Skip to content

১৬ জুলাই, ১৯৭৩ তারিখে কেপ প্রভিন্সের পোর্ট এলিজাবেথে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

৬ ফুট ২ ইঞ্চি (১.৮৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ক্রমাগত সফলতা আনয়ণে চাতুর্য্যতাহীন অবস্থায় বেশ নিখুঁততার সাথে বোলিং করতেন এবং বলকে উভয়দিক দিয়ে ফেলতে পারতেন। ১৯৯১-৯২ মৌসুম থেকে ২০০৭-০৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ডলফিন্স ও কোয়াজুলু-নাটাল এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডারহাম ও ওয়ারউইকশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, আফ্রিকা একাদশ ও আইসিসি বিশ্ব একাদশের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৯৬ সালে ওয়ারউইকশায়ারের ক্যাপ লাভ করেন।

১৯৯৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ১০৮ টেস্ট, ৩০৩টি ওডিআই ও ১২টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে নিজ দেশে মাইক অ্যাথার্টনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ঐ সিরিজে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেটের সন্ধান পান। ১৬ নভেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৩/৯৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। বৃষ্টিবিঘ্নিত ও মন্দালোকের কবলে পড়া খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

এরপর, ৩০ নভেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৩/৯৮। খেলায় তিনি ৩/৪৪ ও ০/৬৫ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৩৩ ও ৫ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ২৫ রানে থাকা অ্যালেক স্টুয়ার্টের (৪৫) ক্যাচ মুঠোয় পুড়তে পারেননি। জ্যাক রাসেলের অসাধারণ অল-রাউন্ড কৃতিত্বে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই সফরের ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৩৩ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৩৬* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৩৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। বৃষ্টিবিঘ্নিত ও মন্দালোকের কারণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

টেস্টের ন্যায় ওডিআই অভিষেক পর্বটিও দারুণ হয়েছিল। ৯ জানুয়ারি, ১৯৯৬ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। আট নম্বর অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬৬ রান তুলেন। এরপর, চার উইকেট লাভ করেন। এরফলে, স্বল্পসংখ্যক ক্রিকেটারের অন্যতম হিসেবে ওডিআই অভিষেকে অর্ধ-শতক ও চার-উইকেট লাভের কৃতিত্বের অধিকারী হন। তবে, ১৯৯৬ সালে পায়ের গোড়ালীতে আঘাতের কারণে দল থেকে বাদ পড়েন। আরোগ্যলাভের পর পূর্ণোদ্যমে খেলতে থাকেন। ১৯৯০-এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধ্বে অ্যালান ডোনাল্ডের সাথে বোলিং আক্রমণে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হন।

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে রশীদ লতিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৬ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের প্রথমদিনে ব্যক্তিগত ৩৩ রানে স্লিপ অঞ্চলে দণ্ডায়মান থাকাকালে ইনজামাম-উল-হক ক্যাচ ফেলে দিলে জীবন ফিরে পান। খেলায় তিনি ৩৮ ও ৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৩৩ ও ১/৪৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। মার্ক বাউচারের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২৫৯ রানে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।

