Skip to content

১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে ভিক্টোরিয়ার ফার্নট্রি গালি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ, লেখক ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে কার্যকর ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে লেগ-ব্রেক কিংবা লেগ-স্পিন বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়াও, ওডিআইয়ে অজি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

ক্রিকেট জগতে পদার্পণকালীন পুরো ক্রিকেট বিশ্ব পেস ও বাউন্সের রাজত্ব কায়েম করে। লেগ-স্পিন বোলিংয়ের মাধ্যমে ক্রিকেটের শিল্পসত্ত্বাকে পুণরায় প্রতিষ্ঠিত করতে ও পুণর্জাগরণ ঘটাতে সক্ষম হন। ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ লেগ-স্পিনার হিসেবে বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। ডানহাতি লেগ-ব্রেক বোলার ছিলেন। ৬ ফুট (১.৮৩ মিটার) উচ্চতার অধিকারী হিসেবে শেন ওয়ার্ন ‘ওয়ার্নি’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন।

কিথ ওয়ার্ন ও ব্রিজেট ওয়ার্ন দম্পতির সন্তান ছিলেন। জেসন ওয়ার্ন নামীয় তাঁর এক ভ্রাতা রয়েছে। তরুণ বয়সেই প্রতিভাবান ছিলেন। ক্রীড়াবৃত্তি নিয়ে মেনটোন গ্রামারের অধ্যয়নের সুযোগ পান। ভিক্টোরিয়া ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অনূর্ধ্ব-১৬ ডোলিং শীল্ড প্রতিযোগিতায় মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের পক্ষে প্রথম প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়াও, সেন্ট কিল্ডা ফুটবল ক্লাবের অনূর্ধ্ব-১৬ দলের সদস্য থেকে অস্ট্রেলীয় ফুটবল খেলেন। এরপর, পেশাদারী পর্যায়ে ঝুঁকে পড়েন।

অস্ট্রেলিয়ার ‘বি’ দলে থাকাকালে প্রথমবারের মতো সকলের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজস্ব প্রথম খেলায় ৭/৪৯ লাভ করেন। অস্ট্রেলিয়ার ‘এ’ দলের সদস্যরূপে একইমানের আরও কয়েকটি ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখলে তাঁকে আন্তর্জাতিক খেলায় অংশগ্রহণের জন্যে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়া এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেট হ্যাম্পশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, আইসিসি বিশ্ব একাদশ, বিশ্ব একাদশ, মেলবোর্ন স্টার্স, রাজস্থান রয়্যালসের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৯০-৯১ মৌসুম থেকে ২০০৭-০৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ২০০০ সালে হ্যাম্পশায়ারের ক্যাপ লাভ করেন। তন্মধ্যে, ২০০৪ থেকে ২০০৭ সময়কালে চার মৌসুম হ্যাম্পশায়ার দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

১৯৯২ থেকে ২০০৭ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ১৪৫ টেস্ট ও ১৯৪টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে নিজ দেশে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২ জানুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি একবার বোলিংয়ে নেমে ১৫০ রান খরচায় মাত্র এক উইকেট দখল করেছিলেন। ফলে, তাঁকে দলের বাইরে রাখা হয়। তবে, রবি শাস্ত্রী’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীতে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। ভারতের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম দুই খেলা থেকে ২২৮ রান খরচায় মাত্র ১ উইকেট পেয়েছিলেন।

তাসত্ত্বেও, কয়েক মাস পরই ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে শ্রীলঙ্কা সফরে তাঁকে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অজি দলে রাখা হয়েছিল। ১৭ আগস্ট, ১৯৯২ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ঐ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ০/১০৭ পান। কিন্তু, দ্বিতীয় ইনিংসে বিরাটভাবে নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হন। ৩/১১ পান তিনি। ইনিংসের শেষ তিন উইকেট মাত্র ১৩ বলে বিনা রান খরচায় পেয়েছিলেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ২৪ ও ৩৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, গ্রেগ ম্যাথুজের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা শেষ মুহূর্তে ১৬ রানের নাটকীয় জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

