। প্রায় ত্রিশ বছর তাঁর এ রেকর্ড টিকেছিল ও ২০০৬ সালে মোহাম্মদ ইউসুফ তাঁর এ রেকর্ড ভঙ্গ করে নিজের করে নেন। এ বছরই ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৯১ রানের ইনিংস খেলেন।

১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফর করেন। ডেনিস লিলি ও জেফ থমসনের বলে পাল্টা আক্রমণ করেন। এরপর, ইংরেজদের বিপক্ষে এক চোট তুলে নেন। চার টেস্ট থেকে দুইটি দ্বি-শতরানের ইনিংস সহযোগে ৮২৯ রান সংগ্রহ করেন। ইংল্যান্ড দলকে সর্বদাই প্রিয় প্রতিপক্ষের আসনে বসান। ৫০ ইনিংস থেকে ৬২.৩৬ গড়ে ২৮৬৯ রান তুলেন।

২৩ জুন, ১৯৭৯ তারিখে লর্ডসে অন্যতম স্মরণীয় ইনিংস খেলেছিলেন। বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় আসরের চূড়ান্ত খেলায় স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৮ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন। কলিস কিং ও জোয়েল গার্নারকে সাথে নিয়ে দলকে জয়লাভ করান ও উপর্যুপরী দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা লাভ করে। টসে পরাজিত হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ব্যাটিংয়ে নামে ও গর্ডন গ্রীনিজ রান-আউটের শিকার হলে দলের সংগ্রহ ৯/১ হয়। ৯৯/৪ থাকা অবস্থায় কলিস কিং তাঁর সাথে জুটি গড়েন। কলিস কিং ৬৬ বলে ৮৬ রান তুলে দলের সংগ্রহকে ২৩৮/৫-এ নিয়ে যান। তিন নম্বর অবস্থানে নেমে ১৫৭ বল মোকাবেলা করে ১১টি চার ও তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে নির্ধারিত ৬০ ওভারে দলের সংগ্রহকে ২৮৬/৯ করেন। মাইক হেনড্রিকের শেষ বল থেকে বিশাল ছক্কা হাঁকান। তাঁর এ ইনিংসটি অদ্যাবধি লর্ডসে পুরষদের ওডিআইয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহের মর্যাদা পাচ্ছে। তবে, ইংল্যান্ড দল ১৯৪ রানে গুটিয়ে যায় ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ৯২ রানে জয় তুলে নেয়। ক্রিকেটের স্বর্গভূমিতে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান তিনি।

১৯৮০ সালে লর্ডসে প্রথমবারের মতো টেস্টে শতক হাঁকিয়ে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৪৫ রান তুলেছিলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিক ইংল্যান্ড দল ২৬৯ রানে গুটিয়ে গেলে গর্ডন গ্রীনিজকে হারিয়ে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ২৫/১ থাকা অবস্থায় তিনি মাঠে নামেন। ১৫৯ বল মোকাবেলান্তে তাঁর ঐ ইনিংসে ২৫টি চার ও একটি ছক্কার মার ছিল। ৫১৮ রান তুলে তাঁর দল। ড্র হওয়া ঐ খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন।

১৯৮০ সালে অ্যাডিলেডে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দারুণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৭৬ ও ৭৪ রানের ইনিংস খেলেন। প্রথম ইনিংসে ৭২ বল মোকাবেলায় ঐ রান তুলে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম সিরিজ বিজয়ের ভিত আনেন। কিংবদন্তীতুল্য অস্ট্রেলীয় লেগ স্পিনার বিল ও’রিলি, ডেনিস লিলি’র বোলিংকে অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলিং নৈপুণ্যের কথা তুলে ধরলেও তিনি নির্ভিক চিত্তে কাট, পুল ও ড্রাইভের ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে পাল্টা আক্রমণ শানেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৪ রান তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যান। ঐ গ্রীষ্মে আঘাতের কবলে পড়লেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৯৬.৫০ গড়ে ৪৮৫ রান ও সাত ওডিআই থেকে ৯৭.০০ রান তুলেছিলেন।

১৯৮০-৮১ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। পুরো সিরিজে অসাধারণ খেলেন। ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৮০ তারিখে মুলতানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ১২০* ও ১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে জয় পায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও, ৩৬৪ রানসহ ৪ উইকেট দখল করে ইমরান খানের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

