Skip to content

৫ নভেম্বর, ১৯৮৮ তারিখে দিল্লিতে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

ভীতিহীন, মারকুটে প্রতিভাবান ডানহাতি ব্যাটসম্যান। নিজ প্রজন্মের সময়কালে সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। সন্দেহাতীতভাবে ভারতের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারদের তালিকায় নিজেকে ঠাঁই করে নিয়েছেন। বিখ্যাত ক্রিকেটার শচীন তেন্ডুলকরের সাথে তাঁকে তুলনা করা হয়ে থাকে। হাতলের নিচেরদিকে ভর রেখে তেমন ঝুঁকি না নিয়ে বলকে নির্দিষ্ট স্থান থেকে শুরু করে মাঠের যে-কোন প্রান্তে ফেলতে তাঁর জুড়ি নেই। সকল স্তরের ক্রিকেটেই সমান ভূমিকা রেখেছিলেন।

৫ ফুট ৯ ইঞ্চি (১.৭৫ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। পিতা প্রেম কোহলী আইনজীবী ও মাতা সরোজ কোহলী গৃহিনী। বিকাশ ও ভাবনা নাম্নী দুই জ্যেষ্ঠ ভাই-বোন রয়েছে। তাঁর পিতা ক্রিকেটে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছিলেন ও শৈশবকাল থেকেই তাঁকে ক্রিকেট খেলতে উদ্দীপনা যোগাতেন। ২০০৬ সালে স্ট্রোকে তাঁর পিতার দেহাবসান ঘটে। ২০০৬ সাল থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে দিল্লি ও উত্তরাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, অয়েল এন্ড ন্যাচারেল গ্যাস কর্পোরেশন ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের পক্ষে খেলেছেন।

‘কিং’ হিসেবে তাঁকে ডাকনামে আখ্যায়িত করার বেশ যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। ভারতের অধিনায়ক হিসেবে তাঁর ব্যাটিং রেকর্ড পৃথিবী নামক এ গ্রহের অন্য যে-কোন ক্রিকেটারের চেয়ে এগিয়ে আছে। খেলায় তাঁর আগ্রাসী ভূমিকা গ্রহণের কারণে মুগ্ধ চিত্তে অবলোকনের বিষয়টি শুধুমাত্র সমর্থকদের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়; বরঞ্চ প্রতিপক্ষীয় খেলোয়াড়দের কাছেও বেশ বিস্ময়কর। শৈশবকাল থেকেই ক্রিকেটে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন তাঁর মাঝে সর্বদাই জাগ্রত ছিল। ২০০৬ সালে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো খেলার সুযোগ পান।

২০০৮ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ভারতের শিরোপা বিজয়ী দলকে নেতৃত্ব দিয়ে খ্যাতির শিখরে আরোহণ করেন। এর পরপরই টি২০ প্রতিযোগিতা হিসেবে ইন্ডিয়ান টি২০ লীগের ২০০৮ সালের আসরে খেলার হাতছানি দেয়। ব্যাঙ্গালোরভিত্তিক বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত দলের সদস্য হন। এছাড়াও, ২০১২ সালে দলটির অধিনায়কের দায়িত্ব পান। প্রথম আসরেই দূর্দান্ত খেলা উপহার দিতে থাকলে তাঁকে আগস্ট, ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কা গমনার্থে ভারতের ওডিআই দলে ঠাঁই দেয়া হয়।

২০০৮ সাল থেকে ভারতের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। নিয়মিত উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদ্বয়ের অনুপস্থিতিতে ১৮ আগস্ট, ২০০৮ তারিখে ডাম্বুলায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে বর্ণাঢ্যময় আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে রান সংগ্রহে তৎপরতা দেখান। ঐ সিরিজে তাঁর দল জয়লাভ করেছিল। তবে, শচীন তেন্ডুলকর ও বীরেন্দ্র শেওয়াগের প্রতিষ্ঠিত জুটির কারণে তাঁকে দল থেকে বাদ পড়তে হয়।

