| |

সরফরাজ নওয়াজ

১ ডিসেম্বর, ১৯৪৮ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহকারী ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার ও রাজনীতিবিদ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

মোজংয়ে শৈশবকাল অতিবাহিত করেন ও ১৯৬২ সালে সেখানকার সরকারী বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন লাভ করেন। মেধাবী ছাত্র না হলে দ্বিতীয় বিভাগের উপযোগী নম্বর পান। পিতা মালিক মোহাম্মদ নওয়াজ ঠিকাদার ছিলেন ও অবকাঠামো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। ১৯৬৫ সালে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানটিতে ঠিকাদার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। লাহোরভিত্তিক গভর্নমেন্ট কলেজ ইউনিভার্সিটির ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের মাধ্যমে প্রথম অবকাঠামো প্রকল্পে জড়িত হন। তবে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে প্রকল্পটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়। এরফলে, তাঁর প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিন্তু, ব্যক্তিগতভাবে ও পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্যে তা আশীর্বাদ বয়ে নিয়ে আসে। ঐ স্টেডিয়ামে বালকেরা খেলতে থাকলে প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনি তাদেরকে নিষেধ করেন। উল্টো তারা তাঁকে খেলায় অনুপ্রাণিত করে।

খেলার প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি হলে মোজং লিঙ্ক ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দেন। খুব দ্রুত স্থানীয় ক্রিকেট জগতে প্রভাব ফেলার পর গভর্নমেন্ট কলেজে ভর্তি হন। মহাবিদ্যালয় দলেও এ ধারা অব্যাহত রাখেন। অসামান্য ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে গভর্নমেন্ট কলেজসহ পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় দলেরও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তাঁর প্রথম পরামর্শক হিসেবে লাহোরভিত্তিক ফ্রেন্ডস ক্রিকেট ক্লাবের আব্দুল রব ছিলেন। পরবর্তীতে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া পরিচালক ইকবাল বাট তাঁকে উৎসাহী করে তুলেন।

১৯৬৭-৬৮ মৌসুম থেকে ১৯৮৪-৮৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে লাহোর, পাকিস্তান রেলওয়েজ, পাঞ্জাব, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেড এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নর্দাম্পটনশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৬৭ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। এরপর থেকে আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরের মৌসুমে লাহোর দলের সদস্য থেকে কায়েদ-ই-আজম ট্রফিতে করাচীকে পরাভূত করে নয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো শিরোপা বিজয়ে নেতৃত্ব দেন।

বিশাল দেহের অধিকারী ছিলেন। ইমরান খানের সহযোদ্ধা থেকে একসাথে অধিকাংশ খেলায় অংশ নিয়েছেন ও প্রতিশ্রুতিশীল জুটি গড়েছিলেন। রিভার্স-সুইংয়ের অন্যতম পথিকৃৎ। এরফলে, নিজের সেরা দিনগুলোয় ব্যাটসম্যানেরা কোন হদিশ খুঁজে পেতেন না। উইকেটে মনেপ্রাণে বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। ভারত ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট সিরিজ বিজয়ে স্মরণীয় ভূমিকা রেখেছিলেন।

এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি জানান যে, নিরীক্ষাকালে ও ভুলবশতঃ বলকে সুইং করানোর কৌশল শিখেছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে মূলত ইন-কাটার সহযোগে বোলিং করতেন। জনৈক বন্ধুর পরামর্শক্রমে কেবলমাত্র একদিকে চকচকে ভাব আনেন ও বলকে উভয় দিক দিয়েই ঘুরাতে পারতেন।

সকল ধরনের পরিবেশে নতুন, অর্ধ-নতুন ও পুরনো বলে রিভার্স সুইং করার কৌশল আবিস্কার করেন। একদিন আমি খুবই পুরনো বলে চকচকে ভাব আনি ও সুইং করতে সমর্থ হই। বলের উভয় দিকেই খসখসে হলে আমি কেবলমাত্র একদিনে চকচকে ভাব আনি ও সুইং করি যা করা সম্ভব নয়। নতুন ধরনের কৌশল মোজং লিঙ্ক ক্রিকেট ক্লাবে প্রয়োগ করেন।

