১৭ মে, ১৮৮৮ তারিখে লন্ডনের লেডিওয়েল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত পেশাদার ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯২০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ধীরগতির বোলার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এছাড়াও, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছেন। ৫ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার ছোটখাটো গড়নের অধিকারী টিচ ফ্রিম্যান ঘরোয়া আসরের ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্ট দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯১৪ থেকে ১৯৩৬ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। কেন্টের পক্ষে অনেকগুলো রেকর্ডের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন।
ক্লাবের পক্ষে ৩৩৪০ উইকেট দখল করেছেন। ১৯৩৩ সালে এক মৌসুমে ২৬২ উইকেট পেয়েছেন। ৩৮৬বার ইনিংসে পাঁচ-উইকেট লাভ করেছেন। খেলায় ১৪০বার দশ উইকেট লাভ করেছেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রাপ্ত ৩৭৭৬ উইকেটের ৪৮.৬০% কারও সহযোগিতা ব্যতিরেকে পেয়েছেন। উইলফ্রেড রোডসের পর উইকেট লাভের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করলেও তাঁর তুলনায় অর্ধেকের অল্প বেশী খেলায় অংশ নিয়েছেন।
১৯২৪ থেকে ১৯২৯ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ১২ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯২৪-২৫ মৌসুমে আর্থার জিলিগানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। সফরের শুরুটায় বেশ প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রাখেন। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭০ রান খরচায় ৯ উইকেট দখল করেন। এরপর, দৃশ্যতঃ টেস্টমানের অস্ট্রেলীয় একাদশের বিপক্ষে আরও ছয় উইকেট পেলে ৩৬ বছর বয়সে তাঁকে টেস্ট দলে ঠাঁই দেয়া হয়।
১৯ ডিসেম্বর, ১৯২৪ তারিখে সিডনিতে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রতিপক্ষীয় ভিক্টর রিচার্ডসন, আর্থার রিচার্ডসন ও বিল পন্সফোর্ডের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। শুরুটা তেমন ভালো করেননি। প্রথম ইনিংসে ওয়ারেন বার্ডসলি ও ভিক্টর রিচার্ডসন এবং দ্বিতীয় ইনিংসে আর্থার রিচার্ডসন, বিল পন্সফোর্ড ও জ্যাক গ্রিগরি’র উইকেট লাভ করেন। খেলায় তিনি ২৫৮ রান খরচায় ৫ উইকেট দখল করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে দলের সংগ্রহ ২৭৬/৮ থাকা অবস্থায় মাঠে নামেন। কেন্টের দলীয় সঙ্গী ফ্রাঙ্ক ওলি’র সাথে নবম উইকেটে ১২৮ রানের জুটি গড়েন। ওলি ১২৩ রানে বিদেয় নিলেও তিনি ৫০ রান তুলে অপরাজিত অবস্থায় মাঠ ত্যাগ করেন। স্বাগতিকরা খুব সহজেই টেস্টে জয়লাভ করে। ১৯৩ রানে জয় পেলে স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯২৭-২৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে রনি স্ট্যানিফোর্থের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ৩১ ডিসেম্বর, ১৯২৭ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ডিপিবি মরকেলকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৩/১৩৪। খেলায় তিনি ৪/৫৮ ও ৩/৬৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৭ ও ০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ৮৭ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯২৯ সালে নিজ দেশে নামি ডিনের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১৩ জুলাই, ১৯২৯ তারিখে লিডসে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ইএ ফন ডার মারউই’কে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এ পর্যায়ে ইএ ফন ডার মারউই’র ৬ষ্ঠ উইকেট লাভ করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৭/১১৫ ও ৩/৯২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ৫ উইকেটে জয়লাভ করে স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ১৭ আগস্ট, ১৯২৯ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১৬৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
১৯২৩ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ১৯৪৯ সালে এমসিসি’র সম্মানসূচক আজীবন সদস্যের মর্যাদা লাভ করেন। কেন্টের উইকেট-রক্ষক জ্যাক হাবলের সাথে খুচরা ক্রীড়া সরঞ্জাম বিক্রয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। দয়ালু প্রকৃতির ও মৃদুভাষী সত্ত্বেও তাঁর দাম্পত্যজীবন তেমন সুখকর ছিল না। জীবনের বাদ-বাকী সময়ে ‘ডানবোলিন’ নামীয় গৃহে বসবাস করতেন। ২৮ জানুয়ারি, ১৯৬৫ তারিখে কেন্টের বিয়ারস্টেড এলাকায় ৭৬ বছর ২৫৬ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।
