Skip to content

সায়মন ডৌল

1 min read

৬ আগস্ট, ১৯৬৯ তারিখে অকল্যান্ডের পুককো এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। ডানহাতে প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রেখে পেস বোলিং কর্মে অগ্রসর হয়েছিলেন। এছাড়াও, সোজাসাপ্টা ভঙ্গীমায় উভয় দিক দিয়েই কার্যকর সুইং আনতে পারতেন। ক্ষীপ্রগতিসম্পন্ন পেস না থাকলেও যথেষ্ট পরিশ্রমী ছিলেন ও ১৯৯০-এর দশকে কিউই দলের কার্যকর ফাস্ট বোলারে পরিণত হয়েছিলেন। ১৯৮৯-৯০ মৌসুম থেকে ২০০১-০২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন।

১৯৯২ থেকে ২০০০ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৩২ টেস্ট ও ৪২টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে মার্টিন ক্রো’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে সফরে যান। ১ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। মার্ক হ্যাসলামের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১/২৯ ও ০/৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। স্মর্তব্য যে, জিম্বাবুয়ে-নিউজিল্যান্ডের মধ্যে এটিই ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্ট ছিল।

তবে, এ সফরের পর থেকে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি। উইলি ওয়াটসনের সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ঘরোয়া ক্রিকেটে মার্ফি সু’য়া’র আগমনের প্রতিধ্বনি মোকাবেলা করতে হয়। কয়েক বছর পর ১৯৯৪ সালে পুণরায় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সুনজরে পড়েন।

১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে কেন রাদারফোর্ডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৬ নভেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে হোবার্টে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১/৯৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ০ ও ১ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসেই শেন ওয়ার্নের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। পাশাপাশি, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। মার্ক ওয়াহ’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২২২ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে ১১ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। ১০ ও ২৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ২/১০৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, শেন ওয়ার্নের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে ঐ খেলায় অস্ট্রেলিয়া দল ইনিংস ও ৯৬ রানের ব্যবধানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সফরকারীরা সিরিজ খোঁয়ায়।

পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪ তারিখে অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে অনুষ্ঠিত টেস্টের প্রথম ইনিংসে দল মাত্র ২৪২ রানে গুটিয়ে গেলে অপ্রত্যাশিতভাবে প্রতিপক্ষকে ২১৫ রানে গুটিয়ে দিতে সহায়তার হাত প্রশস্ত করেন। ৫/৪৬ লাভ করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ২/৪৮ পেলেও সফরকারী দল ৫ উইকেটে জয়লাভ করে। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ০ ও ২৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সুন্দর খেলা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ দলে স্বীয় স্থান পাকাপোক্ত করেন।

ঐ বছরের বাদ-বাকী সময়ও দলে নিয়মিতভাবে খেলতে থাকেন। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে কেন রাদারফোর্ডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। এ সফরেও সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে তৎপর ছিলেন। তিন টেস্ট থেকে ১৪ উইকেট পেয়েছিলেন। দূর্ভাগ্যজনকভাবে বল হাতে নিয়ে তাঁকে দলের পরাজয়বরণ অবলোকন করতে হয়। এরফলে, তাঁর উপযোগিতা কমে যায়।

২৫ নভেম্বর, ১৯৯৪ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন ও ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ২৯ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৩১* ও ১৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৭০ ও ৪/৩৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর দূর্দান্ত নৈপুণ্যে সফরকারীরা ১৩৭ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই সফরের ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৪ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০ ও ১৯ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/৭৩ ও ১/২৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্সের চমৎকার অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে লি জার্মনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান সফরে যান। ২১ নভেম্বর, ১৯৯৬ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। ৫/৪৬ ও ৩/৩৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১৫* ও ২৬ রান সংগ্রহ করেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলায় স্বাগতিকরা ৪৪ রানে পরাজয়বরণ করলে ১৯৬৯-৭০ মৌসুমের পর প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড দল পাকিস্তানকে হারায় ও দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

একই মৌসুমে নিজ দেশে মাইক অ্যাথার্টনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ডি গফের পঞ্চম উইকেট লাভ করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৫/৭৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এ নিয়ে তিনি চতুর্থবারের মতো টেস্টে পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে গফের বলে উভয় ইনিংসে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। গ্রাহাম থর্পের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৬৮ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

এরপর, একই মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ৭ মার্চ, ১৯৯৭ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৫/৫৮ ও ৩/৮২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ব্রায়ান ইয়ংয়ের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৩৬ রানে জয় পেয়ে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। এরফলে, ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে ক্রাইস্টচার্চে সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেটে জয়লাভের পর নিজ মাঠে প্রথম টেস্ট জয়ের সন্ধান পায়।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে নিজ দেশে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে ওয়েলিংটনের ব্যাসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। বক্সিং ডে টেস্টে ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন ও স্বর্ণালী মুহূর্ত অতিবাহিত করেন। ভারতের প্রথম ইনিংসে এনআর মঙ্গিয়াকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পরবর্তীতে এটিই তাঁর সেরা বোলিংয়ে পরিণত হয়। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৫/৪৬। খেলায় তিনি ৭/৬৫ ও ২/৪৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে অনিল কুম্বলে’র বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৪ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

একই মৌসুমে নিজ দেশে হান্সি ক্রোনিয়ে’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১৮ মার্চ, ১৯৯৯ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩২ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। ০ ও ৩৮* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৭৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, স্টিভ এলোয়ার্দি’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে পরাভূত হলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৪ মার্চ, ২০০০ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১২ ও ৪০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/৭৮ ও ০/৩৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। মাইকেল স্ল্যাটারের অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল।

ক্রমাগত আঘাতের কারণে তাঁর আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবন থমকে যায়। টেস্ট ও ওডিআইগুলো থেকে যথাক্রমে ৯৮ ও ৩৬ উইকেট দখল করেছিলেন। অবসর গ্রহণের পর ধারাভাষ্য ও সম্প্রচারকর্মে জড়িয়ে পড়েন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।