৩১ মে, ১৯২৪ তারিখে ট্রান্সভালের পার্কভিউ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৫০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সাউথ আফ্রিকা সিক্সথ আর্মার্ড ডিভিশনে থেকে মিশর ও ইতালিতে দায়িত্ব পালন করেন। পঞ্চাশের দশকে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছিলেন। ১৯৪৫-৪৬ মৌসুম থেকে ১৯৬০-৬১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলেছেন।
১৯৫১ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ২৮ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫১ সালে ডাডলি নোর্সের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৬ আগস্ট, ১৯৫১ তারিখে লন্ডনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন ও একবারই কেবল উইকেট-রক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টে এল হাটনের ব্যাট স্পর্শ করলেও বাঁধার কারণে ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করতে পারেননি। এরফলে, টেস্টের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এল হাটনকে মাঠে বাঁধা দেয়ার কারণে বিদেয় নিতে হয়। খেলায় তিনি ৩১ ও ৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে তিনটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দীকরণে অগ্রসর হন। সফরকারীরা ৪ উইকেটে পরাজিত হলে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৯৫২-৫৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জ্যাক চিদামের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে টেস্ট খেলেন। ৬ মার্চ, ১৯৫৩ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৪১ রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা ইনিংস ও ১৮০ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনটি শতক হাঁকান। তন্মধ্যে, ১৯৫২-৫৩ মৌসুমে এমসিজিতে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৬২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। এ সিরিজেই নিজের স্বর্ণালী মুহূর্ত অতিবাহিত করেন। পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৪৮.৬৬ গড়ে ৪৩৮ রান তুলেন ও ২-২ ব্যবধানে সিরিজ ড্রয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন। এছাড়াও, এবারই প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে উপর্যুপরী আট সিরিজ পরাজয়ের পর তাঁর দল রুখে দাঁড়ায়।
প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ফিল্ডিংয়ে বাঁধা দেয়ার কারণে লেন হাটনের বিদায়ের ঘটনায় নিজেকে জড়ান। বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে অন্যতম সেরা ফিল্ডার হিসেবে নিজের পরিচিতি ঘটান। টেস্ট অভিষেকে উইকেট-রক্ষণের দায়িত্ব পালন করলেও ফিল্ডার হিসেবে ৪১ ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। প্রায়শঃই হিউ টেফিল্ডের ন্যায় নিখুঁতমানের অসাধারণ অফ-স্পিনারের বৃত্তবলয়ে আক্রমণাত্মক ফিল্ডিংয়ে নিজেকে জড়ান।
১৯৫৫ সালে জ্যাকি ম্যাকগ্লিউ’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। ২১ জুলাই, ১৯৫৫ তারিখে লিডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪১ ও ১১৬* রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ২২৪ রানে জয়লাভ করলেও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ২-২ ব্যবধানে শেষ হয়।
১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে নিজ দেশে পিটার মে’র নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৫৬ তারিখে ওয়ান্ডারার্সে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ২ রানে থাকাকালে পরবর্তী ৬৩ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে ৫৬ মোকাবেলা করেও কোন রান সংগ্রহ করেননি। খেলায় তিনি ১৮ ও ৩ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ১৩১ রানে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে নিজ দেশে ইয়ান ক্রেগের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৩ ডিসেম্বর, ১৯৫৭ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে সফররত অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে খেলেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৩ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৫০ ও ৭৭ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৮ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২ ও ২৩ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে অ্যালান ডেভিডসনের বলে বিদেয় নেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দীকরণে অগ্রসর হন। সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্ট খেলেন।
১৯৬১ সালে পরিবারকে সাথে নিয়ে লন্ডনে চলে যান। সারের ওরচেস্টার পার্কে বসবাস করতে থাকেন। চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে বিপিতে কাজ করেন। মল্ডেন ওয়ান্ডারার্স ক্রিকেট ক্লাবসহ এমসিসি দলের সাথে খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। বেশ মৃদুভাষী ও অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। মুরিয়েল নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। ১৯৫৫ সালে তাঁর সাথে পরিচিত হন। এ দম্পতির এক কন্যা ও দুই সন্তান ছিল। ২৮ জুন, ২০০৩ তারিখে সারের কিংস্টন-আপোন-টেমস এলাকায় নিজ গৃহে ৭৯ বছর ২৮ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।