১৯৬৯ থেকে ১৯৮৪ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ৫৫ টেস্ট ও ৪৫টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। মাত্র পাঁচটি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নেয়ার পর টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে তাঁকে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে নিজ দেশে কলিন কাউড্রে’র নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ৬ মার্চ, ১৯৬৯ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় ৩৪ ওভার বোলিং করলেও উইকেট শূন্য অবস্থায় মাঠ ত্যাগ করেন। ঐ খেলাটি মাত্র দুইদিন আয়োজন করা সম্ভব হয়েছিল। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৭৪ সালে পাকিস্তান দল ইংল্যান্ড সফর করে। এর পরপরই দলটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে কয়েকটি অনানুষ্ঠানিক প্রীতিখেলায় অংশ নেয়। এ পর্যায়ে ইমরান খান তাঁর নিয়মিত বোলিং অংশীদার হিসেবে ছিলেন। কেবলমাত্র তাঁর সাথেই রিভার্স সুইং বোলিংয়ের রহস্য জানান। খুব ভালোভাবে তাঁকে শেখান। পরবর্তীকালে ইমরান খান এ কৌশল ওয়াসিম আকরামওয়াকার ইউনুসের মাঝে ছড়িয়ে দেন।

১৯৭৮-৭৯ মৌসুমের মেলবোর্ন টেস্টে সেরা বোলিং নৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হন। তবে, পাকিস্তানে নিষ্প্রাণ পিচ থেকে খুব কমই সফলতা পেয়েছেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর সংসদ সদস্য ও ক্রিকেট ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। খেলা গড়াপেটার বিপক্ষে জোড়ালো অবস্থান বজায় রাখেন।

ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার হিসেবে নিজের পরিচিতি ঘটাতে সোচ্চার হন। অধিকাংশ সময়ই ব্যাটসম্যানদের সমীহের পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। বোলিংয়ে সর্বদাই নিখুঁতভাব বজায় রাখতে সচেষ্ট ছিলেন। নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বলকে সপাটে আঘাত করতে সিদ্ধহস্তের অধিকারী ছিলেন। ফলশ্রুতিতে, কার্যকর অল-রাউন্ডার হিসেবে পরিচিতি ঘটান। তৃতীয় পাকিস্তানী হিসেবে টেস্টে ১০০ উইকেট ও ১০০০ রান তুলেছেন। সব মিলিয়ে টেস্টগুলো থেকে ১৭৭ ও ওডিআইয়ে ৬৩ উইকেট দখল করেছিলেন।

নিচেরসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রায়শঃই ব্যাট হাতে সাফল্য পেতেন ও দ্রুতলয়ে রান সংগ্রহে তৎপর হতেন। দুই মেয়াদে নর্দাম্পটনশায়ারের পক্ষে খেলেছেন। টেস্ট অভিষেকের পূর্বেই নর্দান্টস দলে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। ১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে পাকিস্তানে সফররত মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের সদস্য ও নর্দাম্পটনশায়ারের অধিনায়ক রজার প্রিডো লাহোরে প্রথম খেলার পূর্বে অনুশীলনীতে বোলার হিসেবে তাঁর অনবদ্য বোলিংয়ে মোহিত হন। ‘বলকে তুমি ইচ্ছে করলে উভয় দিকেই সুইং করাতে পারো’ বলেন ও নর্দাম্পটনশায়ারের পক্ষে খেলার জন্যে প্রস্তাবনা দেন।

ইংরেজ কাউন্টি দলটিতে সেরা সময় অতিবাহিত করেন। ১৯৭০ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে নর্দান্টসের পক্ষে নিয়মিতভাবে খেলেন ও ৬০ উইকেট দখল করেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত দলটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৬ সালে সেরা মৌসুম কাটান। জিলেট কাপের শিরোপা জয়ের পাশাপাশি কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। ১৯৮০ সালে দলটি বেনসন এন্ড হেজেস কাপের শিরোপা প্রথমবারের মতো অর্জন করে। চূড়ান্ত খেলায় তিনি ১১ ওভারে ৩/২৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন।

১৯৭৪ সালে দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। এ সফরে দলটি কোন খেলায় পরাজিত হয়নি। ফলশ্রুতিতে, ১৯৪৮ সালে ডন ব্র্যাডম্যানের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া দলের ইংল্যান্ড সফরে অপরাজিত থাকার সুবাদে দ্বিতীয় দল হিসেবে ‘অপরাজেয় দলের’ মর্যাদা পায়।

অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত পেস বোলার জেফ থমসনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। একবার ১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডে সফররত অস্ট্রেলীয় একাদশের বিপক্ষে নর্দান্টসের সদস্যরূপে খেলার সুযোগ পান। হেলমেটবিহীন অবস্থায় তাঁকে থমসন বাউন্সার মারেন। রাগান্বিত অবস্থায় তিনি বলেন যে, স্থানীয় সমাধিক্ষেত্রে একটি সমাধি শূন্য রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া দল ব্যাটিংয়ে নামলে তিনি থমসনকে বাউন্সারে ফিরিয়ে দেন।

১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে পাকিস্তানের অপরাপর নিকটতম সদস্যের সাথে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা লাভের তুলনায় আট বছরের জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড় ছিলেন। নৈশভোজনের খাদ্য তালিকায় ‘মাউন্টেন চিকেন’ ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের প্রথম সফরে আসা জাভেদ মিয়াঁদাদ ও হারুন রশীদ খেতে পছন্দ করলেও তিনি অন্য কিছু খান। ভোজন শেষে তিনি বলেন যে, ‘তোমরা এইমাত্র যা খেয়েছ তা হচ্ছে ব্যাঙ।’ খাদ্য পরিবেশনকারীর কাছ থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত হলে তাঁরা অস্বস্তিবোধ করতে থাকেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ধারাবাহিক ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সহঃঅধিনায়ক হিসেবে তাঁকে মনোনীত করা হয়। তিনি ওয়াসিম বারি’র স্থলাভিষিক্ত হন। তবে, বেতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পাকিস্তানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সিরিজ চলাকালীন দ্বিতীয় টেস্টের পূর্বে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। এ পর্যায়ে কেরি প্যাকারের নেতৃত্বাধীন বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেট চলমান থাকায় ধারনা করা হয়েছিল যে তিনি হয়তোবা বিদ্রোহী দলে যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু, তাঁকে লন্ডনে দেখা যায় ও বড়দিনের উৎসবে যোগ দেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান সিরিজে তৃতীয় টেস্টের পূর্বে দেশে ফিরে আসেন। এ পর্যায়ে তিনি সহঃঅধিনায়ক হিসেবে খেললেও স্বেচ্ছায় অধিনায়কত্ব লাভের প্রতি আগ্রহী হননি।

দারুণ বোলিং ভঙ্গীমা প্রদর্শন করতেন। বলকে উভয় দিক দিয়ে সিম ও কার্যকরী ভাব নিয়ে আসতেন। জেফ থমসন ও জোয়েল গার্নারের ন্যায় ফাস্ট বোলারদের সাথে তিনিও উপর্যুপরী সুইং ও বাউন্সার ছুঁড়তেন। বলা হয়ে থাকে যে, ‘ম্যাকো’ অর্থাৎ ম্যালকম মার্শাল যদি যোদ্ধা হন, তাহলে তিনি যাদুকর ছিলেন।

১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে মেলবোর্নে সিরিজের প্রথম টেস্টে ব্যক্তিগত সেরা ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছিলেন। ১৫ মার্চ, ১৯৭৯ তারিখে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় বোলিং নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে এক পর্যায়ে ৩৩ বল থেকে মাত্র এক রান খরচায় সাতজন ব্যাটসম্যানকে বিদেয় করে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ে ধ্বস নামান। কেরি প্যাকারের জোড়ালো ভূমিকার কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অস্ট্রেলিয়া দল তৎকালীন ক্রিকেটের ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৯২ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রসর হয়।

চূড়ান্ত দিনের চা-বিরতির পর দলের সংগ্রহ ৩০৫/৩ ছিল ও জয় থেকে ৭৭ রান দূরে ছিল অস্ট্রেলিয়া দল। অ্যালান বর্ডার ও কিম হিউজ ১৭৭ রানের জুটি গড়েন। অজি দলকে ৩১০ রানে গুটিয়ে দেন ও দলকে ৭১ রানে জয়লাভে বিরাট ভূমিকা পালন করেন। এ সময়ে অধিনায়ক মুশতাক মোহাম্মদকে বলেন যে, তাঁরা সময়ের অপচয়ের দিকে ধাবিত হবেন। বাধ্যতামূলক ওভার শুরুর পূর্বে পরিকল্পনামাফিক তিনি স্বাভাবিক দূরত্ব নিয়ে বোলিং কর্মে অগ্রসর হন। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া অ্যালান বর্ডারকে বারো কদম দূর থেকে স্বল্প দূরত্ব নিয়ে ১০৫ রানে বিদেয় করেন। শেষ ব্যাটসম্যান অ্যালেন হার্স্টকে বিদেয়ের মাধ্যমে এক ঘণ্টার যাদুকরী খেলা উপহার দেন। পুরনো বলে সুইং আনয়ণে নতুন ব্যাটসম্যানদেরকে নাকানি-চুবানি খাওয়ান। ঐ ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৯/৮৬ দাঁড় করান। খেলার প্রথম ইনিংসে ২/৩৯ লাভ করেন।