টেস্ট অভিষেককালীন কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পাননি যে, এক সময় তিনি লেগ-স্পিনার হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করবেন। ১৫ বছর পর সর্বমোট ১৪৫ টেস্টে অংশ নিয়ে ২৫.৪১ গড়ে ৭০৮ উইকেট লাভ করেন। এরফলে, অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বাধিক উইকেট লাভের কৃতিত্বের অধিকারী হন। এছাড়াও, একদিনের আন্তর্জাতিকে ২৫.৭৩ গড়ে ২৯৩ উইকেট পেয়েছেন। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সহস্রাধিক আন্তর্জাতিক উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার বিখ্যাত ক্রিকেট তারকা মুত্তিয়া মুরালিধরনের পর নিজেকে দ্বিতীয় স্থানে নিয়ে যান।

ক্রিকেটের মৃতপ্রায় হয়ে পড়া লেগ-স্পিন বোলিংয়ের ন্যায় প্রাচীন বিষয়কে পুণরুজ্জ্বীবিত করে তুলতে ও শিল্প সুষমায় প্রকাশে লেগ-স্পিনারদের অপরিহার্য্য বিষয় গুগলি বোলিংকে নবরূপে খেলার জগতে ফিরিয়ে আনেন। তারকাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, নোংরা বার্তা প্রেরণ, নিষিদ্ধ মাদক গ্রহণ, অগণিত রমণীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন, উভয় হাতে চিজ বার্গার নিয়ে সুষম খাদ্য গ্রহণ ও ছদ্ম বাজীকরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি। ক্রিকেট বলের ন্যায় হাতের সেল ফোন নষ্ট করেছেন। তবে, অপূর্ব বোলিং, শূন্যে বল ফেলা, উইকেটের বাইরে থেকে স্পিন আনয়ণে সিদ্ধহস্তের অধিকারী ছিলেন। স্বর্ণকেশর নিয়ে বর্ণাঢ্যময় জীবন অতিবাহিত করেছেন।

নিচেরসারির কার্যকরী ব্যাটসম্যান ছিলেন। মারমুখী ভঙ্গীমায় ১৭.৩২ গড়ে ৩১৫৪ রান তুলেছেন। তবে, টেস্ট ক্রিকেটে তিন হাজারেরও অধিক রানের সন্ধান পেলেও কোন শতরানের ইনিংস না খেলেই সর্বাধিকসংখ্যক রান সংগ্রহের ন্যায় অমর্যাদাকর রেকর্ডের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ করেছেন ৯৯ রান। এছাড়াও, স্লিপ অঞ্চলে দারুণ ফিল্ডিং করতেন। শীর্ষমানসম্পন্ন ফিল্ডার হিসেবে টেস্টগুলো থেকে ১২৫ ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন।

তাঁর বোলিংয়ের ধরন বেশ সহজ ও নিখুঁত ছিল। বলকে বেশ বড় ধরনের বাঁক খাওয়াতে পারতেন। অচিন্ত্যনীয় বিষয় হিসেবে ব্যাটসম্যানদেরকে বিদেয় করতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল। লেগের দিক থেকে এ কৌশলে অনেকাংশে সফল ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে ঐ বছরের শেষদিকে মেলবোর্নে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭/৫২ পান ও দলকে জয় এনে দেন। ফলশ্রুতিতে, যুক্তরাজ্যে খেলতে ১৯৯৩ সালের অ্যাশেজ সিরিজের জন্যে মনোনীত হন।

