Skip to content

৮ জুলাই, ১৯৭২ তারিখে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বেহালায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে সবিশেষ পারদর্শী ছিলেন। ভারত দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। সেন্ট জাভিয়ার্স কলেজে পড়াশুনো করেছেন। বাংলা ক্রিকেট দলের পক্ষাবলম্বনকারী জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা স্নেহাশীষের পদাঙ্ক অনুসরণে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর। গৃহে উভয় অনুশীলন করতেন। ডানহাতি হলেও বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এরফলে, স্বীয় ভ্রাতার ক্রিকেট সরঞ্জামাদি ব্যবহার করার সুযোগ পেতেন।

বিদ্যালয় ক্রিকেটে অনবদ্য ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের মাধ্যমে তাঁর উত্তরণ ঘটতে থাকে। ১৯৮৯-৯০ মৌসুম থেকে ২০১১-১২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলা, পূর্বাঞ্চল এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে গ্ল্যামারগন, ল্যাঙ্কাশায়ার ও নর্দাম্পটনশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, এশিয়া একাদশ, কলকাতা নাইট রাইডার্স, মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব ও পুনে ওয়ারিয়র্সের পক্ষে খেলেছেন। ১৮ বছর বয়সে ইডেন গার্ডেন্সে বাংলা ও দিল্লি দলের মধ্যকার চূড়ান্ত খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক হয়। খেলাটি ড্রয়ে পর্যবসিত হলেও বাংলা দল শিরোপাধারী হয়। ঘরোয়া প্রতিযোগিতা দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় দলে খেলার জন্যে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

১৯৯২ থেকে ২০০৮ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ১১৩ টেস্ট ও ৩১১টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া সফর করেন। ১১ জানুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জগতে প্রবেশ করেন। ঐ খেলায় মোটেই সুবিধে করতে পারেননি। প্রথম খেলাতেই ৩ রান তুলে ব্যর্থতার পরিচয় দেন।

অস্ট্রেলিয়া সফরে কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৯ রান তুলেন। এছাড়াও, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জন্যে প্রশ্নবিদ্ধ হন। এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন। ফলশ্রুতিতে, ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় ফিরে যান। রঞ্জী ট্রফিতে পরবর্তী দুই মৌসুমে ব্যাপকসংখ্যক রান তুলেন। ইংল্যান্ড সফরে কিছুদিন পূর্বে দিলীপ ট্রফিতে দারুণ খেলেন। ১৭১ রানের দূর্দান্ত খেলা প্রদর্শনের কারণে তাঁকে পুণরায় ভারতের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত করা হয়।

১৯৯৬ সালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে অংশ নেয়ার জন্যে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারত দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমনের সুযোগ পান। প্রথম টেস্টে ভারত দল ৮ উইকেটে পরাজয়বরণের পর পুরোপুরি ব্যাটিংয়ের অবস্থান পরিবর্তন করা হয়। নয়ন মোঙ্গিয়াকে বিক্রম রাঠোরের সাথে ব্যাটিং উদ্বোধনে ও অজয় জাদেজাকে তাঁদের নিচে নিয়ে আসা হয়। ঐ খেলায় দুই তরুণ রাহুল দ্রাবিড় ও সৌরভ গাঙ্গুলীকে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলার সুযোগ দেয়া হয়।

