| |

স্টুই ডেম্পস্টার

১৫ নভেম্বর, ১৯০৩ তারিখে ওয়েলিংটনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ১৯৩০-এর দশকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়কালে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। এছাড়াও, বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং উদ্বোধনের পাশাপাশি অপূর্ব দক্ষতায় কভার অঞ্চলে ফিল্ডিং করতেন। ১৯২১-২২ মৌসুম থেকে ১৯৪৭-৪৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ওয়েলিংটন এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে লিচেস্টারশায়ার ও ওয়ারউইকশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, স্কটল্যান্ডের পক্ষে খেলেছেন।

১৯২১ সালে ১৮ বছর বয়সে ওয়েলিংটনের ব্যাসিন রিজার্ভে প্রথমবারের মতো খেলেন। ১৯২৭ সালে নিউজিল্যান্ডীয় একাদশের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফর করেন। তবে, এ পর্যায়ে নিউজিল্যান্ড দলের টেস্ট মর্যাদা না থাকায় কোন টেস্টের আয়োজন করা হয়নি। এ সফরে ব্যাটিং গড়ে শীর্ষস্থানে ছিলেন ও ২১৬৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে খেলায় এক ওভারে পাঁচটি চারের মার মারেন।

১৯৩০ থেকে ১৯৩৩ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ১০ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯২৯-৩০ মৌসুমে নিজ দেশে হ্যারল্ড জিলিগানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১০ জানুয়ারি, ১৯৩০ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনু্ষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম আনুষ্ঠানিক টেস্টে অংশ নেন। স্মর্তব্য যে, এটিই নিউজিল্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম খেলা ছিল। অ্যাল্বি রবার্টস, টেড ব্যাডকক, জর্জ ডিকিনসন, হেনরি ফোলি, কেন জেমস, ম্যাট হেন্ডারসন, কার্লি পেজ, রজার ব্লান্ট, টম লরি ও বিল মেরিটের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ১১ ও ২৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয় পেলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

এরপর, একই সফরের ২৪ জানুয়ারি, ১৯৩০ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে নিজস্ব প্রথম টেস্ট শতক হাঁকান। ১৩৬ রান তুলে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের প্রথম শতকধারী হন। ইনিংস উদ্বোধনে নেমে জ্যাক মিলসের সাথে প্রথম উইকেটে ২৭৬ রানের তৎকালীন রেকর্ডসংখ্যক জুটি গড়েন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ৮০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

১৯৩১ সালে টম লরি’র নেতৃত্বাধীন নিউজিল্যান্ড দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড গমন করেন। এটিই নিউজিল্যান্ড দলের প্রথম বিদেশ সফর ছিল। ইংল্যান্ড সফরেও এ ধারা অব্যাহত রাখেন। এসেক্সের বিপক্ষে ২১২ রান তুলেন। পরবর্তীতে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে এটিই তাঁর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানে পরিণত হয়।

২৭ জুন, ১৯৩১ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। শতক হাঁকানোর সুবাদে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে ঠাঁই করে নেন। খেলায় তিনি ৫৩ ও ১২০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৩২-৩৩ মৌসুমে নিজ দেশে বব ওয়াটের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ৩১ মার্চ, ১৯৩৩ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৮৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। ‘ওয়ালি হ্যামন্ডের টেস্ট’ নামে পরিচিত খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় শেষ হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল।

১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে নিজ দেশে ওয়ালি হ্যামন্ডের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ২১ মার্চ, ১৯৪৭ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেয়ার কথা ছিল। তবে, পূর্ব রাত্রে চোখের আঘাতের কারণে খেলা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।

