|

সনি রামাদিন

১ মে, ১৯২৯ তারিখে ত্রিনিদাদের সেন্ট চার্লস ভিলেজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের অমূল্য অফ-স্পিনার ছিলেন। জন্মসনদে তাঁর নামের প্রথমাংশ ছিল না। কেবলই ‘বয়’ নামে পরিচিত ছিলেন। ফলশ্রুতিতে, কেবলমাত্র ‘সনি’ ডাকনামে সকলে তাঁকে ডাকতো। খুব শীঘ্রই ক্রিকেটবিশ্বে সনি রামাদিন নামে পরিচিতি লাভ করেন।

ত্রিনিদাদের ডানকান ভিলেজের কানাডিয়ান মিশন স্কুলে প্রথমবারের মতো ক্রিকেটের সাথে পরিচিতি লাভ করেন। তবে, উদীয়মান খেলোয়াড়ী জীবন শুরুর সময়ে অফ-স্পিন বোলিং করতেন না। তবে, দলীয় অধিনায়ক অস্কার রোচের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে অফ-স্পিনার হিসেবে পরিচিতি ঘটাতে থাকেন।

১৯৪৯-৫০ মৌসুম থেকে ১৯৬৫ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে ত্রিনিদাদ এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ল্যাঙ্কাশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, লিঙ্কনশায়ারের পক্ষে খেলেছেন। ত্রিনিদাদের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেন। জ্যামাইকার বিপক্ষে কয়েকটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে অনেকগুলো উইকেটের সন্ধান পাবার পরই কেবল তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের মোড় ঘুরে যায়। ১৩ উইকেট দখলের ফলে ১৯৫০ সালে ইংল্যান্ড গমনার্থে তাঁকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ৪৩ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫০ সালে জন গডার্ডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৮ জুন, ১৯৫০ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। আল্ফ ভ্যালেন্টাইনের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ২/৯০ ও ২/৭৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৪* ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ২০২ রানে পরাজিত হলে সফরকারীরা সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

এ সফরে উভয় দিক দিয়েই বলকে ঘুরাতে পেরেছেন। ব্যাটসম্যানদের সমীহের পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২৬ উইকেট দখল করেছিলেন। অধিকন্তু, আল্ফ ভ্যালেন্টাইনকে সাথে নিয়ে ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের ঘুম হারাম করে দেন। ঐ সিরিজে তাঁর দল ৩-১ ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল। বিশেষ করে লর্ডস টেস্টে ১১ উইকেট দখল করে ক্যারিবীয় দর্শকদের কাছ থেকে উচ্ছ্বাস লাভ করেন।

১৯৫০-৫১ মৌসুমে জন গডার্ডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ৯ নভেম্বর, ১৯৫১ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ১/৭৫ ও ৫/৯০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১৬* ও ২* রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৩ উইকেটে জয়লাভ করে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই মৌসুমে জন গডার্ডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে ল্যাঙ্কাস্টার পার্কে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৫/৮৬ ও ৪/৩৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে পরাভূত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

একই সফরের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ তারিখে অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক বার্ট সাটক্লিফের উইকেট লাভ করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৩/৪১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। অবশ্য খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।

গাব্বায় পাঁচ-উইকেট পেলেও অস্ট্রেলীয় পিচে তাঁকে বেশ হিমশিম খেতে হয়। তবে, নিউজিল্যান্ড সফরে পুণরায় স্বরূপ ধারন করেন। ১৩.৮৩ গড়ে ১২ উইকেট দখল করেছিলেন তিনি। ১৯৫৩-৫৪ মৌসুমে ইংরেজ ব্যাটসম্যানেরা আবারও তাঁর শিকারে পরিণত হয়। ঐ সিরিজে ২৩ উইকেট পান।

১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে ডেনিস অ্যাটকিনসনের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে জেজি লেগাটের প্রথম উইকেট লাভ করে টেস্টে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে টেস্টে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৬/৮৬। খেলায় তিনি ৬/২৩ ও ৩/৫৮ লাভ করেন। এছাড়াও, প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৬ রান অতিক্রম করেন। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ইনিংস ও ৭১ রানে জয় পেলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

এরপর, একই সফরের ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫/৪৬ ও ১/২৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাট হাতে নিয়ে ৩৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ইনিংস ও ৬৪ রানে জয়লাভ করলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩.৪৪ গড়ে নয় উইকেট পান।

তবে, ১৯৬০-৬১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শীর্ষ স্পিনার হিসেবে ল্যান্স গিবসের আবির্ভূত হবার পর থেকেই তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টানার বিষয়টি জড়িয়ে পড়ে। ঐ মৌসুমে ফ্রাঙ্ক ওরেলের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৬১ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১/২১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ০ ও ৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

১৯৫১ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ১৯৬৫ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর, ইংল্যান্ডে বসবাস করতে থাকেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখে ৯২ বছর ৩০১ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • | | |

    ডেভিড হটন

    ২৩ জুন, ১৯৫৭ তারিখে বুলাওয়েতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। উইকেট-রক্ষণের পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের উত্তরণে অসম্ভব ভূমিকা পালন করে গেছেন। জিম্বাবুয়ের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের সূচনালগ্নে সেরা দুইজন ব্যাটসম্যানের অন্যতম হিসেবে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের…

  • |

    জহির খান

    ৮ অক্টোবর, ১৯৭৮ তারিখে মহারাষ্ট্রের শ্রীরামপুর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। প্রকৃত মানসম্পন্ন ভারতীয় ফাস্ট বোলার ছিলেন। পুরনো বলকে ঘুরাতে পারতেন ও ইয়র্কারের সমন্বয়ে বোলিং আক্রমণ কার্য পরিচালনা করতেন। ক্রিকেটের জন্যে প্রকৌশলী হতে…

  • |

    এজি মিল্খা সিং

    ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৪১ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুম থেকে ১৯৬৮-৬৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মাদ্রাজের প্রতিনিধিত্ব…

  • |

    এস বদ্রিনাথ

    ৩০ আগস্ট, ১৯৮০ তারিখে তামিলনাড়ুর মাদ্রাজে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ২০০০-০১ মৌসুম থেকে ২০১৬-১৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রেখেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে তামিলনাড়ুর প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, চেন্নাই সুপার কিংস,…

  • |

    জো কক্স

    ২৮ জুন, ১৮৮৬ তারিখে নাটালের পিটারমারিৎজবার্গে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯১০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ক্ষীপ্র গতিসম্পন্ন মিডিয়াম-পেস বোলার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। ফিল্ডিংয়ে বেশ দূর্বলতার পরিচয় দেন ও সাধারণমানের নিচেরসারির ব্যাটসম্যান ছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর…

  • | | | |

    মজিদ খান

    ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৬ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, রেফারি ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম কিংবা ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হতেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। দৃষ্টিনন্দন ক্রীড়াশৈলী উপহার দিয়ে তৎকালীন ইংরেজ শৌখিন ক্রিকেটে উজ্জ্বীবনী শক্তি জুগিয়েছিলেন। তেমন কিছু চেষ্টা…