১৯৭৯ সালের ঐ সফরে হিলড্রিচ ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। পার্থে অনুষ্ঠিত পরের টেস্টে অজি ব্যাটসম্যান অ্যান্ড্রু হিলড্রিচের বিপক্ষে বলে হাত দেয়ার প্রেক্ষিতে বিতর্কিতভাবে বিদেয় করেন। বলকে হাতে নিয়ে তাঁকে ফেরৎ দিলে আউটের আবেদন আম্পায়ার সাড়া দেন। এরফলে, একমাত্র স্ট্রাইকবিহীন ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁকে বিদেয় নিতে হয়েছিল। নিজ দেশে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দল থেকে স্বীয় নাম প্রতাহার করেও ক্ষাণিকটা উত্তাপ ছড়ান। তিনবার সিরিজে ৪০-এর অধিক গড়ে রান পেয়েছেন।

১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে নিজ দেশে ডেভিড গাওয়ারের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ১৯ মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৪/৪৯ ও ১/১১২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৯০ ও ১০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, প্রথম ইনিংসে ১০০০ রান/১০০ উইকেট লাভের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী হন। এরফলে, ইমরান খান ও ইন্তিখাব আলমের পর তৃতীয় পাকিস্তানী হিসেবে এ সাফল্য পান। তাঁর অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

সর্বদাই ক্রিকেটে খেলা গড়াপেটার বিপক্ষে অবস্থান করেছেন। অন্যতম প্রধান ব্যক্তি হিসেবে পাতানো খেলার বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে থাকেন। পাকিস্তানে বিচারপতি কাইয়ুম কমিশনে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে স্বাক্ষ্য দেন। পাতানো খেলা ও জুয়ার বিষয়ে তাঁর এ অবস্থানের ফলে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন। সেপ্টেম্বর, ২০১০ সালে ইসলামাবাদ পার্কে শরীরচর্চাকালীন কয়েকজন সশস্ত্র অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি হুমকি দেয়। এরফলে, স্থানীয় পুলিশ কেন্দ্রে এফআইআর দাখিল করেন।

১৯৭৯-৮০ মৌসুমে ভারত সফরে পাকিস্তান দল থেকে বাদ পড়েন মূলতঃ নিয়মিত অধিনায়ক আসিফ ইকবালের সাথে মতবিরোধের জের ধরে। কয়েক বছর পর তিনি দাবী করেন যে, ঐ সিরিজে আসিফ ইকবাল ও সুনীল গাভাস্কার পাতানো খেলায় জড়িত ছিলেন। সুনীল গাভাস্কার তাঁর এ ধরনের বক্তব্যকে ভিত্তিহীন বলে জানান।

জ্যামাইকায় বব উলমারের মৃত্যুবরণের সংবাদ প্রকাশিত হলে ময়না তদন্তের পূর্বেই তিনি মন্তব্য করেন যে, ক্রিকেটে দূর্নীতির কারণে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও, তিনি দাবী করেন যে, বব উলমার ও ইনজামাম-উল-হক জুয়াড়ীদের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছিলেন এবং ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে পাকিস্তানের পরাজয় পূর্ব নির্ধারিত ছিল। ১৮ মার্চ, ২০০৭ তারিখে কিংস্টনের হোটেল কক্ষে বব উলমারের মৃত্যুর সাথে খেলা গড়াপেটার সম্পর্ক রয়েছে ও জুয়াড়িদের অনুসন্ধানে তাঁর সহায়তার আশ্বাস দেন। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড পরবর্তীকালে বব উলমারের মৃত্যুর সাথে খেলার সম্পর্কহীনতার কথা ঘোষণা করে, তাঁর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ও পাকিস্তানী দলের খেলা যথাযথ ছিল বলে দাবী করে।