১৯৮২-৮৩ মৌসুমে কিংস্টনে ভারতের বিপক্ষে ৩৬ বলে ৬১ রান তুলেন। ২৬ ওভারে ১৭২ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় চূড়ান্ত দিনে তিনি আরও একটি রোমাঞ্চপূর্ণ ইনিংস খেলেন। কাঁধে আঘাত নিয়ে দলের সংগ্রহ ৬৫/২ থাকাকালে মাঠে নেমে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এরপর, অসহায় বোলিং আক্রমণ থেকে তিনি আরও তিনটি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। কপিল দেব বেশ ভালোমানের বোলিং করে চার উইকেট দখল করলেও ১৩ ওভারে ৭৩ রান খরচ করেন। বাদ-বাকীরা তেমন কিছুই করতে পারেননি। মহিন্দার অমরনাথ এক ওভারে ১৭ রান দেন ও ২.২ ওভারে ৩৪ রান খরচ করেন। বালবিন্দার সিং সাঁধু ও এস বেঙ্কটরাঘবন তাঁকে থামাতে পারেননি। ১৬ রান বাকী থাকতে বিদেয় নেন তিনি ও চার বল বাকী থাকতে দল জয়লাভ করে।

১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে নিজ দেশে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৯ মার্চ, ১৯৮৫ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে অসাধারণ ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হন। খেলায় তিনি ৫৭ ও ৭৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। ইয়ান চ্যাটফিল্ডের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

ইংল্যান্ড দল তাঁর প্রিয় প্রতিপক্ষ ছিল। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে অ্যান্টিগুয়ায় সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ খেলেন। মাত্র ৫৮ বল মোকাবেলায় ১১০ রান তুলেন। এরফলে, ১১ বলের ব্যবধানে দ্রুততম শতকের পূর্বেকার রেকর্ড ভেঙ্গে নিজের করে নেন। এ সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেন যে, অন্যতম সেরা দিন হিসেবে সবকিছু অনুকূলে ছিল। যে-সকল বল মোকাবেলায় ব্যর্থ ছিলাম, সেগুলোও বাউন্ডারিতে পরিণত হয়। জনতা উত্তেজনায় লাফাতে থাকে, দ্বীপের সর্বত্র গাড়ী আওয়াজ হতে থাকে। ইয়ান বোথাম ১৫ ওভারে ০/৭৮ পান ও ড্র হওয়া টেস্টটিতে ইংল্যান্ড পরাজিত হয়। ওভারপ্রতি ৫.৭২ রান তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ইনিংস ঘোষণা করে ও পর্যাপ্ত সময়ে সফরকারীদেরকে গুটিয়ে দেয়। উইজডেন অ্যালমেনাকে মন্তব্য করা হয় যে, ইয়ান বোথাম ও জন এম্বুরি সীমানা এলাকায় কমপক্ষে ছয়জন ফিল্ডারকে দাঁড় করায়, কখনোবা নয়জনকে। নিখুঁত নিশানা বরাবর বোলিং করলেও সেগুলোতে তিনি স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছোটান।

দশম উইকেট জুটিতে মাইকেল হোল্ডিংকে সাথে নিয়ে শতাধিক রান তুলেন। মাইকেল হোল্ডিংয়ের সংগ্রহ মাত্র ১২ রান হলেও রিচার্ডস ৫৬ বলে টেস্ট শতক হাঁকিয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর এ সাফল্য দ্বিতীয় দ্রুততম শতরানের মর্যাদা পেয়ে আসছে। ৫০ ঊর্ধ্ব গড় নিয়ে আট সহস্রাধিক রান তুলেছেন। ২৪ শতকের পাশাপাশি বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে আরও ৫ শতক হাঁকান। ফলশ্রুতিতে, খুব সহজেই সর্বকালের অন্যতম সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পান।

১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ক্যারিবীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৭ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৩২ ও ১/৩৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। জন রাইটের অনবদ্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে নিজ দেশে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৪ এপ্রিল, ১৯৮৮ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৪৯ ও ১২৩ রান সংগ্রহ করেছেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ২/১৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পাশাপাশি, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

১৯৭৬ থেকে ১৯৮৮ সময়কালে সব মিলিয়ে ৯২ টেস্ট থেকে ২২ শতক সহযোগে ৫৫ ঊর্ধ্ব গড়ে রান তুলে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। তবে, খেলোয়াড়ী জীবনের শেষ তিন বছরে তার গড় অপ্রত্যাশিতভাবে নিচেরদিকে নামতে থাকে। এ পর্যায়ে তাঁর গড় ৫২.৮৮ থেকে নেমে ৫০.২৩ হয়।