২০ বছরের বিরাট কোহলি দিল্লি দলে ক্রমাগত সাফল্য পেয়ে আসছিলেন ও বোলারদের উপর ছড়ি ঘোরাতে থাকলে নিশ্চিতরূপে উঁচু স্তরের উপযোগী করে তুলেন। ২০০৯ সালে এমার্জিং প্লেয়ার্স টুর্নামেন্ট খেলার জন্যে অস্ট্রেলিয়া সফর করেন। এখানেও বোলারদের উপর একচোট দেখে নেন। চূড়ান্ত খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে স্বতঃস্ফূর্ত শতক হাঁকিয়ে দলকে নিশ্চিত জয় এনে দেন। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান ও ঐ প্রতিযোগিতায় দুই শতক ও দুই অর্ধ-শতক সহযোগে ৭ খেলা থেকে ৩৯৮ রান তুলেন। এরফলে, দল নির্বাচকমণ্ডলীর নজর কাড়েন।

শুরুরদিকে বিভিন্ন অবস্থানে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হয়েছিলেন। পরবর্তীতে, বীরেন্দ্র শেওয়াগ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলার সুযোগ পেলে মাঝারিসারিতে মনোনিবেশ ঘটান। প্রথম ২৫টি ওডিআই ইনিংস থেকে নয়টি অর্ধ-শতকসহ দুইটি শতরানের ইনিংস খেলেন। সর্বদাই আত্মবিশ্বাসী মনোভাব তাঁর মাঝে বিরাজমান এবং শট নির্বাচন ও পায়ের কারুকাজের অপূর্ব সংমিশ্রণ থাকায় বিদেশের মাটিতে বোলিং উপযোগী পিচেও দারুণ সফল হয়েছেন। ডিসেম্বর, ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রসর হয়ে নিজস্ব প্রথম ওডিআই শতক হাঁকান। ২০১০ সালে রানের ফল্গুধারা ছোটান। সহস্র রানের কাছাকাছি পর্যায়ে ছিলেন। ১২ জুন, ২০১০ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি২০আইয়ে অংশ নেন।

২০১১ সালেও একই ধারা অব্যাহত রাখেন। বীরেন্দ্র শেওয়াগের পর দলে তাঁর অবস্থান ছিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে শতক হাঁকান ও ঐ প্রতিযোগিতায় দূর্দান্ত খেলেন। মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত খেলায় শুরুতেই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদ্বয়ের পতনের পর দিল্লি দলীয় সঙ্গী গৌতম গম্ভীরের সাথে ৮৩ রানের জুটি গড়ে দলের ভিত গঠনে ভূমিকা রাখেন। ৩৫ রান তুলেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে এমএস ধোনি’র ৯১ রানের অপরাজিত ইনিংসের কল্যাণে বিশ্বকাপের ইতিহাসে ভারত দলের দ্বিতীয় শিরোপা নিশ্চিত হয়।

অবশেষে, ওডিআই অভিষেকের তিন বছর পর জুলাই, ২০১১ সালে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে টেস্ট দলে যুক্ত হন। দলের জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড়দের বিশ্রামের কারণে তিনি খেলার সুযোগ পান। এমএস ধোনি’র অধিনায়কত্বে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ গমন করেন। ২০ জুন, ২০১১ তারিখে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। অভিনব মুকুন্দ ও প্রবীণ কুমারের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনের সূচনালগ্নটি তেমন সুবিধের হয়নি। ৪ ও ১৫ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তবে, রাহুল দ্রাবিড়ের অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে তাঁর দল তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

ডিউকস বল ও এসজি বল মোকাবেলা করার পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে কুকাবুরা বলের মুখোমুখি হন। প্রথম দুই টেস্টে তাঁর কৌশল গ্রহণের অভাব পরিলক্ষিত হয়। এ পর্যায়ে বাউন্স উপযোগী পিচে নতমুখে দণ্ডায়মান থাকতেন। পার্থের বাউন্সি পিচে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে দূর্দান্ত ৭৫ রান তুলেন। দৃঢ় মনোভাবের পরিচয় দিয়ে ২০১২ সালের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া সফরে নিজস্ব প্রথম টেস্ট শতরান করেন। অ্যাডিলেডে দলের অন্যান্যরা ব্যর্থতার পরিচয় দিলেও তিনি অনবদ্য ব্যাটিংশৈলী উপহার দেন। এটিই গোটা সিরিজে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া ভারতের একমাত্র শতক ছিল। তাঁর প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

