Skip to content

২০ অক্টোবর, ১৯৭৮ তারিখে দিল্লিতে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান ছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

৫ ফুট ৮ ইঞ্চি (১.৭৫ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম থেকে ২০১৫-১৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে দিল্লি ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে লিচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তন্মধ্যে, ২০০৩ সালে লিচেস্টারশায়ারের ক্যাপ লাভের অধিকারী হন। এছাড়াও, এশীয় একাদশ, আইসিসি বিশ্ব একাদশ, দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, কিংস ইলাভেন পাঞ্জাব ও মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলেছেন।

সনথ জয়সুরিয়া’র ন্যায় তিনিও মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে সফলতার সাথে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানরূপে পরিগণিত হয়েছেন। শীর্ষসারিতে ভীতিহীন অবস্থায় ব্যাটিং করে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। টেস্টে দুইবার ত্রি-শতক ও ওডিআইয়ে একবার দ্বি-শতক করে খেলার গতিধারাকে পুণরুজ্জ্বীবিত করেছেন। প্রচলিত পন্থার ধার না ধরে যতদূর সম্ভব ব্যাটিং করেছেন ও স্বকীয়তা অবলম্বন করে সর্বদাই খেলেছেন।

অনেক ভারতীয় শচীন তেন্ডুলকরের অন্ধভক্ত হলেও তিনি প্রকৃতই বিশেষ কেউ হিসেবে চিত্রিত হয়ে আছেন। হাত-চোখের অপূর্ব সমন্বয়, স্বল্প পায়ের নড়াচড়া ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীতে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। পরবর্তীতে, কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছেন। লিটল মাস্টারের সাথে ক্রিজে অবস্থান করে নিজেকে মধ্যমণিতে রূপান্তরিত করতেন।

জাত পরিবারে অভিজাত ব্যবসায়ী পিতার সন্তান। প্রথমে অরোরা বিদ্যা স্কুলে ভর্তি হন। পরবর্তীতে, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। খেলনা ব্যাট উপহার পাবার পর থেকেই ক্রিকেটের দিকে আকর্ষণ গড়ে উঠে। এ সময়ে তিনি মাত্র সাত মাস বয়সী ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি পিতা-মাতার কাছ থেকে ক্রিকেট খেলতে সম্মতি আদায়ে সক্ষম হন। তবে, পড়াশোনা ঠিকই চালিয়ে যেতে থাকেন। ১২ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলায় দাঁত ভেঙ্গে ফেললে তাঁর পিতা ক্রিকেট খেলার উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। তবে, মায়ের সহায়তায় তিনি এ নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পান।

ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৮ সালে চেন্নাইয়ে তামিলনাড়ুর বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তাঁর। ডব্লিউভি রমন প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তাঁর প্রথম শিকারে পরিণত হন। ঐ খেলায় তিনি ব্যাট হাতে ধরার সুযোগ পাননি। ঐ মৌসুমে এটিই তাঁর একমাত্র প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেয়া ছিল। বিংশতিতম জন্মদিনের দুইদিন পর নিজস্ব দ্বিতীয় খেলায় প্রথমবারের মতো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট শতক হাঁকান। সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৪৭ বল মোকাবেলান্তে ১১৮ রানের মনোরম ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এ ইনিংসে ১৬টি চার ও তিনটি ছক্কার মার ছিল। এছাড়াও, খেলায় দুই উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। তরুণ শেহবাগের জন্যে এ মৌসুমটি সোনায় সোহাগা ছিল। আট খেলায় ৬২ ঊর্ধ্ব গড়ে তিন শতক ও চার অর্ধ-শতক সহযোগে ৭৪৫ রান তুলেছিলেন। পাশাপাশি ২৫.৪২ গড়ে ১৪ উইকেট দখল করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে, ভারত দলে খেলার জন্যে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এছাড়াও, ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ১৯-সদস্যের প্রাথমিক তালিকায় তাঁকে রাখা হয়েছিল।

