|

সোহাগ গাজী

৫ আগস্ট, ১৯৯১ তারিখে বরিশালে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন। ২০১০-এর দশকে বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

প্রকৃত মানসম্পন্ন অফ-স্পিনার হিসেবে বরিশালের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা পটুয়াখালী থেকে এসে বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে যুক্ত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের অন্যতম উদীয়মান ধীর গতিসম্পন্ন বোলাররূপে স্বীকৃতি পেয়েছেন। খুব কম দূরত্ব নিয়ে বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। এমনকি, স্পিনারদের স্বাভাবিক মানদণ্ডের চেয়েও এ দূরত্ব কম ছিল। তবে, বোলিং ভঙ্গীমা অসাধারণ ছিল ও বেশ আঁটোসাটো বোলিং করতেন।

২০০৯-১০ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে দক্ষিণাঞ্চল ও বরিশাল বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, লিজেন্ড অব রূপগঞ্জ, রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, রংপুর রাইডার্স, বরিশাল বুলস, বরিশাল বার্নার্স, শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব, প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব, প্রাইম দলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব, সিলেট সানরাইজার্স, সিলেট রয়্যালস ও সিলেট থান্ডারের পক্ষে খেলেছেন। পার্শ্ববর্তী খুলনায় পিতার কর্মস্থল হবার ফলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহরে প্রথমবারের মতো ক্রিকেটে খেলেন। কিশোর বয়সে খুলনা দলে খেলতেন। পরবর্তীতে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যুক্ত হন। খুলনার বিভিন্ন লীগে খেলাসহ প্রতিবেশী বরিশাল বিভাগে খেলেন। রাজধানীর লীগ ব্যবস্থাপনার আলোকে দ্বিতীয় স্তরের বিভাগীয় ক্রিকেট লীগে অরিয়েন্ট স্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষে প্রথম খেলেন। ২০০৯-১০ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। খুলনায় অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় বরিশাল বিভাগের সদস্যরূপে চট্টগ্রাম বিভাগের বিপক্ষে পাঁচ-উইকেট পান। পরের মৌসুমে জাতীয় ক্রিকেট লীগে ৪১ উইকেট দখল করে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর মর্যাদা পান।

ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমিতে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ পান ও এরপর বাংলাদেশ ‘এ’ দলের পক্ষে খেলেন। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সাথে অন্যান্য দ্বিতীয়সারির দলের বিপক্ষে বেশ ভালোমানের খেলা উপহার দেন। তবে, ২০১২ সালে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত শফি দারাশাহ প্রতিযোগিতায় বেশ দ্রুতগতিতে বোলিংয়ে কঁনুইয়ে অস্বাভাবিকতার বিষয়ে আম্পায়ারের নেতিবাচক প্রতিবেদন দাখিলের ফলে কয়েকমাস অন্ধকার সময় অতিবাহিত করেন। ফলশ্রুতিতে, বোলিং পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। এরপর, সবুজ সঙ্কেত পেলে ২০১২-১৩ মৌসুমে পুণরায় প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেয়ার সুযোগ পান। শুরুতেই নয় উইকেট লাভ করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে হ্যাট্রিকসহ সাত-উইকেট লাভ করেন। ঐ একই খেলায় শতরানের ইনিংস খেলেন। এরফলে, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় ত্রয়োদশ ক্রিকেটার হিসেবে শতরান ও হ্যাট্রিকধারীর মর্যাদা লাভ করেন।

২০১২ থেকে ২০১৫ সময়কালে বাংলাদেশের পক্ষে ১০ টেস্ট, ২০টি ওডিআই ও ১০টি টি২০আইয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। ২০১২-১৩ মৌসুমে নিজ দেশে ড্যারেন স্যামি’র নেতৃত্বাধীন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হন। ১৩ নভেম্বর, ২০১২ তারিখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলার জন্যে বাংলাদেশ দলে রাখা হয়। মিরপুরে তাঁর টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। তাঁর প্রথম বল থেকেই ক্রিস গেইল ছক্কা আদায় করে নেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এটি প্রথম ঘটনা হিসেবে ঠাঁই পায়। ৩/১৪৫ ও ৬/৭৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাসত্ত্বেও সফরকারী দল ৭৭ রানে জয় তুলে নেয় ও সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। একই সফরের ৩০ নভেম্বর, ২০১২ তারিখে খুলনায় ওডিআইয়ে ও ১০ ডিসেম্বর, ২০১২ তারিখে ঢাকায় টি২০আইয়ে প্রথম খেলেন।