২০১২ সালের এশিয়া কাপকে ঘিরে ভারতের ওডিআই দলের সহঃঅধিনায়কের দায়িত্বভার প্রদান করা হয়। ঐ প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪৮ বলে ১৮৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। এটিই তাঁর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ৫০-ওভারের ক্রিকেটে তাঁর গড় ৫০-এর অধিক। দীর্ঘ সংস্করণের খেলায়ও সমান দক্ষতা রেখে চলেছেন। এ পর্যায়েও ৫০-এর অধিক গড়ে রান তুলছেন। জানুয়ারি, ২০১৯ সালে ওডিআই ও টেস্টে বিশ্বের ১নং ব্যাটসম্যানের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে তৎপর হয়েছিলেন। জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে গুরুত্বপূর্ণ শতক হাঁকান। দ্বিতীয় ইনিংসেও ৯৬ রান তুলেন। অবশ্য, চেতেশ্বর পুজারা ও মুরালি বিজয়ের কল্যাণে নতুন বলের চাকচিক্যভাব নষ্ট হওয়ায় অবিস্মরণীয় দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের বিপক্ষে এ ইনিংস খেলতে তাঁকে সহায়তা করে। নিউজিল্যান্ডেও চমৎকার খেলার ধারা অব্যাহত রাখেন। অপরাজিত শতক হাঁকিয়ে ঐ সফরটি শেষ করেন।

তবে, ডিউকস বলে সিম বৃদ্ধি ও জেমস অ্যান্ডারসনের দক্ষতাপূর্ণ বোলিংয়ের বিপক্ষে নিজেকে তেমন মেলে ধরতে পারেননি। ২০১৪ সালে ইংল্যান্ড সফরে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে তিনি দশ ইনিংস থেকে মাত্র ১৩৪ রান তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। ব্যাটের কিনারা স্পর্শে স্লিপ অঞ্চলে ফিল্ডারদের মুঠোয় বল ঠেলে দেন ও অফ স্ট্যাম্প রক্ষার্থে ব্যাট দূরে সরিয়ে রাখাও বেশ দৃষ্টিকটূ ছিল। এছাড়াও, নতুন বল মোকাবেলা ও অনুপযোগী উইকেটে তাঁকে হিমশিম খেতে দেখা যায়। ২০১৫ সালের শেষদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ না খেলায় তাঁর র‍্যাঙ্ক পরিবর্তন হয়ে যায়; ২০১৭ সালের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাটিং অনুপযোগী পিচে আঘাতের কবলে পড়া ও ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ব্যর্থতা সবিশেষ লক্ষ্যণীয়।

২০১৩-১৪ মৌসুমে এমএস ধোনি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৪৬ ও ১১ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। ডেল স্টেইনের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয় পায়।

একই মৌসুমে এমএস ধোনি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৯তম ওভারে দলনায়ক বোলিংকর্মে অগ্রসর হলে তিনি উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। খেলায় তিনি ৩৮ ও ১০৫* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অসাধারণ ত্রি-শতক স্বত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে নিয়মিত অধিনায়ক এমএস ধোনি’র আঘাতের কারণে ত্রি-দেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের ওডিআইয়ে দলকে নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীতে, জিম্বাবুয়ে সফরে পূর্ণাঙ্গভাবে দলকে পরিচালনা করেন। ধোনি’র বিশ্রামজনিত কারণে ঐ সিরিজে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৫-০ ব্যবধানে ধবল ধোলাই করে তাঁর দল। এরপর, ওডিআইয়ে ভারতের দ্রুততম ওডিআই শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। অক্টোবর, ২০১৩ সালে জয়পুরে অনুষ্ঠিত খেলায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৬০ রানের লক্ষ্যমাত্রা গড়তে মাত্র ৫২ বলে তিনি শতরানটি করেছিলেন।

