শহীদ আফ্রিদি
১ মার্চ, ১৯৮০ তারিখে খাইবার এজেন্সিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে কার্যকরী ও মারকুটে ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনে এগিয়ে আসতেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল স্তরে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
পাকিস্তানের প্রথিতযশা অল-রাউন্ডার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন। সুইংয়ের সুলতান, স্পিনের যাদুকর ও বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান হিসেবে সতীর্থদের কাছে ‘লালা’ ডাকনামে পরিচিত শহীদ আফ্রিদি’র মাঝে বিরাজমান ছিল। খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটানোর পর থেকে খুব সহজেই পাকিস্তানের সর্বাপেক্ষা মনোযোগ আকর্ষক ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ও লেগ-স্পিন বোলিংয়ের সুবাদে বেশ পরিচিতি পান।
শুরুতে তিনি অল-রাউন্ডারের দক্ষতা নিয়ে অগ্রসর হন। চিরাচরিত লেগ-ব্রেক বোলিংয়ের পাশাপাশি দুই ধরনের গুগলি – অফি ও লেদাল ব্যবহার করতেন। সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে এর প্রয়োগ বিপজ্জ্বনকভাবে ব্যবহার করতেন। তবে, ব্যাটিংয়ের সাথেই তিনি অধিকতর সম্পৃক্ত ছিলেন ও বিশ্বব্যাপী দর্শকদের মনোরঞ্জন করতেন। শেষের ওভারগুলোয় তিনি দূর্নিবার ছিলেন। কোন বলই সহজে রক্ষা পেতো না তবে, ব্যাটিংয়ের ধরন ধ্রুপদীশৈলীর ছিল না। প্রায়শঃই দর্শনীয় ফলাফলগুলো এক হাতে করেছেন। দুইটি দ্রুততম ওডিআই শতক হাঁকান। খেলোয়াড়ী জীবনে স্ট্রাইক-রেট প্রায় ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছিল। যে-কোন অবস্থানে মাঠে নামলেও ধারাবাহিকতার অভাব প্রকটতর ছিল।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুম থেকে ২০১৫-১৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে হাবিব ব্যাংক লিমিটেড, করাচী ও করাচী রিজিওন ব্লুজ; দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে গ্রিকুয়াল্যান্ড ওয়েস্ট; ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ার, লিচেস্টারশায়ার ও নর্দাম্পটনশায়ার এবং অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, এশীয় একাদশ, ফ্লাই এমিরেটস একাদশ, আইসিসি বিশ্ব একাদশ, ব্রাম্পটন উল্ভস, ডেকান চার্জার্স, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, ঢাকা প্লাটুন, এডমন্টন রয়্যালস, গালে গ্ল্যাডিয়েটর্স, জ্যামাইকা তল্লাজ, করাচী কিংস, কাউলুন ক্যান্টনস, মেলবোর্ন রেনেগেডেস, মুলতান সুলতান্স, পেশাওয়ার জালমি, রংপুর রাইডার্স, রুহুনা রয়্যালস এবং সেন্ট কিটস ও নেভিস প্যাট্রিয়টসের পক্ষে খেলেছেন।
১৯৯৬ থেকে ২০১৮ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ২৭ টেস্ট, ৩৯৮টি ওডিআই ও ৯৯টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে দলের সাথে কেনিয়া গমন করেন। ২ অক্টোবর, ১৯৯৬ তারিখে নাইরোবির আগায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক কেনিয়ার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের সূত্রপাত ঘটান।
১৯৯৬ সালে একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণের পর থেকে ক্রিকেট বিশ্বে সমর্থকদের হৃদয়-মন জয় করেছিলেন। ওডিআইয়ের ইতিহাসে তৎকালীন দ্রুততম শতক হাঁকানোর রেকর্ড গড়েন ও সনথ জয়সুরিয়া’র রেকর্ড ভেঙ্গে নিজের করে নেন। ৪ অক্টোবর, ১৯৯৬ তারিখে নিজস্ব দ্বিতীয় ওডিআইয়ে ৩৭ বলে এ সাফল্য পান ও তিন অঙ্কের কোটায় নিজেকে নিয়ে যান। পরবর্তীতে অবশ্য নিউজিল্যান্ডীয় তারকা খেলোয়াড় কোরে অ্যান্ডারসন তাঁর ঐ রেকর্ডটি নিজের দখলে নিয়েছেন। আঘাতপ্রাপ্ত মুশতাক আহমেদের লেগ-স্পিনার হিসেবে তাঁর অন্তর্ভুক্তি ঘটেছিল। কেবলমাত্র ভীতিহীন মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে রাখা হয়। ১৬ বছর ২১৭ দিন বয়সী বালকের বিস্ময়কর ইনিংসের কল্যাণে বোলিং থেকে তাঁকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে আনে। ওয়াকার ইউনুসের সাথে ব্যাট হাতে মাঠে নামেন। তাঁর রান সংগ্রহের সংখ্যাগুলো হচ্ছে – ০৬১০৪০০৬০০৬৬১১৬৬২৬৪৪০০৬৬১৪১১০৪১৬০৬০২৪১০০। এক পর্যায়ে দলের খণ্ডকালীন বোলিংয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে, এ ধরনের পরিবর্তনে তাঁর মাঝে পূর্ণাঙ্গ গুণাবলীর অভাব দৃশ্যমান হয়।