একই মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১৯ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। খেলার দ্বিতীয় দিন প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৮২ রান অতিক্রম করেন। এরফলে, ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে শেখুপুরায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সংগৃহীত ব্যক্তিগত রেকর্ডটি ভেঙ্গে যায়। এ পর্যায়ে মার্ক বাউচারের সাথে ৯৫ রানের জুটি গড়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭ম উইকেটে নতুন রেকর্ড গড়েন। এরপর, পল অ্যাডামসকে সাথে নিয়ে ১২ রানের জুটি গড়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯ম উইকেটে নতুন রেকর্ড গড়েন। খেলায় তিনি ৯২ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪/৮৩ ও ২/৭৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৭০ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই সফরের ২৭ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্ট অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের প্রথম দিন নিজস্ব অষ্টম ওভারে আঘাতের কবলে পড়েন। ফলশ্রুতিতে, মাখায় এনটিনি ঐ ওভারটি সম্পন্ন করেন। খেলায় তিনি ০/৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তবে, অ্যালান ডোনাল্ডের অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে নিজ দেশে ব্রায়ান লারা’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। স্মর্তব্য যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ – দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার এটিই প্রথম টেস্ট ছিল। ২৬ নভেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন ও কয়েকবার ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে সিএ ওয়ালশের চতুর্থ উইকেট লাভ করে টেস্টে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৫/৫৪ ও ৪/৪৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, প্রথম ইনিংসে ৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ফলশ্রুতিতে, দক্ষিণ আফ্রিকান টিএল গডার্ডের পর দ্বিতীয় ও বৈশ্বিকভাবে ৩৩তম অল-রাউন্ডার হিসেবে টেস্টে ১০০০ রান ও ১০০ উইকেট লাভের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী হন। আইটি বোথাম, এমএইচ মানকড় ও কপিল দেবের পর চতুর্থ দ্রুততম ‘ডাবল’ লাভ করেন। এছাড়াও, ভারতের কপিল দেব ও নিউজিল্যান্ডের জেজি ব্রেসওয়েলের পর তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে একই টেস্টে সহস্র রান ও শত উইকেট লাভের কৃতিত্বের অধিকারী হন। পাশাপাশি, নিউজিল্যান্ডীয় পিতা-পুত্র ল্যান্স কেয়ার্নস ও ক্রিস কেয়ার্নসের পর দ্বিতীয় পিতা-পুত্র হিসেবে পিটার পোলকের সাথে তিনি ১০০ টেস্ট উইকেট লাভের সমকক্ষ হন। ব্যাট হাতে ১১ ও ৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৪ উইকেটে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে হান্সি ক্রোনিয়ে’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০০ তারিখে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়েতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্ট খেলেন। খেলায় তিনি ২/৪৩ ও ৪/২৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ০ ও ৫ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক শচীন তেন্ডুলকরের অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও সফরকারীরা ৪ উইকেটে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

দূর্দান্ত সূচনার পর থেকে বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে বেশ সাড়া জাগান। ১৯৯৮ সালে ১৪ টেস্ট থেকে ৬৯ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, ব্যক্তিগত সেরা ৭/৮৭ লাভ করেন। ২০০০ সালে তাঁর উপর অধিনায়কের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়। নেতৃত্বের চাপে স্বাভাবিক ক্রীড়াশৈলী বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। কেবলমাত্র ২০০১-০২ মৌসুমে ভারতের বিপক্ষে নিজের প্রথম ও একমাত্র ১০ উইকেট লাভে সক্ষম হন।

২০০০-০১ মৌসুমে নিজ দেশে সনথ জয়সুরিয়া’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ২ জানুয়ারি, ২০০১ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের প্রথম দিন ১৩.৪-৬-৩০-৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়কের সেরা বোলিং কীর্তি গড়েন। এ পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা দল তাদের সর্বনিম্ন ৯৫ রান সংগ্রহ করে। খেলায় তিনি ৬/৩০ ও ১/২৯ লাভ করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে তাঁকে ব্যাট হাতে নামতে হয়নি। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। তাঁর অসাধারণ বোলিং শৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২২৯ রানে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই সফরের ২০ জানুয়ারি, ২০০১ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্ট খেলেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে অপূর্ব খেলেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৯২ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান। নীল ম্যাকেঞ্জি’র (১০৩) সাথে ৮ম উইকেটে ১৫০ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নতুন রেকর্ড দাঁড় করান। খেলার প্রথম দিন একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১১১ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। পাশাপাশি, বল হাতে নিয়ে ০/১৫ ও ১/৪৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৭ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও, এ সিরিজে ১২৪ রান সংগ্রহসহ ১৩ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

