| | |

শেন ওয়াটসন

১৭ জুন, ১৯৮১ তারিখে কুইন্সল্যান্ডের ইপ্সউইচ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

বব ওয়াটসন ও বার্ব ওয়াটসন দম্পতির সন্তান। নিকোল ওয়াটসন নাম্নী ভগ্নী রয়েছে। ‘ওয়াটো’ ডাকনামে ভূষিত শেন ওয়াটসন ৬ ফুট (১.৮৩ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ২০০০-০১ মৌসুম থেকে ২০১৫-১৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সরব ছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলস, কুইন্সল্যান্ড ও তাসমানিয়া; নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তন্মধ্যে, ২০০৫ সালে হ্যাম্পশায়ারের ক্যাপ লাভ করেন। এছাড়াও, রাজস্থান রয়্যালস, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর, ডেকান গ্ল্যাডিয়েটর্স, চেন্নাই সুপার কিংস, রংপুর র‌্যাঞ্জার্স, ঢাকা ডায়নামাইটস, রেডল্যান্ডস, সিন্ধিজ, সিডনি সিক্সার্স, সিডনি থান্ডার, ব্রিসবেন হিট, ইসলামাবাদ ইউনাইটেড, কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স, সেন্ট লুসিয়া জুকস ও সেন্ট লুসিয়া স্টার্সের পক্ষে খেলেছেন। এছাড়াও, সিডনি থান্ডারের অধিনায়কত্ব করেছেন।

২০০২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ৫৯ টেস্ট, ১৯০টি ওডিআই ও ৫৮টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ২০০২ সালে নবনিযুক্ত অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বে দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৪ মার্চ, ২০০২ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন।

২০০৪-০৫ মৌসুমে নিজ দেশে মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২ জানুয়ারি, ২০০৫ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে অংশ নেন। ০/২৮ ও ১/৩২ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৩১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের অসামান্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে ঐ খেলায় সফরকারীরা নয় উইকেটে পরাভূত হয় ও ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে পরাজয়বরণ করে।

২০০৯-১০ মৌসুমে নিজ দেশে মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ১৪ জানুয়ারি, ২০১০ তারিখে হোবার্টে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ঐ টেস্টে ২৯ ও ১ রান তুলেন। এছাড়াও, ০/১৭ ও ২/৩৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, দলনায়ক রিকি পন্টিংয়ের দূর্দান্ত ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২৩১ রানে জয় পেয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। ৩৪৬ রান ও পাঁচ উইকেট দখল করে তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২৭ মার্চ, ২০১০ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১২ ও ৬৫ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে টিম সাউদি’র শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৩০ ও ০/১৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। মিচেল জনসনের অনবদ্য বোলিং নৈপুণ্যে সফরকারীরা ১৭৬ রানে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

২০১০ সালের গ্রীষ্মে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিরপেক্ষ মাঠে টেস্ট সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড গমন করেন। প্রথম ইনিংসে ৫/৪০ লাভ করে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে ঠাঁই করে নেন। ঐ খেলায় তাঁর দল ১৫০ রানে জয়লাভ করেছিল।

২০১১-১২ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মাইকেল ক্লার্কের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ৯ নভেম্বর, ২০১১ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩ ও ৪ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে ডেল স্টেইনের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, ৫/১৭ ও ০/৪৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। অভিষেকধারী ভার্নন ফিল্যান্ডারের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে সেরা অল-রাউন্ডার হিসেবে নিজেকে চিত্রিত করেছিলেন। সাদা-বলের ক্রিকেটে নিজেকে নিত্য অনুসঙ্গ করেছিলেন। ২০০৯ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রায় একাকী সেমি-ফাইনাল ও চূড়ান্ত খেলায় নিজেকে মেলে ধরে অস্ট্রেলিয়াকে শিরোপা এনে দিয়েছিলেন। ২০১২ সালে বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার পান। এ প্রতিযোগিতা শেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদেয় জানান।