২০ জুন, ১৯৯৬ তারিখে ক্রিকেটের স্বর্গভূমি হিসেবে খ্যাত লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে তাঁর একযোগে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এ টেস্টেই বিখ্যাত আম্পায়ার ডিকি বার্ড তাঁর সর্বশেষ টেস্ট পরিচালনা করেছিলেন। বৃহস্পতিবারে অভিষেকের পর শনিবারে ক্রিকেটের ইতিহাসে নিজের নাম নতুন করে লেখান। ১৮৯৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার হ্যারি গ্রাহাম ও ১৯৬৯ সালে ইংল্যান্ডের জন হ্যাম্পশায়ারের পর তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে লর্ডসে টেস্ট অভিষেক ঘটিয়ে মনোমুগ্ধকর শতক হাঁকানোর কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ‘কলকাতার রাজপুত্র’ নামে পরিচিত সৌরভ গাঙ্গুলী সাত ঘণ্টারও অধিক সময় ক্রিজ আঁকড়ে থেকে ২০ চার সহযোগে ১৩১ রান তুলেন। ডমিনিক কর্কের বলে কভার ড্রাইভ মেরে শতরান পূর্ণ করেন ও অপর প্রান্তে অবস্থানকারী রাহুল দ্রাবিড় (৯৫) তাঁকে অভিনন্দন জানান। এরফলে, লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে ঠাঁই করে নেন। লর্ডসের মাঠে অভিষেকে এটিই যে-কোন ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান। রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে ৯৪ রানের জুটি গড়ে ক্রিকেট অঙ্গনে স্বীয় উপস্থিতির কথা তুলে ধরেন। শতক হাঁকিয়ে নিজেকে স্মরণীয় করে রাখলেও রাহুল দ্রাবিড় মাত্র পাঁচ রানের জন্যে এ কৃতিত্ব অর্জন করা থেকে বঞ্চিত হন। যদি তিনি শতকের সন্ধান পেতেন তাহলে প্রথম ঘটনা হিসেবে টেস্টে ক্রিকেটের ইতিহাসের দুই অভিষেকধারীর শতরানের মর্যাদা পেতে পারতেন। ৪২৯ রান তুলে চালকের অবস্থানে থাকলেও ভারত দল ধীরলয়ে রান তোলার কারণে জয়লাভের জন্যে স্বল্প সময় বাকী রাখে। ফলশ্রুতিতে, ঐতিহাসিক জয় থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৪৯ ও ১/৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করেছিলেন। সিরিজের প্রথম টেস্টে অভিষেকধারী বেঙ্কটেশ প্রসাদের সহায়তা নিয়ে এ সিরিজে চমৎকার খেলেন ও আকস্মিকভাবে ভারতকে ভিন্নতর দলে পরিবর্তন করতে অগ্রসর হন। এ টেস্টসহ পরবর্তী দুই টেস্ট ড্রয়ে পরিণত হয়।

এরপর, ৪ জুলাই, ১৯৯৬ তারিখে ট্রেন্ট ব্রিজে অনুষ্ঠিত পরের টেস্টের প্রথম ইনিংসে আবারও শতক হাঁকান। এরফলে, টেস্টের ইতিহাসের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলোয়াড়ী জীবনের প্রথম দুই ইনিংস থেকে শতরান সংগ্রহ করার কৃতিত্বের অধিকারী হন।

২৩ অক্টোবর, ১৯৯৬ তারিখে নিজস্ব একাদশ ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো শচীন তেন্ডুলকরের সাথে সেরা উদ্বোধনী জুটির সূচনা ঘটান। জয়পুরে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাঁরা ১২৬ রানের জুটি গড়েন। শচীন তেন্ডুলকর ৬৪ ও তিনি ৫৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

২০ আগস্ট, ১৯৯৭ তারিখে নিজস্ব প্রথম ওডিআই শতক হাঁকান। শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় অনুষ্ঠিত নিজস্ব ৩২তম ওডিআইয়ে এ সাফল্য পান। এ ইনিংসের পর সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ১৪৭ রান তুলেছিলেন। তবে, খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ সালে টরন্টোয় নিজস্ব স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। সাহারা কাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীতে পরিণত হন। ৫৫.৫০ গড়ে ২২২ রান ও ১০.৬৬ গড়ে ১৫ উইকেট দখল করেছিলেন তিনি। পাঁচ খেলার চারটিতেই ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার ঘটিয়ে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কারও পান তিনি। ঐ সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়লাভ করে ভারত দল।

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১৯ নভেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে মোহালীতে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ভারতের একমাত্র ইনিংসে ১০৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, অরবিন্দ ডি সিলভা’র অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে দ্বিতীয়বারের মতো একই দলের বিপক্ষে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৭৩ ও ১১ রান সংগ্রহ করেন। তাঁর অসামান্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় ঐ টেস্টসহ সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় শেষ হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। এছাড়াও, ৯৮ গড়ে ৩৯২ রান তুলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন ও ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