এ সফরেই মাইক গ্যাটিংকে হতবাক করে আউট করার বিষয়টি তাঁর পুরো খেলোয়াড়ী জীবনের সর্বাপেক্ষা স্মরণীয় ঘটনা ছিল। পরবর্তীতে ‘বলটি শতাব্দীর সেরা বলের’ মর্যাদা পায়। পূর্বেকার অব্যবহৃত ‘ম্যাগনাস প্রতিক্রিয়া’ প্রয়োগে সক্ষম ছিলেন। মাইক হুইটনি তাঁর সেরা একাদশে তাঁকে ঠাঁই দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মাইক হুইটনি মন্তব্য করেন যে, ‘ভিক্টোরিয়ায় আমি তাঁর বিপক্ষে খেলেছি। তিনি আমার দেখা সেরা বোলার। বিশ্বের যে-কোন প্রান্তে, যে-কোন উইকেটে বোলিংয়ে পারদর্শী ও বলকে পর্যাপ্ত বাঁক খাওয়াতে সক্ষম। ডানহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে কোন লেগ-স্পিনারের বলকে সুইং ও বাঁক খাওয়াতে দেখিনি। বলটি মাইক গ্যাটিংয়ের লেগের বাইরের দিক থেকে মাঝারি ও লেগে চলে আসে। এরপর বাঁক খায় ও অফ-স্ট্যাম্পের শীর্ষে আঘাত হানে।’ এছাড়াও, অ্যান্ড্রু স্ট্রস ও ভিভিএস লক্ষ্মণের বিপক্ষে তাঁর বল যথাক্রমে শতাব্দীর সেরা চতুর্থ ও দশম বলের মর্যাদা পায়। খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে বাউন্ডারি মারতেন। ব্যাট হাতে দারুণ খেলতেন।

১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে নিজ দেশে কেন রাদারফোর্ডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ২৬ নভেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে হোবার্টে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাটিং করার সুযোগ পাননি। তবে, বল হাতে নিয়ে ৩/৩৬ ও ৬/৩১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। মার্ক ওয়াহ’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২২২ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৩৮ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। এছাড়াও, ১২ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি একমাত্র ইনিংসে ৭৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৪/৬৬ ও ৪/৫৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে ঐ খেলায় অস্ট্রেলিয়া দল ইনিংস ও ৯৬ রানের ব্যবধানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সফরকারীরা সিরিজ খোঁয়ায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। পাশাপাশি, এ সিরিজে ৮৫ রান সংগ্রহসহ ১৮ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

২ জানুয়ারি, ১৯৯৪ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ১২ উইকেট দখল করে অস্ট্রেলীয় বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দেন। তাসত্ত্বেও, খেলায় তাঁর দল ৫ রানের ব্যবধানে পরাজয়বরণ করেছিল।

১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে মার্ক টেলরের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। এ সফরে তিনি বেশ সফলতা পান ও পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। ১ নভেম্বর, ১৯৯৪ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৬/১৩৬ ও ৩/১০৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ৩৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে বিজয়ী হয়। ৬৯ রান সংগ্রহসহ ১৮ উইকেট দখল করে প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক সেলিম মালিকের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া সফর করেন। ৯ নভেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৭/২৩ ও ৪/৫৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১২৬ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

ওডিআইয়েও নিজেকে কার্যকরী করে তুলতে সচেষ্ট হন। ১৯৯৬ সালের উইলস বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ১২ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, সেমি-ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪/৩৬ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে দলকে জয় এনে দেন। তবে, চূড়ান্ত খেলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাঁর দল পরাজিত হয়েছিল।

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ২০ উইকেট দখল করে অস্ট্রেলিয়া দলের শিরোপা বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। সেমি-ফাইনাল ও চূড়ান্ত খেলায় ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। ২০০২ সালে কেপটাউনে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দারুণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। এ টেস্টটি তাঁর শততম টেস্ট ছিল। ব্যাট হাতে ৬৩ রান তুলে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রানে এগিয়ে রাখতে সহায়তা করেন। নিষ্প্রাণ পিচে গ্লেন ম্যাকগ্রা, ব্রেট লি ও জেসন গিলেস্পি ৭৬ ওভার বোলিং করে ২ উইকেট পান; অপরদিকে তিনি প্রথম ধাঁপে ২৮ ওভার করার পর সব মিলিয়ে ৭০ ওভার করেন। এ সংখ্যাটি গত ২৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। অধিকাংশ দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানের শুরুটা ভালো হলেও তিনি তাঁদেরকে বড় সংগ্রহের দিকে যেতে দেননি। ৩৪২ বলে কোন রান দেননি। ৬/১৬১ পান ও অস্ট্রেলিয়াকে ৩৩১ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় সীমাবদ্ধ রাখেন। এরপর, ১৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জয় এনে দেন।