বেশ কয়েকবার ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেছেন ও প্রত্যেকবারই দলে ফিরে এসেছেন। অতঃপর, ১৯৮৪ সালে চূড়ান্ত অবসর গ্রহণ করেন। এরফলে, পুণঃপুণঃ অবসর গ্রহণের প্রথার সূত্রপাত তাঁর মাধ্যমে শুরু হয়। অবসর গ্রহণ পরবর্তীকালে লাহোরভিত্তিক ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমিতে ফাস্ট-বোলিং পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। ২০০৬ সালে রঞ্জী ট্রফি মৌসুমকে ঘিরে দিল্লি দলের এক সপ্তাহব্যাপী ফাস্ট বোলিং ক্লিনিক পরিচালনা করেছিলেন।

ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর পাকিস্তানী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮৫ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন। নিজ সংসদীয় এলাকায় লাহোর থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন ও তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে পিপিপিতে যোগ দেন ও ১৯৮৮ সালে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সফলভাবে নির্বাচিত হন তবে পুণঃগণনায় প্রায় ৪০০ ভোটে পরাজিত হন। ২০১১ সালে এমকিউএম দলের সাথে যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টো সরকারের ক্রীড়াবিষয়ক পরামর্শকের দায়িত্বে ছিলেন। বিভিন্ন জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার সাথে বিবাদমান বিষয়গুলো সমঝোতার মাধ্যমে শেষ করতে প্রয়াস চালান ও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সফল হন। ১৯৭৪ সালে ইংল্যান্ডে অবস্থানকালে প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাবনা পান। তবে, তিনি এ প্রস্তাব নাকচ করে দেন। ১৯৭০-এর দশকের শেষদিকে নিকটতম বন্ধু ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক ইউনুস মালিক অভিনেত্রী রাণী’র সাথে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলে আবারও না করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ১৯৮২ সালে মোজংয়ের বাসিন্দা ও উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাণী’র সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। বিবাহকালীন রাণী ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন ও তিনি তা জানতেন। প্রায় এক দশক পর তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে। বিয়ের পর আর কোন নতুন চলচ্চিত্রে অংশ নেননি।

Similar Posts

  • | |

    আর্নি হেইস

    ৬ নভেম্বর, ১৮৭৬ তারিখে লন্ডনের পেকহাম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। দলে মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। স্লিপ অঞ্চলে দূর্দান্ত ফিল্ডিং করতেন। ঘরোয়া পর্যায়ের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে লিচেস্টারশায়ার ও সারে দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, লন্ডন কাউন্টির পক্ষে খেলেছেন। নিজের দিনগুলোয়…

  • |

    ববি অ্যাবেল

    ৩০ নভেম্বর, ১৮৫৭ তারিখে সারের রদারহিদ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ওভাল মাঠে অনেকগুলো বছর ‘গাভনর’ নামধারী ববি অ্যাবেল দর্শকদের কাছে অতি পরিচিত ছিলেন। শক্তিধর সারে দলের অন্যতম বিশ্বস্ত ব্যাটসম্যানের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ৫…

  • | |

    গর্ডন লেগাট

    ২৭ মে, ১৯২৬ তারিখে ওয়েলিংটনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ১৯৫০-এর দশকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৪৪-৪৫ মৌসুম থেকে ১৯৫৫-৫৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। ১৯৫২-৫৩…

  • |

    জন হজেস

    ১১ আগস্ট, ১৮৫৫ তারিখে লন্ডনের নাইটসব্রিজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। বামহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৮৭০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। বলকে সুইং করাতে পারতেন। এছাড়াও, উচ্চ গতিতে বলে সিম আনয়ণ করতেন। কিন্তু, বলে নিখুঁতভাব বজায় রাখতে পারতেন না। ফলশ্রুতিতে, তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে বিরূপ…

  • | | |

    রুমেশ রত্নায়েকে

    ২ জানুয়ারি, ১৯৬৪ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও রেফারি। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে টেস্ট ও ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮২-৮৩ মৌসুম থেকে ১৯৯৮-৯৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে নন্দেস্ক্রিপ্টস ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৮২…

  • |

    ভিনসেন্ট ট্যানক্রেড

    ৭ জুলাই, ১৮৭৫ তারিখে কেপ প্রভিন্সের পোর্ট এলিজাবেথে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতেন। উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ১৮৯০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৮৯৭-৯৮ মৌসুম থেকে ১৮৯৮-৯৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ১৮৯৮-৯৯ মৌসুমে লর্ড…