১৮ জানুয়ারি, ১৯৯৮ তারিখে সফলতম জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নিজেকে তুলে ধরেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১২৪ রান তুলে ওডিআইয়ের ইতিহাসে তৎকালীন সর্বোচ্চ জয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিরাটভাবে সহায়তা করেন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপে ৪৭.৫ ওভারে ৩১৬ রান তুলেছিল তাঁর দল। ৭ জুলাই, ১৯৯৮ তারিখে তৃতীয়বারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সফলতা পান। কলম্বোয় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০৯ রান তুলেন। এ পর্যায়ে ওডিআইয়ে উদ্বোধনী জুটিতে তৎকালীন সর্বোচ্চ রান সংগ্রহে এগিয়ে আসেন। শচীন তেন্ডুলকরের (১২৮) সাথে ২৫২ রানের জুটি গড়ে ভারতকে সিঙ্গার-আকাই-নিদাহাস ট্রফির চূড়ান্ত খেলায় ছয় রানে জয় এনে দেন।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে ওয়েলিংটনের ব্যাসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫ ও ৪৮ রান সংগ্রহসহ ০/১৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করেছিলেন। সায়মন ডৌলের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৪ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে যায়।

২৬ মে, ১৯৯৯ তারিখে চতুর্থবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সফলতার স্বাদ পান। এদিন জুটি গড়ে অনেকটাই ব্যাটিংয়ের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন। টানটনে ১৮৩ রান তুলে ওডিআইয়ে যে-কোন ভারতীয় ব্যাটসম্যানের তৎকালীন সর্বোচ্চ ১৮৩ রান তুলেন। রাহুল দ্রাবিড়ের (১৪৫) সাথে ৩১৮ রানের জুটি গড়ে তৎকালীন যে-কোন জুটির সংগ্রহকে ম্লান করে দেন। ভারত তৎকালীন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ৩৭৩/৬ দাঁড় করায়। সেপ্টেম্বর, ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো দলকে পরিচালনা করার সুযোগ পান। শচীন তেন্ডুলকরের আঘাতের ফলে বিশ্রামজনিত কারণে কোকা-কোলা সিঙ্গাপুর চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নেতৃত্ব দেন। এক সপ্তাহ পর ডিএমসি কাপে আবারও তাঁর আঘাতের ফলে দলকে পরিচালনায় এগিয়ে আসেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঐ সিরিজে ভারত দল ২-১ ব্যবধানে জয় পায়।

ফেব্রুয়ারি, ২০০০ সালে ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেন। ল্যাঙ্কাশায়ারের বিদেশী খেলোয়াড় হিসেবে তিনি মুত্তিয়া মুরালিধরনের স্থলাভিষিক্ত হন। ২০০০ সালে খেলা গড়াপেটার দানা বেঁধে ওঠার পরিবেশ সৃষ্টির পর ওডিআই দলে ভারতের অধিনায়করূপে মনোনীত হন। দ্রুততার সাথে নেতৃত্বের গুণাবলীর প্রতিফলন ঘটাতে তৎপর হন। বিদেশের মাটিতে টেস্ট জয় করতে শুরু করে ভারত দল। ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০০ তারিখে অধিনায়ক হিসেবে শচীন তেন্ডুলকরের পদত্যাগের পর তাঁকে নিজ দেশে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাঁচ-ওডিআই নিয়ে গড়া সিরিজে দলের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলাগুলোয় শেষ হাসি হাসে ভারত দল ও প্রথম সিরিজ বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। ওডিআইয়ে নিজের সেরা ছন্দে ছিলেন ও এ সিরিজ শেষে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। এ সিরিজ শেষে তাঁকে পূর্ণাঙ্গকালীন অধিনায়করূপে ঘোষণা করা হয়।

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে নিজ দেশে হান্সি ক্রোনিয়ে’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২ মার্চ, ২০০০ তারিখে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১ ও ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/১৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। নিকি বোয়ে’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে খেলায় তাঁর দল ইনিংস ও ৭১ রানে পরাজয়বরণ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

এছাড়াও, ২০০০ সালের আইসিসি নক-আউট ট্রফি ও ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলকে সফলতার সাথে চূড়ান্ত খেলায় নিয়ে যান। এ পর্যায়ে দলকে ট্রফি বিজয়ে নেতৃত্ব দিতে না পারলেও ভারত দলকে বিদেশের মাটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ভিত্তি গড়েন। তাঁর অধিনায়কত্বেই ভারত দল অস্ট্রেলিয়ার ক্রমাগত ১৬ টেস্ট জয়ে বাঁধার প্রাচীর গড়েন। ব্রিসবেনে অপ্রত্যাশিতভাবে শতকের সন্ধান পান। ২১ মার্চ, ২০০১ তারিখে মাসব্যাপী টেস্ট সিরিজের শেষ হাসি হাসেন। ভারতীয় দল আগ্রাসী খেলে অবিশ্বাস্য পরিস্থিতিতে ২-১ ব্যবধানে জয় এনে দেন। পাকিস্তানের মাটিতে জয়লাভে সক্ষমতা দেখায় ভারত দল।