১৯৯৯ থেকে ২০১৩ সময়কালে ভারতের পক্ষে ১০৪টি টেস্ট, ২৫১টি ওডিআই ও ১৯টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১ এপ্রিল, ১৯৯৯ তারিখে মোহালিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করেন। তবে, প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারেননি তিনি। মাত্র এক রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন ও তিন ওভারে ৩৫ রান খরচ করে ফেলেন। অভিষেকে এ ধরনের বিপর্যয়কর ফলাফলের কারণে তাঁকে দল থেকে বাদ দেয়া হয়। পরের খেলায় অংশ নেয়ার জন্যে তাঁকে প্রায় দেড় বছর অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়েছিল। নিজস্ব চতুর্থ ওডিআইয়ে অংশ নিয়ে তাঁর খেলার মোড় ঘুরে যায়। ৫৮ রান ও তিন উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের জয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন ও ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। তবে, কাঁধের আঘাতের কারণে সিরিজের বাদ-বাকী খেলাগুলোয় অংশ নেয়া থেকে তাঁকে বিরত রাখা হয়।

২০০১-০২ মৌসুমে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ৩ নভেম্বর, ২০০১ তারিখে ব্লুমফন্তেইনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। দীপ দাসগুপ্তা’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অভিষেক টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখেন তিনি। ১০৫ ও ৩১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, শন পোলকের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৯ উইকেটে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

২০০৩-০৪ মৌসুমে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। পুরো সিরিজে অপূর্ব খেলেন। ১৩ এপ্রিল, ২০০৪ তারিখে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে শূন্য রানে বিদেয় নিলেও একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, রাহুল দ্রাবিড়ের অসামান্য দ্বি-শতক হাঁকানোর সুবাদে সফরকারীরা ইনিংস ও ১৩১ রানে জয় তুলে নেয় এবং তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়লাভ করে।

মুলতান টেস্টে ভারতের একমাত্র ও প্রথম ত্রি-শতকধারীর মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। প্রায় নয় ঘণ্টা ক্রিজে অবস্থান করে ৩০৯ রানের অনন্য ইনিংস খেলে সিরিজের প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে দলের বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনে বেশ কয়েকটি উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। ‘নজাফগড় কা নবাব’ নামে জনপ্রিয়তা পান ও মাঠে বীরত্বসূচক ভূমিকার কারণে ‘মুলতান কা সুলতান’ উপাধি পান। এ সিরিজে তিনি ৪৩৮ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

নিজস্ব প্রথম ১১টি ওডিআইয়ে মাঝারিসারিতে খেলতেন। কলম্বোয় অনুষ্ঠিত দ্বাদশ খেলায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁকে ইনিংস উদ্বোধনের সুযোগ দেয়া হয়। তবে, ৫৪ বল থেকে ৩৩ রান তুলে ভারতের পরাজয়ে ভূমিকা রাখেন। তিন খেলা পর আক্রমণাত্মক খেলেন। ৭০ বল মোকাবেলায় ১০০ রানের ইনিংস খেলেন ও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে অগ্রসর হন। ওডিআই থেকে সংগৃহীত ১৫ শতকের এটিই প্রথম ছিল। তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরন অনেকাংশেই শচীন তেন্ডুলকরের ন্যায় ছিল ও প্রায়শঃই তাঁর ব্যাটিংকে সঙ্করায়ণ হিসেবে পরিগণিত করা হতো।

