| |

সৈয়দ আবিদ আলী

৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৪১ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিংয়ে দক্ষ ছিলেন। পাশাপাশি অসাধারণ ফিল্ডিং করতেন ও নিচেরসারিতে ব্যস্ততার সাথে উইকেটের প্রান্ত বদলে অগ্রসর হতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

পিঠ সোজা রেখে, খাড়া গোঁফ নিয়ে সুনিয়ন্ত্রিত পন্থায় বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। তবে, ঐ সময়ে ভারতের স্পিনারদের প্রাধান্যে বলে চকচকেভাবে আনয়ণ ছাড়া তেমন কিছু করতে পারেননি। স্প্রিন্টারের উপযোগী পদযুগল ছিল তাঁর। ম্যারাথন দৌঁড়ে অংশগ্রহণের শক্তিমত্তা ছিল। সর্বোপরী একদিনের উপযোগী ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে গড়েছিলেন। ১৯৫৯-৬০ মৌসুম থেকে ১৯৭৮-৭৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে হায়দ্রাবাদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৬৭ থেকে ১৯৭৫ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ২৯ টেস্ট ও পাঁচটিমাত্র একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশ নিয়েছেন। টেস্টে ছয়টি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেছেন। ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে চান্দু বোর্দে’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৩ ডিসেম্বর, ১৯৬৭ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে উমেশ কুলকার্নী’র সাথে তাঁর একযোগে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। প্রথম ইনিংসে ৬/৫৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়ে নিজেকে স্মরণীয় করে রাখেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ১/৬১ লাভসহ উভয় ইনিংসে ৩৩ রান করে সংগ্রহ করেছিলেন। খেলায় স্বাগতিক দল ১৪৬ রানে জয়লাভ করে ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। সিডনি টেস্টে ৭৮ ও ৮১ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার ও সাংবাদিক জ্যাক ফিঙ্গলটনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা কুড়ান।

একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মনসুর আলী খান পতৌদি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২১ ও ১০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪/২৬ ও ০/২২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

এরপর, ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। বল নিক্ষেপ করার কারণে এফআর গুডলের কাছ থেকে নো-বলের ডাক শুনতে হয়। জিএ বার্টলেটের বোলিং ভঙ্গীমার প্রতিবাদস্বরূপ অনুরূপভাবে তিনি বোলিং করলেও বার্টলেটকে নো-বলের ডাক শুনতে হয়নি। বল হাতে নিয়ে খেলায় তিনি ১/৪০ ও ১/১৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৭ ও ১৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিক দল ৬ উইকেটে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৭১ সালে অজিত ওয়াড়েকরের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। ১৯ আগস্ট, ১৯৭১ তারিখে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। রূদ্ধশ্বাসপূর্ণ খেলায় বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলের ৪ উইকেটের বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। প্রসঙ্গতঃ এটিই ভারতের বিপক্ষে ভারতের প্রথম টেস্ট জয় ও প্রথম টেস্ট সিরিজ বিজয় ছিল। খেলায় তিনি ২৬ ও ৪* রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৪৭ ও ০/৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান।

১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে নিজ দেশে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১১ ডিসেম্বর, ১৯৭৪ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ঐ টেস্টে সফরকারীরা ইনিংস ও ১৭ রানে জয়লাভ করে এবং পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল। খেলায় তিনি ৮ ও ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪৭ রান খরচ করেও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি।

স্বর্ণালী সময়ে অবস্থানকালীন আকস্মিকভাবে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অকাল সমাপ্তি ঘটে। এর পূর্বে ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭০ রান ও ২/৩৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন। ভুলবশতঃ ফারুক ইঞ্জিনিয়ার বেতারে তাঁর মৃত্যু সংবাদ প্রচারের কথা জানতে পারেন।

