৩০ জুন, ১৯৬৯ তারিখে মাতারায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিকে অংশ নিয়েছিলেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
যখনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রথমবারের মতো পদার্পণ করেছেন, ঠিক তখন থেকেই শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম শক্তিধর খুঁটির ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এ পর্যায়ে নিজের শ্রেণী ও প্রতিভার যথাযথ বিকাশে নিজেকে মেলে ধরেছেন স্ব-মহিমায়। ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম বেপরোয়া উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের পরিচিতি পান। বিস্ময়করভাবে খেলোয়াড়ী জীবনের প্রথম অর্ধ-দশক ব্যাটিংয়ের তুলনায় বোলার হিসেবেই নিজেকে পরিচিতি ঘটাতেন। পরবর্তীতে, পয়েন্ট, কভার অঞ্চলসহ লেগ-সাইডে খবরদারীত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। সকল স্তরের ক্রিকেটেই সমানভাবে রান সংগ্রহে তৎপরতা দেখিয়েছেন। হাত ও চোখের অপূর্ব সম্বন্বয় ঘটিয়ে এ সফলতা পেয়েছিলেন। কিছুটা কঠিন সময় অতিক্রম করেছেন, রান খড়ায়ও ভুগেছেন। তবে, চাতুর্যময় বোলিংয়ে পেসের ভিন্নতা আনয়ণের চেয়ে তীক্ষ্ণতার দিকেই অধিক মনোনিবেশ ঘটিয়ে ঘাটতি পুষিয়ে দিয়েছেন। সহকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ থেকে চার শতাধিক আন্তর্জাতিক উইকেট পেয়েছিলেন।
দুই দশকের অধিক সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দূর্দান্ত প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুরদিকের অধিকাংশ সময়ই শুধুমাত্র ব্যাটিংয়ে অভিজ্ঞতাপুষ্ট থেকে বিরত রেখে বামহাতি স্পিন বোলার হিসেবেই অধিক বিবেচিত হয়েছিলেন, নিচেরসারিতে ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। তবে, সময় যতই গড়াতে থাকে, ততই বিশ্বস্ত ও সর্বাপেক্ষা ভীতিদায়ক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে শুধু শ্রীলঙ্কা দলে নয়, বরঞ্চ বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন।
১৯৮৮-৮৯ মৌসুম থেকে ২০১১-১২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে ব্লুমফিল্ড ক্রিকেট ও অ্যাথলেটিক ক্লাব, কলম্বো ক্রিকেট ক্লাব ও রুহুনা, দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ডলফিন্স এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, এশিয়া একাদশ, খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলস, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলেছেন।
১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৯ তারিখে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। করাচীতে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় করাচীর বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা ‘বি’ দলের সদস্যরূপে প্রথম খেলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৮৯ বলে ১০২ রানের ইনিংসে খেলেন। তাসত্ত্বেও, ২১৮ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় তাঁর দল পৌঁছুতে পারেনি। ২৬.৪ ওভারে ১৪৫/৩ সংগ্রহ থাকা অবস্থায় খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়। এরপর থেকে পরবর্তী দুই দশকে টেস্ট ক্রিকেটে একই ধরনের ইনিংস খেলতে শুরু করেন।
১৯৮৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত সময়কালে সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার পক্ষে ১১০ টেস্ট, ৪৪৫টি ওডিআই ও ৩১টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে একদিনের আন্তর্জাতিকে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। অতি সাদামাটা ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের মাধ্যমে বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন। মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ নম্বর অবস্থানে নেমে ৩ রান তুলেছিলেন। বোলিং করার সুযোগ মেলেনি ও তাঁর দল ৩০ রানে পরাজয়ের মুখোমুখি হয়।