২০০১ সালে ভারতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ২২ আগস্ট, ২০০১ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে দূর্দান্ত খেলেন। অধিনায়কোচিত ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ২/৬৯ ও ০/২১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১৮ ও ৯৮* রানের ইনিংস খেলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৮* রান সংগ্রহ করে বেশকিছু রেকর্ড গড়েন –


• গত ১৪ ইনিংসের মধ্যে এটি তাঁর প্রথম অর্ধ-শতকের ইনিংস ছিল। ২০০০-০১ মৌসুমে দিল্লিতে সফররত জিম্বাবুয়ে দলের বিপক্ষে ৬৫* রান সংগ্রহের পর ৩০, ৮, ১, ২৩, ৪৮, ২২, ৪, ৫, ৯, ০, ১৫, ৪ ও ১৮ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন।
• ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে কলম্বোর এসএসসিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দিলীপ বেঙ্গসরকারের (৯৮*) নব্বুইয়ের কোটায় সর্বোচ্চ রানের সাথে নিজেকে জড়ান। এছাড়াও, ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে মাদ্রাজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথ ৯৭* ও ১৯৬৯-৭০ মৌসুমে দিল্লিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অজিত ওয়াড়েকর ৯১* রান সংগ্রহ করে নব্বুইয়ের কোটায় অপরাজিত ছিলেন।
• এছাড়াও, সপ্তম ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে নব্বুইয়ের কোটা স্পর্শ করে অষ্টম ঘটনায় নিজেকে যুক্ত করেন। শচীন তেন্ডুলকর দুইবার এতে জড়িত ছিলেন। বিস্ময়করভাবে তিনিই কেবলমাত্র বিজয়ী দলের সদস্য ছিলেন।
• ক্যান্ডি টেস্ট জয়ের ফলে ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে বিদেশের মাটিতে সর্বাধিক টেস্ট জয়ের সমকক্ষ হন। বিদেশের মাটিতে এটি তাঁর তৃতীয় টেস্ট জয় ছিল। নভেম্বর, ২০০০ সালে ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ও জুন, ২০২১ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ সফলতা পান। ফলশ্রুতিতে, বিষেন সিং বেদী ও পতৌদির নবাব জুনিয়রের তিন টেস্ট জয়ের সাফল্যে নিজেকে যুক্ত করেন। বিদেশে ১৬১ টেস্টে অংশ নিলেও এ জয়টি ষোড়শ ঘটনা ছিল।

তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলায় সফরকারীরা ৭ উইকেটে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সমতায় আসে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। টেস্টে এটি তাঁর তৃতীয় ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ ছিল। ১৯৯৬ সালে নটিংহামে ইংল্যান্ড ও ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে বোম্বেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপর পুরস্কারগুলো পেয়েছিলেন।

নভেম্বর, ২০০১ সালে ম্যাচ রেফারির সাথে বাদানুবাদে লিপ্ত হন। অপ্রত্যাশিত ও তীব্র বিতর্কিত ভঙ্গীমার কারণে অপর পাঁচ ভারতীয় খেলোয়াড়ের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। পোর্ট এলিজাবেথ টেস্ট চলাকালীন অতিমাত্রায় আবেদনের কারণে ম্যাচ রেফারি মাইক ডেনিস তাঁদেরকে সতর্ক করে দেন। এছাড়াও তাঁকে খেলোয়াড়দের উপর নিয়ন্ত্রণ না রাখার কারণে এক টেস্ট ও দুইটি ওডিআইয়ে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। ভারত দল তিন টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পরাজিত হয়। ভারত দল ও বিসিসিআইয়ের হুমকির মুখে আইসিসি তৃতীয় টেস্টটিকে অনানুষ্ঠানিক হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।

