স্টিফেন ফ্লেমিং
১ এপ্রিল, ১৯৭৩ তারিখে ক্যান্টারবারির ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি, নিউজিল্যান্ড দলকে সকল স্তরের ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বর্ণাঢ্যময় ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ চিত্তে খেলায় অংশ নিতেন। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। দীর্ঘ ১৫ বছরের খেলোয়াড়ী জীবনে দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি (১.৮৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ১৯৯১-৯২ মৌসুম থেকে ২০০৭-০৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনে সরব ভূমিকা রেখেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি ও ওয়েলিংটন এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে মিডলসেক্স, নটিংহ্যামশায়ার ও ইয়র্কশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, চেন্নাই সুপার কিংসের পক্ষে খেলেছেন।
২০০১ সালে মিডলসেক্সের সাথে খেলাকালীন সফলতার সাথে স্বীয় ব্যাটিংয়ের উত্তরণ ঘটাতে সচেষ্ট হন। অর্ধ-শতককে শতকে পরিণত করে ব্যর্থতা ঘুচান। বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় শতক হাঁকিয়ে পুণরায় নিজের প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। এরফলে, কাউন্টি ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ারের পক্ষে আরও একবার খেলেন।
১৯৯৪ থেকে ২০০৮ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ১১১ টেস্ট, ২৮০টি ওডিআই ও পাঁচটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে নিজ দেশে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৯ মার্চ, ১৯৯৪ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ১৬ ও ৯২ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ সাফল্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। কিছুদিন পর ২৫ মার্চ, ১৯৯৪ তারিখে একই দলের বিপক্ষে নেপিয়ারে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন।
১৯৯৪ সালে কেন রাদারফোর্ডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড গমন করেন। ২ জুন, ১৯৯৪ তারিখে নটিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫৪ ও ১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। গ্রাহাম গুচের দ্বি-শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৯০ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে কেন রাদারফোর্ডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৫ নভেম্বর, ১৯৯৪ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে থাকাকালে ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্সের বলে ডেভ রিচার্ডসনের হাত ফস্কে জীবন ফিরে পান। খেলায় তিনি ৪৮ ও ১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছি। সায়মন ডৌলের অল-রাউন্ড নৈপুণ্যে সফরকারীরা ১৩৭ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ২ জানুয়ারি, ১৯৯৫ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৭৯ ও ৫৩ রান সংগ্রহ করেন। ডেভ রিচার্ডসনের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৭ উইকেটে পরাজিত হলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে লি জার্মনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো ভারত গমন করেন। ১৮ অক্টোবর, ১৯৯৫ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৬ ও ৪১ রান সংগ্রহ করেন। ঐ টেস্টে তাঁর দল ৮ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে লি জার্মনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান সফরে যান। পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ২৮ নভেম্বর, ১৯৯৬ তারিখে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৬৭ ও ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন। তবে, সাঈদ আনোয়ারের অসাধারণ শতকের কল্যাণে খেলায় স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩ রানে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। ঐ সিরিজে ১৮২ রান সংগ্রহ করে সাঈদ আনোয়ারের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।
এরপর, একই মৌসুমে নিজ দেশে মাইক অ্যাথার্টনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২৪ জানুয়ারি, ১৯৯৭ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৯২ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান। খেলায় তিনি ১২৯ ও ৯ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১৪ মার্চ, ১৯৯৭ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ২ ও ৫৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁকে বোল্ড করে প্রথম শ্রীলঙ্কান হিসেবে টেস্টে মুত্তিয়া মুরালিধরনের ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলকের সাথে যুক্ত হন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১২০ রানে জয় পেয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে নেয়।
১৯৯৭ সালে অকল্যান্ডে নিজস্ব প্রথম টেস্ট শতকের সন্ধান পান। সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ১২৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খুব শীঘ্রই লি জার্মনের পরিবর্তে নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়। এরফলে, ২৩ বছর বয়সী স্টিফেন ফ্লেমিং নিউজিল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়কের মর্যাদা পান। তাঁর অধিনায়কত্বে নিউজিল্যান্ড দল কেবলমাত্র ২০০০ সালের আইসিসি নক-আউট ট্রফি প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ে সক্ষম হয়েছিল। শুধুমাত্র অধিনায়কত্বের কারণে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিলেন।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে কিউই দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ে সফরে যান। ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দলনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। খেলার দ্বিতীয় দিন ফিল্ডার হিসেবে পাঁচটি ক্যাচ মুঠোয় পুড়ে ভিওয়াই রিচার্ডসন, যজুর্বেন্দ্র সিং, এম আজহারউদ্দীন, কে শ্রীকান্তের বিশ্বরেকর্ডের সমকক্ষ হন। এছাড়াও, জেজে ক্রো ও এমডি ক্রো’র চার ক্যাচ তালুবন্দীকরণকে পাশ কাটিয়ে নতুন নিউজিল্যান্ডীয় রেকর্ড গড়েন। খেলায় তিনি সাতটি ক্যাচ মুঠোয় পুড়ে জিএস চ্যাপেল, যজুর্বেন্দ্র সিং ও এইচপি তিলকরত্নের রেকর্ডের সমকক্ষ হন। এছাড়াও, বিএ ইয়ংয়ের সংগৃহীত ছয়টি ক্যাচ তালুবন্দীকরণকে পাশ কাটিয়ে নতুন নিউজিল্যান্ডীয় রেকর্ড গড়েন। ব্যাট হাতে নিয়ে ৫২ ও ২৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ারের অপরূপ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলেন। কিউই দলের নেতৃত্বে থেকে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ৭ নভেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৯১ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ছয়টি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক মার্ক টেলরের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে সফরকারীরা ১৮৬ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
১৯৯৮ সালে কিউই দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ২৭ মে, ১৯৯৮ তারিখে কলম্বোর আরপিএসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৭৮ ও ১৭৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে সিডি ম্যাকমিলানের (১৪২) সাথে চতুর্থ উইকেটে ২৪০ রানের জুটি গড়ে নতুন নিউজিল্যান্ডীয় রেকর্ড গড়েন। এরফলে, ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে কলম্বো ক্রিকেট ক্লাবে জেএফ রিড ও এসএল বুকের গড়া ৮২ রানের রেকর্ড ম্লান হয়ে পড়ে। এছাড়াও, এটি নিউজিল্যান্ডের পক্ষে যে-কোন উইকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল। পাশাপাশি, নিউজিল্যান্ডের পক্ষে চতুর্থ উইকেটে যে-কোন দেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেরা জুটির মর্যাদা পায়। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে অকল্যান্ডে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এমজে হর্ন ও এনজে অ্যাশলে’র মধ্যকার ২৪৩ রানের জুটি সর্বোচ্চ সেরার মর্যাদা পায়।
তাঁর অসাধারণ ব্যাটিং কৃতিত্বে স্বাগতিকরা ১৬৭ রানে পরাভূত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে, টেস্টের ইতিহাসে নিউজিল্যান্ড দল প্রথমবারের মতো উপর্যুপরী তিন টেস্ট জয় করতে সমর্থ হয়। এরপূর্বে দলটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্ট জয় করেছিল। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা দল নিজ দেশে একাধারে আট টেস্ট অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়ে প্রথম পরাজয়বরণ করে।
১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে নিজ দেশে ব্রায়ান লারা’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৯ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। প্রথম ইনিংসে তৃতীয় উইকেটে এমএস সিনক্লেয়ারের সাথে ২১৪ মিনিটে ১৬৪ রান সংগ্রহ করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৬৭ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ম্যাথু সিনক্লেয়ারের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ১০৫ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
২০০০-০১ মৌসুমে নিজ দেশে মঈন খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৮ মার্চ, ২০০১ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৭৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৮৬ ও ৫ রান তুলে সাকলাইন মুশতাকের বলে বিদেয় নিয়েছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। মোহাম্মদ সামি’র অসামান্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ২৯৯ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০০১-০২ মৌসুমে কিউই দলকে নেতৃত্ব দিয়ে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ৩০ নভেম্বর, ২০০১ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ওয়াকায় অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ১০৫ ও ৪ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র অসামান্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে ফলাফলবিহীন অবস্থায় সিরিজের সমাপ্তি ঘটে।
২০০১-০২ মৌসুমে কিউই দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে পাকিস্তান সফরে যান। ১ মে, ২০০২ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তান দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৪০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২ ও ৬৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ইনজামাম-উল-হকের অসাধারণ ত্রি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৩২৪ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৩৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে পুণরায় নিজের প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। ২০০৩ সালে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে কিউই দলকে নিয়ে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ২৫ এপ্রিল, ২০০৩ তারিখে কলম্বোর পিএসএসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অপূর্ব খেলেন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অপরাজিত ২৭৪ রান তুলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল ও দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
২০০৩-০৪ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২৬ মার্চ, ২০০৪ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ১২ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ব্যাট হাতে ৩০ ও ৯ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে ঐ খেলায় তাঁর দল ৬ উইকেটে পরাজিত হলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।