ঐ ঝড়ো ইনিংসের কল্যাণে নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত ওডিআই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় পাকিস্তান দল দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয়। ৬ অক্টোবর, ১৯৯৬ তারিখে বল হাতে নিয়েও স্বীয় প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। দ্রুতগতিসম্পন্ন লেগ-স্পিন বোলিং করেন। ৩/৪৮ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন।
১ নভেম্বর, ১৯৯৬ তারিখে ‘পাকিস্তানের জয়সুরিয়া’ হিসেবে নিজেকে পরিচিতি ঘটান। জিম্বাবুয়ের বোলিং তুনোধুনো করে ৩৭ বলে ৬৬ রান তুলেন। এরফলে, নিজস্ব পঞ্চম ওডিআইয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর এ ইনিংসে চারটি ছক্কা ও আটটি চারের মার ছিল এবং নাইরোবির ঘটনাগুলো যে আকস্মিক কোন ঘটনা ছিল না তা প্রমাণ করেন।
১৮ জানুয়ারি, ১৯৯৭ তারিখে নিজেকে অল-রাউন্ডার হিসেবে পরিচিতি ঘটানোর প্রয়াস চালান। সিডনিতে কার্লটন এন্ড ইউনাইটেড সিরিজের চূড়ান্ত খেলায় তিন উইকেট লাভ ও দূর্দান্ত অর্ধ-শতক হাঁকান। ঐ খেলায় জয় পেয়ে পাকিস্তান দল সিরিজে বিজয়ী হয়।
৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে ভারতীয় বোলিংয়ের বিপক্ষে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারের সূচনা ঘটান। করাচীতে অনুষ্ঠিত ওডিআইয়ে দ্রুততম সময় নিয়ে ৭২ রান তুলেন। এরপর, লাহোরেও এর পুণরাবৃত্তি ঘটান। তবে, উভয় ক্ষেত্রেই পাকিস্তান পরাজয়বরণ করেছিল। ইজাজ আহমেদের উইকেট বিসর্জনের মাধ্যমে দলের ইনিংস ভেঙ্গে পড়ে।
১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে টরন্টোয় উৎপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সাহারা কাপে ভারতের বিপক্ষে নিজস্ব দ্বিতীয় ওডিআই শতরানের ইনিংস খেলেন। ছয়টি ছক্কা ও সাতটি চারের সাহায্যে ঐ ইনিংসটি সাজান। ৯৪ বলে ১০৯ রান তুলেন ও ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকার পর পাকিস্তান দল একাধারে তিনটি জয় পায়। এরপর থেকে আবারও তাঁর ভূমিকার পরিবর্তন ঘটে। ২০০৪ সালে সাকলাইন মুশতাক ও মুশতাক আহমেদের অবসর গ্রহণের ফলে শহীদ আফ্রিদি ও দানিশ কানেরিয়াকে শীর্ষ স্পিনার হিসেবে দলে রাখা হয়।
১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে নিজ দেশে মার্ক টেলরের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২২ অক্টোবর, ১৯৯৮ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। শাকিল আহমেদের সাথে তাঁর একযোগে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অভিষেক টেস্টে মিশ্র সফলতা পান। ঐ টেস্টে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও প্রথম ইনিংসে পাঁচ-উইকেট (৫/৫২) লাভ করেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ০/৪৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পাশাপাশি দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন এবং ১০ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, দলনায়ক আমির সোহেলের অসামান্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