বীরেন্দ্র শেহবাগকে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের বাইরে রেখে কোন ক্রিকেটবোদ্ধাই সর্বকালের সেরা ভারতীয় টেস্ট একাদশ গড়ার দুঃসাহস দেখাতে যাবেন না। একই খেলোয়াড় দীর্ঘ সংস্করণের খেলায় যে-কোন স্থানে খেলার অধিকারী। ২০০০-এর পরবর্তী সময়ে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে ব্যাটিং নির্দেশিকাকে পুরোপুরি পরিবর্তিত করে ফেলেছেন। ২০০৩-০৪ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান সফরে ভারতের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট সফরে এর প্রমাণ রেখেছেন। এ সফরগুলোয় ব্যাপকসংখ্যক রান তুলে ড্র ও জয়ে বিশাল ভূমিকা রাখেন। ইনিংস উদ্বোধনে নেমে শুরু থেকেই বোলারদের উপর চড়াও হতেন। তাঁর পূর্বে ওডিআইয়ে সনাথ জয়সুরিয়া প্রভাব ফেললেও টেস্টে তিনি ব্যাটিংয়ের পূর্বেকার ধারনাগুলো বদলে ফেলেন।

২০০৪-০৫ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ২৮ নভেম্বর, ২০০৪ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৮৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৮৮ ও ১০ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে মাখায় এনটিনি’র বলে বিদেয় নিয়েছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। হরভজন সিংয়ের অসাধারণ বোলিংয়ের সুবাদে সফরকারীরা ৮ উইকেটে পরাজিত হলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। এ সিরিজে ২৬২ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

আবারও তিনি পাকিস্তানের উপর খড়্গ হস্ত চালান। একই মৌসুমে নিজ দেশে ইনজামাম-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ফিরতি সফরে আসলে তিনি দারুণ খেলা উপহার দেন। ২৪ মার্চ, ২০০৫ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। এ টেস্টে দারুণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। ২০১ ও ৩৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ইউনুস খানের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে শেষ অধিবেশনে জয় পেয়ে সফরকারীরা ১৬৮ রানে জয় পেলে ঐ সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৫৪৪ রান তুলে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

জানুয়ারি, ২০০৬ সালে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে রেকর্ডসংখ্যক রান সংগ্রহে অংশ নেন। লাহোরে রাহুল দ্রাবিড়কে নিয়ে ৪১০ রানের জুটি গড়েন। বিনু মানকড় ও পঙ্কজ রায়ের সংগৃহীত সর্বাধিক ৪১৩ রানের কৃতিত্বকে তাঁরা প্রায় ম্লান করে দিয়েছিলেন। ২৫৪ রান সংগ্রহ করে তিনি পরবর্তীতে মন্তব্য করেন যে, পূর্বেকার রেকর্ড সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না।

ছয়টি দ্বি-শতরানের ইনিংসসহ দুইটি ত্রি-শতকের সন্ধান পান। সংখ্যার দিক দিয়ে যে-কোন ভারতীয় ব্যাটসম্যানের চেয়ে সর্বোচ্চ। এরফলে, বেশ নিশ্চিন্তেই বলা যায় যে, বীরেন্দ্র শেহবাগের চেয়ে অন্য কোন ব্যাটসম্যান ভারতের জয়ের সংখ্যার ধারে-কাছে ছিলেন না। বেশ কয়েকটি বড় ধরনের ইনিংস খেললেও ২০০৮ সালে গলেতে অজন্তা মেন্ডিস ও মুত্তিয়া মুরালিধরনের বল মোকাবেলায় অর্জিত দ্বি-শতকটি অন্য যে-কোন ইনিংসের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। পুরো সিরিজেই যেখানে শচীন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড় ও ভিভিএস লক্ষ্মণ তাঁদের বল মোকাবেলায় হিমশিম খেয়েছেন, সেখানে তিনি তাঁদেরকে সাধারণমানের বোলারে পরিণত করেছেন। বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই অফ-স্পিনারদের মোকাবেলা করতেন। দলীয় সঙ্গী রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে একবার বলেছিলেন যে, ‘তুমি কি জান, আমি মনে করি না যে অফ-স্পিনাররা কোন বোলার। তাঁরা আমাকে কোন সমস্যায় ফেলতে পারে না। আমি কেবলমাত্র তাঁদের উপর এক চোট তুলে নিতেই পছন্দ করি।’

