২৯ ডিসেম্বর, ১৯৪৯ তারিখে মাদ্রাজে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও রেফারি। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
‘কিরি’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৬৭-৬৮ মৌসুম থেকে ১৯৯৩-৯৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে কর্ণাটক ও রেলওয়েজের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সচরাচর, তাঁকে ভারতের অন্যতম সেরা উইকেট-রক্ষক হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। ফারুক ইঞ্জিনিয়ারের পরিবর্তে খেলার সুযোগকে কাজে লাগাতে তৎপর হন। দ্রুততার পাশাপাশি হেলেদুলে খেলার কারণে প্রত্যেকের নজর আকর্ষণে সক্ষম হন। স্পিনার চতুষ্টয়ের সাথে কপিল দেবের পেস বোলিংয়ের উত্থানে উইকেট-রক্ষণে দৃঢ়তা দেখান। ফারুক ইঞ্জিনিয়ারের সহকারী হিসেবে খেলেন।
১৯৭৬ থেকে ১৯৮৬ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৮৮ টেস্ট ও ৪৯টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২৪ জানুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দিলীপ বেংসরকার ও সুরিন্দর অমরনাথের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। প্রথম ইনিংসে ১৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ টেস্টে তাঁর দল ৮ উইকেটে জয় পায় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৪ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ২৭ ও ১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, পাঁচটি ক্যাচ ও একটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। নিজস্ব দ্বিতীয় টেস্টে এক ইনিংসে ছয়টি ডিসমিসাল ঘটিয়ে বিশ্বরেকর্ডের সমকক্ষ হন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
একই সফরের ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ২৮ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। ৪৯ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ ও একটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে যুক্ত থাকেন। ইনিংস ও ৩৩ রানে জয় পেলে স্বাগতিকরা সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ করতে সক্ষম হয়েছিল। একই সফরের ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন।
তবে, খেলায় ছন্দহীনতার কবলে পড়লে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৭৯ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ভারতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি। জনশ্রুতি রয়েছে যে, ক্যারি প্যাকারের ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে সুনীল গাভাস্কারের সাথে তাঁকে প্ররোচনার কারণে দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। এক পর্যায়ে ভারত দলে ফিরে আসেন এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাট ও গ্লাভস হাতে বেশ সাড়া জাগান। পাকিস্তানের বিপক্ষে বিস্ময়কর সিরিজ উপহার দেন। এক সিরিজে সর্বাধিক ডিসমিসাল ঘটিয়ে নরেন তামনে’র গড়া ভারতীয় রেকর্ডের সমকক্ষ হন। ১৭ ক্যাচ ও ২ স্ট্যাম্পিং করেছিলেন তিনি। এরপর, ১৯৮১-৮২ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া ঐ সিরিজে সফরকারী দল ১৯৬৪ রান তুললেও তিনি কোন বাই রান দেননি।
তাঁর ব্যাটিংয়ের মানও বেশ উন্নত ও কার্যকর ছিল। ১৯৮৩ সালে মাদ্রাজে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নবম উইকেট সুনীল গাভাস্কারের সাথে রেকর্ডসংখ্যক জুটি গড়েন। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপা বিজয়ী ভারত দলের সদস্য ছিলেন। অষ্টম উইকেটে অধিনায়ক কপিল দেবের সাথে ১২৬ রান করেছিলেন।
বয়সের পাশাপাশি খেলায় ছন্দ হারিয়ে ফেলতে থাকেন এবং সদানন্দ বিশ্বনাথ, কিরণ মোরে ও চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের ন্যায় তরুণ উইকেট-রক্ষক তাঁর স্থান গ্রহণ করে। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে বিশ্ব সিরিজ কাপ চলাকালে পায়ের আঘাতের কারণে কার্যতঃ তাঁর সুন্দর খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে।
১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে কপিল দেবের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২ জানুয়ারি, ১৯৮৬ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে নামার প্রয়োজন পড়েনি তাঁর। এছাড়াও, একটি ক্যাচ ও একটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। কৃষ শ্রীকান্ত, সুনীল গাভাস্কার ও মহিন্দার অমরনাথের ব্যাটিংয়ের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও সিরিজটি ০-০ ব্যবধানে শেষ হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। এছাড়াও, একই সফরের ১২ জানুয়ারি, ১৯৮৬ তারিখে ব্রিসবেনে সর্বশেষ ওডিআইয়ে অংশ নেন।
ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর ম্যাচ রেফারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। একটি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা পরিচালনা করেছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেটে অনবদ্য ভূমিকা গ্রহণের কারণে ১৯৮০-৮১ মৌসুমে অর্জুন পুরস্কার ও ১৯৮২ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করা হয়। ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ তারিখে সিকে নায়ড়ু আজীবন সম্মাননা লাভের জন্যে তাঁকে মনোনীত করা হয়।
অভিনয় জগতের দিকেও ধাবিত হয়েছিলেন তিনি। ‘কাভি আজনবি থি’ চলচ্চিত্রে দলীয় সঙ্গী সন্দীপ পাতিলের সাথে অভিনয় করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত তিনি। পুত্র সাদিক কর্ণাটকের পক্ষে লিস্ট-এ ক্রিকেটে অংশ নিয়েছে। অপরদিকে, ফাতিমা নাম্নী কন্যাকে আবিদ আলী’র পুত্র ফকিরের সাথে বিবাহ দেন।