সেনুরান মুতুস্বামী
২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪ তারিখে ডারবানে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। বামহাতে মাঝারিসারির নিচেরদিকে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
‘সেন’ ডাকনামে পরিচিতি পেয়েছেন। ডারবানভিত্তিক ক্লিফটনে অধ্যয়ন করেছেন। প্রথম গ্রেড থেকেই উচ্চ সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ লাভ করতে থাকেন। প্রাদেশিক পর্যায়ের অনূর্ধ্ব-১১ থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পক্ষে খেলেছেন। তবে, ক্রিকেট খেলাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চাননি। গণমাধ্যম ও বিপণন বিষয়ে ডিগ্রী লাভ করেন। তবে, ক্রিকেটে অন্য পরিকল্পনা ছিল। বলকে খুব বেশী বাঁকাতে না পারলেও ধারাবাহিকতা রক্ষাসহ অপূর্ব শিল্পসত্ত্বা প্রদর্শনে সফলতা লাভ করছেন।
২০১২-১৩ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ডলফিন্স ও কোয়াজুলু-নাটালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত কোয়াজুলু-নাটাল বনাম নর্থ ওয়েস্টের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান।
পরবর্তী মৌসুমে ডলফিন্স দলে যোগ দেন। ২০১৬-১৭ মৌসুমের সানফয়েল সিরিজে স্বর্ণালী মৌসুম অতিবাহিত করেন। কুমার সাঙ্গাকারা’র ব্যাটিংয়ে উজ্জ্বীবিত হয়ে নাইটসের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৮১ রান তুলেন। এছাড়াও, ২৭ উইকেট দখল করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। এরপর থেকে কয়েক মৌসুম ডলফিন্সের লাল-বলের ক্রিকেটে অন্যতম অসাধারণ খেলোয়াড় হিসেবে তুলে ধরেন। ২৬.৫৪ গড়ে ৩৩ উইকেট নিয়ে দলের দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেট সংগ্রাহকে পরিণত হন। এ পর্যায়ে ডলফিন্স থেকে বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের সম্মাননা পান। ঘরোয়া টি২০ প্রতিযোগিতায় ডলফিন্সের পক্ষে খেলার পর গ্লোবাল টি২০ লীগের উদ্বোধনী আসরে কেপটাউন নাইট রাইডার্সের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন।
২০১৮ সালে ভারতে দক্ষিণ আফ্রিকার বার্ষিক স্পিন প্রশিক্ষণের জন্যে অন্তর্ভুক্ত হন। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর, ২০১৯ সালে জাতীয় দলের সফরকে ঘিরে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘এ’ দলের সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। বৈচিত্র্যমূখী প্রতিভার অধিকারী ও দলের ভারসাম্য রক্ষায় নিজেকে মেলে ধরতে অগ্রসর হন। ফলশ্রুতিতে, ভারতের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট দলে ঠাঁই দেয়া হয়।
২০১৯ সাল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আই খেলছেন। ঐ বছর দুইটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২০১৯-২০ মৌসুমে দলের সাথে ভারত গমন করেন। ২ অক্টোবর, ২০১৯ তারিখে বিশাখাপত্তনমে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি তাঁর প্রথম টেস্ট শিকারে পরিণত হন। এছাড়াও, ৩৩ ও অপরাজিত ৪৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।
২০২২-২৩ মৌসুমে নিজ দেশে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ক্রেগ ব্রাদওয়েটের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩ ও ৪ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এইডেন মার্করামের অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৮৭ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০২৪-২৫ মৌসুমে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে এইডেন মার্করামের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে বাংলাদেশ গমন করেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৪৯ রান অতিক্রম করেন। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৬৮* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এছাড়াও, বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে জাকির হাসানকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ১/১০। খেলায় তিনি ১/১০ ও ৪/৪৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। টনি ডি জর্জি’র অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২৭৩ রানে পরাজয়বরণ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
২০২৫ সালের আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের চূড়ান্ত খেলায় অংশ নিতে তেম্বা বাভুমা’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। তবে, ১১ জুন, ২০২৫ তারিখ থেকে লর্ডসে শুরু হওয়া অপর প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার জন্যে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম একাদশে তাঁর ঠাঁই হয়নি।
২০২৫ সালে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর তেম্বা বাভুমা’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে সফরে যান। ৬ জুলাই, ২০২৫ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা উইয়ান মুল্ডারের (৩৬৭*) অপরাজিত ত্রি-শতকের কল্যাণে দলের একমাত্র ইনিংসে তাঁকে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি। বল হাতে নিয়ে তিনি ১/৫৯ ও ৩/৭৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তিনদিনেই সফরকারীরা ইনিংস ও ২৩৬ রানে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।