| | |

রুমেশ রত্নায়েকে

২ জানুয়ারি, ১৯৬৪ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও রেফারি। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে টেস্ট ও ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন।

১৯৮২-৮৩ মৌসুম থেকে ১৯৯৮-৯৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে নন্দেস্ক্রিপ্টস ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৮২ থেকে ১৯৯৩ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ২৩ টেস্ট ও ৭০টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৮২ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন।

১৯৮২-৮৩ মৌসুমে সোমাচন্দ্র ডি সিলভা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে নিউজিল্যান্ড সফর করেন। ৪ মার্চ, ১৯৮৩ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। মিত্র ওয়েতিমুনি, সুশীল ফার্নান্দো, গাই ডি অলউইজ, শ্রীধরন জগন্নাথন, বিনোদন জন ও যোহন গুণাসেকেরা’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। নতুন বল হাতে নিয়ে কিউই ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে তাৎক্ষণিক সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ২/১২৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করেছিলেন। এছাড়াও, ১ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ওয়ারেন লিজের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২৫ রানে জয় পেয়ে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৮২-৮৩ মৌসুমে সোমাচন্দ্র ডি সিলভা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১১ মার্চ, ১৯৮৩ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে এমসি স্নেডেনকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ২/১২৫। খেলায় তিনি ৪/৮১ ও ১/৪৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১২ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিক দল ৬ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। প্রসঙ্গতঃ এটিই নিউজিল্যান্ডের প্রথমবারের মতো উপর্যুপরী দ্বিতীয় টেস্ট জয় ছিল।

১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে ভারতের বিপক্ষে বল হাতে নিয়ে নিজের স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। ২২ গড়ে ২০ উইকেট দখল করেছিলেন। এসএসসিতে দূর্দান্ত পেস ও দম নিয়ে ৪১ ওভারে ৬/৮৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। দ্বিতীয় টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিজয়ে তিনি অন্যতম ভূমিকা রাখেন। খেলায় ৯ উইকেট দখল করেছিলেন। অশান্ত ডিমেল ও শৈল্য অহঙ্গামাকে সাথে নিয়ে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদেরকে ব্যতিব্যস্ত রেখে শ্রীলঙ্কার প্রথম সিরিজ বিজয়ে নেতৃত্ব দেন।

ক্রমাগত আঘাতপ্রাপ্তি তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে সর্বদাই প্রভাব বিস্তার করেছিল। তাসত্ত্বেও, ব্যাটিং উপযোগী পিচেও নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। নিজের সেরা দিনগুলোয় মানসম্মত পেস বোলার হিসেবে বিবেচিত হতেন।

১৯৮৯-৯০ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে হোবার্টে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৬/৬৬ ও ২/১৩২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, অরবিন্দ ডি সিলভা’র প্রাণান্তঃকর ব্যাটিং স্বত্ত্বেও স্বাগতিকরা ১৭৩ রানে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।

১৯৯০-৯১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে অসাধারণ বোলিং করেছিলেন। হোবার্টে অপূর্ব সুইং বোলিংয়ে একচ্ছত্র প্রভাব ফেলে ৬/৬৬ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। লর্ডসেও অসাধারণ বোলিং করেন। পেস ও সুইংয়ে ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের সমীহের পাত্রে পরিণত হন ও ৫/৬৯ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। পাঁচ-উইকেট লাভের স্বীকৃতিস্বরূপ লর্ডস অনার্স বোর্ডে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর, ব্যাট হাতে নিয়ে দলের সঙ্কটে এগিয়ে আসেন ও দূর্দান্ত অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। এ ধরনের অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করলেও নিজ দেশে শ্রীলঙ্কার উপযোগী পিচে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় দলকে আরও বিজয়ী করতে পারেননি।

১৯৯০-৯১ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১ তারিখে হ্যামিল্টনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অংশ নেন। ৫/৭৭ ও ১/৭০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৯১ সালে অরবিন্দ ডি সিলভা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২২ আগস্ট, ১৯৯১ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ৫/৬৯ ও ০/৯১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৫২ ও ১৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন স্বত্ত্বেও অ্যালেক স্টুয়ার্টের ব্যাটিংনৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ১৩৭ রানে জয় পায়। খেলায় তিনি অ্যালেক স্টুয়ার্টের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯১-৯২ মৌসুমে অরবিন্দ ডি সিলভা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। ২ জানুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে ফয়সালাবাদে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৪ ও ৫* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৪০ ও ১/৪৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ওয়াসিম আকরামের অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর বদৌলতে স্বাগতিকরা ৩ উইকেটে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

বোলিংয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করেছেন। কিশোর অবস্থায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। চটপটে ভঙ্গীমায় বলে পেস আনয়ণসহ বাউন্স প্রদানে সক্ষম ছিলেন। আশির দশকের শেষদিক থেকে শুরু করে নব্বুইয়ের দশকের সূচনাকাল পর্যন্ত নিয়মিতভাবে ধারাবাহিক ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছেন। বলে সুইং আনয়ণকল্পে প্রাণবন্তঃ পেস বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। তবে, আঘাতের কারণে কখনো তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতিশীলতা তুলে ধরতে পারেননি। তাসত্ত্বেও, পুণরায় টেস্ট দলে ফিরে আসতে তৎপরতা দেখান। কিন্তু, কৈশোরকালীন উদ্দীপনাকে আর ফিরিয়ে আনতে পারেননি। নিজেকে চমৎকার টেস্ট বোলার হিসেবে পরিচিতি ঘটান ও দ্বীপের অন্যতম সেরা পেস বোলার হিসেবে চিত্রিত হন। এছাড়াও, নিচেরসারির মারকুটে ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বেশকিছু দারুণ ইনিংস উপহার দেন।

পাকিস্তানের বিপক্ষে আঘাতের কারণে স্বাভাবিক খেলা উপহার দিতে পারেননি ও সর্বশেষ সিরিজে অংশ নেন। খেলোয়াড়ী জীবন শেষে কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। ডিসেম্বর, ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

Similar Posts