২৪ এপ্রিল, ১৯৭৩ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ও পেশাদার ক্রিকেট তারকা। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক কিংবা লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিংয়ে অগ্রসর হতেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পেয়েছেন। একটি জাতির হৃদপিণ্ডতুল্য ছিলেন। ডন ব্র্যাডম্যান, গ্যারি সোবার্স, ভিভ রিচার্ডস ও শেন ওয়ার্নের ন্যায় তিনিও স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। ‘টেন্ডইল্যা’ কিংবা ‘লিটল মাস্টার’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ-ব্রেক কিংবা লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। দলে মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির ন্যায় ছোটখাটো গড়নের অধিকারী শচীন তেন্ডুলকর। সারদাশ্রম বিদ্যামন্দির স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন।
চেন্নাই একাডেমিতে ফাস্ট বোলার হবার স্বপ্ন নিয়ে যান। কিন্তু, বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলিং তারকা ডেনিস লিলি তাঁর এ স্বপ্ন পূরণে বাদ সাধেন। ছোট খাটো গড়নের অধিকারী তরুণকে তিনি ব্যাটিংয়ে মনোনিবেশ ঘটানোর বিষয়ে পরামর্শ দেন। মনেপ্রাণে ক্রিকেটকে লালন করতেন, হার না মানার মানসিকতায় ভাস্বর থেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানে রূপান্তরিত হন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরু থেকে তাঁর মাঝে উজ্জ্বল সম্ভাবনা ধরা পড়ে।
১৯৮৯-৯০ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বোম্বে এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, এশীয় একাদশ, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের পক্ষে খেলেছেন।
সমসাময়িক ব্যাটসম্যানদের তুলনায় নিজেকে যথেষ্ট এগিয়ে রেখেছিলেন। সর্বকালের রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছেন। সন্দেহাতীতভাবে ক্রিকেটের বড় ধরনের প্রতীকি চিত্র হিসেবে রয়ে গেছেন। পরিচ্ছন্ন ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ভারসাম্য বজায় রাখা, পরিমিত পদ সঞ্চালন, স্ট্রোকপ্লের ফুলঝুড়ি ছোটানোর ন্যায় অপূর্ব গুণাবলী প্রদর্শনে স্বীয় প্রতিভাকে বিকশিত করতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তাঁকে সামলাতে প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কদের ফিল্ডিং সাজাতে বেশ হিমশিম খেতে হতো। ছোটখাটো গড়নের অধিকারী হলেও বেশ ভারী ওজনের ব্যাট নিয়ে মাঠে নামতেন। খেলায় তাঁর মাঝে কোন দূর্বলতার ছাঁপ পরিলক্ষিত হয়নি। উইকেটের চতুঃস্পার্শে সামনে ও পিছনের পায়ে সমানে ভর রেখে নিজস্ব ব্যাটিং কৌশল অবলম্বনে অগ্রসর হতেন। যে-কোন পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে রান তুলতেন। ঐ সময়ে বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে প্রভাববিস্তারকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কিছু দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন।
১৯৮৯ থেকে ২০১৩ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ২০০ টেস্ট, ৪৬৩টি ওডিআই ও একটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে কৃষ শ্রীকান্তের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে পাকিস্তান গমন করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৫ নভেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। সলিল আঙ্কোলা’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১৫ রান সংগ্রহ করে ওয়াকার ইউনুসের বলে বিদেয় নেন। তবে, বিখ্যাত অল-রাউন্ডার কপিল দেবের অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় এগুতে থাকে।
ওয়াকার ইউনুসের দূরন্ত গতিসম্পন্ন বল তাঁর মুখে আঘাত হানে। রক্তাক্ত শার্ট নিয়েও ব্যাটিং চালিয়ে যেতে থাকেন। একই সফরের ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে গুজরানওয়ালায় অনুষ্ঠিত প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন।
১৯৯০-এর দশকের সূচনালগ্ন থেকে তাঁর প্রতিভার বিকাশ পরিস্ফূটিত হতে শুরু করে। এ পর্যায়ে ভারতীয়রা জীবনের ন্যায় ক্রিকেটকে ভালোবাসতে শুরু করে। প্রায়শঃই পরাজিত হলেও মাঝে-মধ্যে জয়ের সন্ধান মিলতো। এ পর্যায়ে তিনি তাঁদের মাঝে আশার বাণী শোনান, আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনেন। ১৯৯০ সালে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৯ আগস্ট, ১৯৯০ তারিখে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অভিষেকধারী ও বিখ্যাত বোলার অনিল কুম্বলে নিজেকে স্মরণীয় করতে না পারলেও তিনি দূর্দান্ত ব্যাটিংশৈলী উপহার দেন। ১৭ বছর ১০৭ দিন বয়সে ওল্ড ট্রাফোর্ডে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম শতরানের সন্ধান পান। এরফলে, কনিষ্ঠ ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। ১৪ আগস্ট, ১৯৯০ তারিখে অপরাজিত ১১৯ রান তুলে দলের বিপর্যয় রোধ করতে সমর্থ হন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটিতে স্বাগতিক দল ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। মার্চ, ১৯৭০ সালের পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটি প্রথম টেস্ট খেলা ছিল। ১৩ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের প্রথম ইনিংসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টেলিভিশনে পুণঃসম্প্রচারে বিদেয় নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১১ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। প্রবীণ আম্রে’র অসাধারণ শতকে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯ বছর বয়সে ওয়াকায় রৌদ্রোজ্জ্বল দ্রুত গতিসম্পন্ন পিচে শতক হাঁকিয়ে অন্যতম সেরা ইনিংস উপহার দেন। কয়েক বছর পর বিশ্ব সেরা ব্যাটসম্যান ডন ব্র্যাডম্যান স্বীয় স্ত্রীকে বলেছিলেন যে, ‘শচীন তেন্ডুলকরের মাঝে নিজেকে দেখতে পাচ্ছি’।
১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৯ মার্চ, ১৯৯৪ তারিখে হ্যামিল্টনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৩১ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৪৩ ও ১১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। অভিষেকধারী স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের অসাধারণ সাফল্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে নিজ দেশে লি জার্মনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৫ অক্টোবর, ১৯৯৫ তারিখে চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত ঐ টেস্টে একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৫২* রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিক তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ১৪৮ ও ১৩ রান সংগ্রহ করেন। তবে, সৌরভ গাঙ্গুলী’র অসামান্য ব্যাটিং সাফল্য সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে ঐ টেস্টসহ সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় শেষ হয়।
একই মৌসুমে নিজ দেশে মার্ক টেলরের নেতৃত্বাধীন অজি দলের বিপক্ষে খেলেন। পুরো সিরিজে দূর্দান্ত খেলেন। ৬ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী উপহার দেন। প্রথম ইনিংসে ৪ রান সংগ্রহ করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯১ বলে ১৫৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর দূর্দান্ত ইনিংসের উপর ভর করে স্বাগতিকরা ১৭৯ রানে জয় পায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
এরপর, ২৫ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১৭৭ ও ৩১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মাইকেল কাসপ্রোভিচের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয় পেলেও স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়লাভ করে। ৪৪৬ রান ও ১ উইকেট লাভ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে ওয়েলিংটনের ব্যাসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪৭ ও ১১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৭ ও ০/৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, সায়মন ডৌলের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৪ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে যায়।
একই মৌসুমে নিজ দেশে ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৩১ জানুয়ারি, ১৯৯৯ তারিখে চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ০ ও ১৩৬ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ১/১০ ও ২/৩৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর প্রাণান্তকর অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও ১২ রানে জয় পেয়ে সফরকারীরা দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অপরাজিত ১৪০ রান তুলে প্রয়াত পিতাকে উৎসর্গ করেন। ২৫তম জন্মদিনের পূর্বেই টেস্টে ১৬টি শতক হাঁকিয়েছিলেন। ২০০০ সালে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫০তম শতরান করেন। ২০০৮ সালে বিখ্যাত ক্রিকেটার ব্রায়ান লারা’র সংগৃহীত রান টপকে টেস্টে শীর্ষ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। এক বছর পরই ১৩০০০ টেস্ট রান, ৩০০০০ আন্তর্জাতিক রান ও ৫০ টেস্ট শতরান করে ফেলেন।
টেস্ট ও ওডিআইয়ের উভয় ধরনের ক্রিকেটে সর্বাধিক শতক হাঁকানোর বর্তমান রেকর্ডের অধিকারী। স্মর্তব্য যে, ৭৯তম ওডিআইয়ের পূর্ব পর্যন্ত নিজস্ব প্রথম শতরানের সন্ধান পাননি। শেষ খেলা পর্যন্ত তাঁর অনুরাগ লক্ষ্য করা যায়। ৩৬ বছর ৩০৬ দিন বয়সে একদিনের ক্রিকেটেই ইতিহাসে প্রথম দ্বি-শতক হাঁকিয়ে ৪০ বছরের বাঁধা অতিক্রমে নিজেকে যুক্ত করে ফেলেন দ্বিধাহীন চিত্তে। ২০১২ সালে ৩৯তম জন্মদিনের একমাস পূর্বে প্রথম ও একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ১০০তম আন্তর্জাতিক শতরান করার গৌরব অর্জন করে নিজেকে ক্রিকেট বিশ্বে অমর করে রাখেন। এ সাফল্য গাঁথাটি অনেকাংশে ডন ব্র্যাডম্যানের ব্যাটিং গড়ের অনুরূপ।
১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ভারতীয় দলকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৯ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে দারুণ খেলেন। আপ্রাণ প্রয়াস চালান। তাসত্ত্বেও তাঁর দল ১৮০ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ১১৬ ও ৫২ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
একই সফরের ২ জানুয়ারি, ২০০০ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্ট খেলেন। ৪৫ ও ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/৩৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এ টেস্টেও তাঁর দল ইনিংস ও ১৪১ রানে পরাজয়বরণ করে এবং ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। এ সিরিজে ২৭৮ রান ও এক উইকেট লাভ করে ম্যান অব দ্য সিরিজ পুরস্কার পান।
ঐ মৌসুমে নিজ দেশে হান্সি ক্রোনিয়ে’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০০ তারিখে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়েতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্ট খেলেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে এসএম পোলককে শূন্য রানে বিদেয় করেছিলেন। এ পর্যায়ে টেস্টে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ২/৭। খেলায় তিনি ৩/১০ ও ০/৪ লাভ করেন। এছাড়াও, ৯৭ ও ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ৪ উইকেটে জয়লাভ করে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের সুবাদে খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
একই সফরের ২ মার্চ, ২০০০ তারিখে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৬০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলার তৃতীয় দিন ব্যক্তিগত ষষ্ঠ ও দলীয় ১১৬তম ইনিংসে সাত বলে ওভার সম্পন্ন করেন। খেলায় তিনি ২১ ও ২০ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৩৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। নিকি বোয়ে’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে খেলায় তাঁর দল ইনিংস ও ৭১ রানে পরাজয়বরণ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
