| |

শিবনারায়ণ চন্দরপল

১৬ আগস্ট, ১৯৭৪ তারিখে গায়ানার ইউনিটি ভিলেজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৯১-৯২ মৌসুম থেকে ২০১৮ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে গায়ানা এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ার, ডারহাম, ল্যাঙ্কাশায়ার ও ওয়ারউইকশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্স, খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলস, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর, স্ট্যানফোর্ড সুপারস্টার্স ও ইউভা নেক্সটের পক্ষে খেলেছেন।

১৯৯৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ১৬৪ টেস্ট, ২৬৮টি ওডিআই ও ২২টি টি২০আইয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে নিজ দেশে মাইক অ্যাথার্টনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২০ বছর বয়স পূর্তি হবার কয়েক মাস পূর্বে ১৭ মার্চ, ১৯৯৪ তারিখে জর্জটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অর্ধ-শতক হাঁকান। ৬২ রান তুলে ইয়ান সলসবারি’র বলে বিদেয় নেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৪৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ব্রায়ান লারা’র অসাধারণ শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৪৪ রানে জয় পেলে পাঁচ টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

১৬ এপ্রিল, ১৯৯৪ তারিখে নিজস্ব চতুর্থ টেস্টে ৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। এর পূর্বেকার টেস্টে ৭৭ রান তুলেছিলেন। এক পর্যায়ে ব্রায়ান লারা’র সাথে সমানতালে অগ্রসর হতে থাকেন। চারটি চারের মারে লারা যেখানে ৩১ রান তুলেছিলেন; সেখানে তিনি পাঁচটি চারের মারে ২৮ রান সংগ্রহ করেন। এরপর থেকে দলে নিয়মিতভাবে খেলতে থাকেন ও ব্রায়ান লারা’র ৩৭৫ রানের প্রথম টেস্ট রেকর্ডের সাথে জুটি গড়ে প্রধান ভূমিকা রাখেন।

১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে দলের সাথে ভারত গমন করেন। ১৭ অক্টোবর, ১৯৯৪ তারিখে ফরিদাবাদে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল খেলায় জয় পেলেও তাঁকে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ব্রায়ান লারা’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। স্মর্তব্য যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ – দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার এটিই প্রথম টেস্ট ছিল। ২৬ নভেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ৭৪ ও ১ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে এলবিডব্লিউতে বিদেয় নিয়েছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। শন পোলকের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৪ উইকেটে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

২০০৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। লর্ডস টেস্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেও দলের পরাজয় লক্ষ্য করেন। তাসত্ত্বেও এ শতকের কল্যাণে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করেন। ২৭০ বল মোকাবেলায় ১৫ চারের মারে এ সাফল্য পান। দ্বিতীয় ইনিংসে আবারও ৯৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। তবে, দলীয় সঙ্গীদের ব্যর্থতায় ও অ্যাশলে জাইলসের পাঁচ-উইকেট লাভের ফলে স্বাগতিক দল ২১০ রানে জয়ী হয়।

২০০৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হন। দ্বি-শতক হাঁকিয়ে অধিনায়কত্বের অভিষেক পর্বকে স্মরণীয় করে রাখেন। তবে, এ দায়িত্ব থেকে চলে আসার পরই তাঁর ব্যাটিংয়ে অনুকূল প্রভাব ফেলে। ২০০৬ সালে ভারতের বিপক্ষে চার খেলার তিনটিতেই শতক হাঁকান। এরপর আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০৬ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে সাতটি শতরানের ইনিংস খেলেন।

২৭ এপ্রিল, ২০১২ তারিখে রোজিওতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪ রান সংগ্রহকালীন ১০০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ টেস্টে ৬৮ ও ৬৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।

২০১৩-১৪ মৌসুমে ড্যারেন স্যামি’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৩ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৩৭ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৭৬ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। রস টেলরের অনবদ্য দ্বি-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

