৫ আগস্ট, ১৯৬৯ তারিখে কর্ণাটকের ব্যাঙ্গালোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
১৯৯০-৯১ মৌসুম থেকে ২০০৩-০৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে কর্ণাটক দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ভারতের জ্যেষ্ঠ দলীয় সঙ্গী জবাগল শ্রীনাথের সাথে নতুন বল নিয়ে জুটি গড়েছিলেন। শ্রীনাথের পরিপূরক হিসেবে খেলতেন। প্রতিপক্ষীয় ব্যাটসম্যানদেরকে গুটিয়ে দিতে শ্রীনাথ অগ্রসর হলেও তিনি অপর প্রান্ত থেকে বোলিং করে নিখুঁতভাব বজায় রাখতেন। সাধারণমানের মিডিয়াম পেস বোলিং করে ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে তেমন সমীহের পাত্রে পরিণত হতে পারেননি। সর্বত্র অবমূল্যায়িত দীর্ঘদেহী মিডিয়াম পেসার হিসেবে পরিচিতি পান।
তাসত্ত্বেও বেশকিছু স্মরণীয় ঘটনার সাথে নিজেকে রেখেছেন। ১৯৯০-৯১ মৌসুমে থালাসেরিতে কেরালার বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। ৪/১১৩ লাভ করেছিলেন।
পরের মৌসুমে নিজস্ব প্রথম লিস্ট-এ খেলায়ও উদীয়মানতার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে কার্নাইল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত উইলস ট্রফির কোয়ার্টার-ফাইনালে দিল্লির বিপক্ষে ঐ খেলায় ৪/২৩ নিয়ে সকলের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হন। দুই মৌসুম বাদে সুরাটে অনুষ্ঠিত দেওধর ট্রফিতে উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে খেলে সুনাম কুড়ান ও জাতীয় দলে খেলার পথ সুগম হয়। সাউথ জোন ভুপিন্দার সিং ও ওবায়েদ কামালের তোপে পড়ে ৩৭.৫ ওভারে ৮২ রানে গুটিয়ে যায়। দলে কেবলমাত্র যোগ্যতাসম্পন্ন একমাত্র বোলার ছিলেন। রবিন সিংকে নিয়ে বোলিং উদ্বোধনে নামেন। একাধারে বোলিং করে ৬/২৩ পান ও দলকে ১৪ রানের অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন।
১৯৯৪ থেকে ২০০১ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৩৩ টেস্ট ও ১৬১টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ২ এপ্রিল, ১৯৯৪ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন।
১৯৯৬ সালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে অংশ নেয়ার জন্যে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারত দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমনের সুযোগ পান। ৬ জুন, ১৯৯৬ তারিখে বার্মিংহামে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। পরস মাম্ব্রে, সুনীল জোশী ও বিক্রম রাঠোরের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৪/৭১ ও ২/৫০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ঐ টেস্টে ভারত দল ৮ উইকেটে পরাজয়বরণ করে ও সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
তবে, পরবর্তী টেস্টে পুরোপুরি ব্যাটিংয়ের অবস্থানের নড়চড় হয়। ২০ জুন, ১৯৯৬ তারিখে ক্রিকেটের স্বর্গভূমি হিসেবে খ্যাত লন্ডনের লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অভিষেকধারী রাহুল দ্রাবিড় ও সৌরভ গাঙ্গুলীকে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলার সুযোগ দেয়া হয়। তাঁদের সহায়তা নিয়ে এ সিরিজে চমৎকার খেলেন ও আকস্মিকভাবে ভারতকে ভিন্নতর দলে পরিবর্তন করতে অগ্রসর হন। এ টেস্টসহ পরবর্তী টেস্ট ড্রয়ে পরিণত হয়।
১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে নিজ দেশে হান্সি ক্রোনিয়ে’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২৭ নভেম্বর, ১৯৯৬ তারিখে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে পিএল সিমকক্সকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৫/৭৬। খেলায় তিনি ৬/১০৪ ও ০/৬৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১ ও ৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, গ্যারি কার্স্টেনের জোড়া শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ৩২৯ রানের ব্যবধানে জয়ী হয় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে ওয়েলিংটনের ব্যাসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ১৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রানের সমকক্ষ হন। খেলায় তিনি ১৫ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৬৭ ও ০/২৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, সায়মন ডৌলের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৪ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে যায়।
২০০০ সালে নাইরোবিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দারুণ খেলেন। যুবরাজ সিং ৮০ বলে ৮৪ রান সংগ্রহ করে বিদেয় নিলে নবম উইকেটের পতন ঘটে। ওভারের শেষ বল খেলতে তিনি মাঠে নামেন। ইয়ান হার্ভে’র শেষ বল থেকে বাম পা সামনে রেখে লং অফের দিকে ছক্কা হাঁকান।
ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সর্বাধিক আলোচিত উইকেট পতনের সাথে জড়ান। আমির সোহেল তাঁর বলে কভার অঞ্চলে ঠেলে দিলে তিনি দৌঁড়ে অফ-স্ট্যাম্পে আঘাত করেন ও প্যাভিলিয়নে ফেরৎ পাঠান। প্রথম ধাঁপে ২-০-২৭-০ দেন। এরপর দ্বিতীয় ধাঁপে ৮-০-১৮-৩ নিয়ে পরদিন জাতীয় বীরে পরিণত হন। এ পর্যায়ে ইজাজ আহমেদ ও ইনজামাম-উল-হকের উইকেট পেয়েছিলেন।
২০০১ সালে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ২২ আগস্ট, ২০০১ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলেন। ২/৫২ ও ৫/৭২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসের পাঁচ-উইকেট লাভের বিষয়টি যে-কোন ভারতীয় বোলারের শ্রীলঙ্কায় সেরা বোলিং বিশ্লেষণের ঘটনা ছিল। এরপূর্বে, ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে কলম্বোর এসএসসিতে প্রথম ইনিংসে অনিল কুম্বলে ৫/৮৭ লাভ করেছিলেন। তবে, দলীয় অধিনায়কের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ২৯ আগস্ট, ২০০১ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৩/১০১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়েছিলেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১০* ও ৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। মুত্তিয়া মুরালিধরনের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৭৭ রানে জয় পেয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়েছিল।
ভারতীয় ফাস্ট বোলার হিসেবে টেস্টগুলো থেকে ৩৫ গড়ে ৯৬ উইকেট ও ওডিআই থেকে ১৯৬ উইকেট লাভ করা তেমন মন্দ কিছু নয়। টেস্টে সাতবার পাঁচ-উইকেট ও একবার দশ উইকেটের সন্ধান পেয়েছেন। বোলিংয়ের এক পর্যায়ে করাচীতে ইমরান খান ৫/৩ ও হায়দ্রাবাদে ৫/৮ লাভ করে সুনাম কুড়ালেও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সর্বাপেক্ষা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন তিনি। চিপকে তিনি এক পর্যায়ে ৫/০ পান। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতর সংস্করণেই অধিক সফল ছিলেন। ১৬১টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়ে ৩২.৩০ গড়ে ১৯৬ উইকেট দখল করেন। ওভারপ্রতি ৪.৬৭ রান দেন।
ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করার পর কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