পরের বছর প্রায় একাকী বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় ভারত দলকে চূড়ান্ত খেলায় নিয়ে যান। তবে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ বাঁধা টপকাতে পারেননি। কয়েক মাস পর ইংল্যান্ডের সুইং উপযোগী পরিবেশে তেমন সুবিধে করতে পারেননি। জেমস অ্যান্ডারসন তাঁর অফ-স্ট্যাম্পের বাইরের দূর্বলতা চিহ্নিত করেন। তাসত্ত্বেও টেস্ট দলে খেলেন। নভেম্বর, ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাঁচ-ওডিআই নিয়ে গড়া সিরিজে ভারতের ৫-০ ব্যবধানে জয়ের সাথে যুক্ত থাকেন। এরফলে, প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে ওডিআইয়ে দেশ ও বিদেশের মাটিতে প্রতিপক্ষকে ৫-০ ব্যবধানে ধবল ধোলাই করেন।

অধিনায়ক হিসেবেও সকল স্তরের ক্রিকেটে স্বীয় দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। বড় ধরনের প্রতিযোগিতায় তাঁর নেতৃত্বে ভারত দল জয়ী হলেও নিয়মিতভাবে দলটি টেস্ট ও ওডিআইয়ে বিশ্বের ১নং দলের সম্মান লাভ করে। ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে জয়ের হারও বড় ধরনের।

ডিসেম্বর, ২০১৪ সালে অ্যাডিলেডে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের টেস্ট দলকে প্রথমবারের মতো নেতৃত্ব দেন। ইংল্যান্ড সফরে দলের শোচনীয় ফলাফলের পর ক্রিকেট বিশ্লেষকদের নজর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে তাঁর অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে সাড়া জাগায়। উভয় ইনিংসে শতক হাঁকালেও তাঁর দল পরাজয়বরণ করে। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪১ রানের ইনিংসের কল্যাণে খেলাটি পঞ্চম দিনে গড়ায়। ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪ তারিখে এমসিজিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ভারত দলকে নিশ্চিত পরাজয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন। ঐ টেস্ট শেষে এমএস ধোনি অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করলে চতুর্থ ও পঞ্চম টেস্টে ভারতের অধিনায়কত্ব করেন। তবে, ইংল্যান্ড সফরে তেমন সুবিধে করতে না পারায় দীর্ঘ সংস্করণের খেলায় তাঁর অবস্থান ও কৌশল গ্রহণে সন্দেহের সৃষ্টি করেছিল। ঐ সফরে সর্বমোট চারটি শতক হাঁকিয়েছিলেন।

২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় পূর্ববর্তী প্রতিযোগিতার শিরোপাধারী ভারত দল বেশ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামে। দলের প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে তাঁকে চিত্রিত করা হয়েছিল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে মনোরম শতরান করে দলকে জয় এনে দেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪৬ রান তুলেন। তবে, সহঃস্বাগতিক ও পরবর্তীতে শিরোপাধারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে ১৩ বল মোকাবেলা করে মাত্র ১ রান করলে দলের ফলাফল বিরূপ প্রভাব ফেলে। প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ে তাঁর দল।

২০১৭-১৮ মৌসুমের ওডিআইগুলো থেকে ব্র্যাডম্যানসুলভ ৯৭.৫০ গড়ে রান পেয়েছিলেন। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার পর থেকে ১৯ শতক হাঁকিয়েছিলেন। বিশ্বকাপের পর ভারত দলের নেতৃত্বে থাকেন। বিশ্বে শক্তিধর ওডিআই দলে রূপান্তর করেন। অগণিত পুরস্কার ও রেকর্ড রয়েছে তাঁর। সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে ধারাবাহিক ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখে তিনি তাঁর প্রজন্মের সেরা ওডিআই ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পান।