১৩ জুলাই, ২০০২ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের ন্যাটওয়েস্ট সিরিজ বিজয়ের পর ব্যালকনিতে অবস্থান করে তিনি টি-শার্ট ঘুরিয়ে জয় উদযাপন করেন। এরপর, টেস্ট সিরিজেও একটি শতক হাঁকান। ১-১ ব্যবধানে সিরিজটি ড্র হয়। পরবর্তীকালে, এর জবাবে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ টি-শার্ট ঘুরিয়ে জয় উদযাপন করেছিলেন। ২০ মার্চ, ২০০৩ তারিখে সেমি-ফাইনালে শতক হাঁকিয়ে আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় দলকে নিয়ে যান। ১৯৮৩ সালের পর প্রথমবারের মতো চূড়ান্ত খেলায় অংশ নিলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাঁর দল পরাজয়বরণ করেছিল। ৭ ডিসেম্বর, ২০০৩ তারিখে ব্রিসবেনে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে শতকের সন্ধান পান ও ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের অস্ট্রেলিয়ায় অনুকূল প্রভাবে নেতৃত্ব দেন।

১৬ এপ্রিল, ২০০৪ তারিখে প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ে কৃতিত্বের পরিচয় দেন। এছাড়াও, ১৫ টেস্ট জয় করে ভারতের সর্বাপেক্ষা সফলতম অধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। পাশাপাশি পাঁচ-ওডিআই নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-২ ব্যবধানে ভারত দল বিজয়ী হয়।

অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেও তাঁর ব্যাটিংয়ে যথেষ্ট বিরূপ প্রভাব ফেলে। ব্যাঙ্গালোরে সিরিজের প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়া দল ২১৭ রানে জয়লাভ করে। ব্যাটসম্যান ও অধিনায়ক হিসেবে উভয় পর্যায়ের ব্যর্থতার পরিচয় দেন। সিরিজের শেষ দুই টেস্টে অংশ নেন। আঘাতজনিত তাঁর এ অনুপস্থিতি গণমাধ্যমে বেশ সাড়া জাগায় ও বিতর্কের সৃষ্টি করে। ১০ অক্টোবর, ২০০৪ তারিখে নাগপুরে শেষ মুহূর্তে দল থেকে স্বীয় নাম প্রত্যাহার করে নেন ও অস্ট্রেলিয়া দল ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। ব্যক্তিগত ছন্দহীনতার ফলে ওডিআই দলেও বিরূপ প্রভাব ফেলে। এক পর্যায়ে ২০০৫ সাল তাঁকে দল থেকে বাদ দেয়া হয়। রাহুল দ্রাবিড়কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয় ও ভারতের স্মরণীয় উত্থানপর্ব শুরু হয়।

২৮ মার্চ, ২০০৫ তারিখে নিজ দেশে পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্র হওয়া সিরিজের পর তাঁর অধিনায়কত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ব্যাঙ্গালোরে পাকিস্তান দল জয় পেলে দৃশ্যতঃ গাঙ্গুলী-রাইটের মধ্যকার সম্পর্কের ইতি ঘটে। এ সিরিজে ৯.৬০ গড়ে ৪৮ রান পেয়েছিলেন। ১২ এপ্রিল, ২০০৫ তারিখে চতুর্থ ওডিআইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার পর ছয়-ওডিআই নিয়ে গড়া সিরিজে ২-২ ব্যবধান সমতা থাকাকালে ধীরগতিতে ওভার করার প্রেক্ষিতে তাঁকে ছয় খেলার জন্যে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয়। এ পর্যায়ে ২-৪ ব্যবধানে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ পরাজয় মাঠের বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করেন।

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৫ তারিখে শতক হাঁকানোর পর আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ধীরগতিতে শতরান করার পর ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা নড়েচেড়ে বসেন। কেবলমাত্র গাঙ্গুলী-চ্যাপেলের বিতর্কের বিষয়টি জিইয়ে ছিল। খেলা শেষে গ্রেগ চ্যাপেলের পরামর্শ মোতাবেক অধিনায়কত্ব থেকে তাঁকে চলে যেতে হয় ও গণমাধ্যমে বেশ উত্তপ্ত ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেগ চ্যাপেলের মাঝে কোন বিস্ময় চিহ্ন ছিল না। তিনি ভারতীয় অধিনায়ককে তাঁর ছন্দের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার কথা জানান ও ব্যক্তিগতভাবে নেতৃত্বের বিষয়ে তাঁর সাথে আলোচনা করেন। সফরে স্বাভাবিকভাবেই ২-০ ব্যবধানে জিম্বাবুয়ে দলকে পরাজিত করে ভারত দল। দেশে ফিরে জনসমাগম থেকে দূরে থাকেন এবং বরখাস্তের বিষয়ে অগণিত ফোন আসতে থাকে। আটচল্লিশ ঘণ্টা পর গ্রেগ চ্যাপেল ভারতীয় অধিনায়কের বিষয়ে মন্তব্য করেন ও ভবিষ্যতে তাঁর সাথে একত্রে কাজ করার কথা জানান।