২৮ জানুয়ারি, ১৯৯৯ তারিখে শচীন তেন্ডুলকরের অসাধারণ শতকের কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকলেও তিনি তিনটি উইকেট ও দৃষ্টিনন্দন ১৪১ রান তুলে পাকিস্তানকে স্বল্প ব্যবধানের জয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন। ২৭ অক্টোবর, ২০০০ তারিখে অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলায় প্রভাব বিস্তার করেন। বল ও ব্যাট হাতে নিয়ে লাহোরে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে পাকিস্তানকে সিরিজে সমতা আনয়ণে অংশ নেন। ৫/৪০ বোলিং পরিসংখ্যানের পর ৬১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। দলকে সহজ জয় এনে দেন ও ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
অন্যদিকে, সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে নিয়মিতভাবে খেলার সুযোগ পেলেও টেস্ট জগতে দলে আসা-যাবার পালায় অবস্থান করতে থাকেন। ১৪ মাস মাঠের বাইরে অবস্থানের পর টেস্ট দলে যুক্ত হন। ফেব্রুয়ারি, ২০০২ সালে দলে ফিরে প্রিয় মাঠ শারজায় টেস্ট শতক হাঁকান। ভালোমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করলেও অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের ন্যায় তিনিও ২০০৬ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। এরপর থেকেই সীমিত-ওভারের খেলায় পুরোপুরি মনোনিবেশ ঘটান। তবে, কয়েক মাসের মধ্যেই আবারও টেস্ট দলে ফিরে আসেন। এরপর, ২০১০ সালে অধিনায়ক হিসেবে একবার টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্টে পরাজয়বরণের পর টেস্ট ক্রিকেট থেকে পুণরায় অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। সব মিলিয়ে ২৭ টেস্টে ১৭১৬ রান ও ৪৮ উইকেট পেয়েছিলেন।
১৩ আগস্ট, ২০০১ তারিখে পূর্বেকার আলোকচ্ছটা মেলে ধরতে সচেষ্ট হন। লিচেস্টারশায়ারের পক্ষে খেলে দলকে সি এন্ড জি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় দলকে বিজয়ী করার প্রয়াস চালান। পরবর্তীতে তিনি মন্তব্য করেন যে, ‘প্রথম ১৫ ওভারে ব্যাট হাতে নিজেকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হই ও ইনিংসের শেষদিকে আঘাত হানার বিষয়ে মনস্থির করি। এরপর, উইকেট পতন ঘটতে থাকলে আমি আমার সহজাত আক্রমণাত্মক খেলা উপহারের দিকে নিয়ে যাই।’
মে, ২০০২ সালে সাময়িকভাবে সাদা-বলের ক্রিকেটকে বিদেয় জানান। টেস্টে প্রভাববিস্তার দীর্ঘদিনব্যাপী ধরে রাখতে পারেননি। ইনিংস উদ্বোধনে নেমে প্রথম বলেই বিদেয় নেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দল ৬৪৩ রান তুলে এবং ইনিংস ও ৩২৪ রানের ব্যবধানে বিজয়ী হয়। উভয় ইনিংসে বল হাতে নিয়েই সুবিধে করতে পারেননি। ফলশ্রুতিতে, টেস্ট দল থেকে প্রায় ৩২ মাস দূরে ছিলেন।
১৩ মার্চ, ২০০৩ তারিখে খেলোয়াড়ী জীবনের বিতর্কিত অনেকগুলো ঘটনার প্রথমটিতে জড়িয়ে পড়েন। শারজায় অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় নিষেধাজ্ঞার পর বিশ্বকাপেও বহমান থাকে। সেঞ্চুরিয়নে ভারতের বিপক্ষে দলের পরাজয়ে ব্যাটসম্যানদেরকে উত্ত্যক্ত করার কারণে ম্যাচ ফি’র ৫০% জরিমানার কবলে পড়েন। ১৬ মার্চ, ২০০৪ তারিখে স্বরূপ ধারন করেন। বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় শোচনীয় ফলাফলের পর দল থেকে বাদ পড়েন। পুণরায় দলে ফিরে আসেন। ভারতের বিপক্ষে সহজাত আক্রমণ চালিয়ে ৫৮ বলে ৮০ রান তুলেন। দলকে বিজয়ী করেন ও ওডিআই সিরিজে ফলাফলে সমতায় নিয়ে আসেন।
মার্চ, ২০০৫ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিরুদ্ধে বিখ্যাত জয়ে অংশ নেন। চেন্নাইয়ে মহাকাব্যিক ইনিংস উপহার দেয়ার ছয় বছর পর টেস্টে পুণরায় স্বরূপ ধারন করেন। তবে, প্রথম বলেই শূন্য রানে বিদেয় নেন। পরবর্তীতে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৪ বলে ৫৮ রান তোলার পর বল হাতে নিয়ে ভারতের মাঝারিসারিতে ভাঙ্গন ধরান। শচীন তেন্ডুলকর, সৌরভ গাঙ্গুলী ও ভিভিএস লক্ষ্মণের উইকেট নিয়ে ব্যাঙ্গালোরে দলকে জয় এনে দেন। ১৫ এপ্রিল, ২০০৫ তারিখে কানপুরে পুণরায় ভারত দল তাঁর ব্যাটিংয়ে জর্জরিত হয়। অভিষেকের পর সর্বাপেক্ষা ধ্বংসাত্মক ইনিংস খেলেন। কানপুরের গ্রীন পার্ক স্টেডিয়ামে সকল ধরনের বোলিং প্রতিহত করে ৪৬ বলে ১০২ রান তুলেন। এরফলে, বল সংখ্যা মোকাবেলায় যৌথভাবে দ্বিতীয় দ্রুততম শতক হাঁকান।