২০১৫ সালে নিজ দেশে অ্যালাস্টেয়ার কুকের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ১ মে, ২০১৫ তারিখে ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্ট খেলেন। খেলায় তিনি ২৫ ও ০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। তবে, জার্মেইন ব্ল্যাকউডের ব্যাটিং দৃঢ়তায় স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে জয় পেলে সিরিজ ড্র করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

৫১.৩৭ গড়ে ৩০ শতক সহযোগে ১১৮৬৭ রান তুলেছিলেন। তন্মধ্যে, প্রথম ৫৩ টেস্ট থেকে মাত্র দুইটি শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। অনেকাংশে স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা তাঁকে বড় অঙ্কের রান তুলতে বাঁধার প্রাচীর গড়ে তুলেছিল। সহস্রাধিক মিনিট ব্যাটিং করে অপরাজিত থাকার বিশ্বরেকর্ড দাঁড় করান। এ ঘটনাটি চারবার করেছেন; অন্য কেউ একবারের বেশী করতে পারেননি। ২০০৮ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার এবং একই সালে আইসিসি কর্তৃক বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। তাঁর সন্তান তেজনারায়ণ চন্দরপল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

Similar Posts

  • |

    ম্যাথু নিকোলসন

    ২ অক্টোবর, ১৯৭৪ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের সেন্ট লিওনার্ডস এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারির কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। ১৯৯০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ‘নিকো’ ডাকনামে ভূষিত ম্যাথু নিকোলসন ১.৯৭ মিটার উচ্চতার অধিকারী। নিউ সাউথ ওয়েলসে খেলা শিখতে শুরু করেন। বিদ্যালয়ের তারকা খেলোয়াড়…

  • |

    সোহাগ গাজী

    ৫ আগস্ট, ১৯৯১ তারিখে বরিশালে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন। ২০১০-এর দশকে বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। প্রকৃত মানসম্পন্ন অফ-স্পিনার হিসেবে বরিশালের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা পটুয়াখালী থেকে এসে বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে যুক্ত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের অন্যতম উদীয়মান ধীর গতিসম্পন্ন বোলাররূপে স্বীকৃতি…

  • |

    অজন্তা মেন্ডিস

    ১১ মার্চ, ১৯৮৫ তারিখে মোরাতুয়ায় জন্মগ্রহণকারী পেশাদার ক্রিকেটার। দলে মূলতঃ বোলার হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিন ধরনের ক্রিকেটের সবকটিতেই শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০০৯ সালে তাঁকে পরবর্তী ‘মুত্তিয়া মুরালিধরন’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল। ডান হাতে অফ-স্পিন ও লেগ-স্পিন উভয়টিতেই পারদর্শী ছিলেন। প্রায়শঃই ব্যাটসম্যানদেরকে তাঁর বল মোকাবেলা…

  • | | |

    ডেভিড হটন

    ২৩ জুন, ১৯৫৭ তারিখে বুলাওয়েতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। উইকেট-রক্ষণের পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের উত্তরণে অসম্ভব ভূমিকা পালন করে গেছেন। জিম্বাবুয়ের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের সূচনালগ্নে সেরা দুইজন ব্যাটসম্যানের অন্যতম হিসেবে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের…

  • |

    রবি রত্নায়েকে

    ২ মে, ১৯৬০ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮০-৮১ মৌসুম থেকে ১৯৮৯-৯০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে নন্দেস্ক্রিপ্টস ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ব্যাট ও বল…

  • |

    জনি ব্রিগস

    ৩ অক্টোবর, ১৮৬২ তারিখে নটিংহ্যামশায়ারের সাটন-ইন-অ্যাশফিল্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ‘বয়’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। উইকেট লাভে সক্ষমতাসহ দীর্ঘক্ষণ ধরে একাধারে বোলিং করতে পারতেন। ছোটখাটো গড়নের অধিকারী হলেও পেসের বৈচিত্র্যতা আনয়ণের ফলে…