১৯৭৯ সালে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অভিবাসিত হন। এরপর থেকে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ক্রিকেট ক্লাব, ফ্রেস্নো স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্রিকেট ক্লাবসহ অনেক উদীয়মান তরুণকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এছাড়াও, নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনেও প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে ভারতভিত্তিক রতনস্টল ক্রিকেট ক্লাবে পেশাদারী পর্যায়ে খেলাকালীন জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ দলকে প্রশিক্ষণ দিতেন। এ সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন শীর্ষ পর্যায়ের কোচিং সেমিনারে অংশ নিতেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ১৯৭৮ সালে ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে কোচিং বিষয়ে ব্যাসিকস ও অ্যাডভান্স কোর্স সম্পন্ন করেন। এরপর, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোচিং কর্মে নিয়োজিত থাকেন।

২০০১ সালে কানাডায় অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফি প্রতিযোগিতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দলকে প্রশিক্ষণ দেন। ঐ প্রতিযোগিতায় মার্কিন দল ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে। একই বছরে অন্ধ্র ক্রিকেট সংস্থায় প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পান। দলকে রঞ্জী চ্যাম্পিয়নশীপের দক্ষিণ অঞ্চলে বিজয়ী হয়। এরপর, সংযুক্ত আরব আমিরাতের অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯ দলসহ জাতীয় দলকে ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে চার বছরের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে ২০০২ ও ২০০৪ সালের এসিসি ট্রফি প্রতিযোগিতায় জাতীয় দলকে শিরোপা বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। দলটি এশীয় অঞ্চলে ফাস্ট ট্র্যাক তিন-দিনের প্রথম-শ্রেণীর প্রতিযোগিতার শিরোপা জয় করে। এছাড়াও, ২০০৫ সালে আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফি প্রতিযোগিতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত দলকে পরিচালনা করেছিলেন।

১২ মার্চ, ২০২৫ তারিখে ৮৩ বছর ১৮৪ দিন বয়সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • |

    মনসুর আখতার

    ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৫৭ তারিখে সিন্ধু প্রদেশের করাচীতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুম থেকে ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে করাচী, সিন্ধু ও ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেডের প্রতিনিধিত্ব…

  • |

    মোহাম্মদ সিরাজ

    ১৩ মার্চ, ১৯৯৪ তারিখে হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলিং কর্মে অগ্রসর হন। ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিচ্ছেন। স্মরণীয়ভাবে তাঁর উত্থান ঘটে। পা বরাবর ইয়র্কার করে তুমুল খ্যাতি অর্জন করেন। স্ব-শিখনে খেলোয়াড়ী জীবনে অগ্রসর হয়েছেন। জনৈক অটো রিক্সাচালকের সন্তান। চরম দারিদ্র্যতার মধ্যে শৈশবকাল অতিবাহিত…

  • |

    একনাথ সোলকার

    ১৮ মার্চ, ১৯৪৮ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে মিডিয়াম কিংবা স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ‘এক্কি’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। বোম্বের ক্রিকেটের ভিত্তি গড়ার ক্ষেত্রে তিনি কল্পনাতীত ভূমিকা রেখেছিলেন। কার্যকর বামহাতি ব্যাটসম্যান হলেও বামহাতে মিডিয়াম-পেস বোলিংয়ের…

  • |

    অসি ডসন

    ১ সেপ্টেম্বর, ১৯১৯ তারিখে নাটালের রসবার্গ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৪০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। দৌঁড়ুতে বেশ পটু ছিলেন। ১৯৩৮-৩৯ মৌসুম থেকে ১৯৬১-৬২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর…

  • |

    লেল্যান্ড হোন

    ৩০ জানুয়ারি, ১৮৫৩ তারিখে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মাঝারিসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৮৭০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। রাগবি কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। এরপর, আয়ারল্যান্ড জেন্টলম্যান ও ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে নিয়মিতভাবে খেলতেন। ১৮৭৪ সালে আই জিঙ্গারি আসলে তিনি নিখিল আয়ারল্যান্ডের পক্ষে খেলায় অংশ নিয়েছেন। ১২জন নিয়ে গড়া দলে…

  • | |

    জাস্টিন অনটং

    ৪ জানুয়ারি, ১৯৮০ তারিখে কেপ প্রভিন্সের পার্ল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। পরবর্তীতে অফ-স্পিন বোলিং রপ্ত করেন। এরফলে, নিজেকে আরও কার্যকর ক্রিকেটারে পরিণত করেন। ‘রোডি’ ডাকনামে…