২০ জুন, ১৯৯৯ তারিখে লর্ডসে তাঁর যাদুকরী স্পিনে পাকিস্তান দল গুটিয়ে যায় ও উপর্যুপরী তিনটি বিশ্বকাপের শিরোপা বিজয়ের প্রথমটিতে অংশ নেন। চূড়ান্ত খেলায় ৯-১-৩৩-৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান ও ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। ২০ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডীয় জিওফ অ্যালটের সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকে পরিণত হন। এ প্রতিযোগিতায় ১০টি খেলা থেকে ১৮.০৪ গড়ে ২০ উইকেট দখল করেন।

১৯৯৪ সালে ব্রিসবেনে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে অন্যতম সেরা ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৫০৮ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় ধাবিত সফরকারীদের বিপক্ষে ৮/৭১ নিয়ে দলকে ১৮৪ রানে জয়লাভে বিরাট ভূমিকা রাখেন।

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৭ নভেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর বল থেকে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র ক্যাচ দলীয় অধিনায়ক মার্ক টেলর তালুবন্দী করলে ৫৭ টেস্টে ৪০তম ক্যাচ মুঠোয় পুড়েন। এরফলে, যে-কোন বোলারের নির্দিষ্ট ফিল্ডারের সহায়তায় সর্বাধিক ক্যাচ নেয়ার রেকর্ড গড়েন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এলআর গিবসের ৬০ টেস্টে বোলিং থেকে জিএস সোবার্সের সর্বাধিক ক্যাচ নেয়ার রেকর্ড ম্লান হয়ে পড়ে। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে খেলায় তিনি ২১ রান সংগ্রহসহ পাঁচটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ৪/১০৬ ও ৩/৫৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। মার্ক টেলরের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ১৮৬ রানে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। প্রসঙ্গতঃ, এটিই উভয় দলের মধ্যকার উদ্বোধনী টেস্ট ছিল। ১৪ অক্টোবর, ১৯৯৯ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র-টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/৬৯ ও ৩/৬৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। দলীয় অধিনায়কের অসাধারণ শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ১০ উইকেটে জয়লাভ করে।

২০০১-০২ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৩০ নভেম্বর, ২০০১ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৮৬ রান অতিক্রম করেন। ওয়াকায় অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় ৯৯ ও ১০ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/১৩৫ ও ১/৭৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র অসামান্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে ফলাফলবিহীন অবস্থায় সিরিজের সমাপ্তি ঘটে।

ক্রিকেটে দারুণ প্রতিভার স্বাক্ষর রাখলেও অস্ট্রেলিয়া দলের নেতৃত্বের সুযোগ পাননি। পুরো খেলোয়াড়ী জীবনেই তিনি বিতর্কিত ছিলেন। বোলিং সাফল্যকে ছাঁপিয়ে তাঁর বিতর্কের বিষয়গুলো অধিক প্রাধান্য পেতো। বিতর্কিত ভূমিকার কারণে টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলীয় দলকে পরিচালনায় তাঁকে রাখা হয়নি। বিতর্কিত ভূমিকা সর্বদাই তাঁকে আস্ট্রেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখতো।