১৯৯০-৯১ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১ তারিখে হ্যামিল্টনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দীর্ঘ সংস্করণের খেলায় প্রথম অংশ নেন। চণ্ডীকা হাথুরুসিংহা’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অভিষেক টেস্টটি বেশ বিবর্ণময় ছিল। একবারমাত্র ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। ছয় নম্বর অবস্থানে নেমে ৩৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় মার্ক গ্রেটব্যাচের সফলতা লাভের পর অধিকাংশ দলই একদিনের খেলায় একই পথে চলার সিদ্ধান্ত নিলে মাঝারিসারিতে ব্যাটিং করা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে ইনিংসের গোড়াপত্তনে এগিয়ে আসেন। ভারতে অনুষ্ঠিত ১৯৯৩ সালের হিরো কাপ প্রতিযোগিতা চলাকালে প্রথমবারের মতো ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন। অক্টোবর, ১৯৯৩ সালে শারজায় পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন নম্বরে নেমে উপর্যুপরী অর্ধ-শতক হাঁকান। ৪১টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়ে এটিই তাঁর প্রথম ও দ্বিতীয় অর্ধ-শতরানের ইনিংস ছিল। ঐ মাসের শেষদিকে পাটনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্যাটিং উদ্বোধন করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
পরের বছর নিজ দেশে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলাকালীন নিজেকে এ অবস্থানে চিরস্থায়ী করে নেন। বিশ্বকাপের ১৮ মাস পর সাদা-বলের ক্রিকেটে প্রথম শতরানের সন্ধান পান। অ্যাডিলেডে স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছুটিয়েছিলেন। ৮ ডিসেম্বর, ১৯৯৪ তারিখে ব্লুমফন্তেইনে অনুষ্ঠিত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দূর্দান্ত খেলেন। ১৪৩ বলে ১৪০ রান তুললেও দল ২৩৫ রানে গুটিয়ে যায়। ১৯৯৪ সালে ম্যান্ডেলা ট্রফিতে স্বীয় স্থান পাকাপোক্ত করে ফেলেন। এ পর্যায়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান। ওডিআই দলে থেকে অন্যান্য অবস্থানে আর মাত্র ছয়বার ব্যাটিং নেমেছিলেন। শীর্ষসারির সাথে অন্যান্য অবস্থানের রেকর্ডের পার্থক্যও ছিল বেশ সুস্পষ্ট। ৩৩৮ ইনিংসে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে ২৮টি শতক ও ৬৬টি অর্ধ-শতক সহযোগে ৩৪.৬১ গড়ে ১২৭৪৯ রান পেয়েছেন। সবগুলো ওডিআই শতকই ব্যাটিং উদ্বোধনে পেয়েছেন। অন্যান্য অবস্থানে ৫০বার নেমে মাত্র ১৪.৬৮ গড়ে ৬৯০ রান তুলেছিলেন।
৫০, ১০০ ও ১৫০ রানের দ্রুততম রেকর্ড এক সময় নিজের করে রেখেছিলেন। এরপর, এবি ডি ভিলিয়ার্স তাঁর ঐ রেকর্ডগুলো ভঙ্গ করেন। সিঙ্গাপুরে ভারতের অংশগ্রহণে ১৯৯৬ সালের সিঙ্গার কাপ ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ১৭ বলে দ্রুততম অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলে রেকর্ড গড়েন। তবে, ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙ্গে পড়লে পাকিস্তান দল বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবি ডি ভিলিয়ার্স ১৬ বলে রেকর্ডটি নিজের করে নেন। এরপূর্বে ওডিআইয়ে সায়মন ও’ডোনেল ১৮ বলে অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছিলেন। এ পর্যায়ে আমির সোহেলের এক ওভার থেকে ৩০ রান তুলেছিলেন। ২০০১ সালে শারজায় ক্রিস হ্যারিসের এক ওভার থেকেও একই রান তুলেন। উভয়ক্ষেত্রেই ওডিআইয়ে এক ওভারে ৩০ রান সংগ্রহের তৎকালীন রেকর্ড গড়েছিলেন। এরপর, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ড্যান ফন বাঞ্জের এক ওভার থেকে হার্শেল গিবস ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়ে রেকর্ডটি নিজের করে নেন।
