২১ এপ্রিল, ১৯৪৫ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক, রেফারি ও আম্পায়ার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
‘বেঙ্কট’ ডাকনামে পরিচিতি পান। ১৯৬৩-৬৪ মৌসুম থেকে ১৯৮৪-৮৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মাদ্রাজ ও তামিলনাড়ু এবং ডার্বিশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। স্পিনার চতুঃষ্টয় ভাগবত চন্দ্রশেখর, বিষেন সিং বেদী ও ইরাপল্লী প্রসন্নের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ব্যাটসম্যানদের সমীহের পাত্রে পরিণত হন। দলের তৃতীয় স্পিনার হিসেবে খেলতেন। দীর্ঘদেহী, লিকলিকে গড় নিয়ে স্পিনে ভিন্নতা আনয়ণ ও নিশানা বরাবরে বল ফেলে নিখুঁতভাব বজায় রাখতেন।
হাল না ছেড়ে দেয়ার মানসিকতা নিয়ে খেলতেন ও অন্যান্য অফ-স্পিনারের সাথে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতেন। দলে স্থানলাভে প্রায়শঃই ইরাপল্লী প্রসন্নের সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছিল। দলে তিনি কেবলমাত্র চমৎকার অফ-স্পিনার হিসেবেই ছিলেন না; বরঞ্চ, নিচেরসারির কার্যকরী ব্যাটসম্যান ও চমৎকারভাবে ক্রিজের কাছাকাছি এলাকায় ফিল্ডিং করে সুনাম কুড়িয়েছেন। এ ধরনের গুণাবলীর কারণে দীর্ঘদিন ভারতের পক্ষে অপরিহার্য ক্রিকেটার হিসেবে খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
রঞ্জী ট্রফিতে ৫৩০ উইকেট নিয়ে রাজিন্দর গোয়েলের ৬৩৭ উইকেটের পরবর্তী স্থানে রয়েছেন। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে, বিষেন সিং বেদী’র ১৫৬০ উইকেট লাভের পর ১৩৯০ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছেন।
১৯৬৫ থেকে ১৯৮৩ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৫৭ টেস্ট ও ১৫টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে নিজ দেশে জন রিডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৫ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ২/৯০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। ২১ উইকেট দখল করে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে দলের ১-০ ব্যবধানের বিজয়ে অংশ নিয়ে স্বপ্নীল যাত্রা শুরু করেন। তন্মধ্যে, দিল্লির কোটলায় ৮/৭২ নিয়ে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করিয়েছিলেন।
একই সফরের ৫ মার্চ, ১৯৬৫ তারিখে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে আরসি মোৎজকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ২/৯০। দ্বিতীয় ইনিংসে এ সাফল্যকে আরও ছাঁপিয়ে যান। এ পর্যায়ে তাঁর পূর্বের সেরা ছিল ৩/৮৬। খেলায় তিনি ৩/৮৬ ও ৩/১৫ লাভ করেন। এছাড়াও, ৭ ও ০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
কেবলমাত্র স্পিনার চতুঃষ্টয়ের ভাঙ্গন হলে ভারত দলের নিয়মিত সদস্যরূপে স্থান পান। ১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়সহ ঐ বছরের শেষদিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ৫/৯৫ নিয়ে ভারতের জয় নিশ্চিত করেছিলেন।
১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২৪ জানুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১/৫৯ ও ০/৩২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে নিজ দেশে গ্লেন টার্নারের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৬ নভেম্বর, ১৯৭৬ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৫২ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৬৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৭ ও ১/২৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পাশাপাশি, চারটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ২১৬ রানে জয় পেলে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ভারত দলের নেতৃত্বে ছিলেন। পরবর্তীতে, ভারতীয় দলকে নিয়ে ইংল্যান্ড সফর করেন। ৩০ আগস্ট, ১৯৭৯ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৩/৫৯ ও ১/৬৭ বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ২ ও ৬ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সুনীল গাভাস্কার দ্বি-শতক হাঁকানো সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
১৯৮০ সালে খেলার মান পড়তির দিকে থাকে ও দলে আসা-যাবার পালায় থাকেন। বিস্ময়করভাবে ১৯৮৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার জন্যে দলে ফিরে আসেন। ৭ এপ্রিল, ১৯৮৩ তারিখে সেন্ট জর্জেসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষ সর্বশেষ ওডিআইয়ে অংশ নেন। স্যার ভিভ রিচার্ডসের উইকেট পেয়েছিলেন।
১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে জহির আব্বাসের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। সিরিজের মাঝামাঝি পর্যায়ে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। উইকেট শূন্য অবস্থায় মাঠ ত্যাগ করলেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৩ তারিখে জলন্ধরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০/৫৫ বোলিং বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাট হাতে নিয়ে ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
১৯৮৫ সালে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর থেকে প্রশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন ও বেশ কয়েকবার ভারত দলের ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর, আম্পায়ারিং জগতে প্রবেশ করে বেশ সুখ্যাতি কুড়ান। ১৯৯৩ সালে ভারত-ইংল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজ পরিচালনার মাধ্যমে আম্পায়ার হিসেবে আবির্ভুত হন। মার্চ, ২০০৪ সালে অবসর গ্রহণের পূর্বে ৭৩ টেস্টে ও ৫২টি ওডিআই পরিচালনা করেছেন। এছাড়াও, টিভি আম্পায়ার ও রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন। শীর্ষ আম্পায়ারদের অন্যতম হিসেবে ২০০২ সালে নবগঠিত আইসিসি এলিট প্যানেলে তাঁকে রাখা হয়। আম্পায়ারিং জীবনে ছয়টি অ্যাশেজ টেস্ট এবং ১৯৯৬, ১৯৯৯ ও ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার খেলা পরিচালনা করেন। তন্মধ্যে, ১৯৯৬ ও ১৯৯৯ সালের প্রতিযোগিতার সেমি-ফাইনাল এবং ১৯৯৯ সালে লর্ডসে অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তানের মধ্যকার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত খেলায় তৃতীয় আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ২০০৩ সালে পদ্মশ্রী সম্মাননায় ভূষিত হন।
