২৭ নভেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে উত্তরপ্রদেশের মুর্দানগরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। বামহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদশী। ভারত দলের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
‘সানু’ ডাকনামে ভূষিত সুরেশ রায়না ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি (১.৭৫ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ২০০০ সালে ক্রিকেট খেলতে সিদ্ধান্ত নেন। ফলশ্রুতিতে নিজ শহর থেকে লখনউয়ে চলে যান। সেখানকার গুরু গোবিন্দ সিং স্পোর্টস কলেজে ভর্তি হন। ২০০৪ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ও অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে অনবদ্য খেলা উপহারের স্বীকৃতিস্বরূপ দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁর প্রতি দৃষ্টিনিবদ্ধ করে।
২০০২-০৩ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মধ্যাঞ্চল ও উত্তরপ্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, চেন্নাই সুপার কিংস ও গুজরাত লায়ন্সের পক্ষে খেলেছেন। ১৬ বছর বয়সে ফেব্রুয়ারি, ২০০৩ সালে রঞ্জী ট্রফিতে উত্তরপ্রদেশের সদস্যরূপে তাঁর অভিষেক ঘটে। আসামের বিপক্ষে খেলার পর পরবর্তী মৌসুমের পূর্ব-পর্যন্ত আর তাঁকে খেলানো হয়নি।
২০০৫ থেকে ২০১৮ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ১৮ টেস্ট, ২২৬টি ওডিআই ও ৭৮টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ৩০ জুলাই, ২০০৫ তারিখে ডাম্বুলায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। ওডিআই অভিষেকের পাঁচ বছর পর জুলাই, ২০১০ সালে এমএস ধোনি’র নেতৃত্বে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। ২৬ জুলাই, ২০১০ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অভিষেক টেস্টে শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। শ্রীলঙ্কার সংগৃহীত ৬৪২/৪ তুলে ইনিংস ঘোষণা করলে দলের সংগ্রহ ২৪১/৪ থাকা অবস্থায় মাঠে নামেন। নিজস্ব প্রথম শতরান করেন। এ পর্যায়ে শচীন তেন্ডুলকরের সাথে দ্বি-শতরানের জুটি গড়ে দলের সঙ্কট দূর করেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
তৃতীয় টেস্টের পূর্বে যুবরাজ সিং আরোগ্য লাভ করলেও তাঁকে প্রাধান্য দেয়া হয়। তবে, নিজেকে কখনোর ভারতের টেস্ট দলের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে পারেননি। এক পর্যায়ে দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টির আড়ালে চলে যান।
২০১০ সালে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জিম্বাবুয়ে সফরে যান। এরফলে, ভারতের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়কের মর্যাদা পান। টি২০আই সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জয় এনে দেন। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শেষে নিয়মিত অধিনায়ক এমএস ধোনি’র বিশ্রাম গ্রহণ ও সহঃঅধিনায়ক বীরেন্দ্র শেহবাগ আঘাতের কবলে পড়লে দলের সহঃঅধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। গৌতম গম্ভীরকে ওডিআই ও টি২০আইয়ে নেতৃত্বের সুযোগ দিলেও আঘাতের কবলে পড়ায় তাঁকে এ দায়িত্ব পালন করতে হয়। ভারত দল সিরিজ জয় করে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিয়মিত খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিয়ে তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া দলকে পরিচালনা করেন। ঐ সিরিজেও ২-০ ব্যবধানে জয় পায় তাঁর দল।
২০১৪-১৫ মৌসুমে বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ৬ জানুয়ারি, ২০১৫ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ০/৫৩ ও ০/১৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে জোড়া শূন্য রানের সন্ধান পেলেও একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও স্বাগতিকরা চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
২০১০-এর দশকে সন্দেহাতীতভাবে ভারতের সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানরূপে পরিগণিত হয়ে আসছেন। খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করলেও বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি ক্রিকেট জগতে সম্মানের আসনে রয়েছেন। প্রথম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেছেন। এছাড়াও কার্যকর স্পিনার হিসেবে অধিনায়ক এমএস ধোনিকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে ইনিংসের মাঝামাঝি সময়ে বোলিং করতেন।
ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিল্ডিং করার জন্যে সবিশেষ পরিচিতি লাভ করেন ও পুরো ইনিংসেই দলীয় সঙ্গীদেরকে উজ্জ্বীবনী শক্তি যোগাতেন। ভারতের মাঝারিসারির নিচের দিকে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন ও অনেকগুলো খেলায় প্রায় একাকী দলকে জয় এনে দিয়েছেন।
আইপিএলের আসরে চেন্নাই সুপার কিংসের সাথে নিজেকে এক সূতোয় গেঁথে রেখেছিলেন। ১২ মৌসুমের নয়টিতেই চার শতাধিক রান পেয়েছেন। ২০১৫ সালে করেছিলেন সর্বনিম্ন ৩৭৪ রান। ৫৩৬৮ রান তুলে এ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রহকারীতে পরিণত হয়েছেন। ৩৩.৩৪ গড়ে এক শতক সহযোগে ১৩৭.১৪ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন। আইপিএলের দশম আসরে গুজরাত লায়ন্সের পক্ষে ৪৪২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। আইপিএল ২০২০ শুরুর পূর্বে দুবাই থেকে ভারতে ফিরে আসেন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। নিজের নবম মৌসুমে আইপিএলে প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণকালে প্রথমবারের মতো খেলায় অংশ নেননি। গার্সিয়া রায়না নাম্নী কন্যা ও রিও রায়না নামীয় পুত্র সন্তান রয়েছে।