একই প্রতিযোগিতায় প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৫০-এর কম বল মোকাবেলা করে মাত্র ৪৮ বলে ওডিআইয়ে শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। মাত্র ছয়দিনের ব্যবধানে ওডিআইয়ে দ্রুততম শতক ও অর্ধ-শতকের নতুন রেকর্ড গড়েছিলেন। পরবর্তীতে, শহীদ আফ্রিদি ও কোরে অ্যান্ডারসন এ রেকর্ডটি নিজেদের করে নিলেও এবি ডি ভিলিয়ার্স ৩১ বলে ওডিআই শতক হাঁকান। ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৯৫ বলে ১৫০ রান তুলেছিলেন। এরপর, ২০১১ সালে শেন ওয়াটসন বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮৩ বলে এ মাইলফলকে পৌঁছে রেকর্ডটি নিজের করে নেন। পরবর্তীতে, এবি ডি ভিলিয়ার্স সিডনিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬৪ বলে এ সংগ্রহে পৌঁছেন।
দলের সংগ্রহ ৭০ থাকাকালীন রমেশ কালুবিতরানা শূন্য রানে আউট হন ও সনথ জয়সুরিয়া ৬৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ২৮ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে ২১৬ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় দলকে নিয়ে যেতে পারেননি। শ্রীলঙ্কা দল ৪৩ রানে পরাজিত হলেও তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পেয়েছিলেন।
২৫ জানুয়ারি, ১৯৯৬ তারিখে ওডিআইয়ের পাশাপাশি টেস্টেও নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করেন। অ্যাডিলেডে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নামেন। সব মিলিয়ে সপ্তদশ ওভারেই নিজস্ব প্রথম টেস্ট শতকের সন্ধান পান। ১১২ রান সংগ্রহের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৮ রান তুলেছিলেন। তাসত্ত্বেও শ্রীলঙ্কা দল ১৪৮ রানে পরাজয়বরণ করেছিল।
১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বোলারদের উপর জোড়ালো আক্রমণ কার্য পরিচালনা করেন। ক্রমাগত আক্রমণ শেনে দূর্দান্ত সূচনা এনে দিয়ে খেলার গতিধারাকে পরিবর্তন করতেন। এভাবেই নিজেকে প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রমাণ করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। এ পর্যায়ে শ্রীলঙ্কার প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ে প্রাণবন্তঃ ভূমিকা রাখেন। গ্রুপ পর্বের খেলায় ভারতের বিপক্ষে ৭৬ বলে ৭৯ তুলে ২৭২ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগিয়ে আসেন। তাঁর আগ্রাসী ভূমিকার কারণে ভারতীয় সিমার মনোজ প্রভাকরকে জোরপূর্বক অফ-স্পিন বোলিং করতে বাধ্য হতে হয়েছিল। রমেশ কালুবিতরানাকে সাথে নিয়ে মনোজ প্রভাকরের দুই ওভার থেকে ৩৩ রান আদায় করে নিয়েছিলেন। কোয়ার্টার-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৪ বলে ৮২ রান তুলে ২৩৬ জয়ের লক্ষ্যমাত্রাকে সহজ করে তুলেন। ঐ প্রতিযোগিতা শেষে ৩৬.৮৩ গড়ে ও ১৩১.৫৪ স্ট্রাইক রেটে ২২১ রান সংগ্রহ করেন। ওভারপ্রতি ৪.৫২ রান খরচ করে সাত উইকেট দখল করেন। ফলশ্রুতিতে, ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার লাভ করেন ও স্বর্ণালী মুহূর্ত অতিবাহিত করেছিলেন। এর পরপরই টেস্টেও তাঁর ব্যাটিং আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখতে শুরু করেন। ফলশ্রুতিতে, মুত্তিয়া মুরালিধরন ও তাঁর সঙ্গীদের প্রতিপক্ষীয় ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে চমৎকার কারুকাজ দলের সাফল্যে বিরাট প্রভাব ফেলতে থাকে।
টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্ত থেকেও যথেষ্ট সম্ভাবনার দ্বার খোলেন। ব্যাটিংয়ে ক্ষীপ্রময়তা এনে নান্দনিকতা সহযোগে একের পর এক শতক হাঁকাতে থাকেন। কভার ও পয়েন্ট অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার ঘটান। চমৎকারভাবে হাত-চোখের ভারসাম্য বজায় রেখে ব্যাটিং অগ্রসর হতে থাকেন। অন্যান্য ক্রিকেটারের ন্যায় তিনিও নিচুতে বল ফেলে রান সংগ্রহে তৎপর হন। তাসত্ত্বেও, প্রতিবারই ক্রিকেট বিশ্লেষকদের কাছ থেকে ব্যাটিংয়ের দিকেই অধিক নজর দিতে দেখা যায়। এছাড়াও, বিচক্ষণতার সাথে বোলিং করে সুন্দর ব্যাটিংয়ের কারণে তাঁকে আদর্শ অল-রাউন্ডারের পরিচিতি এনে দিয়েছে। খুব দ্রুত অধিনায়কের মর্যাদা লাভের প্রস্তাবনা পান ও তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে রাজী হন।