৩১ মে, ২০০৫ তারিখে দলীয় রাজনীতিতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। ইউনুস খান ও ইনজামাম-উল-হকের সাথে সাজঘরে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়েন। পাকিস্তানী ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের রাজনীতি সর্বদান প্রধান বিষয় ছিল। তবে, এ বিষয়ে প্রথমবারের মতো তিনি অংশ নিয়েছিলেন। ২১ নভেম্বর, ২০০৫ তারিখে আরও একটি বিতর্কিত বিষয়ে যুক্ত হন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফয়সালাবাদ টেস্ট চলাকালীন দলীয় বোলারদের সহায়তায় পিচে ক্ষত করার প্রচেষ্টা ধরা পড়ে। এ ধরনের অপপ্রয়াসের ফলে তিন খেলায় অংশগ্রহণ করা থেকে তাঁকে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয় ও পিসিবি থেকে সতর্কবার্তা দেয়া হয়।
জানুয়ারি, ২০০৬ সালে নিজ দেশে সহজাত খেলা উপহার দেন। আক্রমণাত্মক খেলা উপহার দিয়ে আরও দুটি শতরানের ইনিংস খেলেন। লাহোরে ৮০ বলে ১০৩ ও ফয়সালাবাদে ১২৮ বলে ১৫৬ রান তুলেন। ১২ এপ্রিল, ২০০৬ তারিখে সাদা-বলের খেলা যথেষ্ট হয়েছে বলে ঘোষণা করেন। সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে টেস্ট ক্রিকেট থেকে সাময়িক অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে ঘিরে ওডিআইয়ে মনোনিবেশ ঘটানোর কথা জানান। বিশ্বকাপের পর এ বিষয়ে পুণরায় চিন্তা করবেন। তবে, এক পক্ষকাল পরই তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেন।
৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে নিজের সেরা খেলা উপহার দেন। শেষের ওভারগুলোয় দূর্দান্ত ভূমিকা রাখেন। ৩৯তম ওভারে দলের সংগ্রহ ২২২/৪ থাকাকালীন মাঠে নামেন। ৩৫ বল মোকাবেলা করে ছয় ছক্কা ও পাঁচটি চারের সহায়তায় ৭৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে ৩৫১ রানে নিয়ে যান। এরপর, বল হাতে নিয়ে তিনটি উইকেট নিয়ে ঐ সময়ের অন্যতম সেরা ওডিআই দলকে পরাজিত করতে ভূমিকা রাখেন।
১৮ মে, ২০০৭ তারিখে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনরূপে চাপের মুখোমুখি হননি। ২৩৬ রানকে সামনে রেখে দলের সংগ্রহ ৩১.৩ ওভারে ১৩৭/৫ থাকা অবস্থায় মাঠে নেমে শ্রীলঙ্কান স্পিনারদেরকে এক হাত নিয়ে নেন। পরবর্তী ১০ ওভারেই খেলা শেষ করে দেন। আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। ওডিআইয়ে নিজস্ব ষোড়শ ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। ৩৪ বল থেকে ৭৩ রান আদায় করেন। ঐ ইনিংসে আটটি চার ও চারটি ছক্কা ছিল।
সীমিত-ওভারের অন্যতম সংস্করণ টি২০তেও খুব দ্রুত নিজেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেরা খেলোয়াড়ের আসনে নিয়ে যান। ২০০৭ সালের উদ্বোধনী আসরের চূড়ান্ত খেলায় অংশ নেন। সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ পুরস্কারে ভূষিত হন। প্রায় ২০০ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেন এবং ওভারপ্রতি ৬.৭১ রান খরচ করে ১২ উইকেট দখল করেছিলেন। তবে, চূড়ান্ত খেলায় প্রথম বলেই শূন্য রানে বিদেয় নিলে ভারতের কাছে তাঁর দল ৫ রানে পরাজিত হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ তারিখে দর্শকের সাথে দূর্ব্যবহারের অভিযোগে দুই খেলায় নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন। ফলে, এর বিরূপ প্রভাব বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সাথে যুক্ত হয়। পাকিস্তান দলকে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদেয় নিতে হয়েছিল।
জুন, ২০০৯ সালের পরবর্তী আসরেও দলকে জয় এনে দেন। এ পর্যায়ে অধিনায়ক হিসেবে চূড়ান্ত খেলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে দুইটি অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে অনেকটা ধৈর্য্য সহকারে ৩৪ বলে ৫১ রান তোলার পর ২/১৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান।
