|

সিড বার্নস

৫ জুন, ১৯১৬ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের অ্যানানডেল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

চমৎকার ক্রিকেটার ও অদ্ভূত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। ডন ব্র্যাডম্যানের নেতৃত্বাধীন ‘অপরাজেয় দলের’ সদস্য ছিলেন। সচরাচর ইনিংস উদ্বোধনে নামতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে খেলতেন। অগণিত দূর্ভাগা খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তাঁর স্বাভাবিক খেলোয়াড়ী জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হোরি’র সান্নিধ্যে খেলার জগতে প্রবেশ করেন। স্থানীয় লীগে খেলে বোলিং করে ছয় পেনি লাভ করেন। এভাবেই খেলার প্রতি তাঁর আকৃষ্ট জন্মে। বিদ্যালয়ের যাচাই-বাছাইয়ে অংশ নেন। প্রথম একাদশে ঠাঁই পান। ১৯৩৬-৩৭ মৌসুম থেকে ১৯৫২-৫৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৩৮ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ১৩ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৩৮ সালে ডন ব্র্যাডম্যানের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২০ আগস্ট, ১৯৩৮ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। পাঁচ নম্বর অবস্থানে নেমে ৪১ ও ৩৩ রান তুলেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৮৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৫৭৯ রানে জয়লাভ করলে সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে শেষ হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘনঘটায় প্রায় আট বছর খেলার জগৎ থেকে দূরে ছিলেন। ১৯৪৫-৪৬ মৌসুমে বিল ব্রাউনের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২৯ মার্চ, ১৯৪৬ তারিখে ওয়েলিংটনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টটিতে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৪১ রান অতিক্রম করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ৫৪ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। চার দিন নিয়ে গড়া ঐ টেস্টটি দুই দিনে শেষ হয়ে যায়। ইনিংস ও ১৩৩ রানে জয়লাভ করে তাঁর দল।

১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে নিজ দেশে ডব্লিউ. আর. হ্যামন্ডের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। সিডনিতে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে দ্বিতীয় টেস্টে স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের সাথে পঞ্চম উইকেটে ৪০৫ রানের বিশ্বরেকর্ডের জুটি দাঁড় করান। উভয়েই ২৩৪ রান করে সংগ্রহ করেছিলেন।

১৯৪৮ সালে ডন ব্র্যাডম্যানের নেতৃত্বাধীন ‘অপরাজেয়’ নামধারী অজি দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৪ আগস্ট, ১৯৪৮ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৬১ রান তুলেছিলেন। এ পর্যায়ে আর্থার মরিসের (১৯৬) সাথে উদ্বোধনী জুটিতে ১১৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৪৯ রানে পরাজয়বরণ করলে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

টেস্টগুলোয় তিন শতক সহযোগে ৬৩.০৫ গড়ে ১০৭২ রান তুলেছেন। অংশগ্রহণকৃত সবগুলো টেস্টেই ডন ব্র্যাডম্যানের সাথে একত্রে খেলেছেন। অনেকক্ষেত্রে দ্য ডনের চেয়েও নিজেকে এগিয়ে রাখেন। জীবনকে পুরোপুরি উপভোগ করেছেন ও সর্বদাই দর্শকদের প্রিয়পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। তবে, অপরিসীম প্রতিভাকে পুরোপুরি বিকশিত করতে পারেননি। কমপক্ষে ১০ টেস্টে অংশগ্রহণকারীদের তালিকায় গড়ের দিক দিয়ে ডন ব্র্যাডম্যান ও স্টুই ডেম্পস্টারের পরবর্তী অবস্থানে রয়েছেন। শুরুতে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেননি ও পরবর্তীতে ডন ব্র্যাডম্যানের অনুরোধক্রমে নতুন অবস্থানে সমন্বয় করে নিতে কিছুটা সময় নেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ২৬ শতক সহযোগে ৫৪.১১ গড়ে ৮৩৩৩ রান তুলেছেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর সাংবাদিকতা ও ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে বেশ সফলতার সন্ধান পান। তবে, বেশ অবসাদে ভুগতে থাকেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। এক কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭৩ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের কলারয় এলাকায় অবস্থিত নিজ গৃহে আকস্মিকভাবে ৫৭ বছর ১৯৪ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • | | |

    আলী বাখের

    ২৪ মে, ১৯৪২ তারিখে ট্রান্সভালের জোহানেসবার্গে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাশাপাশি, দলের প্রয়োজনে মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণের দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হতেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন কারণে নিজেকে স্মরণীয় করে রেখেছেন। প্রায় পাঁচ দশক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে হৃৎপিণ্ডতুল্য ভূমিকার…

  • | |

    শিবনারায়ণ চন্দরপল

    ১৬ আগস্ট, ১৯৭৪ তারিখে গায়ানার ইউনিটি ভিলেজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯১-৯২ মৌসুম থেকে ২০১৮ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর…

  • | | |

    কিথ ফ্লেচার

    ২০ মে, ১৯৪৪ তারিখে ওরচেস্টারে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ‘নোম’ ডাকনামে ভূষিত কিথ ফ্লেচার ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ক্রিকেটীয় প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। আকর্ষণীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর বেশ সুনাম ছিল।…

  • | |

    সৈয়দ কিরমানি

    ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৪৯ তারিখে মাদ্রাজে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও রেফারি। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ‘কিরি’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৬৭-৬৮ মৌসুম থেকে ১৯৯৩-৯৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে কর্ণাটক ও রেলওয়ের…

  • |

    লেসলি গে

    ২৪ মার্চ, ১৮৭১ তারিখে সাসেক্সের ব্রাইটন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ফুটবলার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৮৯০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ার ও সমারসেট দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে খেলেছেন। ১৮৯১ থেকে ১৯০৪ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন।…

  • | |

    সৈয়দ আবিদ আলী

    ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৪১ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিংয়ে দক্ষ ছিলেন। পাশাপাশি অসাধারণ ফিল্ডিং করতেন ও নিচেরসারিতে ব্যস্ততার সাথে উইকেটের প্রান্ত বদলে অগ্রসর হতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পিঠ সোজা রেখে, খাড়া গোঁফ নিয়ে সুনিয়ন্ত্রিত…