১৯৯৭ সালে নিজ দেশে শচীন তেন্ডুলকরের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ৯৫২/৬ তুলে সর্বাধিক দলীয় ইনিংসের রেকর্ড গড়ে। ২ আগস্ট, ১৯৯৭ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টটিতে তাঁর অবদান ছিল ৩৪০ রান। এটিই শ্রীলঙ্কার পক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসরূপে স্বীকৃত। এ পর্যায়ে রোশন মহানামা’র সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৭৬ রান তুলে নতুন রেকর্ডের জুটি গড়েন। এটিই টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম পাঁচ শতাধিক রানের জুটি ছিল। তাঁরা কেবলমাত্র ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় রঞ্জী ট্রফির চূড়ান্ত খেলায় হোলকারের বিপক্ষে বরোদার গুল মোহাম্মদ ও বিজয় হাজারে’র মধ্যকার চতুর্থ উইকেট জুটিতে সংগৃহীত ৫৭৭ রানের চেয়ে এক রান কম তুলেছিলেন। এরফলে, ১৯৯১ সালে মার্টিন ক্রো ও অ্যান্ড্রু জোন্সের ৪৬৭ রানের রেকর্ড ম্লান হয়ে যায়। পরবর্তীতে, ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে’র সংগৃহীত তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৬২৪ রান বর্তমান রেকর্ড হিসেবে টিকে রয়েছে। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/৪৫ লাভ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
৯ আগস্ট, ১৯৯৭ তারিখে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সাফল্যের পুণরাবৃত্তি ঘটান। কলম্বোয় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মাত্র ২২৬ বলে ১৯৯ রানের ইনিংস খেলেন।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ১৯ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। খেলার চতুর্থ দিন দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে এএ ডোনাল্ডকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে কলম্বোয় সফররত ভারতের বিপক্ষে তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৩/৪৫। খেলায় তিনি ০/২৯ ও ৪/৫৪ লাভ করেন। এ পর্যায়ে ২৬৪ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা দল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদের সর্বনিম্ন রানের নজির গড়ে। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১৭ ও ০ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে অ্যালান ডোনাল্ডের শিকারে পরিণত হন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। শন পোলকের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৭০ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
১৯৯৮ সালে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৭ আগস্ট, ১৯৯৮ তারিখে ইংল্যান্ডের মাটিতে শ্রীলঙ্কার প্রথম টেস্ট জয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন। ওভালে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৭৮ বল মোকাবেলান্তে ২১৩ রান তুলেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। পরবর্তীতে মুত্তিয়া মুরালিধরনের খেলায় ১৬ উইকেটপ্রাপ্তিতে দল ১০ উইকেটে জয়লাভ করে।
পুরো খেলোয়াড়ী জীবনেই ভারতীয় বোলারদেরকে একচোট হাতিয়ে নিয়েছেন। ২৮টি ওডিআই শতকের সাতটিই ভারতের বিপক্ষে করেছিলেন। ২০০০ সালে ভারতীয়দের বিপক্ষে সর্বাপেক্ষা স্মরণীয় ইনিংস খেলেন। শারজায় ভারতের বিপক্ষে ওডিআইয়ে ১৮৯ রানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেন। শ্রীলঙ্কার সংগৃহীত ২৯৯ রানের ৬৪ শতাংশই তাঁর ব্যাট থেকে আসে। তবে, ৩০০ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে ভারত দল মাত্র ৫৪ রানে গুটিয়ে গেলে ষোলকলা পূর্ণ করে। অর্থাৎ তাঁর সংগৃহীত রানের চেয়েও পুরো ভারত দল ১৩৫ রান কম করেছিল। এরফলে পুরো খেলায় সংগৃহীত রানের অর্ধেকই তিনি একাকী করেছিলেন।
