২৪ মে, ১৯৮৩ তারিখে হারারেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। উইকেট-রক্ষণের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। জিম্বাবুয়ের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি, জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
৫ ফুট ৫ ইঞ্চি (১.৬৫ মিটার) উচ্চতার বাঁধা ডিঙ্গানো ‘টিবলি’ ডাকনামে পরিচিত টাটেন্ডা তাইবু হাল্কা-পাতলা গড়নের অধিকারী। চার্চিল বয়েজ হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। উইকেট-রক্ষকদের প্রচলিত ধরনকে ফিরিয়ে এনেছিলেন। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন। ভালো-মন্দ মিলিয়ে জিম্বাবুয়ের পক্ষে সকল স্তরের ক্রিকেটে যথাসম্ভব অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। ১৬ বছর বয়সে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো অংশ নেন।
চার্চিল বয়েজ হাই স্কুলের পক্ষ থেকে ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করেন। সেখানে সহজাত ভঙ্গীমায় অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে সচেষ্ট ছিলেন। তিন মাস পর ইংল্যান্ডে ট্রেন্ট ব্রিজে আঘাতের কারণে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের দ্বৈত ভূমিকা পালনের বিষয়ে সন্দীহান হওয়ায় বিকল্প খেলোয়াড় হিসেবে যান। এ পর্যায়ে ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলছিলেন। ম্যাশোনাল্যান্ডের পক্ষে অভিষেক ঘটে। জিম্বাবুয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন।
১৯৯৯-২০০০ মৌসুম থেকে ২০১৮-১৯ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে মাউন্টেনিয়ার্স, নর্দার্নস ও ম্যাশোনাল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে কেপ কোবরাসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, নামিবিয়া, বাদুরেলিয়া স্পোর্টস ক্লাব, কলকাতা নাইট রাইডার্স ও সাউদার্ন রক্সের পক্ষে খেলেছেন।
২০০১ থেকে ২০১২ সময়কালে জিম্বাবুয়ের পক্ষে সর্বমোট ২৮ টেস্ট, ১৫০টি ওডিআই ও ১৭টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ২০২১ সালে নিজ দেশে কার্ল হুপারের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৮ বছর বয়সে ২৩ জুন, ২০০১ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে।
একই সফরের ১৯ জুলাই, ২০০১ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। সফরকারীরা ইনিংস ও ১৭৬ রানে জয়লাভ করে। ৬ ও ৪ রান সংগ্রহ করতে সমর্থ হন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন।
২০০৩ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে ইংল্যান্ড সফরে দলের সহঃ অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। ক্লাবের সতীর্থ ও বিখ্যাত ক্রিকেট তারকা অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন।
২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় স্বল্পসংখ্যক সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের অন্যতম ছিলেন। নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনেও কার্যকর ভূমিকা রাখেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৩ রান তুলে জিম্বাবুয়েকে খেলায় ফিরিয়ে আনেন। ঐ বছরের শেষদিকে ইংল্যান্ড গমন করেন। উদীয়মান ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ও ওডিআই দলে ক্রমাগত সামনের দিকে নিয়ে যান।
এপ্রিল, ২০০৪ সালে হিথ স্ট্রিকের পদত্যাগের পর জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন ও শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হন। এরফলে, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ২১ বছর বয়স নিয়ে সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পান। অভিজ্ঞতাহীন দলকে নেতৃত্ব দিয়ে পুণঃপুণঃ শোচনীয় পরাজয়ের কবলে উপনীত হন। এ পর্যায়ে দলের মান ক্রমশঃ নিচেরদিকে চলে যেতে থাকে। তবে, এ সময়ে ব্যক্তিগতভাবে ঠিকই সেরা ছন্দে অবস্থান করছিলেন। ২০০৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৫৩ রানের ইনিংস খেলেন।
২০০৪-০৫ মৌসুমে দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে বাংলাদেশ গমন করেন। ৬ জানুয়ারি, ২০০৫ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ৯২ ও ০ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, চারটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। ঐ খেলায় স্বাগতিক দল ২২৬ রানের ব্যবধানে জয় পেয়ে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেও অপূর্ব খেলেন। ১৪ জানুয়ারি, ২০০৫ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত টেস্টে ৮৫* ও ১৫৩ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও বাংলাদেশ দল ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।
এরপর থেকে আরও চাপ বাড়তে থাকে। ২০০৫ সালের শরৎকালে বোর্ডের অব্যবস্থাপনার কারণে আরও একবার বিদ্রোহী খেলোয়াড়দের কাতারে নিজেকে যুক্ত করেন। স্থানীয় সংবাদপত্রে তাঁর এ ভূমিকা গ্রহণের কারণে নিন্দা করা হয় ও বোর্ড থেকে হুমকি পান। নভেম্বর, ২০০৫ সালে অধিনায়কত্ব থেকে সড়ে দাঁড়ানোসহ ২২ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডে কিছু সময় অতিবাহিত করার পর ২৪ বছর বয়সে ২০০৬ সালের শেষদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যান। সেখানে চার বছর অবস্থানের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসার ইচ্ছে সম্পর্কে স্পষ্টতর করে তোলেন। কিন্তু, এতে সঠিকভাবে কাজ হয়। অল্প কিছুদিন পরই ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে পুণরায় জিম্বাবুয়ে দলের সদস্যরূপে আবির্ভূত হন।
সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিপক্ষের বোলিং আক্রমণে নিজেকে পিছনের দিকে নিয়ে যেতেন না। ২০১১ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা চলাকালীন কেনিয়ার বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। টেস্ট ক্রিকেট থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে চলে আসার পর বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের একমাত্র টেস্টগুলোর প্রত্যেকটিতেই অর্ধ-শতক হাঁকান। এর মাঝে প্রথম জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটার হিসেবে ভারতীয় টি২০ লীগে কলকাতা নাইট রাইডার্সের পক্ষে খেলার জন্যে খসড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন।
২০১১-১২ মৌসুমে নিজ দেশে রস টেলরের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১ নভেম্বর, ২০১১ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২০ ও ৬৩ রান সংগ্রহ করে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র অসাধারণ অল-রাউন্ড সাফল্যে স্বাগতিকরা ৩৪ রানে পরাজয়বরণ করে।
একই মৌসুমে ফিরতি সফরে ব্রেন্ডন টেলরের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ে দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২৬ জানুয়ারি, ২০১২ তারিখে নেপিয়ারে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দুইটি ক্যাচ ও একটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ২ ও ৪ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। স্বাগতিক দল ইনিংস ও ৩০১ রানের ব্যবধানে জয় তুলে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
১০ জুলাই, ২০১২ সালে ২৯ বছর বয়সে এক দশকের অধিক জবুথবু খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করে সকল স্তরের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। ক্রিকেটের বাইরে থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অধিক মনোযোগী হওয়াসহ যাজকীয় কর্মে যুক্ত হবার কথা ব্যক্ত করেন। সব মিলিয়ে টেস্টে ১৫৪৬ রান ও ওডিআইয়ে ৩৩৯৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অবসর গ্রহণকালীন ওডিআইয়ে জিম্বাবুয়ের চতুর্থ সর্বাধিক রান সংগ্রাহকসহ উইকেট-রক্ষণে দ্বিতীয় সর্বাধিক ডিসমিসালের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন।
ওডিআইয়ে খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুটা বেশ ভালোভাবে করেছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অংশগ্রহণে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় সিরিজে সর্বাপেক্ষা বাজে খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। তিন খেলার একটিতে শূন্য রানে বিদেয় নেন। তবে, গ্লাভস হাতে ঠিকই ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। লাভনেস টাইবু নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।