২০০৪ সালে কিউই দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১০ জুন, ২০০৪ তারিখে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে ১১৭ ও ৪৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, গ্রাহাম থর্পের অসামান্য ব্যাটিংয়ের কল্যাণে চার উইকেটে পরাজিত হলে সফরকারীরা ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। এ টেস্ট শেষে কিউই অল-রাউন্ডার ক্রিস কেয়ার্নস অবসর গ্রহণ করেন। এরপর, ঐ বছরের শেষদিকে হ্যামিল্টনে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯২ রান তুলেন। ২০০৪ সালে নিউজিল্যান্ডের বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন।
২০০৪-০৫ মৌসুমে বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলেন। এ মৌসুমে কিউই দলকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ সফরে যান। ১৯ অক্টোবর, ২০০৪ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে দলের একমাত্র ইনিংসে ২৯ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে সফরকারীরা ইনিংস ও ৯৯ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ২৬ অক্টোবর, ২০০৪ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত টেস্টে তিনটি নিউজিল্যান্ডীয় রেকর্ড দাঁড় করান। এ টেস্টে অংশ নেয়ার মাধ্যমে ৮৭ টেস্ট খেলে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বাধিক টেস্টে অংশগ্রহণের কৃতিত্বের অধিকারী হন ও ১৫০বার ক্রিজে নামেন। ৮১ রানে অবস্থানকালীন মার্টিন ক্রো’র সংগৃহীত ৫৪৪৪ সর্বাধিক রানের রেকর্ড নিজের করে নেন। পরের মৌসুমে নটিংহ্যামশায়ারের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ১৯৮৭ সালের পর তাদের প্রথম কাউন্টি শিরোপা বিজয়ে অংশ নেন। ডিসেম্বর, ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওডিআই সিরিজ চলাকালীন অনুভূত হওয়া টিউমার অপসারণ করেন।
পরবর্তী মে মাসে প্রতিপক্ষীয় জ্যাক ক্যালিস ও শন পোলকের সাথে একযোগে নিজস্ব শততম টেস্টে অংশ নেন। সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐ টেস্টে অবশ্য নিজেকে স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি। ০ ও ৬ তুলে যথেষ্ট ব্যর্থতার পরিচয় দেন। এপ্রিল, ২০০৫ সালে কেপটাউনের নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত পরবর্তী টেস্টে ২৬২ রানের বিস্ময়কর ইনিংস খেললেও নিউজিল্যান্ড ঐ টেস্টে জয় পায়নি। স্বাগতিকদের পাল্টা জবাবে ড্রয়ের দিকে গড়ায়। এ পর্যায়ে তিনি নিজস্ব তৃতীয় দ্বি-শতক ও প্রথম কিউই ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনবার দুইশত রানের ইনিংস খেলার কৃতিত্বের অধিকারী হন।
২০০৫-০৬ মৌসুমে কিউই দলের নেতৃত্বে থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৭ এপ্রিল, ২০০৬ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২৬২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা খেলোয়াড় হিসেবে চতুর্থ ও অধিনায়ক হিসেবে তৃতীয়বারের মতো নিউজিল্যান্ড দলকে নেতৃত্ব দেন। দলকে আরও একবার সেমি-ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যান। ২০০৭ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ৩৯.২২ গড়ে ৩৫৩ রান তুলে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। তিনি এ দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নেবার কথা জানান ও টেস্ট দলের নেতৃত্ব নেয়ার কথা তুলে ধরেন। মৌসুম বহির্ভূত সময়ে নটিংহ্যামশায়ারে খেলেন। ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে যোগদানের আগ্রহের কথা প্রশ্নবোধকের সৃষ্টি করে। সেপ্টেম্বরে ওডিআই থেকে অবসর নিয়ে টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবে থাকার কথা ঘোষণা করেন। একই সময়ে টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্বভার ত্যাগ করে ড্যানিয়েল ভেট্টোরিকে দেয়া হয়। তবে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে অংশ নেয়ার পর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে প্রলুদ্ধ হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদেয় জানান।
২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে মাইকেল ভনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২২ মার্চ, ২০০৮ তারিখে নেপিয়ারে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫৯ ও ৬৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, রায়ান সাইডবটমের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১২১ রানে পরাজিত হলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত রেকর্ডের সাথে স্বীয় নামকে যুক্ত করেছিলেন। প্রথম নিউজিল্যান্ডীয় হিসেবে টেস্টে ৭০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ২০০৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের শেষ সিরিজে এ কৃতিত্বের অধিকারী হন। নেপিয়ারে ব্যক্তিগত শেষ ইনিংসে অর্ধ-শতক হাঁকিয়ে টেস্ট গড়কে ৪০-এর উপরে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। সব মিলিয়ে মাত্র নয়টি শতক হাঁকিয়ে প্রতিভার সঠিক প্রকাশ ঘটাতে পারেননি। তাসত্ত্বেও, পরিসংখ্যানগত ভূমিকার চেয়েও অধিক মূল্যায়িত হয়েছেন। এছাড়াও, টেস্ট ও ওডিআইয়ে নিউজিল্যান্ডের সর্বাধিক রান সংগ্রাহকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। টেস্ট থেকে ১৭০টি ক্যাচ তালুবন্দী করে উইকেট-রক্ষকবিহীন তৃতীয় সর্বাধিক ক্যাচ মুঠোয় পুড়েন।
২০০৮ সালে সকল স্তরে ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। এরপর তিনি কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের উদ্বোধনী আসরে চেন্নাই সুপার কিংসের প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০০৯ সাল থেকে ঐ দলের কোচের দায়িত্ব পালনসহ বিশ্বের বিভিন্ন টি২০ দলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাঁর পরিচালনায় দলটি ২০১০ ও ২০১১ সালের শিরোপা বিজয়সহ চ্যাম্পিয়ন্স লীগ টি২০ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ২০০৯ ও ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ড দলের কোচের দায়িত্ব পালনের প্রস্তাবনা পেলেও তিনি তা বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেন। গ্যারি কির্ক ও পলিন ফ্লেমিং দম্পতির সন্তান। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। কেলি পেইন নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।