একই বছরে নিজ দেশে শন পোলকের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২০ জুলাই, ২০০০ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলার প্রথম দিনে মধ্যাহ্নভোজনের পূর্বে মাত্র চার রানের জন্যে শতক হাঁকানোর ন্যায় দূর্দান্ত কীর্তি থেকে বঞ্চিত হন। ইতোপূর্বে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে মাত্র চারজন খেলোয়াড় এ কীর্তিগাঁথায় অংশ নিলেও পঞ্চম খেলোয়াড়ে পরিণত হতে পারেননি। অবশ্য তিনি একমাত্র ইনিংসে ১৫৬ বলে ১৪৮ রান তুলে দলের বিজয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা রেখেছিলেন। পাশাপাশি, মুত্তিয়া মুরালিধরনের অসাধারণ বোলিং সাফল্যে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৫ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০০০-০১ মৌসুমে শ্রীলঙ্কান দলকে নেতৃত্ব দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ২০ জানুয়ারি, ২০০১ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি উভয় ইনিংসে ১৬ রান করে সংগ্রহ করে উভয় ক্ষেত্রেই অ্যালান ডোনাল্ডের শিকারে পরিণত হন। এছাড়াও, ০/১০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। শন পোলকের অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে ঐ খেলায় সফরকারীরা ইনিংস ও ৭ রানে পরাজয়বরণ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
২০০২ সালে নিজ দেশে খালেদ মাসুদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের মুখোমুখি হন। ২১ জুলাই, ২০০২ তারিখে কলম্বোর পিএসএসে অনুষ্ঠিত সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে অপূর্ব ব্যাটিংশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১৪৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/১ ও ০/২০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের অপূর্ব বোলিংশৈলীর সুবাদে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৯৬ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র অবসর গ্রহণের পর চার বছরের জন্যে অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলকে সেমি-ফাইনালে নিয়ে যেতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখেন। কিন্তু, অস্ট্রেলিয়ার কাছে ডি/এল পদ্ধতিতে ৪৮ রানে পরাজিত হলে তাঁর দল বিদেয় নেয়।
২০০৩-০৪ মৌসুমে নিজ দেশে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ১৬ মার্চ, ২০০৪ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ১ ও ১৩১ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ০/১৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, শেন ওয়ার্নের অসাধারণ বোলিং সাফল্যে সফরকারীরা ২৭ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে যায়।
এরপর ব্যাট হাতে পুণরায় খেলার জগতে নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট হন। ২০০৪ সালে অন্যতম সফলতম সময় অতিবাহিত করেন। ঐ বছর মারভান আতাপাত্তু’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। ৬ মে, ২০০৪ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১৫৭ রান সংগ্রহ করেন ও ১/১ বোলং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে সফরকারীরা ইনিংস ও ২৪০ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০০৪-০৫ মৌসুমে মারভান আতাপাত্তু’র নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হয়েছিলেন। ২০ অক্টোবর, ২০০৪ তারিখে ফয়সালাবাদে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ৩৮ ও ২৫৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করেছিলেন। তাঁর অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ২০১ রানে জয় পেয়ে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ২৮ অক্টোবর, ২০০৪ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ২৬ ও ১০৭ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৩৫ ও ০/৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, দানিশ কানেরিয়া’র দূর্দান্ত বোলিংয়ের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয় পেয়ে সিরিজ ড্র করতে সক্ষম হয়। এ সিরিজে ৪২৪ রান ও ২ উইকেট লাভ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।
২০০৬ সালে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। তবে, কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে পুণরায় দলে ফিরে আসেন। কয়েক মাস পর সাদা-বলের খেলা থেকে বিরত থাকলেও রঙিন পোশাকে ঠিকই খেলার ধারা অব্যাহত রাখেন।
২০০৬ সালে লিডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে উপুল থারাঙ্গাকে সাথে নিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ১৯১ বলে ২৮৬ রান তুলেন। অদ্যাবধি ওডিআই তাঁদের সংগৃহীত রানটি সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছেন। উপুল থারাঙ্গা ১০৯ রানে বিদেয় নিলে তাঁদের রেকর্ডসংখ্যক রানের জুটি ভেঙ্গে যায়। অন্যদিকে, তিনি ৯৯ বল মোকাবেলা করে ১৫২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছিলেন। তাঁদের মধ্যকার এ রানের জুটি ওডিআইয়ে যে-কোন পর্যায়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
একই বছরে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওডিআইয়ে শ্রীলঙ্কা দলের ৪৪৩/৯ রানের মধ্যেও দারুণ ভূমিকা রাখেন। মাত্র ১০৪ বল থেকে ১৫৭ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন। সর্বোপরি, ২০০৭ সালের আইসিসি বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় কেনীয় বোলারদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ৪৪ বলে ৮৮ রান সংগ্রহ করেন।
২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে মাইকেল ভনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ১ ডিসেম্বর, ২০০৭ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ১০ ও ৭৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, কুমার সাঙ্গাকারা’র অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় স্বাগতিকরা ৮৮ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
একদিনের খেলায় আলোকচ্ছটা ঠিকই বহমান রাখেন। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে অনুষ্ঠিত ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলকে আরও একবার চূড়ান্ত খেলায় নিয়ে যান। তবে, এবারও অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজয়বরণ করে শ্রীলঙ্কা দল।
টেস্টের তুলনায় একদিনের আন্তর্জাতিকের কীর্তিগুলোর মাধ্যমেই তিনি নিজেকে স্মরণীয় করে রেখেছেন। তাসত্ত্বেও, বেশ কয়েকবার দীর্ঘ সংস্করণের খেলায় একাধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। ২০০৭ সালে এ স্তরের ক্রিকেটে নিজেকে খেলার ধরনের স্বাক্ষর তুলে ধরেন। ১ ডিসেম্বর, ২০০৭ তারিখ থেকে ক্যান্ডিতে শুরু হওয়া টেস্টে নিজের শেষ ইনিংসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এ পর্যায়ে জেমস অ্যান্ডারসনের এক ওভার থেকে ছয়টি চারের মার মেরেছিলেন।
২০০৮ সালের এশিয়া কাপে শিরোপা বিজয়ী শ্রীলঙ্কা দলকে সহযোগিতার হাত প্রশস্ত করেন। দুই মাস পর দৃশ্যতঃ দল নির্বাচকমণ্ডলী শেষবারের মতো দল থেকে তাঁকে বাদ দেন। তবে, বয়সের ভারে ন্যূহ হয়ে পড়ায় টেস্ট ও ওডিআই থেকে শুরু করে টি২০ দলেও বিশেষতঃ আইপিএলে পূর্বেকার সাফল্যের পুণরাবৃত্তি ঘটাতে ব্যর্থ হন।
এপ্রিল, ২০১০ সালে সংসদ নির্বাচনে পদপ্রার্থী হন ও পরাজিত হন। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ৩০-সদস্যের প্রাথমিক দলে ঠাঁই পান। স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ওডিআই সিরিজে ৪২তম জন্মদিনের দুই সপ্তাহ পূর্বে বিস্ময়করভাবে অন্তর্ভুক্ত হন। তবে, সিরিজের প্রথম ওডিআইয়ের পর খেলা থেকে অবসর নেন।
সমগ্র ওডিআই খেলোয়াড়ী জীবনে ২৭০টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। এ সংখ্যাটি কেবলমাত্র শহীদ আফ্রিদি’র ৩৫১টি ছক্কার পর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এছাড়াও, শচীন তেন্ডুলকরের ২০১৬টি চারের মারের পর ১৫০০টি চার মেরে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এক ইনিংসে দশের অধিক ছক্কা হাঁকান। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪৮ বলে শতক হাঁকানোকালে এগারোটি ছক্কার মার মারেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ওডিআই সর্বাধিক ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ডটি টিকেছিল। এছাড়াও, ২০০৬ সালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এক ইনিংস থেকে সর্বাধিক ২৪টি চারের মার মারেন। পরবর্তীতে, শচীন তেন্ডুলকর, রোহিত শর্মা ও বীরেন্দ্র শেওয়াগের দ্বি-শতক রানের ইনিংসে তাঁর এ রেকর্ড ভেঙ্গে পড়ে।
প্রায়শঃই কার্যকর বোলিংয়ের কারণে তাঁর ব্যাটিং অবদান ম্লান হয়ে পড়তো। ওডিআইগুলো থেকে ৩২৩টি উইকেট পেয়েছেন। তন্মধ্যে, চারবার পাঁচ-উইকেট পেয়েছেন। ১৯৯৩ সালে মোরাতুয়ায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ৬/২৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। ২০ মার্চ, ১৯৯৩ তারিখে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় অনিন্দ্য সুন্দর বোলিংয়ের কারণে প্রথমবারের মতো ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেছিলেন। ওডিআইয়ে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে দশ সহস্র রান ও তিন শতাধিক উইকেট পেয়েছেন। ১১৫৭৯ রান ও ২৭৩ উইকেট নিয়ে জ্যাক ক্যালিস তাঁর কাছাকাছি রয়েছেন।
তরুণ খেলোয়াড়দের উপযোগী হিসেবে বিবেচিত টি২০ ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে ৩৮ বছর বয়সে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের উদ্বোধনী আসরে খেলেন। কিন্তু, তিনি বয়সের চেয়েও নিজেকে এগিয়ে রেখেছিলেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৪ খেলায় ১৬৬.৩৪ স্ট্রাইক রেটে ৫১৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ৪৫ বলে দূর্দান্ত শতক হাঁকান। আইপিএলে ৩০ খেলায় অংশ নিয়ে ৭৬৮ রান তুলেন। পরিসংখ্যানবিদ ভারত সির্ভি দেখিয়েছেন, সংগৃহীত রানের ৭৪.২১% বাউন্ডারি থেকে সংগ্রহ করেছিলেন।
১৯৯৬ সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার ও ১৯৯৭ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেন। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের ‘মহারথী চতুষ্টয়’ হিসেবে অর্জুনা রানাতুঙ্গা যদি স্রষ্টা হন, কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে যদি রক্ষাকর্তা হন, তাহলে সনথ জয়সুরিয়াকে অবশ্যই বিনাশকারী হিসেবে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।
নিজ নির্বাচনী এলাকা মাতারা জেলা থেকে পুরো এক মেয়াদে সংসদ সদস্যরূপে নির্বাচিত হন। ডাকমন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর, রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণাধীনে থেকে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হন। ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। প্রধান দল নির্বাচকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ৮ এপ্রিল, ২০১৫ তারিখে কপিলা বিজেগুণবর্ধনে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। এরপর, ২০১৭ সালে পুণরায় প্রধান দল নির্বাচকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।