ওডিআইয়ে দূরন্ত সূচনার পর ২০০১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট অভিষেক পর্বেই শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। নভেম্বর, ২০০১ সালে ব্লুমফন্তেইনে প্রথম ইনিংসে ১০৫ রান তুলেন। ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে শচীন তেন্ডুলকরের সাথে পঞ্চম উইকেটে ২২০ রান যুক্ত করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১ রান তুললেও ভারত দল পরাজয় এড়াতে পারেনি।

নিজস্ব তৃতীয় টেস্টে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। পোর্ট এলিজাবেথে টেস্ট চলাকালীন ম্যাচ রেফারি মাইক ডেনিস ছয়জন ভারতীয় খেলোয়াড়কে সাজা প্রদান করলে তিনিও এর অংশ ছিলেন। আম্পায়ারের সাথে তর্কে লিপ্ত হলে এক টেস্টে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন। ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড এ সিদ্ধান্তকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে মন্তব্য করে ও সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টকে অনানুষ্ঠানিক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

নিজস্ব ষষ্ঠ টেস্টে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে আবির্ভূত হন। প্রথমবারের ইংল্যান্ড সফরে খেলতে নেমে প্রথম দুই টেস্টে দূর্দান্ত খেলেন। লর্ডসে ৯৬ বলে ৮৪ ও ট্রেন্ট ব্রিজে ১০৬ রান তুলেন। এ দুইটি ইনিংস খেলার সুবাদে নিজেকে সকল স্তরের ক্রিকেটে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

ডিসেম্বর, ২০০৩ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টেস্টের প্রথম দিনে অন্যতম সেরা ইনিংস খেলেন। স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৩৩ বল মোকাবেলান্তে ১৯৫ রানের মনোরম ইনিংস উপহার দেন। এ পর্যায়ে অস্ট্রেলীয়দেরকে নতুন বল হাতে নেয়ার সুযোগ দেননি। অল্পের জন্যে দ্বি-শতক হাঁকানো থেকে বঞ্চিত হন।

কয়েকটি সিরিজে সাধারণমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে টেস্টে সহঃঅধিনায়কত্ব করা থেকে তাঁকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায়ও রান খরা অব্যাহত থাকে। এমনকি কেপটাউনে সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে তাঁকে মাঝারিসারিতে রাখা হয়েছিল। এক পর্যায়ে এক বছরের জন্যে তাঁকে টেস্ট দলের বাইরে রাখা হয়েছিল।

২০০৩-০৪ মৌসুমে রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। ২৮ মার্চ, ২০০৪ তারিখে মুলতানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখতে তৎপর হন। দলের একমাত্র ইনিংসে ৩০৯ রানের ত্রি-শতক হাঁকান। তাঁর এ অসাধারণ ইনিংসের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৫২ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০০৭ সালের বিশ্ব টি২০ ও ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় শিরোপা বিজয়ী ভারত দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। যথোচিত ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। সর্বমোট তিনবার বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দুইবার দলকে চূড়ান্ত খেলায় নিয়ে যান। তন্মধ্যে, ২০০৩ সালের চূড়ান্ত খেলাটিতে ৮১ বলে ৮২ রানের ইনিংস খেললেও দলের পরাজয় এড়ানো যায়নি। ২০০৭ সালের আসরে গোটা দলের জন্যেই বিপর্যয়কর ছিল। এ প্রতিযোগিতায় ভারত দল গ্রুপ পর্বের প্রাথমিক বাঁধা এড়াতে পারেনি। তবে, ২০১১ সালে নিজ দেশে ভারতের শিরোপা বিজয়ে আট খেলা থেকে ৪৭.৫০ গড়ে ৩৮০ রান তুলে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ২০০৭ সালের আইসিসি বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আসরে ভারত দলে খেলেছিলেন।

অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে ২০০৭ সালে টেস্ট দলে ফিরে আসেন। পূর্বেকার বছরগুলোয় সীমিত-ওভারের দলে আসা-যাবার পালায় থাকলেও কার্যতঃ টেস্ট দলে ফিরে আসার কোন সুযোগ ছিল না। অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রাথমিক তালিকায় না থাকার বিষয়টি পাকাপোক্ত ছিল। কিন্তু, ১৬-সদস্যের চূড়ান্ত তালিকায় তাঁকে বিস্ময়করভাবে ঠাঁই দেয়া হয়। এ সফরে পার্থে জয় পাওয়া টেস্টে ২৯ ও ৪৩ রান সংগ্রহসহ দ্বিতীয় ইনিংসে দুইটি উইকেট পান। অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত পরের টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫১ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস খেলে ভারতের পরাজয় ঠেকান। ঐ ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ২০।

অস্ট্রেলিয়া সফরের অল্প কিছুদিন পরই চেন্নাইয়ে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজস্ব দ্বিতীয় ত্রি-শতকের সন্ধান পান। এটি দ্রুততম ছিল। ৩০৪ বল মোকাবেলান্তে ৩১৯ রান তুলতে ৫৩০ মিনিট ব্যয় করেন তিনি। ত্রি-শতক হাঁকাতে তিনি মাত্র ২৭৮ বল খরচ করেছিলেন। এরফলে, ডন ব্র্যাডম্যানব্রায়ান লারা’র পর তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্রুততম তিনশত রান সংগ্রহের কৃতিত্বের অধিকারী হন। পরবর্তীতে, ২০১০ সালে ক্রিস গেইল এ তালিকায় নিজেকে যুক্ত করেন।

একই বছর গল টেস্টে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকার গৌরব অর্জন করেন। দলের সংগ্রহ ৩২৯ রান হলেও তিনি ২০১ রানে অপরাজিত ছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫২ বলে দ্রুততর ৫০ রান তুলেন। মুত্তিয়া মুরালিধরন ও অজন্তা মেন্ডিসের তীক্ষ্ণ স্পিন বোলিং মোকাবেলা করে এ সাফল্য পান। তাঁর এ ইনিংসের কল্যাণে ভারত দল জয়লাভে সক্ষম হয়। ঐ টেস্টে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

ডিসেম্বর, ২০০৮ সালে চেন্নাইয়ে আরও একটি মনোরম ইনিংস খেলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৮৭ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে ৬৮ বলে ৮৩ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দেন। শচীন তেন্ডুলকরের অপরাজিত শতরানের কল্যাণে ভারত দল জয় পেলেও জয়ের ভিত্তি আনয়ণে অসামান্য ভূমিকা রাখার প্রেক্ষিতে তাঁকে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার প্রদান করা হয়।

মার্চ, ২০০৯ সালে ওডিআইয়ে ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে দ্রুততম শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। হ্যামিল্টনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬০ বল মোকাবেলান্তে এ মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরফলে, ৬২ বল থেকে শতক হাঁকানো মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের রেকর্ড ম্লান হয়ে যায়। পরবর্তীতে, ২০১৩ সালে জয়পুরে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিরাট কোহলি মাত্র ৫২ বলে শতরান করে তাঁর এ রেকর্ড ভেঙ্গে নিজের করে নেন।

ডিসেম্বর, ২০০৯ সালে মুম্বইয়ে ত্রি-শতকের প্রায় দোরগোড়ায় উপনীত হয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৯৩ রান তুলে মাত্র সাত রানের জন্যে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনবার তিন শতাধিক রান তোলার গৌরব অর্জন থেকে ব্যর্থ হন। তবে, ভারতের সর্বাধিক দ্বি-শতক রান সংগ্রহের অধিকারী হন। এছাড়াও, একদিনে সর্বাধিক ২৮৪ রান তুলেন। ডিসেম্বর, ২০১০ সালে কলকাতা টেস্টে ১৭৪ বলে ১৬৫ রান তুলে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দলকে ইনিংস ব্যবধানে জয়লাভে বিরাট ভূমিকা রাখেন। এ পর্যায়ে তিনি আইসিসি টেস্ট র‍্যাঙ্কিং প্রথায় বিশ্বের ১ নম্বর ব্যাটসম্যানের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন।

২০১০ সালে এমএস ধোনি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৩ আগস্ট, ২০১০ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ১/৮ ও ৩/৫১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১০৯ ও ০ রান সংগ্রহের পাশাপাশি একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ভিভিএস লক্ষ্মণের অনবদ্য ব্যাটিং সাফল্যে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে পরাজিত হলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। এ সিরিজে ৩৪৮ রান সংগ্রহসহ ৭ উইকেট দখল করে তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

২০১০-১১ মৌসুমে নিজ দেশে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৪ নভেম্বর, ২০১০ তারিখে আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ১৭৩ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, হরভজন সিংয়ের অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই সফরের ২০ নভেম্বর, ২০১০ তারিখে নাগপুরে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৭৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৭৪ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। রাহুল দ্রাবিড়ের অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৯৮ রানে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

ডিসেম্বর, ২০১১ সালে তিনি তাঁর সেরা ওডিআই ইনিংসগুলো উপহার দেন। ওডিআইয়ের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে শচীন তেন্ডুলকরের ২০০ রান সংগ্রহের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বি-শতক হাঁকান। ইন্দোরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। পরবর্তীতে, ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলীয় সঙ্গী রোহিত শর্মা তাঁর এ কৃতিত্বকে ম্লান করে ২৬৪ রানে নিয়ে যান। ইন্দোরে বিস্ময়কর সফলতা লাভের পর ১০টি অসঙ্গতিপূর্ণ খেলা প্রদর্শন করেন। ৩ জানুয়ারি, ২০১৩ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ওডিআইয়ে অংশ নেন। এরপর টেস্টে মনোযোগী হন। তবে, ছন্দপতন ঘটতে থাকে।

২০১২-১৩ মৌসুমে নিজ দেশে মাইকেল ক্লার্কের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২ মার্চ, ২০১৩ তারিখে হায়দ্রাবাদের ডেকানে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। তবে, চেতেশ্বর পুজারা’র দ্বি-শতকের কল্যাণে ইনিংস ও ১৩৫ রানে স্বাগতিকরা জয় তুলে নেয় এবং চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ৬ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ‘নাজাফগড়ের নবাব’ অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ক্রিকেট ধারাভাষ্যকর্মের সাথে নিজেকে জড়ান। নতুন দায়িত্ব পালনে ‘বীরু’ ডাকনামে পরিচিত বীরেন্দ্র শেহবাগ সমর্থকদের কাছে তাঁর মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছেন। ২০১৭ সালের ইন্ডিয়ান টি২০ লীগের আসরে পাঞ্জাবের পরিচালক (ক্রিকেট অপারেশন্স) হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন।

নিঃস্বার্থবান খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর সুনাম রয়েছে। রেকর্ড গড়ার জন্যে তিনি খেলেননি। ত্রি-শতক ও দ্বি-শতক রানগুলোয় ঝুঁকিপূর্ণ ছক্কা মেরেছেন। এভাবে তিনি বিদেয় নিলেও মনক্ষুণ্ন হন না। এছাড়াও, গলেতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিংকালে ১৯৯ রান থাকা অবস্থায় প্রান্ত বদলে অস্বীকার করেন। কেবলমাত্র দলের স্বার্থে খেলেছেন।

নাইট-ওয়াচম্যানের ধারনার বিষয়ে তিনি কখনো একমত পোষণ করেননি। ইএসপিএনক্রিকইনফোয় এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে, ‘যখন কোন অধিনায়ক বা কোচ আমাকে নাইট-ওয়াচম্যান হিসেবে মাঠে নামার আমন্ত্রণ জানান তখন আমি না করে দিই ও কেন বলি? আমি যদি এখন ১০ বা ২০ বল মোকাবেলা করতে না পারি তাহলে পরদিন সকালে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করতে পারবো। আমি মনে করি যে, এটিই সেরা সময় যখন রান তোলার সুযোগ রয়েছে। কেননা, মাঠে অবস্থানরত প্রত্যেকেই তখন ক্লান্ত এবং ঐ ২০ বল থেকে ২০ রান তোলা সম্ভবপর।’