২০১৩-১৪ মৌসুমে নিজ দেশে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৯ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৩২ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম ১০১* রানের মনোরম শতক হাঁকান। এরপর, নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে নিয়ে কোরে অ্যান্ডারসন, বিজে ওয়াটলিং ও ডগ ব্রেসওয়েলকে উপর্যুপরী বিদেয় করে হ্যাট্রিক লাভের গৌরব অর্জনের সাথে নিজেকে জড়ান। এরফলে, টেস্টের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে একই খেলায় শতক ও হ্যাট্রিক লাভের অধিকারী হন। এছাড়াও, অলোক কাপালী’র পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে হ্যাট্রিকের কৃতিত্ব দেখান। ২/৭৯ ও ৬/৭৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। তবে, এ সিরিজের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দূর্বলতর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। এ ধারা এশিয়া কাপ ও টি২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত গড়ায়। একই মৌসুমে নিজ দেশে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কা দলের মুখোমুখি হন। ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ১/১৮১ ও ১/৮৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ০ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। ঐ টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।

Similar Posts

  • | | |

    দিলীপ বেঙ্গসরকার

    ৬ এপ্রিল, ১৯৫৬ তারিখে মহারাষ্ট্রের রাজাপুর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। লম্বাটে ও শীর্ণকায় গড়নের অধিকারী। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুম থেকে ১৯৯১-৯২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয়…

  • |

    ক্রেগ ইভান্স

    ২৯ নভেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে সলসবারিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। জিম্বাবুয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে ম্যাশোনাল্যান্ড, মাতাবেলেল্যান্ড ও ম্যাশোনাল্যান্ড কান্ট্রি ডিস্ট্রিক্টসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, হারারেভিত্তিক ওল্ড গ্রিগোরিয়ান্সের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৯০-৯১ মৌসুম থেকে ২০০৩-০৪ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী…

  • | | |

    সাবা করিম

    ১৪ নভেম্বর, ১৯৬৭ তারিখে বিহারের পাটনায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার ও প্রশাসক। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮২-৮৩ মৌসুম থেকে ১৯৯৯-২০০০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলা ও বিহারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বিস্ময়করভাবে…

  • | | |

    নামি ডিন

    ২১ জুলাই, ১৮৯৫ তারিখে জুলুল্যান্ডের এশোই এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন ও কার্যকর বোলিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও, দক্ষ ফিল্ডার হিসেবেও যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছিলেন। পয়েন্ট, সিলি-পয়েন্ট, মিড-অন ও শর্ট-লেগের ন্যায় কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করতেন। আকর্ষণীয় ধাঁচে ব্যাটিং করতেন। উইকেটে…

  • |

    জন হজেস

    ১১ আগস্ট, ১৮৫৫ তারিখে লন্ডনের নাইটসব্রিজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। বামহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৮৭০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। বলকে সুইং করাতে পারতেন। এছাড়াও, উচ্চ গতিতে বলে সিম আনয়ণ করতেন। কিন্তু, বলে নিখুঁতভাব বজায় রাখতে পারতেন না। ফলশ্রুতিতে, তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে বিরূপ…

  • | | |

    জিওফ রাবোন

    ৬ নভেম্বর, ১৯২১ তারিখে সাউথল্যান্ডের গোর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। দলে তিনি মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক কিংবা লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৪৫-৪৬ মৌসুম থেকে ১৯৬০-৬১ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে অকল্যান্ড ও ওয়েলিংটনের প্রতিনিধিত্ব…