একই মৌসুমে স্প্রিংবকের নেতৃত্বে থেকে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ গমন করেন। ১৯ এপ্রিল, ২০০১ তারিখে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের দ্বিতীয় দিন নিজস্ব দ্বাদশবার ইনিংসে পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। ৮৪তম ওভারে আম্পায়ার স্টিভ বাকনর ৫-বলে তাঁর ওভার শেষ করেন। খেলায় তিনি ৫/২৮ ও ৪/৬৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ১২ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরফলে, বিশ্বের ৮ম টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবে ২০০০ রান ও ২০০ উইকেট লাভের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী হন। ২৪ ও ৩ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। উভয় ইনিংসেই মারভিন ডিলনের শিকারে পরিণত হন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪১ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দলীয় সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড গড়ে। তবে, রিডলি জ্যাকবসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩০ রানে জয় পেলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

২০০২-০৩ মৌসুমে নিজ দেশে মারভান আতাপাত্তু’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১৫ নভেম্বর, ২০০২ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হন। বল হাতে নিয়ে ২/৫১ ও ১/৪৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৯৯* ও ৬* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, প্রথম ইনিংসে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে শতরানের দ্বারপ্রান্তে ছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয় লাভ করে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে বাংলাদেশ সফরে যান। ২৪ এপ্রিল, ২০০৩ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১/২২ ও ২/১২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। অভিষেকধারী জ্যাক রুডল্ফের অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলায় স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৬০ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

একই বছরে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৪ জুলাই, ২০০৩ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ১৭ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৫১ ও ০/৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। দলীয় অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

২০০৩-০৪ মৌসুমে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ১৮ মার্চ, ২০০৪ তারিখ থেকে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের দ্বিতীয় দিন ৩৩১ উইকেট দখল করে অ্যালান ডোনাল্ডকে পাশ কাটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষ উইকেট সংগ্রহকারীতে পরিণত হন। খেলায় তিনি ৪/১১৩ ও ০/১৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে উভয় ইনিংসে ১০ রান করে সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ক্রিস মার্টিনের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৯ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

২০০৪-০৫ মৌসুমে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের অন্যতম সদস্যরূপে ভারত সফরে যান। ২০ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। ভারতের প্রথম ইনিংসে জি গম্ভীরের প্রথম উইকেট লাভ করে ৩৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২/১০০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৪* রান সংগ্রহ করেন। অ্যান্ড্রু হলের অসাধারণ অল-রাউন্ড কৃতিত্বে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই সফরের ২৮ নভেম্বর, ২০০৪ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১৮ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/১০১ ও ০/২২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। হরভজন সিংয়ের অসাধারণ বোলিংয়ের সুবাদে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে ডোয়াইন ব্র্যাভো’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১০ জানুয়ারি, ২০০৮ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪/৩৫ ও ১/৫০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাটিং করার সুযোগ পাননি। অ্যাশওয়েল প্রিন্সের অসাধারণ শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১০০ রানে জয় পেলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

ছন্দহীনতাসহ আঘাতের কবলে পড়লে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ চলাকালে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। এরপর, ঐ সিরিজেই ওডিআই ক্রিকেটকে বিদেয় জানান। ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ওডিআইয়ে অংশ নেন। ৩৫ বছর বয়সে ১০ জানুয়ারি, ২০০৮ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি টানেন। অবসর গ্রহণকালীন দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বাধিক উইকেট শিকারীতে পরিণত হন। একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট ও ওডিআইয়ে তিন সহস্রাধিক রান ও তিন শতাধিক উইকেট লাভের ন্যায় অনন্য রেকর্ডের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। টেস্টের ঊনিশজন শীর্ষ অল-রাউন্ডারের অন্যতম হিসেবে ২০০ উইকেট ও ৩০০০ রানের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী।

১৯৯৬, ১৯৯৮, ২০০১ ও ২০০৩ সালে সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেট অ্যানুয়েল বর্ষসেরা ক্রিকেটার, ১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট বর্ষসেরা ক্রিকেটার এবং ২০০৩ সালে উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার লাভ করেন।

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর স্কাই স্পোর্টসে মাইকেল অ্যাথারটন ও ইয়ান ওয়ার্ডের সাথে ধারাভাষ্যকর্মে অংশ নেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত তিনি। ট্রিসিয়া লডারডেল নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেছেন।