১৮ আগস্ট, ১৯৫৬ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, রেফারি, প্রশাসক ও কোচ। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
১৯৭৫-৭৬ মৌসুম থেকে ১৯৯২-৯৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মধ্যপ্রদেশ ও বোম্বের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সময়ের চেয়েও নিজেকে এগিয়ে রেখেছিলেন ও তারকা খ্যাতি লাভ করেন। দলের ব্যাটিং বিভাগে ভিত্তি গড়তে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। বোম্বের প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান হিসেবে আকর্ষণীয় স্ট্রোক খেলতেন ও বড় ধরনের ছক্কা হাঁকাতে পারতেন। এছাড়াও, সুদর্শন হবার সুবাদে আবেদনময় পরিবেশের সৃষ্টি করেছেন।
১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ২৯ টেস্ট ও ৪৫টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭৯-৮০ মৌসুমে নিজ দেশে আসিফ ইকবালের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৫ জানুয়ারি, ১৯৮০ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। একবার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ১৫ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলায় স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয়লাভ করে ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৮০-৮১ মৌসুমে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফর করেন। তাৎক্ষণিক সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। এ সফরেই ৬ ডিসেম্বর, ১৯৮০ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন। সিডনিতে রডনি হগের বাউন্সারে গালে চোট পান। তাসত্ত্বেও দর্শনীয় ভঙ্গীমায় খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। ৬৫ রানে থাকাকালে লেন পাস্কো’র শর্ট বলে কানের নিম্নাংশে লাগলে তিনি মাটিতে পড়ে যান ও রিটায়ার হার্ট হতে হয়। অ্যাডিলেডে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। পাল্টা আক্রমণ করে ১৭৪ রান তুলে নেন।
১৯৮০-৮১ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন ও ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৫১ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। বল হাতে নিয়ে ২/৪০ ও ১/১২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এরপর, ব্যাট হাতে ৬৪ ও ৪২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, স্বাগতিক দলের ৬২ রানের বিজয় রথকে আটকাতে পারেননি। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। জিওফ হাওয়ার্থের (১৩৭*) সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
ফলশ্রুতিতে, তাৎক্ষণিকভাবে খ্যাতির শিখরে পৌঁছেন। এ পর্যায়ে কোমল পানীয় ও অন্যান্য বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনে অংশ নিতে থাকেন। কেবলমাত্র সুনীল গাভাস্কার তাঁর চেয়ে এগিয়েছিলেন। তবে, পরবর্তী ১৪ ইনিংস থেকে মাত্র দুইবার অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। এভাবেই তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে উত্থান-পতনের যাত্রা শুরু হতে থাকে।
দল থেকে বাদ পড়ার পর ১৯৮২ সালে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৪ জুন, ১৯৮২ তারিখে ম্যানচেস্টারে ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। এক ঘণ্টায় কপিল দেবের সাথে জুটি গড়ে ৯৬ রান তুলেন ও নিজে ১২৯ রানে অপরাজিত থাকেন। ফলো-অনের কবল থেকে রক্ষা করার এক পর্যায়ে বব উইলিসের এক ওভারে ৪, ৪, ৪ (নো-বল), ০, ৪, ৪, ৪ রান তুলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮২-৮৩ মৌসুমে নিজ দেশে বান্দুলা বর্ণাপুরা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভারতের ইতিহাসের প্রথম টেস্টে আরেকটি শতরানের ইনিংস খেলার পর আবারও একগুচ্ছ নিচু রান সংগ্রহ করেন। ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৮২ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। এ টেস্টে অসাধারণ খেলেছিলেন। ০/১৩ ও ৩/১৪৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ১১৪* ও ৪৬ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, দিলীপ মেন্ডিসের জোড়া শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।
১৯৮৩ সালের প্রুডেন্সিয়াল বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বীরোচিত ভূমিকা রাখেন। বিশেষতঃ সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মনোরম অর্ধ-শতরান করেছিলেন। আবারও তাঁর ছন্দপতন ঘটে। নিজ দেশে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। এরফলে, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন ও জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে। খুব শীঘ্রই স্বীয় আত্মজীবনী ‘স্যান্ডি স্টর্ম’ প্রকাশ করেন। পরের বছর ফয়সালাবাদে ১২৭ রানের নিজস্ব চতুর্থ ও শেষ শতক হাঁকান।
১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে নিজ দেশে ডেভিড গাওয়ারের নেতৃত্বাধীন সফররত ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ১২ ডিসেম্বর, ১৯৮৪ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অস্থির প্রকৃতির সন্দীপ পাতিলের খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। চূড়ান্ত দিনে ক্রিজে থাকাকালে ৪১ রান নিয়ে রবি শাস্ত্রী’র সাথে জুটি গড়েন। ফিল এডমন্ডসের বলে মাঠের বাইরে পাঠানোর চেষ্টাকালে লং অন অঞ্চলে ধরা পড়েন। কপিল দেবও প্যাট পোককের বলে একইভাবে বিদেয় নেন ও ভারত দল ৮ উইকেটে পরাজিত হয়। ফলশ্রুতিতে, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে উভয়কে কলকাতা টেস্টে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখা হয়।
সিরিজের চতুর্থ টেস্টে কপিল দেবকে দলে ফিরে আনা হলেও তাঁকে আর টেস্ট খেলতে দেখা যায়নি। তাঁর পরিবর্তে লিকলিকে, কব্জীর মোচরে ব্যাটিংয়ে পারদর্শী তরুণ মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। পরের বছর বলিউডের চলচ্চিত্রে অভিনেতা হিসেবে নতুন ভূমিকা গ্রহণে তাঁকে দেখা যায়।
১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে যান। মে, ১৯৮৬ সালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কেবলমাত্র কয়েকটি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ২৬ মে, ১৯৮৬ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ওডিআইয়ে অংশ নেন। ঐ বছর পর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে নিজের অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। তবে, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ফিরে এসে মধ্যপ্রদেশ দলের অধিনায়ক মনোনীত হন ও সাদা চাপা শশ্রু নিয়ে পরবর্তী পাঁচ বছর সফলতার স্বাক্ষর রাখেন।
ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচ ও দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি হন। ম্যাচ রেফারি হিসেবে তিনটি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট ও ছয়টি লিস্ট-এ ক্রিকেট খেলা পরিচালনা করেছেন। কেনিয়া দলের কোচের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন ও দলকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার সেমি-ফাইনালে নিয়ে যান। ডেভ হোয়াটমোরের পরিবর্তে ব্যাঙ্গালোরভিত্তিক ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমির পরিচালক হিসেবে মনোনীত হন। এরপর, ২০১২ সালে বিসিসিআইয়ের দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি হন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। দীপা পাতিল নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। চিরাগ নামীয় পুত্র সন্তানের জনক।