২২ এপ্রিল, ২০০৯ তারিখে স্পিন বোলিং করে বড় ধরনের ফলাফল করেন। বিরূপ পরিবেশে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খুব কমই সফল হয়েছিলেন। এদিন ৬/৩৮ বোলিং বিশ্লেষণ গড়ে প্রতিপক্ষীয় দলকে ৯৫/১ থেকে ১৬৮ রানে গুটিয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখেন। ফলশ্রুতিতে, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলের বিপক্ষে ওডিআইয়ে পাকিস্তানকে দূর্লভ জয় এনে দেন।
৩১ জানুয়ারি, ২০১০ তারিখে ক্রিকেট মাঠে সর্বাপেক্ষা ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে নিজেকে জড়ান। মাঠে স্থাপন করা ক্যামেরাগুলোর সামনে বলে কামড় বসান। অস্ট্রেলিয়ায় দুঃসহ স্মৃতিতে ঘেরা সফরে চূড়ান্ত ওডিআইয়ের শেষদিকে এ ঘটনা ঘটান। জেরার মুখোমুখি হন ও দুই খেলা থেকে তাঁকে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে পিসিবি ৩ মিলিয়ন রূপী জরিমানা আরোপ করে ও ছয় মাসের নজরদারীতে রাখে।
২০১০ সালে পাকিস্তানের তিন ধরনের ক্রিকেটেই অধিনায়ক হিসেবে তাঁকে মনোনীত করা হয়। এ দায়িত্ব পালনের শুরুতেই সফলতার সাথে বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতার সেমি-ফাইনালে পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দেন।
দলীয় ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা আনয়ণের প্রেক্ষিতে ১৯ মে, ২০১১ তারিখে পাকিস্তানের অধিনায়কত্ব থেকে বাদ দেয়া হয় ও মিসবাহ-উল-হককে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এ পর্যায়ে ৩৪টি ওডিআইয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ১৮টিতে জয় ও ১৫টিতে পরাজয়ের সাথে জড়িত রাখেন। বোর্ডের সভাপতি ইজাজ বাট মন্তব্য করেন যে, এ সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। একদিনের অধিনায়কত্ব থেকে বরখাস্ত করা হলে দশ দিন পর ৩০ মে, ২০১১ তারিখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। কেবলমাত্র নতুন বোর্ড দায়িত্ব লাভের পরপরই খেলার জগতে ফিরে আসার কথা জানান। তবে, কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনা হয়। মাঠ ও মাঠের বাইরে নাটকীয়তাপূর্ণ আচরণের কারণে পাকিস্তানী ক্রিকেট অঙ্গনে বন্ধু ও সমর্থক – উভয়ের মাঝেই বেশ আলোচনার খোড়াক যোগান। বীরবেশে দলে প্রত্যাবর্তন করলেও প্রত্যেকবারই তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের স্বর্ণালী দিনগুলো থেকে বেশ দূরে সড়ে গিয়েছিলেন। তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে পরিপক্কতার অভাব লক্ষ্য করা যায় ও নেতৃত্বের বিষয়টি অনেকাংশেই পুরস্কারের শামিল ছিল।
২০১০ সালে দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে পাকিস্তানী দলকে নিয়ে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৩ জুলাই, ২০১০ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ০/২৫ ও ১/৪৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ৩১ ও ২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়া ১৫০ রানে জয় পেয়ে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০১৪-১৫ মৌসুমে তেমন ভালোমানের খেলা উপহার দিতে পারেননি। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শেষে একদিনের আন্তর্জাতিক থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এছাড়াও, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। তন্মধ্যে, ২০১১ সালের বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিপক্ষে ৫/১৬ বোলিং বিশ্লেষণ গড়েন। সব মিলিয়ে ৩৯৮টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়ে ৩৯৫টি উইকেট দখল করেছেন। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ৭/১২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান।