১২ জুলাই, ১৯৬৫ তারিখে মহীশূরের মাঙ্গালোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাশাপাশি, উইকেট-রক্ষণের সাথেও নিজেকে জড়িয়েছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
অসীম সময়ের জন্যে অপূর্ব ব্যাটিং কৌশল অবলম্বন করতেন। এমনকি রান সংগ্রহে স্থবিরতা গ্রহণকালেও তাঁর ব্যাটিং দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হতো। কেবলমাত্র ড্রাইভ মারার মধ্যেই তাঁর ব্যাটিং সীমাবদ্ধ ছিল না। ব্যাটের ধারালো অংশের মাধ্যমে নিজের বিশুদ্ধতার অপূর্ব প্রদর্শনী বিকাশমান ছিল। খেলোয়াড়ী জীবন শেষে মাইক্রোফোনে তাঁর কণ্ঠের সজীবতা লক্ষ্য করা যায়।
ব্যাটের পূর্ণাঙ্গ অংশ সামনে এনে রক্ষণাত্মক ধাঁচে খেলার ক্ষেত্রে তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আঠার ন্যায় ক্রিজে অবস্থান করতেন ও সিলি মিড-অফ এলাকায় বলের পর বল পাঠাতেন। স্কোরবোর্ডে কোন কিছু যুক্ত করতে না পারলেও ওভার ব্যয় করতেন। তাঁর এ ধরনের কৌশল গ্রহণ অনেকাংশেই অসীম সময়ের জন্য বহমান থাকতো।
১.৭৮ মিটার উচ্চতার অধিকারী। বিজয় মাঞ্জরেকার ও রেখা মাঞ্জরেকার দম্পতির সন্তান। ১৯৮৪-৮৫ মৌসুম থেকে ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বোম্বের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৯৮৭ থেকে ১৯৯৬ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৩৭ টেস্ট ও ৭৪টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে নিজ দেশে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৫ নভেম্বর, ১৯৮৭ তারিখে দিল্লিতে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। আরশাদ আইয়ুবের সাথে তাঁর একযোগে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। চরম নাটকীয়তায় ভরা ঐ টেস্টে ভিভ রিচার্ডসের দারুণ শতকে ফলাফল চলে আসে ও ৫ উইকেটে জয় তুলে নেয়। সফরকারীরা চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে ৫ রান সংগ্রহ করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ রান তুলে রিটায়ার হার্ট হন। একই সফরের ৫ জানুয়ারি, ১৯৮৮ তারিখে রাজকোটে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন।
১৯৮৯-৯০ মৌসুমে কৃষ শ্রীকান্তের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। পুরো সিরিজে দূর্দান্ত খেলেন। ২৩ নভেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে ফয়সালাবাদে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম অংশ নেন। ৭৬ ও ৮৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।
এরপর, ১ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অপূর্ব খেলেন। একমাত্র ইনিংসে ২১৮ রান সংগ্রহ করেন। টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
নিজের সেরা সময়ে দূর্ভাগ্যজনকভাবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ভারতীয় ক্রিকেটকে সঙ্কটে ফেলেন। শিয়ালকোটে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ইমরান খানের দেরীতে আসা ইন-সুইং প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হলে লেগ বিফোরের শিকারে পরিণত হন। এ সময়ে ধারাভাষ্যকার মন্তব্য করেন যে, ‘এটিই সিরিজের সর্বাপেক্ষা সেরা বল ছিল।’
ঐ সিরিজে এক শতক, একটি দ্বি-শতক ও দুইটি অর্ধ-শতক সহযোগে ৫৬৯ রান তুলেন। প্রথম তিন টেস্ট ড্র হলে এ খেলাটি গুরুত্বতার বিচারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ পর্যায়ে বিশ্বাস করা হতো যে, যদি তিনি বিদেয় নেন, তাহলে ব্যাটিংয়ে ধ্বস নামবে। তবে তা হয়নি। ১৬-বছরের বালক শচীন তেন্ডুলকর তাঁর অভিষেক খেলায় রক্তে ভেজা শার্ট ও প্যাড নিয়ে পেশাদারীসুলভ ‘মে খেলেগা’ বলেছিলেন।
তবে, ঐ সিরিজেই প্রথমবারের মতো নিজের প্রতিভা বিকাশে সোচ্চার ছিলেন। অনেক ক্রীড়ামোদীই এ দশকে তাঁর চমৎকার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে আহ্লাদিত হন। ১৯৯০-এর দশকেও ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের খেলার ধারা অব্যাহত রাখেন। ঐ সিরিজের পুরোটা সময়ই ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, আব্দুল কাদির ও ওয়াকার ইউনুসের ন্যায় তারকা বোলারদের বিপক্ষে বল মোকাবেলা করতে হয়েছিল।
পরবর্তী ছয় বছর অপরিসীম সম্ভাবনাময় খেলা উপহার দেন। অপূর্ব কৌশল গ্রহণে সকলকে বিমোহিত করেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলে খেলায়াড়ী জীবনে দারুণভাবে সফল হন। প্রথম নয় টেস্ট থেকে ৬০.৩০ গড়ে ৭৮৪ রান তুলেছিলেন। তাঁর খেলার ধরন, দৃষ্টিভঙ্গী ও ব্যাটিং পরিসংখ্যান অনেকাংশেই অবসর নেয়া সুনীল গাভাস্কারের অনুরূপ ছিল। কিন্তু, পরবর্তী ২৮ টেস্ট থেকে ২৯.৯৭ গড়ে মাত্র ১২৫৯ রান তুলতে সমর্থ হন। এ পর্যায়ে তিনি মাত্র একটি শতরানের ইনিংস খেলতে পেরেছিলেন। ১৯৯২ সালে তাঁর এ ইনিংসের কল্যাণে ভারত দল পরাজয় থেকে নিষ্কৃতি পেলেও জিম্বাবুয়ের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁকে বেশ ম্রিয়মান দেখাচ্ছিল। এ শতরানটি টেস্টের ইতিহাসের চতুর্থ মন্থরতম ছিল। এছাড়াও, ব্যাট হাতে এটি তাঁর চতুর্থ ও সর্বশেষ শতক ছিল।
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। মার্চ, ১৯৭০ সালের পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটি প্রথম টেস্ট খেলা ছিল। ১৩ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ব্রায়ান ম্যাকমিলানের বলে এলবিডব্লিতে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। প্রবীণ আম্রে’র অসাধারণ শতকে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ২ জানুয়ারি, ১৯৯৩ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। প্রথম ইনিংসে ২৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৪৬ ও ২* রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। জবাগল শ্রীনাথের অসাধারণ বোলিংশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে নিজ দেশে হান্সি ক্রোনিয়ে’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ৩১ বছর বয়সে ২০ নভেম্বর, ১৯৯৬ তারিখে আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ৩৪ ও ৫ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। জবাগল শ্রীনাথের স্মরণীয় বোলিং সাফল্যে ৬৪ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্ট পরিণত হয়।
টেস্টে তিনি ৩৭.১৪ গড়ে রান পেলেও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৫৫.১৪ গড়ে রান পেয়েছেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ধারাভাষ্যকর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ক্রিকেটের বাইরে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে। সংবাদপত্রে প্রতিবেদন লেখেন।