২০০৩ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শুরুর পূর্বদিন মাদক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। নেতিবাচক ফলাফল আসলে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন। পরবর্তীতে তাঁকে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরৎ পাঠানো হয়। একই বছর এসিবি’র মাদক নিয়ন্ত্রণ ধারায় দোষী হলে এক বছর তাঁকে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয়। এক বছর তাঁকে ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হয়। ১২ মাস নির্বাসন থেকে ২০০৪ সালে খেলার জগতে ফিরে এসে আরও সেরা খেলা প্রদর্শনে সচেষ্ট হন।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২৬ উইকেট পান ও পরের বছর ২০০৫ সালে এক পঞ্জিকাবর্ষে ৯৬ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। এ সংখ্যাটি ১৯৯৩ সালের তুলনায় ২৪টি বেশী ছিল। তাসত্ত্বেও অ্যালান বর্ডার পদক লাভ করা থেকে বঞ্চিত হন। তন্মধ্যে, অ্যাশেজ সিরিজে পান চল্লিশটি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজগুলোয় ১৯.৯২ গড়ে ৪০ উইকেট দখল করেন।

২০০৩-০৪ মৌসুমে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। পুরো সিরিজে বল হাতে নিয়ে বেশ দাপট দেখান। ৮ মার্চ, ২০০৪ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ২৩ ও ০ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/১১৬ ও ৫/৪৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে হাসান তিলকরত্নেকে অ্যান্ড্রু সায়মন্ডসের কটে পরিণত করে পাঁচশত উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। তবে, ম্যাথু হেইডেনের অসাধারণ ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১৯৭ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ১৬ মার্চ, ২০০৪ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ১৮ ও ৬ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ৫/৬৫ ও ৫/৯০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ বোলিং সাফল্যে সফরকারীরা ২৭ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

এরপর, একই সফরের ২৪ মার্চ, ২০০৪ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৩২ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/১১৫ ও ৪/৯২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। তবে, ড্যারেন লেহমানের অসাধারণ সাফল্যে সফরকারীরা ১২১ রানে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। এ সিরিজে ৭৯ রান সংগ্রহসহ ২৬ উইকেট দখল করে তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

লেগ-স্পিন বোলিংয়ের কল্যাণে সর্বদাই নিজেকে স্মরণীয় করে রাখবেন। খেলোয়াড়ী জীবনে ক্রমাগত রেকর্ড সৃষ্টি করে গেছেন। মার্চ, ২০০৪ সালে প্রথম অস্ট্রেলীয় হিসেবে টেস্টে ৫০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোর্টনি ওয়ালশের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে এ সাফল্য পান।

২০০৪-০৫ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৬ নভেম্বর, ২০০৪ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৫৩* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে জেইসি ফ্রাঙ্কলিনের প্রথম উইকেট লাভ করে টেস্টে ৫৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। বল হাতে নিয়ে ১/৬৫ ও ২/৭৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। জাস্টিন ল্যাঙ্গারের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা খেলায় ২১৩ রানে পরাজয়বরণসহ ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ফিরতি সফরে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১০ মার্চ, ২০০৫ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ২/১১২ ও ৫/৩৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, অ্যাডাম গিলক্রিস্টের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারী ৯ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ১৮ মার্চ, ২০০৫ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৩৩ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ৫০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/৬৯ ও ০/১৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের অসাধারণ শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

১১ আগস্ট, ২০০৫ তারিখে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে ৬০০ উইকেট লাভের অধিকারী হন। ওল্ড ট্রাফোর্ডে অ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্ট ও নিজস্ব ১২৬তম টেস্টে ইংরেজ ব্যাটসম্যান মার্কাস ট্রেসকোথিক ৬৩ রানে বিদেয় করে এ কীর্তিগাঁথা রচনা করেন। এরপর, ব্যাট হাতে নিয়ে ১২২ বল মোকাবেলান্তে ৯০ রানের মহামূল্যবান ইনিংস উপহার দেন ও অস্ট্রেলিয়াকে ড্র করতে সহায়তা করেন। পূর্বেকার খেলায় এজবাস্টনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নিয়ে খেলায় ১৬২ রান খরচায় ১০ উইকেট দখল করেছিলেন। এরফলে, প্রথম বোলার হিসেবে বিদেশের মাটিতে ১০০ উইকেট লাভের গৌরব অর্জন করেন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০০৬ তারিখে প্রথম বোলার হিসেবে ৭০০ উইকেট লাভের অধিকারী হন। এ ধরনের রেকর্ডের সাথে প্রায়শঃই তাঁর টেস্টের সূচনাকালীন ব্যর্থতার কথা বিস্মৃতির অন্তরালে চলে যায়।