পূর্ণাঙ্গ অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে তরুণ খেলোয়াড়সমৃদ্ধ ভারতের টেস্ট দলকে নিয়ে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। চতুর্থ ইনিংসে শ্রীলঙ্কান স্পিনারদের দাপট লক্ষ্য করা যায়। প্রথম টেস্টে পরাজিত হলেও নাটকীয়ভাবে সিরিজে ফিরে আসে তাঁর দল ও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও টেস্ট দলকে পরিচালনা করেন। এ সফরে ভারত দল তাঁদের অবস্থানের উত্তরণ ঘটায়। ব্যাট হাতে নিয়ে তেমন সাফল্য না পেলেও দলের অন্যান্য ব্যাটসম্যানের কল্যাণে প্রথমবারের মতো আইসিসি টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর স্থান দখল করে।

২০১৬ সালে স্বর্ণালী মৌসুম অতিবাহিত করেন। ব্যাট হাতে ক্রমাগত রানের সন্ধান পান। আড়াই হাজারের অধিক আন্তর্জাতিক রান তুলেন। ৪০ ইনিংস থেকে সাত শতক ও তেরো অর্ধ-শতক সহযোগে ৮৬.৫০ গড়ে রান পেয়েছিলেন। তন্মধ্যে, ২০১৬ সালের বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার পান। ঐ প্রতিযোগিতায় ভারত দল সেমি-ফাইনালে অবতীর্ণ হয়েছিল। এছাড়াও, ইন্ডিয়ান টি২০ লীগে নয়শত রান তুলেন। এ পর্যায়ে নিজ নামের পার্শ্বে চারটি শতরানের ইনিংস লেখেন।

টেস্ট দলে স্বীয় স্থান পাকাপোক্ত করার পাশাপাশি ওডিআইয়েও রেকর্ড ভাঙ্গার দিকে ঝুঁকে পড়েন। ওডিআইয়ে বেশ কয়েকটি দ্রুততম হাজার রানের রেকর্ড নিজ নামের পার্শ্বে লিপিবদ্ধ করেন। পাশাপাশি দ্রুততম ৯০০০ রান সংগ্রহের বিশ্বরেকর্ড গড়েন। এছাড়াও, ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালে উপর্যুপরী তিন বছর ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ২০১২ সালে আইসিসি ওডিআই বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার লাভ করেন।

৪০ ওভারে ৩২১ রানের অসম্ভব জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় ৮৬ বলে শতক হাঁকান। শ্রীলঙ্কান বোলারদের উপর খড়গ হস্তে ঝাঁপিয়ে ১৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ২ ওভারের অধিক বল বাকী থাকতে দলকে জয় এনে দেন।

২০১৬-১৭ মৌসুমে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে উপর্যুপরী চার টেস্ট সিরিজের প্রত্যেকটিতে দ্বি-শতক হাঁকিয়েছিলেন। এরফলে, কিংবদন্তীতুল্য স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান ও রাহুল দ্রাবিড়ের উপর্যুপরী তিন টেস্ট সিরিজে গড়া দ্বি-শতরানের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন। স্বর্ণালী মৌসুম অতিবাহনের পর ২০১৮ সালের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও একই ধারা অব্যাহত রাখেন। ঐ সিরিজে ভারত দল ২-১ ব্যবধানে পরাভূত হলেও সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে দারুণ খেলে বিদেশের অপরিচিত মাঠে নিজের ব্যাটিং শক্তির প্রমাণ দেন। তবে, সীমিত-ওভারের খেলায় তাঁর দলের সিরিজ বিজয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন। এটিই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ভারতের প্রথম সিরিজ জয় ছিল।

২০১৭-১৮ মৌসুমে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ১৫৩ ও ৫ রান করে সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, লুঙ্গি এনগিডি’র অসাধারণ বোলিং সাফল্যে সফরকারীরা ১৩৫ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

একই মৌসুমে নিজ দেশে কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৮ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে ইন্দোরে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ১৭৪ রানে পৌঁছানোকালে ৩৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে টেস্টে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ২০০ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ২১১ ও ১৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩২১ রানে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

এরপর নিজ দেশে অ্যালাস্টেয়ার কুকের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ১৭ নভেম্বর, ২০১৬ তারিখে বিশাখাপত্তনমে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ব্যাট হাতে ১৬৭ ও ৮১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসামান্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিক দল ২৪৬ রানে জয় পেয়ে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০১৭ সালে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ভারতীয় দলকে নিয়ে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ২৬ জুলাই, ২০১৭ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৩ ও ১০৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, শিখর ধবনের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে সফরকারীরা ৩০৪ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