২১ অক্টোবর, ২০০৫ তারিখে নিজের উপস্থিতির কথা জানান দেন। দিলীপ ট্রফির খেলায় শক্তিধর উত্তরাঞ্চলের বোলিং আক্রমণ মোকাবেলা করে শতক হাঁকিয়ে বিশ্বে তাঁর উপযোগিতার কথা তুলে ধরেন। ২২ নভেম্বর, ২০০৫ তারিখে টেস্ট অধিনায়কত্ব করার পাঁচ বছর পর দায়িত্ব হস্তান্তরে বাধ্য করে দল নির্বাচকমণ্ডলী। রাহুল দ্রাবিড়কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নেতৃত্ব দেয়ার জন্যে মনোনীত করা হয়।

স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলার জন্যে তাঁকে দলে যুক্ত করা হয়। প্রথম টেস্টে তাঁকে ব্যাট হাতে মাঠে নামতে হয়নি। দ্বিতীয়টিতে বাদ পড়েন। তবে, ২০০৬ সালের শুরুতে করাচীতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টে ৩০-এর কোটায় রান সংগ্রহ করলেও পরাজয় এড়াতে ব্যর্থ হয় ভারত দল। ৩৪ ও ৩৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর এ রান সংগ্রহ এর পরপরই একদিনের সিরিজে স্থান নিশ্চিত করতে পারেনি। এমনকি, নিজ দেশে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও দলের বাইরে রাখা হয়। দলে স্থান ফিরে পাননি ও কারও কারও ধারনা যে তিনি হয়তোবা আর দলে ফিরে আসতে পারবেন না।

২০০৬-০৭ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তাঁকে দলে যুক্ত করা হয়। একদিনের আন্তর্জাতিকের সবকটি খেলায় পরাজিত হয় ভারত দল। ৭ ডিসেম্বর, ২০০৬ তারিখে পচেফস্ট্রুমে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকার বাদ-বাকী একাদশের বিপক্ষে ভারতীয় একাদশের সংগ্রহ ৪/৫৯ থাকাকালীন মাঠে নামেন ও ৮৩ রান তুলে দলকে জয় এনে দেন। ফলশ্রুতিতে, টেস্ট দলে তাঁকে রাখা হয়। ঐ সিরিজে ভারতের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। ওডিআই দলে প্রত্যাবর্তন করে চারটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। ইংল্যান্ড সফরেও এ ধারা অব্যাহত রাখেন। ১৫ ডিসেম্বর, ২০০৬ তারিখে নিজের সেরা খেলা উপহার দেন। জোহানেসবার্গ টেস্টে নীচেরসারির ব্যাটসম্যানদের সহায়তায় অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। এরফলে, ভারত দল ২৪৯ রান তুলতে সক্ষম হয় ও প্রতিপক্ষকে ৮৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে ১২৩ রানে জয় পায়। তবে, চূড়ান্ত টেস্টে পরাজিত হলে সিরিজ জয় থেকে বঞ্চিত হয় ভারত দল। টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন।

২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে ইউনুস খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে উপর্যুপরী শতক হাঁকান। পুরো সিরিজে অসাধারণ খেলেন। ইডেন গার্ডেন্সে ১০২ রান সংগ্রহের পর ৮ ডিসেম্বর, ২০০৭ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে মনোমুগ্ধকর ২৩৯ ও ৯১ রান তুলেন। এছাড়াও, ১/২০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। দলের সংগ্রহ ৬১/৪ থাকা অবস্থায় যুবরাজ সিং তাঁর সাথে যোগ দেন। ৬৫.২ ওভারে তাঁরা ৩০০ রান তুলেন। যুবরাজ সিং ১৬৯ রান তুলে বিদেয় নিলেও তিনি ১২৪ রানে অপরাজিত থাকেন। পরবর্তীতে নিজস্ব প্রথম দ্বি-শতক হাঁকান ও দলের সংগ্রহকে ৬০৫ রানে নিয়ে যান। ঐ টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হলেও খেলায় অনিন্দ্যসুন্দর ক্রীড়াশৈলী উপহার দিয়ে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে। এ সিরিজে ৫৩৪ রান সংগ্রহসহ চার উইকেট দখল করে তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১১ এপ্রিল, ২০০৮ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। খেলায় তিনি ৮৭ ও ১৩* রান সংগ্রহের পাশাপাশি দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয়লাভ করে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটিতে ১-১ ব্যবধানে শেষ করে।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বিস্ময়করভাবে সিবি সিরিজে অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত হন। এরপর থেকেই ওডিআই দলে উপেক্ষিত হন। শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজে তেমন সুবিধে করতে পারেননি। কিছু কিছু প্রতিবেদনে তাঁর অবসর গ্রহণের বিষয়ে লেখা হয়। তবে, নিজ দেশে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার জন্যে তাঁকে দলে রাখা হয়। প্রথম টেস্ট শুরুর দুই দিন পূর্বে এ সিরিজই তাঁর সর্বশেষ হিসেবে ঘোষণা করেন।