২০১৩ সালে মাইকেল ক্লার্কের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২১ আগস্ট, ২০১৩ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হন। খেলায় তিনি ১৭৬ ও ২৬ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/২২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর দূর্দান্ত ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে স্বাগতিকরা ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান্য অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

তবে, ৮ জুলাই, ২০১৫ তারিখে কার্ডিফে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলেন। ঐ বছর মাইকেল ক্লার্কের নেতৃত্বাধীন অজি দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১ম ইনভেস্টেক টেস্টে তিনি ৩০ ও ১৯ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/২৪ ও ০/২৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। জো রুটের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলায় তাঁর দল ১৬৯ রানে পরাভূত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

৩ নভেম্বর, ২০২০ তারিখে সকল স্তরের ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।

ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতে প্রবেশ করেন। প্রধান কোচ রিকি পন্টিংয়ের তত্ত্বাবধানে দিল্লি ক্যাপিটালসের সহকারী কোচ হিসেবে প্রবীণ আম্রেঅজিত আগরকরের সাথে একত্রে কাজ করছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। লি ফার্লং ওয়াটসন নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির উইলিয়াম ওয়াটসন নামীয় পুত্র ও মাটিল্ডা ভিক্টোরিয়া ওয়াটসন নাম্নী কন্যা রয়েছে।

Similar Posts

  • |

    হ্যারল্ড লারউড

    ১৪ নভেম্বর, ১৯০৪ তারিখে নটিংহ্যামশায়ারের নানকারগেট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী ছিলেন। বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়কালে সন্দেহাতীতভাবে সেরা ফাস্ট বোলার ছিলেন। প্রায়শঃই ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্রুততম বোলার হিসেবে বিবেচিত হয়ে…

  • | | | |

    হাসান তিলকরত্নে

    ১৪ জুলাই, ১৯৬৭ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ, রাজনীতিবিদ ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। নাছোড়বান্দা ও ক্রিজ আঁকড়ে থাকতেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার উত্থান পর্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। বিদ্যালয় পর্যায়ের ক্রিকেটে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। শুরুতে…

  • | | |

    জাভেদ মিয়াঁদাদ

    ১২ জুন, ১৯৫৭ তারিখে সিন্ধু প্রদেশের করাচীতে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। সোজা-সাপ্টা, ক্রেতাদূরস্ত, বিচক্ষণ ও হাল ছেড়ে না দেয়ার মানসিকতা নিয়ে গড়ার ফলে খুব সহজেই স্বতন্ত্র…

  • | |

    ক্রেগ ব্রাদওয়েট

    ১ ডিসেম্বর, ১৯৯২ তারিখে বার্বাডোসের ব্ল্যাক রক এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ইনিংস উদ্বোধন করে থাকেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘বোবো’ ডাকনামে ভূষিত ক্রেগ ব্রাদওয়েট কম্বারমেয়ার স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। পপ তারকা রিহান্না’র সাথে একই বিদ্যালয়ে পড়তেন ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে…

  • |

    জেপি ডুমিনি

    ১৪ এপ্রিল, ১৯৮৪ তারিখে কেপ প্রভিন্সের স্ট্রান্ডফন্তেইন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলেছেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ‘জেপি’ ডাকনামে পরিচিতি পান। ১.৭০ মিটার উচ্চতার অধিকারী। জন ডুমিনি ও জুনিটা বার্গম্যান দম্পতির সন্তান তিনি। কিশোর বয়সেই প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রাখেন। মাঠের সর্বত্র শট…

  • |

    সৈয়দ মুশতাক আলী

    ১৭ ডিসেম্বর, ১৯১৪ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে দক্ষ ছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দীর্ঘকায় গড়নের অধিকারী ও পরিপাটি অবস্থায় খেলতে নামতেন। ভারতের শুরুরদিকের ক্রিকেটারদের অন্যতম ছিলেন। অনেকাংশেই তিনি বলিউডের নায়কের ন্যায় ছিলেন। ক্রিজে…