২০১৭-১৮ মৌসুমে নিজ দেশে ফিরতি সফরে দিনেশ চণ্ডীমলের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ২ ডিসেম্বর, ২০১৭ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ২৪৩ ও ৫০ রান সংগ্রহ করেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিং সাফল্য স্বত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও, এ সিরিজে ৬১০ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

একই মৌসুমে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৪১ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৫৪ ও ৪১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ভুবনেশ্বর কুমারের অসাধারণ অল-রাউন্ড কৃতিত্বে সফরকারীরা ৬৩ রানে জয়লাভ করলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

২০১৮ সালে ভারতীয় দলের নেতৃত্বে থেকে ইংল্যান্ড গমন করেন। পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের সবকটিতে অংশ নেন। এজবাস্টনে প্রথম টেস্টে শতক ও অর্ধ-শতক হাঁকান। বাদ-বাকীরা তাঁকে সঙ্গ না দিলে দলটি ৩১ রানে পরাজয়বরণ করে।

২২ আগস্ট, ২০১৮ তারিখে নটিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৯৭ ও ১০৩ রান সংগ্রহ করেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলায় সফরকারীরা ২০৩ রানে জয় পেলেও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ পিছিয়ে পড়ে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

এরপর, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ঐ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪৯ ও দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য রানে বিদেয় নেন। স্বাগতিকরা ১১৮ রানে জয় পায় ও ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। এ সিরিজে ৫৯৩ রান সংগ্রহ করে স্যাম কারেনের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

খেলার সংখ্যার দিক দিয়ে ওডিআইয়ে ১০০০০ রান সংগ্রহের নতুন রেকর্ড গড়েন। অক্টোবর, ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআইয়ে উপর্যুপরী তিন শতকের দ্বিতীয়টি করাকালীন ২০৫তম ইনিংসে এ মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরফলে, শচীন তেন্ডুলকরের ২৫৯ ইনিংস থেকে গড়া রেকর্ডটি ভেঙ্গে পড়ে। ব্যক্তিগতভাবে সব ধরনের অর্জনের সাথে জড়িত না হলেও জাতীয় দল তাঁর অধিনায়কত্বে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে। ২০১৯ সালের শুরুতে দলটি নতুন ইতিহাস গড়ে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মতো ভারত দল টেস্ট সিরিজ জয়ে সক্ষম হয়।

২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় মাঝামাঝি মানের ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের পরিচিতি গড়েন। উপর্যুপরী ৫টি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেললেও কোনটিকেই শতকে রূপান্তর করতে পারেননি। ঐ প্রতিযোগিতায় গ্রুপ পর্বে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থাকলেও ভারত দল সেমি-ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরাজিত হয়েছিল।

বিখ্যাত ব্যাটসম্যানদের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে, নীতিগতভাবে স্বীয় লক্ষ্যে পৌঁছতে নিজেকে হার না মানার মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হয়ে থাকেন। চমৎকার শারীরিক সুস্থতা ও সকল ধরনের খেলায় নিজেকে মেলে ধরতে তৎপর রয়েছেন। পেস ও স্পিন উভয় ধরনের বোলিংয়ের বিপক্ষে সমান দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। স্পিনারদের বিপক্ষে তাঁর পায়ের নড়চড়া সবিশেষ লক্ষ্যণীয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান হিসেবে হাজির করেন।

তাঁর সম্পর্কে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুইবার বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ী অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড মন্তব্য করেন যে, তাঁর বিশ্বকাপ বিজয়ী দলটিতে সন্দেহাতীতভাবেই তিনি ঠাঁই পাবেন। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ায় এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি মন্তব্য করেন যে, ‘প্রজন্মের সাথে তুলনা করাকে তিনি পছন্দ না করলেও নিশ্চিতরূপে ভারতীয় অধিনায়ককে দলে রাখবেন। সন্দেহ নেই যে, তিনি ব্যতিক্রমধর্মী ব্যাটসম্যান। তিনি ইতোমধ্যে তাঁর দেশের জন্য বেশ কিছু অর্জনের সাথে জড়িয়ে রয়েছেন।’

