৭ অক্টোবর, ১৯৮৪ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তানের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গীমায় ইংরেজি ভাষায় পারঙ্গমতা প্রদর্শন করতেন। বয়সভিত্তিক খেলাগুলোয় দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। পাকিস্তানের একাডেমি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমনের সুযোগ পান। ২৩৩ রানের দূর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন। স্ট্রোকপ্লে নিয়ে কোন সন্দেহের সৃষ্টি হয়নি ও তড়িৎ গতিবেগে সূচনা ঘটাতেন। কিন্তু, প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থায় অনড় ছিলেন। সাঈদ আনোয়ার ও আমির সোহেলের অবসর গ্রহণের পর প্রকৃতমানের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবার সুযোগ পান।
২০০০-০১ মৌসুম থেকে ২০১৯-২০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে পাঞ্জাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, লাহোর ঈগলস, লাহোর লায়ন্স, লাহোর কালান্দার্স, লাহোর রেডস, পাঞ্জাব স্ট্যালিয়ন্স ও কলকাতা নাইট রাইডার্সের পক্ষে খেলেছেন।
২০০৩ থেকে ২০১০ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ৩৩ টেস্ট, ৭৮টি ওডিআই ও ২৪টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ২০০৩-০৪ মৌসুমে নিজ দেশে খালেদ মাহমুদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের মুখোমুখি হন। ৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৩ তারিখে মুলতানে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ফারহান আদিল ও ইয়াসির আলী’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১২ ও ৩৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ইনজামাম-উল-হকের অতিমানবীয় শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা নাটকীয়ভাবে এক উইকেটে জয় পায় ও ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
২০০৪ সালের শীতকালে খেলোয়াড়ী জীবনের বাঁক ঘুরে যায়। ইডেন গার্ডেন্সে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেন। এরপর, আরও একটি অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছিলেন। ঐ বছরের শেষদিকে সিডনিতে অনুষ্ঠিত টেস্টে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম তিন অঙ্কের কোটা স্পর্শ করেছিলেন।
২০০৫ সালের অধিকাংশ সময়ই নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। তাসত্ত্বেও, ভারতের বিপক্ষে ওডিআইয়ে আরও একটি শতক হাঁকান। তাঁর রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বনের বিষয়টি প্রশ্নবানের মুখোমুখি হয়। ফলশ্রুতিতে, দলে আসা-যাবার পালায় অবস্থান করতে থাকেন। কিন্তু, ঐ বছরের শেষদিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সমালোচকদের সমুচিত জবাব দেন। টেস্টে শতক ও অর্ধ-শতক পান। খেলায় ধারাবাহিকতার ছাঁপ না থাকলেও টেস্ট দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের মর্যাদা পেতে থাকেন।
২০০৫-০৬ মৌসুমে নিজ দেশে মার্কাস ট্রেস্কোথিকের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ১২ নভেম্বর, ২০০৫ তারিখে মুলতানে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৭৪ ও ১২২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২২ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৯-১০ মৌসুমে মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। এ সফরে বিপর্যয়কর ফলাফলের প্রেক্ষিতে পিসিবি দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের বিপক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ৩ ডিসেম্বর, ২০০৯ তারিখে ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ২৯ ও ১৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মোহাম্মদ আসিফের অনবদ্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১৪১ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
২০১০ সালে তাঁকে এশিয়া কাপ ও ইংল্যান্ড গমনার্থে দলের সহঃঅধিনায়কের মর্যাদায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ বছর তাঁর জন্যে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল। অবশেষে সকল স্তরের ক্রিকেটে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করার সুযোগ পান।
একই শহীদ আফ্রিদি’র অধিনায়কত্বে পাকিস্তানী দলের সাথে ইংল্যান্ড সফরে যান। ১৩ জুলাই, ২০১০ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। ৬৩ ও ৯২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাসত্ত্বেও, অস্ট্রেলিয়া দল ১৫০ রানে জয় পেয়ে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। ঐ খেলায় সায়মন ক্যাটিচের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১০ সালে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে পাকিস্তানী দলকে পরিচালনা করেন। ২৬ আগস্ট, ২০১০ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ২৬ ও ২১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, স্টুয়ার্ট ব্রডের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২২৫ রানে জয় পেয়ে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
এক পর্যায়ে টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে শহীদ আফ্রিদি’র স্থলাভিষিক্ত হন। নেতৃত্ব নিয়ে মাঠ ও মাঠের বাইরে সকলের মন জয় করেন। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন। কিন্তু, পাতানো খেলায় অংশগ্রহণের অভিযোগ আসতে থাকেন। নতুন বল নিয়ে আক্রমণ পরিচালনায় অগ্রসর হওয়া মোহাম্মদ আসিফ ও মোহাম্মদ আমিরের সাথে যোগসাজসে ইচ্ছেকৃতভাবে নো-বল ছোঁড়া ঘটনায় পাতানো খেলায় অংশ নেন। নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে এ সংবাদ প্রকাশের পর ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সালে আইসিসি থেকে দশ বছরের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়াসহ পাঁচ বছরের জন্যে বহিষ্কৃত হন। এরপূর্বে ১ নভেম্বর তারিখে সাউদওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টে অবৈধ অর্থ গ্রহণ ও প্রতারণার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। ৩০ মাসের কারাভোগের সাজা দেয়া হয়। তাঁর পতনের পূর্ব পর্যন্ত পাকিস্তানের ব্যাটিং কিংবদন্তী উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সাঈদ আনোয়ারের সাথে তুলনায় চলে আসতেন। কব্জীর মোচরে সফলতা পেয়েছেন। ড্রাইভ ও কাটের মারগুলো এক্সট্রা কভার অঞ্চল দিয়ে মারতেন। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট অঞ্চলে ফ্লিক কিংবা স্কুপের সাহায্যে অধিক রানের প্রত্যাশায় ফেলতেন। পায়ের কারুকাজের স্থবিরতা তাঁকে পিছনে নিয়ে যায়নি। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী ও মেজাজ অনেকাংশেই সাঈদ আনোয়ারের দীর্ঘদিনের সঙ্গী আমির সোহেলের অনুরূপ ছিল।