২০০৫-০৬ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১৬ ডিসেম্বর, ২০০৫ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে এজি প্রিন্সকে বিদেয় করে ৬৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৩/৯২ ও ৩/৮৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ২৪ ও ৫ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। ব্রাড হজের দূর্দান্ত প্রয়াস সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অগ্রসর হতে থাকে।

কয়েক দশক পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফাস্ট বোলিংয়ের প্রভাব থেকে তিনি ও শ্রীলঙ্কান প্রতিপক্ষ মুত্তিয়া মুরালিধরন স্পিন বোলিংকে কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসেন। তাঁরা উইকেট লাভের নতুন রেকর্ড সৃষ্টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে থাকেন। অল্পের জন্যে ৭০০ উইকেট লাভে প্রথম হওয়া থেকে তিনি বঞ্চিত হন। ডিসেম্বর, ২০০৭ সালে ৭০৮ উইকেট নিয়ে সর্বকালের আরেক স্পিন কিংবদন্তী মুত্তিয়া মুরালিধরনের সংগ্রহকে ছাঁপিয়ে যান। এছাড়াও, মুত্তিয়া মরালিধরনের পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০০ উইকেট পান। টেস্টের ঊনিশজন শীর্ষ অল-রাউন্ডারের অন্যতম হিসেবে ২০০ উইকেট ও ৩০০০ রানের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী।

জানুয়ারি, ২০০৭ সালে ড্যামিয়েন মার্টিন, জাস্টিন ল্যাঙ্গার ও গ্ল্যান মাকগ্রা’র সাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে একযোগে অবসর গ্রহণ করেন। এ পর্যায়ে ২০০৬-০৭ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজ করায়ত্ত্বে ভূমিকা রাখেন। ৫-০ ব্যবধানে অ্যাশেজ সিরিজ বিজয় শেষে নিজ নামের পার্শ্বে ৭০৮ উইকেট যুক্ত করেন। ২ জানুয়ারি, ২০০৭ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১/৬৯ ও ১/২৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ৭১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, স্টুয়ার্ট ক্লার্কের অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীতে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয়লাভ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করলেও ক্লাব ও কাউন্টি ক্রিকেটে খেলা চলমান রাখেন। ২০০৮ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর নাইন ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার দলের সদস্যরূপে যুক্ত হন। এরপর, ২০০৯ সালে স্কাই স্পোর্টসে চুক্তিবদ্ধ হন। এছাড়াও, অবসর গ্রহণের পর নৈশভোজন পরবর্তী বক্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

ভিক্টোরিয়া, হ্যাম্পশায়ার, রাজস্থান রয়্যালস ও মেলবোর্ন স্টার্সের পক্ষে ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে রাজস্থান রয়্যালস দলকে পরিচালনা করেছিলেন। মার্চ, ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান টি২০ লীগের উদ্বোধনী আসরে অংশ নিতে রাজস্থানের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। দলের অধিনায়কত্ব পালনসহ কোচ ও দলের শিরোপা বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। ২০১১ সালে রয়্যালসের পক্ষে উভয় দায়িত্ব পালন শেষে ২০১২ সালে সকল স্তরের ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন তিনি। ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে আইপিএলের ২০২০ সালের আসরে রাজস্থান রয়্যালসের শুভেচ্ছা দূত ও পরামর্শকের যুগ্ম দায়িত্ব পালনের কথা ঘোষণা করা হয়।