১৯৯১ সালে বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টানেন। ১২ আগস্ট, ১৯৯১ তারিখে জেফ ডুজন ও ম্যালকম মার্শালের সাথে একযোগে অবসর গ্রহণ করেন। ঐ বছর দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ইংল্যান্ড সফরে যান। ৮ আগস্ট, ১৯৯১ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। তবে, রবিন স্মিথের অনবদ্য ব্যাটিংয়ের সুবাদে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে জয়লাভ করে ২-২ ব্যবধানে সিরিজে সমতা আনতে সক্ষম হয়েছিল। প্রথম ইনিংসে মাথা ব্যথার কারণে আট অবস্থানে মাঠে নামেন ও সাত বল মোকাবেলায় মাত্র দুই রান তুলেন। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে ফলো-অনের কবলে পড়লে ছয় নম্বর অবস্থানে থেকে ৬০ রান তুলেছিলেন। ডেভ লরেন্সের বলে হিউ মরিস মিড-অন এলাকায় তাঁর ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন।

এ পর্যায়ে ১২১ টেস্টে অংশ নিয়ে ২৪টি শতরানের ইনিংসসহ ৮৫৪০ রান তুলেন। রান সংগ্রহের দিক দিয়ে তিনি কেবলমাত্র সুনীল গাভাস্কার ও অ্যালান বর্ডারের পিছনে অবস্থান করছিলেন। এছাড়াও, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে ৫০ টেস্টে নেতৃত্ব দেন ও ১৫টি সিরিজে তাঁর দল অপরাজিত ছিল।

ওডিআই বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছুটিয়েছেন। ১৮৭টি ওডিআইয়ে ৪৭ গড়ে ৯০.২০ স্ট্রাইক রেটে ৬৭২১ রান তুলেছেন। ঐ সময়ে এ ধরনের স্ট্রাইক রেট খুব সহজ ছিল না। ৩২ বল থেকে ৫০ রান তুলে তৎকালীন তৃতীয় দ্রুততম অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছিলেন। ৭ জুন, ১৯৭৫ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাঁর ওডিআই অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। নিজস্ব সপ্তম খেলায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম শতরানের সন্ধান পান। ৩১ মে, ১৯৮৪ তারিখে নিজস্ব ব্যক্তিগত সেরা ইনিংস খেলেন। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ১৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন। ২০১৭ সালের পূর্ব-পর্যন্ত দলীয় সংগ্রহের ৬৯.৪৮% তুলের সর্বাধিক অংশ নেয়ার রেকর্ড গড়েন।

১৯৮০-এর মাঝামাঝি সময়ে নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ওডিআই খেলোয়াড়ে পরিণত করেছিলেন। ১৯৮৪ সালে দলের সাথে ইংল্যান্ড অভিমুখে যাত্রা করেন। এ সফরেই অন্যতম সেরা ইনিংস খেলেন ও অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকদের কাছেই সেরা ওডিআই ইনিংসের মর্যাদা পায়। সিরিজের প্রথম ওডিআইয়ের ২৬তম ওভারে ম্যালকম মার্শালের রান আউটকালীন দলীয় সংগ্রহ মাত্র ১০০ কোটা অতিক্রম করে ও সফরকারীরা প্রথম ধাক্কা খায়। কিন্তু অপর প্রান্তে ভিভ রিচার্ডস তখনও ৬৫ রানে অপরাজিত ছিলেন ও দলীয় সঙ্গীদের প্যাভিলিয়ন অভিমুখে যেতে দেখতে থাকেন। ব্যক্তিগত ৯৬ রানে থাকাকালে দলের সংগ্রহ ১৬৬/৯ দাঁড়ায়। মাইকেল হোল্ডিং দৃঢ়তার পরিচয় দিলে তিনি শতরান পূর্ণ করেন। এর পরপরই তিনি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেন। ইয়ান বোথাম, ডেরেক প্রিঙ্গল ও নীল ফস্টার – কেউই তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিং থেকে রেহাই পাননি। এ জুটি ১০৬ রানে অপরাজিত অবস্থায় মাঠ ত্যাগ করে। তন্মধ্যে, তিনি ৯৩ রান একাই তুলেন। ১৭০ বল মোকাবেলা করে ২১ বাউন্ডারি ও পাঁচ ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। শেষ ৫৮ বল থেকে ৮৬ রান তুলেন। এরপর, ২৭২ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় ইংরেজ দল জোয়েল গার্নারের তোপে ১৬৮ রানে গুটিয়ে যায় ও স্বাগতিক দল ১০৪ রানে পরাজয়বরণ করে।