২০০১-০২ মৌসুমে নিজ দেশে নাসের হুসাইনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণ ব্যাটিংশৈলী উপহার দেন। ১৯ ডিসেম্বর, ২০০১ তারিখে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৯০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে বিজয়ী হয়। এ সিরিজে ৩০৭ রান ও এক উইকেট লাভ করে তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।
২০০২-০৩ মৌসুমে নিজ দেশে কার্ল হুপারের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ৩০ অক্টোবর, ২০০২ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৩৬ ও ১৭৬ রান সংগ্রহ করেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিক গড়ায় ও স্বাগতিক দল ২-০ ব্যবধানে জয় পায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৩-০৪ মৌসুমে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২ জানুয়ারি, ২০০৪ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ২৪১* ও ৬০* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। পাশাপাশি, বল হাতে নিয়ে ০/৩৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসামান্য ব্যাটিংশৈলীতে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে শেষ হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৫-০৬ মৌসুমে নিজ দেশে মারভান আতাপাত্তু’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১০ ডিসেম্বর, ২০০৫ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ১০৯ ও ১৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, অনিল কুম্বলে’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১৮৮ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
২০০৭ সালে রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে বাংলাদেশ সফরে যান। পুরো সিরিজে অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ২৫ মে, ২০০৭ তারিখে মিরপুরে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ১২২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৩৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান ও দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, জহির খানের অসামান্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে খেলায় সফরকারীরা ইনিংস ও ২৩৯ রানে জয় পায় ও ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। সিরিজে ২৫৪ রান সংগ্রহসহ তিনটি উইকেট লাভ করার স্বীকৃতিস্বরূপ প্লেয়ার অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২৯ জুন, ২০০৭ তারিখে দেড় দশক খেলোয়াড়ী জীবনে অংশ নেয়ার পর অবিশ্বাস্য অর্জনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ওডিআইয়ে ১৫০০০ রানের মাইলফলকে পৌঁছেন। ঐ সময়ে কুমার সাঙ্গাকারা পরবর্তী ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৪২৩৪ রান তুলেছিলেন। এ পর্যায়ে তাঁর খেলার মান নিচেরদিকে নামতে থাকে। অন্যান্য সেরা খেলোয়াড়ের ন্যায় তাঁকেও অবসর গ্রহণের দিকে ধাবিত করতে থাকে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বিবর্ণময় হবার পর দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কায় সাধারণমানের সিরিজে অংশ নেন। ২০০৭ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও ছন্দে ছিলেন না। তাসত্ত্বেও, ঐ প্রতিযোগিতায় একটি অপরাজিত অর্ধ-শতকের ইনিংস খেলেছিলেন। বিশ্বকাপে তেমন ভালো খেলেননি। ৩২ গড়ে রান পেয়ে নিজ নামের প্রতি সুবিচার করেননি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে স্বল্প রানে বিদেয় নিলে গণমাধ্যমে তাঁর ক্রীড়াশৈলী নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। তবে, ব্যাট হাতে নিয়ে এর উত্তর দিতে অগ্রসর হন।
বিশ্বকাপের অল্প কিছুদিন পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন-ওডিআই নিয়ে গড়া সিরিজের উদ্বোধনী খেলায় মাত্র এক রানের জন্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শতক হাঁকানো থেকে বঞ্চিত হন। সুন্দর ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন সত্ত্বেও ভারত দল ৪ উইকেটে পরাজিত হয়। দ্বিতীয় ওডিআইয়ে ২২৭ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় সৌরভ গাঙ্গুলীকে সাথে নিয়ে অগ্রসর হন। দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের একচোট দেখে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আন্দ্রে নেলের বলে মিড-অফে ফেলে অর্ধ-শতক হাঁকান। পাশাপাশি ১৫০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরফলে, ওডিআইয়ে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শের ন্যায় ১৫০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করার গৌরব অর্জন করেন। দূর্দান্ত গতিতে শতকের দিকে ধাবিত হলেও থান্ডি শাবালালা’র স্পিন বোলিংয়ে বিদেয় নেন। ১০৬ বল থেকে ৯৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। শেষ খেলায় পরাজিত হলেও যুবরাজ সিং ও দিনেশ কার্তিকের ৮০ রানের জুটিতে দল জয় পায়।
২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে শোয়েব মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২২ নভেম্বর, ২০০৭ তারিখে দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১ ও ৫৬* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে অ্যালান বর্ডারের সর্বাধিক ১১১৭৪ রান সংগ্রহকে ছাঁপিয়ে ১১২০৭ রান সংগ্রহ করে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। তবে, অনিল কুম্বলে’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে ৬ উইকেটে জয়লাভ করে।
২০০৮-০৯ মৌসুমে এমএস ধোনি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৮ মার্চ, ২০০৯ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৭১ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১২৫০০ রান সংগ্রহের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১৬০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসামান্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় সফরকারীরা ১০ উইকেটে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১০-১১ মৌসুমে নিজ দেশে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে ধারাবাহিক ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৯ অক্টোবর, ২০১০ তারিখে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। চতুর্থ ইনিংসে ২০৭ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় ধাবিত থাকা অবস্থায় ৭৭ বল থেকে ৫৩ রান সংগ্রহ করে অপরাজিত ছিলেন। এর পূর্বে প্রথম ইনিংসে ২১৪ রানের দ্বি-শতক হাঁকান। তাঁর অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর কারণে খেলায় স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয়লাভ করে ও দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয় পায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও, এ সিরিজে ৪৩০ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।
১৮ মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আশানুরূপ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে ব্যর্থ হলে ঐ বছরের শেষদিকে ওডিআই থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। ১৬ নভেম্বর, ২০১৩ তারিখে টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম আবেগঘন বিদায় নেন। মাঠে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন ও কঠিন মুহূর্ত অতিবাহিত করেন। এটিও তাঁর প্রতীকি চিত্রকে গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
এ পর্যায়ে নিজ শহর মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অংশ নিয়ে প্রথম ও একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ২০০তম টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখেন। ২০১৩-১৪ মৌসুমে নিজ দেশে ড্যারেন স্যামি’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৪ নভেম্বর, ২০১৩ তারিখে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। একমাত্র ইনিংসে ৭৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। প্রজ্ঞান ওঝা’র অসাধারণ বোলিংয়ের কল্যাণে স্বাগতিক দল ইনিংস ও ১২৬ রানে জয় তুলে নেয়ার পাশাপাশি ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্ট ছিল।
ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি দলের কার্যকরী বোলার হিসেবে ২০১টি আন্তর্জাতিক উইকেট পেয়েছেন। টেস্টে ৪৬, ওডিআইয়ে ১৫৪ ও টি২০আইয়ে ১টি উইকেট দখল করেছেন। তন্মধ্যে, ওডিআইয়ে দুইবার পাঁচ-উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছিলেন। অনেকগুলো নতুন রেকর্ড ভেঙ্গেছেন ও নতুন রেকর্ডের জন্ম দিয়েছেন। সর্বাধিক আন্তর্জাতিক রান, সর্বাধিক আন্তর্জাতিক শতক, সর্বাধিক আন্তর্জাতিক অর্ধ-শতক, বিশ্বকাপে সর্বাধিক রান, এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক রান, বিশ্বকাপে সর্বাধিক শতক, আন্তর্জাতিকে সর্বাধিক ম্যান অব দ্য ম্যাচ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বাধিক ম্যান অব দ্য সিরিজ লাভের ন্যায় রেকর্ড গড়লেও সর্বোপরি তিনি তাঁর কিংবদন্তী নিয়ে নম্বরের চেয়েও অনেক এগিয়ে রয়েছেন।
টেস্টগুলোয় অংশ নিয়ে ১৫,৯২১ রান সংগ্রহ করেছেন, ওডিআইয়ে ১৮৪২৬ রান ও টি২০আইয়ে ১০ রান তুলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০ শতরান করেছেন। ৭৮টি আইপিএল থেকে একটি শতক ও ১৩টি অর্ধ-শতক সহযোগে ২৩৩৪ রান সংগ্রহ করেছেন।
প্রায়শঃই একই খেলায় সিম ও স্পিন বোলিং করতেন। এক ওভারেই অফ-স্পিন, লেগ-স্পিন ও মিডিয়াম পেস বোলার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করেছেন। আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনে ৪৬টি টেস্ট ও ১৫৪টি ওডিআই উইকেট লাভ করেন। কিন্তু, খেলোয়াড়ী জীবনে অনেকগুলো ব্যাটিং রেকর্ডের অধিকারী হবার সুবাদে বোলিংয়ে তাঁর অবদানের ক্ষেত্রটি প্রায়শঃই মূল্যহীন হয়ে পড়তো।
তাঁর কৃতিত্বপূর্ণ অর্জন অনেক সময়ই প্রত্যাশার অতিরিক্ত হিসেবে দর্শকদের মনের পর্দায় গেঁথে যায়। কোটি কোটি সমর্থকদের স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামতেন। সমর্থকদের বেশ বড় অংশ কোন ইনিংসেই তাঁর শতরান থেকে সড়ে আসাকে মেনে নিতে পারেনি। নিজেকে ক্রিকেট বিশ্বে সর্বাপেক্ষা পূজনীয় ক্রিকেটারের আসন গেড়ে নিয়েছেন একান্তই স্ব-মহিমায়। ক্রিজ থেকে বিদেয় নেয়ার ফলে সমর্থকেরা টেলিভিশন বন্ধ করে দিতো। ২০১৭ সালে এ কারণে ‘শচীন: এ বিলিওন ড্রিমস’ শীর্ষক আত্মজীবনীমূলক প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশিত হয়েছিল।
তাঁর জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী। স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে ক্রিকেট তেমন জনপ্রিয়তা না পেলেও রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর অবসর গ্রহণের পর বারাক ওবামা স্বীকার করেন যে, তিনি ক্রিকেট খেলা তেমন পছন্দ না করলেও লক্ষ্য করেছেন যে উইকেটে থাকাকালীন মার্কিন অর্থনীতিতে ৫% উৎপাদন কমে যায়।
সাবেক ক্রিকেট লেখক ও ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের নির্বাচক এড স্মিথ তাঁর বিষয়ে মন্তব্য করেন যে, তেন্ডুলকরের খেলোয়াড়ী জীবন ভারতের বিশ্ব পরাশক্তি হিসেবে উত্থান ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের ন্যায় চিত্রিত হয়ে আছে। ফলে, ২৪ বছরের দীর্ঘ খেলোয়াড়ী জীবনে লিটল মাস্টার ভারতের অগ্রযাত্রার প্রতীক। এরচেয়েও তিনি অধিক সফল ছিলেন ও উজ্জ্বীবিত করতে সহায়তা করে গেছেন।
২০০২ সালে উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক টেস্টে ডন ব্র্যাডম্যান ও ওডিআইয়ে ভিভ রিচার্ডসের পর দ্বিতীয় সেরা ব্যাটসম্যানের আসনে বসায়। ১৯৯৪ সালে অর্জুন পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে রাজীব গান্ধী খেলরত্ন পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে ভারতের চতুর্থ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী ও ২০০৮ সালে ভারতের দ্বিতীয় বেসামরিক পুরস্কার পান। ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ভারত রত্ন উপাধিতে ভূষিত হন। সর্বকনিষ্ঠ ও একমাত্র ক্রীড়াব্যক্তিত্ব হিসেবে এ সম্মাননার অধিকারী হন। ২০১২ থেকে ২০১৮ সময়কালে রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য হন। ২০১৩ সালে তাঁর সম্মানার্থে ভারতীয় ডাক পরিষেবা থেকে স্ট্যাম্প প্রকাশ করে।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। অঞ্জলী তেন্ডুলকরকে বিয়ে করেন। এ দম্পতির অর্জুন তেন্ডুলকর নামীয় সন্তান রয়েছে।