প্রায়শঃই ইনিংসের শুরুতে গুনগুনিয়ে গান গেয়ে যাত্রা শুরু করেন। মাঝামাঝি সময়ে ছন্দ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন ও সঠিকভাবে গানের পঙ্কতি ফিরিয়ে আনেন। ব্যাটিংয়েও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছন্দ ফিরে আসে। ইএসপিএনক্রিকইনফোয় এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি মন্তব্য করেন যে, যখন আমি উইকেটে অবস্থান নেই, মন থেকে সর্বাগ্রে নেতিবাচক চিন্তা ঝেড়ে ফেলি। গুনগুনিয়ে গান বা ভজনের মাধ্যমে তা করে থাকি।

শোয়েব আখতারের বল থেকে শচীন তেন্ডুলকর হুকের সাহায্যে ছক্কা হাঁকালে ‘বেটা বেটা হোতা হ্যায়, বাপ বাপ হোতা হ্যায়’ বলে মন্তব্য করেন। প্রচলিত রয়েছে যে, শোয়েব আখতার তাঁকে বাউন্সার মোকাবেলার আমন্ত্রণ জানান ও তিনি অপর প্রান্তে অবস্থানরত তাঁর ড্যাডি তেন্ডুলকরকে প্রথম বল করতে বলেন। শোয়েবের প্রথম বলেই তেন্ডুলকর ছক্কা হাঁকিয়ে তাঁর বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণ করেন।

২০০৬ সালে কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান অয়েল কাপের চূড়ান্ত খেলায় এক ওভার থেকে ২৬ রান সংগ্রহ করেন। ২৮২ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে দিলহারা ফার্নান্দো’র ওভারে ৪, ৪, ৬, ৪, ৪, ৪ রান তুলেন। ২০০৩ সালে স্যামসাং কাপের প্রথম ওডিআইয়ে পাকিস্তানী দ্রুত গতিসম্পন্ন বোলার রানা নাভেদ-উল-হাসানের দুইটি বৈধ বল থেকে ২১ রান তুলেছিলেন।

২০০০ সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে উইজডেন শীর্ষ ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ২০১০ সালে আইসিসি বর্ষসেরা টেস্ট খেলোয়াড়ে ভূষিত হন। এছাড়াও, ২০০২ সালে অর্জুন পদক লাভ করেছিলেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর অন্যান্য অবসরগ্রহণকারী ক্রিকেটারের সাথে লীগ ক্রিকেটে অংশ নেন। ওয়াসিম আকরাম, শচীন তেন্ডুলকর, শেন ওয়ার্ন, সৌরভ গাঙ্গুলী, রিকি পন্টিং, জ্যাক ক্যালিস, কার্টলি অ্যামব্রোস প্রমূখের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অল-স্টার্স সিরিজে খেলেন। এছাড়াও, ২০১৬ সালে মাস্টার্স ক্রিকেট লীগে দলকে নেতৃত্ব দেন।

অবসর গ্রহণ পরবর্তীকালে ধারাভাষ্যকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আইপিএলে মন্ত্রণাদাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ২০১৬ ও ২০১৭ সালের আসরে কিংস ইলাভেন পাঞ্জাবের পক্ষে এ দায়িত্বে ছিলেন। টিম ইন্ডিয়ার প্রধান কোচ হিসেবে সিএসি’র স্বাক্ষাৎকার পর্বে সৌরভ গাঙ্গুলী, শচীন তেন্ডুলকর ও ভিভিএস লক্ষ্মণের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। আরতী আলাওয়াত নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।