সব মিলিয়ে অংশগ্রহণকৃত টেস্টগুলো থেকে ৬৫.৭২ গড়ে রান পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেটে অংশ নেন। জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে প্লেয়ার্সের বিপক্ষে খেলেছিলেন। এছাড়াও, স্যার জুলিয়ান কান প্রতিভাবান একাদশের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। জুলিয়ান কান তাঁকে তাঁর লিচেস্টারভিত্তিক একটি নিজস্ব দোকানে ব্যবস্থাপক হিসেবে নিযুক্তি দেন। এরফলে, লিচেস্টারশায়ারের পক্ষে কাউন্টি ক্রিকেট খেলার সুযোগ চলে আসে। এখানে তিনি নিয়মিতভাবে রান তুলতে থাকেন। উপর্যুপরী দুইবার তিন অঙ্কের সন্ধান পান। ফলশ্রুতিতে, ১৯৩২ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন।

এছাড়াও, স্কটল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ও পাশাপাশি ওয়ারউইকশায়ারের পক্ষে খেলেছেন। তবে, খুব শীঘ্রই নিউজিল্যান্ডে ফিরে আসেন। তরুণদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। সর্বদাই তিনি বলতেন যে, কিশোর অবস্থায় তিনি কোন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেননি। কেবলমাত্র, ১৯২৭ সালের ইংল্যান্ড সফরেই কিছুটা শিখেছেন।

১৯৯০ সালে নিউজিল্যান্ড স্পোর্টস হল অব ফেমে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর গুণাবলী যাচাইয়ে কেবলমাত্র সর্বকালের সেরা গড় লক্ষ্য করলেই তা ধরা পড়ে। কমপক্ষে ১০ টেস্টে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের মধ্যে ডি জি ব্র্যাডম্যানের ৯৯.৯৪ গড়ের পর তিনি ৬৫.৭২ গড়ে রান সংগ্রহ করে দ্বিতীয় স্থানে নিজেকে নিয়ে গেছেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৪ তারিখের ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে ওয়েলিংটনে ৭০ বছর ৯১ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। তাঁর সম্মানার্থে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ ব্যাসিন রিজার্ভে সি. এস. ডেম্পস্টার গেট নামকরণ করে।

Similar Posts

  • | | | |

    বব সিম্পসন

    ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৬ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের মারিকভিল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ ও রেফারি ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক ও গুগলি বোলিংয়ের পাশাপাশি মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৫২-৫৩ মৌসুম থেকে ১৯৭৭-৭৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ঘরোয়া আসরের…

  • | | |

    জিওফ রাবোন

    ৬ নভেম্বর, ১৯২১ তারিখে সাউথল্যান্ডের গোর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। দলে তিনি মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক কিংবা লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৪৫-৪৬ মৌসুম থেকে ১৯৬০-৬১ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে অকল্যান্ড ও ওয়েলিংটনের প্রতিনিধিত্ব…

  • | | |

    জর্জ থম্পসন

    ২৭ অক্টোবর, ১৮৭৭ তারিখে নর্দাম্পটনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ও পেশাদার ক্রিকেটার, আম্পায়ার এবং কোচ ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৩ বছর বয়সে ওয়েলিংবোরা স্কুলের প্রথম একাদশে খেলেন। ১৮৯৫ সালে নর্দাম্পটনশায়ারের পক্ষে প্রথমবারের মতো খেলায় অংশ নেন। পরের বছর থেকে স্বরূপ…

  • | | | | |

    ইন্তিখাব আলম

    ২৮ ডিসেম্বর, ১৯৪১ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ, প্রশাসক ও রেফারি। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৫৭-৫৮ মৌসুম থেকে ১৯৮২ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনে সরব ভূমিকা রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে করাচী, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স, পাঞ্জাব,…

  • | | |

    পঙ্কজ রায়

    ৩১ মে, ১৯৯৮ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশের কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিশোর বয়সে ফুটবল খেলতেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। তবে, খেলায় আঘাত পেলে ক্রিকেটের দিকে মনোনিবেশ ঘটান। ১৯৪৬-৪৭ মৌসুম থেকে ১৯৬৭-৬৮…

  • |

    আর্থার সেকাল

    ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৬৮ তারিখে কেপ কলোনির কিং উইলিয়ামস টাউন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংসহ ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা প্রদর্শন করেছেন। ১৮৯০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ১৮৮৯-৯০ মৌসুম থেকে ১৮৯৬-৯৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে গ্রিকুয়াল্যান্ড ওয়েস্ট,…