বড় আসরের ক্রিকেটেও সফলতার ছাঁপ রেখেছেন। বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আসরসহ ১৯৭৯ সালের শিরোপা বিজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় তিনটি রান-আউট করেন ও ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপের চূড়ান্ত খেলায় ঝড়োগতিতে শতক হাঁকিয়েছিলেন। লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রায় একাকী দলকে জয়ী করেন। ১৩৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন।

বল হাতে নিয়েও উল্লেখযোগ্য ভূমিকার স্বাক্ষর রেখেছেন। ১১৮ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে শতক হাঁকানোর পাশাপাশি চার-উইকেট লাভ করেছিলেন। ৩১বার ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। অধিনায়ক হিসেবে পঞ্চাশটি ওডিআইয়ের ২৭টিতে জয় এনে দেন।

ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেট দলের পক্ষে খেলেছেন। চারজন অ-ইংরেজ ব্যাটসম্যানের অন্যতম হিসেবে ১০০টি প্রথম-শ্রেণীর শতক হাঁকিয়েছেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবল খেলায়ও দক্ষ ছিলেন। অ্যান্টিগুয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অংশ নিয়েছেন। ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার বাছাইপর্বে অ্যান্টিগুয়ার প্রতিনিধিত্ব করেন।

১৯৭৭ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৮০ ও ১৯৮৬ সালে ওয়াল্টার লরেন্স ট্রফি পান। অসামান্য ক্রিকেটীয় অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুদা সরকার থেকে নাইটহুড লাভ করেন। দৃষ্টিনন্দন ও অনবদ্য ক্রীড়া নৈপুণ্যের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। ২০০২ সালে উইজডেন কর্তৃক সর্বকালের সেরা ওডিআই ব্যাটসম্যানরূপে মনোনীত হন। অন্যদিকে, ২০০০ সালে ডন ব্র্যাডম্যান, গ্যারি সোবার্স, জ্যাক হবস ও শেন ওয়ার্নের পর উইজডেন শতাব্দীর সেরা ক্রিকেটার হিসেবে ভোটে নির্বাচিত হন। অস্ট্রেলীয় বোলার মাইক হুইটনি তাঁর সেরা একাদশে জহির আব্বাস, মার্টিন ক্রো প্রমূখের সাথে তাঁকে ঠাঁই দিয়েছেন। মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে রডনি হগের বলে চিবুকে আঘাত পান। পরের বলেই তাঁর বলে হুকের সাহায্যে ছক্কা হাঁকান।

সব মিলিয়ে ৫০৭টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ১১৪টি শতক হাঁকিয়েছেন। এরফলে, ২৫জন ক্রিকেটারের মধ্যে ১৫শ অবস্থানে থাকেন। স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের চেয়ে মাত্র তিনটি শতক কম হাঁকিয়েছেন। ১৯৮৫ সালে ইংরেজ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে খেলায় সমারসেটের টানটনে ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩২২ রান তুলেন। ৪৯.৪০ গড়ে ৩৬২১২ রান সংগ্রহ করেছেন এবং ২২৩টি উইকেট ও ৪৬৪টি ক্যাচ তালুবন্দী করার পাশাপাশি একটি স্ট্যাম্পিং করেছিলেন। ১২বার মৌসুমে সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন তিনি।

জন প্লেয়ার লীগে দুইটি রেকর্ড গড়েছিলেন। সবমিলিয়ে ১৪৬টি ছক্কা ও ১৯৭৭ সালে এক মৌসুমে ২৬ ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। এছাড়াও, বেনসন এন্ড হেজেস কাপে ছয়বার গোল্ড পুরস্কার এবং ২০০১ সালে প্রবর্তিত জিলেট কাপ / ন্যাট-ওয়েস্ট ট্রফি প্রতিযোগিতায় চারবার ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

ভারতীয় অভিনেত্রী নীনা গুপ্তা’র সাথে সাময়িক ব্যক্তিগত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। মাসাবা নাম্নী তাঁদের এক কন্যা রয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। মিরিয়াম রিচার্ডস নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। তাঁর পুত্র মালি পিতার অনুসরণে ক্রিকেটে জড়িয়ে পড়ে এবং মিডলসেক্স ও লিওয়ার্ড আইল্যান্ডসের পক্ষে খেলে। অ্যান্টিগুয়ার নর্থ সাউন্ডের স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে তাঁর সম্মানার্থে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়াম রাখা হয়।