ভারত দলের অধিনায়কত্ব করেছেন ও অবসর গ্রহণকালীন ওডিআইয়ে ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রাহক ছিলেন। অফ-সাইডে শট খেলে উদাহরণ সৃষ্টি করেন ও ‘গড অব অফ সাইড’ নামে পরিচিতি পান। বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে ‘দাদা’ নামে জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

২০০৭ সালে গ্রেগ চ্যাপেলকে ভারত দলের কোচ হিসেবে মনোনীত করার পর সৌরভ গাঙ্গুলীসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড়ের সাথে ব্যক্তিত্বের সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। ভারতের খলনায়ক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া গ্রেগ চ্যাপেল তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে অনুপযুক্ত হিসেবে ঘোষণা করে ভারত দলের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার কথা বলেছিলেন।

কারও অভিমত তিনি বাউন্সারের বিষয়ে দূর্বলতা রয়েছে, অন্যদের অভিমত তিনি অফ-সাইডে নিজের সেরা খেলা উপহার দেন; কেউ কেউ তাঁর দৌঁড়ুতে না পারার বিষয়ে হাসাহাসি করেন, অনেকাংশের মতে তিনি ভাঙ্গাচোরা দলে থেকে সেরা খেলা প্রদর্শন করছেন। ভারতীয় ক্রিকেটে পুঞ্জীভূত নেতৃত্ব নিয়ে অন্যতম নাটকীয় ভূমিকায় অংশ নেন। ভারতের সর্বাধিক সফলতম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে কারও দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই। একদল তরুণকে নিয়ে বিজয়ী দলে পরিণত করেছেন। নিজেকে একদিনের আন্তর্জাতিকে সর্বকালের সেরাদের কাতারে নিয়ে যান। দূর্দান্ত স্ট্রোকপ্লের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে লর্ডসে অভিষেকে শতক হাঁকান। পরের বছর ওডিআইয়ে শীর্ষসারির ব্যাটসম্যানরূপে আবির্ভূত হন। শচীন তেন্ডুলকরের সাথে ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম বিধ্বংসী জুটি গড়েন।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের উদ্বোধনী আসরে বলিউড তারকা শাহরুখ খানের পরিচালনায় কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক হিসেবে তাঁকে মনোনীত করা হয়। ২০১০ সাল পর্যন্ত কেকেআরের পক্ষে খেলেন। ২০১১ সালে পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়ার পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। ঐ দলে দুই মৌসুম খেলার পর আইপিএল থেকে অবসর নেন।

৭ অক্টোবর, ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে অংশ নেয়ার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। ২০০৮-০৯ মৌসুমে নিজ দেশে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ৬ নভেম্বর, ২০০৮ তারিখে নাগপুরে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। স্বাগতিক দল ১৭২ রানে জয় পায় ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে। খেলায় তিনি ৮৫ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

টেস্টগুলো থেকে ১৬ শতক সহযোগে ৭২১২ রান সংগ্রহ করেছেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম পেস বোলিং করে ৩২ উইকেট পেয়েছেন। অপরদিকে, ওডিআইগুলো থেকে ১১২২১ রান তুলে ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। এ পর্যায় ২২টি শতক ও ১০০ উইকেট পেয়েছেন। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ১৮৩ রানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেন।

ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বিসিসিআই ও আইসিসিতে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা ক্রিকেট সংস্থার সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন ও উইজডেন ইন্ডিয়া’র সম্পাদকীয় পরিষদের সভাপতি হন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ডোনা রায় নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।