বিশ্ব টি২০ চ্যাম্পিয়নশীপে রান সংগ্রহের ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন। সেমি-ফাইনালে ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বোলারদের ব্যর্থতায় জয় পায়নি ভারত দল। উপর্যুপরী দ্বিতীয়বারের মতো টি২০ বিশ্বকাপে প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৬ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে ৯৭৩ রান তুলেন। প্রতিযোগিতার ইতিহাসে যে-কোন ব্যাটসম্যানের তুলনায় নিজেকে এগিয়ে রাখেন। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর দলের নেতৃত্ব দিয়ে রানার্স-আপ নিয়েই তাঁকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ২০০৮ সালে দলটির উদীয়মান তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন। এরপর থেকে দুর্নিবার ছিলেন। রাহুল দ্রাবিড় ও অনিল কুম্বলে’র ছত্রচ্ছায়ায় শিখতে থাকেন। পরবর্তীতে, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র যোগ্য সঙ্গ পান।

২০১২, ২০১৭ ও ২০১৮ সালের আইসিসি ওডিআই বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে আইসিসি বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে স্যার গারফিল্ড সোবার্স ট্রফি লাভ করেন। ২০১৮ সালে আইসিসি বর্ষসেরা টেস্ট খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান। ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে উইজডেন কর্তৃক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন। ২০১৩ সালে অর্জুন পদক, ২০১৭ সালে পদ্মশ্রী পদক ও ২০১৮ সালে রাজীব গান্ধী খেল রত্ন লাভ করেন।

২০১৮ সালের প্রথম সপ্তাহে ভারত দলের নেতৃত্বে থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। কয়েক সপ্তাহ পর ভারতীয় অভিনেত্রী ও দীর্ঘদিনের বান্ধবী অনুষ্কা শর্মা’র সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। ঐ সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে পিছিয়ে পড়লেও ব্যাটিং অনুপযোগী তৃতীয় টেস্টে জয় পেয়ে খেলায় ফিরে আসে। ঐ বছরের শেষদিকে ইংল্যান্ড সফরেও নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট ছিলেন। দুই শতক সহযোগে ১০ ইনিংস থেকে ৫৯৩ রান তুলেছিলেন। ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ পরাজিত হওয়ায় বিদেশের মাটিতে উপর্যুপরী দুইটি সিরিজ পরাজয়ের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন।

২০১৯-২০ মৌসুমে নিজ দেশে ফাফ ডু প্লিসি’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১০ অক্টোবর, ২০১৯ তারিখে পুনেতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ২০০ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৭০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ২৪৩ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাট হাতে নিয়ে ২৫৪* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ১৩৭ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০২১ সালে ভারতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের চূড়ান্ত খেলায় অংশ নিতে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৮ জুন, ২০২১ তারিখে সাউদাম্পটনে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ১০ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৭৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৪৪ ও ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, কাইল জ্যামিসনের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে নিউজিল্যান্ড দল ৮ উইকেটে জয়লাভ করে।

২০২৩-২৪ মৌসুমে রোহিত শর্মা’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ৩ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৪৬ ও ১২ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মোহাম্মদ সিরাজ ও যশপ্রীত বুমরা’র দূর্দান্ত বোলিংয়ের কল্যাণে খেলায় তাঁর দল ৭ উইকেটে জয়লাভ করে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতায় ফেরে।

২০২৪-২৫ মৌসুমে নিজ দেশে টম ল্যাথামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৬ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৯০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ০ ও ৭০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, রচিন রবীন্দ্র’র অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ১ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে ওয়াংখেড়েতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে ৪ ও ১ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, এজাজ প্যাটেলের স্মরণীয় বোলিং নৈপুণ্যে সফরকারীরা মাত্র ২৫ রানে জয়লাভ করলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ২০১৭ সালে বলিউড অভিনেত্রী অনুষ্কা শর্মা’র সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। আগস্ট, ২০২০ সালে তাঁদের সন্তানের আগমনের কথা ঘোষণা করেন।