তাঁর আক্রমণধর্মী নেতৃত্ব ও সুন্দর ব্যক্তি-ব্যবস্থাপনা গুণাবলীর কারণে ক্রিকেট বিশ্লেষক ও সাবেক খেলোয়াড়েরা এক বাক্যে তাঁকে অস্ট্রেলিয়ার সেরা অধিনায়ক হিসেবে তাঁর অনুপস্থিতির কথা তুলে ধরেন। স্বীয় আত্মজীবনীতেও দেশের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অধিনায়কের দায়িত্ব ভার অর্পণ না করার বিষয়টি তাঁর অন্যতম আক্ষেপরূপে চিত্রিত করেন। তবে, ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সময়কালে ১১টি ওডিআইয়ে অস্ট্রেলিয়া দলকে নেতৃত্ব দেন। ১০ জয়ের বিপরীতে একটিতে তাঁর দল পরাজিত হয়।

১৯৯৪ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। একই সালে সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেট অ্যানুয়েল কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হন। ১৯৯৬ সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন। ২০০০ সালে উইজডেন কর্তৃক বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা ৫ ক্রিকেটারের একজনরূপে ও বর্ষসেরা ওডিআই খেলোয়াড়ের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ২০০৪ সালে উইজডেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেন। ২০০৫ সালে ইংরেজ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে দারুণ খেলে দ্য ক্রিকেট সোসাইটি ওয়েদারল শীর্ষ অল-রাউন্ডার পুরস্কার পান। ২০০৬ সালে বর্ষসেরা টেস্ট খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান। ৮ অক্টোবর, ২০০৯ তারিখে স্পোর্ট অস্ট্রেলিয়া হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন।

টেস্ট ক্রিকেটে হ্যাট্রিক করেছেন, বিশ্বকাপের চূড়ান্ত খেলায় ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পেয়েছেন ও সাতটি গ্রন্থের প্রধান বিষয় হিসেবে আলোচিত হয়েছেন। আর্থার মরিস, ইয়ান হিলি, অ্যালান বর্ডার ও নীল হার্ভের সাথে অস্ট্রেলিয়ার শতাব্দীর সেরা টেস্ট দলে ঠাঁই পেয়েছেন।

যদি কেউ তাঁকে উইজডেন কর্তৃক বিংশ শতাব্দীর শীর্ষ পাঁচ ক্রিকেটারের অন্যতম হিসেবে চিত্রিত করতে না পারেন; তাহলে তাদেরকে অন্য বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ২০০৪ সালে এতোটাই ভালো খেলেছিলেন যে, উত্তরাংশে রাতের আকাশে আলো দেখার শামিল হিসেবে ভাবতে হবে। বোলিংয়ে কিছুটা বৈচিত্র্যতা আনেন। ফ্লিপার্স ও জুটার্সের সাথে স্লাইডার্স যুক্ত করেছেন। আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে এসেও খেলা পরিবর্তনে তাঁর ভূমিকা অপরিসীম ছিল। লেগ-ব্রেক ও বলে নিখুঁততা আনয়ণ তাঁর প্রধান অস্ত্র ছিল। খেলোয়াড়ী জীবনের শেষ ২/৩ বছরে প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করেছেন।

‘নো স্পিন: মাই অটোবায়োগ্রাফি’, ‘শেন ওয়ার্ন মাই অউন স্টোরি’, ‘শেন ওয়ার্ন মাই অটোবায়োগ্রাফি’, ‘শেন ওয়ার্ন: মাই অফিসিয়াল ইলাস্ট্রেটেড ক্যারিয়ার’, ‘শেন ওয়ার্নস সেঞ্চুরি: মাইট টপ হান্ড্রেড টেস্ট ক্রিকেটার্স’ গ্রন্থসমূহ রচনা করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। সিমন কালাহান নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে, তাঁদের মধ্যকার বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। এ দম্পতির জ্যাকসন নামীয় পুত্র এবং ব্রুক ও সামার নাম্নী কন্যা ছিল। ৪ মার্চ, ২০২২ তারিখে থাইল্যান্ডের কো সামুই এলাকায় ৫২ বছর ১৭২ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।